সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

রবিবার, ৩০ মে, ২০২১

হেমন্ত দেবনাথ


 

                   "সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"

                                                             -------হেমন্ত দেবনাথ 


(এপ্রিল মাসের সংখ্যার পর)


      কিন্তু বেদ বাহ্য দর্শন বেদবিরোধী দর্শন নয়। এদের উৎস হল---" আগম"- অর্থাৎ বেদবাহ্য দর্শন গুলোর উৎস বেদ নয়, এগুলো বিরোধীও নয়। বেদ বাহ্য দর্শন গুলো হচ্ছে শাক্ত দর্শন, বৈষ্ণব দর্শন ও শৈব দর্শন। শাক্তদের  মূল ভিত্তি হলো শাক্তাগম, বৈষ্ণব দর্শনের মূল উৎস হল বৈষ্ণবাগম এবং শৈব দর্শনের মূল উৎস হল শৈবাগম।

আস্তিক দর্শন গুলোর উৎস হলো বেদ। বেদ কথার অর্থ হল "জ্ঞান"। বেদ চার প্রকারের--- ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। প্রাচীনতম বেদ  হলো ঋগ্বেদ। প্রতিটি বেদের চারটি অংশ রয়েছে -- সংহিতা (মন্ত্র), ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, ও উপনিষদ। দেবদেবীর উদ্দেশ্যে রচিত স্তোত্র বা মন্ত্র হলো সংহিতা, বৈদিক যজ্ঞের নিয়মাবলী আছে ব্রাহ্মণ অংশে। বাণপ্রস্থের সময়ে অরণ্যে জীবনযাপনের নিয়মাবলী নিয়ে লেখা হয়েছে আরণ্যক, জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে নানা জিজ্ঞাসা বিষয়ক উচ্চতর দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে উপনিষদে।

    সংহিতা ও ব্রাহ্মণকে বলা হয় কর্মকাণ্ড। উপাসনাকান্ড বলা হয় আরণ্যককে। উপনিষদকে বলা হয় জ্ঞানকাণ্ড। "যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান নিষ্প্রয়োজন" -- এ কথা ব্যক্ত হয়েছে শতপথ ও তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে। উপনিষদ হল জ্ঞানকান্ডের চরম পরিণতি। বেদের অন্তর্ভুক্ত নয় বেদাঙ্গগুলো । বেদের অর্থ ও অর্থ বোধের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছিল বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ হল ছয়টি-- শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ ও ব্যাকরণ। মীমাংসা ও বেদান্ত সরাসরি বেদ নির্ভর। সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শন বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে নিলেও স্বাধীন যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছে। কাজেই এগুলো পরোক্ষভাবে বেদ নির্ভর। বেদান্ত দর্শন ক্ষুরধার যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এদের জ্ঞানের দিকটি অর্থাৎ ব্রহ্মের স্বরূপ, জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক ইত্যাদি দার্শনিক তত্ত্বগুলোর আলোচনা করেছে। মীমাংসা-দর্শন বেদের যাগ-যজ্ঞ ও ক্রিয়া অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এই দুই দর্শনের পার্থক্য তুলে ধরার জন্য মীমাংসাকে পূর্ব মীমাংসা বা কর্ম মীমাংসা এবং বেদান্তকে উত্তর মীমাংসা বলা হয়েছে।

বেদ স্বতন্ত্র ও বেদবিরোধী দর্শনগুলোর  উৎস হল-- কোনোও শ্রদ্ধেয় মনীষী বা সত্যদ্রষ্টা  ব্যক্তির মত। যেমন- ঋষভদেবকে জৈন দর্শনের আদি প্রচারক তীর্থঙ্কর বলা হয়, গৌতম বুদ্ধকে বৌদ্ধ ধর্মের এবং চার্বাক ঋষি অথবা বৃহস্পতি ঋষিকে চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।


(ধারাবাহিক চলবে)


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন