সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি?"
একুশে ফেব্রুয়ারী প্রতিটি বাঙালির কাছে একটি স্মরণীয় দিন। আমরা স্বাধীনতা পেলাম মাতৃভূমিকে ত্রিখন্ডিত করে। ইংরেজ ও তৎকালীন দেশীয় নেতৃবৃন্দের প্রবল ইচ্ছায় ভৌগোলিক দিক দিয়ে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হলো পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র। শরীরের অংশ হয়ে গেলো প্রতিবেশী দেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের ঊর্দুভাষীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে করায়ত্ত করতে চাইলো ঐ ভাষাকে আশ্রয় করেই। কেড়ে নিতে চাইল নিষ্পাপ শিশুর মুখের বুলিকেও। এমনি এক দিনে একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল তারই প্রতিবাদে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা নেমে আসে রাজপথে। জ্বলতে থাকে সারাবাংলা। এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম পরবর্তীকালে পথ দেখালো সারা পৃথিবীকে এবং হয়ে রইল এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে স্বীকৃতি দিল। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়েও মাতৃভাষাকে কি আমরা উপযুক্ত সম্মান দিতে পারছি? মাতৃ দুগ্ধসম মায়ের ভাষাকে অবহেলা করে আজ আমরা পুষ্টির অভাবে বিকলাঙ্গ হতে চলছি।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের ভালোবাসার টানে প্রকাশিত "অমর একুশে ২" নামক সাহিত্য নয়নের ১৮ তম সংখ্যাটি শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বক ভাষা শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো। আপনাদের সার্বিক মতামত পাবো এই আশা নিয়ে এবারের মতো বিদায় নিচ্ছি। আবারো দেখা হবে বসন্তের সংখ্যায়।
ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা সহ ----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
কবি পরিচিতি
"সাহিত্য নয়ন"- এর পাতায় যাদের লেখনি বিরাম নেয়নি কখনো। হয়তো জানেই না বিরাম কাকে বলে। উনাদের জীবন সমুদ্রের কয়েক ফোঁটা জলের কথা:---
কবি পরিচিতি :- হেমন্ত দেবনাথ
লেখক, প্রাবন্ধিক ও কবি হেমন্ত দেবনাথ হলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্নাতকোত্তর শিক্ষক। তিনি দশদা দুর্গারাম দ্বাদশমান বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণপুর দ্বাদশমান বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষক ছিলেন। তিনি পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় একজন সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিপ্রেমিক মানুষ। তিনি ধর্মনগর "স্বকাল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা"-র একজন কার্যকরি কমিটির সদস্য। ধর্মনগর শহর সংলগ্ন গ্রাম দেওছড়া উত্তরাংশের তিন নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা এবং এটিই লেখকের জন্মস্থান। “সন্ধিক্ষণ”, "দেও", "সাহিত্য-নিলয়", "বোধন", "উত্তরা", "উদীরণ", “ফুলবাড়েং” ইত্যাদি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রগুলোতে লেখকের বিভিন্ন প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই নয়নের পাতায় ওনার নিয়মিত বিচরণ। লেখকের প্রকাশিত দু'টি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- "সাহিত্য নিলয়” এবং "নির্বাচিত প্রবন্ধগুচ্ছে।”
কবি পরিচিতি :- কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরার শিক্ষা দপ্তরে শিক্ষকতার সেবায়( ইতিহাস বিষয়) নিয়োজিত। মাঝে মধ্যে জীবনপথে চলার অবসরে কলমের কালি দিয়ে সাদা কাগজে আঁচড় কাটা তাঁর চিরদিনের অভ্যাস।
আঁচড় কাটা দাগগুলো দেখে কেউ বলেন- কবিতা, কখনো কেউ বলেন - নাটক,আবার কখনো বা কারো ভাষায় ছোট গল্প ; সে যা-ই হোক। মধ্যবিত্ত বামুন পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে সমাজ ও অর্থনীতিকে একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ ঘটেছে।'কোকনদ ' নামে একখানি ছোট কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া 'সাহিত্য নয়ন' এর পাতায় লেখার নিয়মিত প্রয়াস রয়েছে। 'বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে ' র আজীবন সদস্য। এই লেখা লেখির বিষয়ে সর্বাধিক অনুপ্রেরণার উত্স বন্ধুবর সংস্কৃতিমনা শিল্পী শিবাজী ভট্টাচার্য এবং স্বর্গীয়া পিসিমণি নীলিমা ভট্টাচার্য।
কবি পরিচিতি :- অমল কুমার মাজি
একাধারে কবি,সাহিত্যিক,গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী শ্রী অমল কুমার মাজির জন্ম 19শে আগষ্ট 1955 পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ঘোষ কামাল পুরে।পিতা প্রয়াত পার্বতী চরণ মাজি এবং মাতা মঞ্জুবালা দেবীর প্রথম সন্তান শ্রী মাজির শৈশব থেকে কৈশোর তথা যৌবনে উত্তরনের পথ মসৃণ ছিলনা।ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়েই মা কে হারাতে হয়।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির চাপে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁকে গ্রামের জোতদারদের জমিতে দিনমজুরী এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ট্রেনে হকারি ক'রতে হয়।প্রচন্ড অর্থাভাবের মধ্যে একসময় দুই পুত্র কল্যাণ,কৌশিক ও স্ত্রী বাসন্তীকে নিয়ে চ'লে আসেন বর্ধমান শহরে।ক্রমে সহজাত প্রতিভা তাঁকে সঙ্গীত জগতের দিকে আকর্ষিত করে।শ্রী অজিত পন্ডিত,নিশাকর মল্লিক এবং পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় পন্ডিত শ্রীকান্ত বাকড়ে ও পন্ডিত সমরেশ চৌধুরীর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নেন।নিয়মিত শিক্ষা ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কঠোর অনুশীলনের সাথে সাথে তিনি বিভিন্ন পত্র -পত্রিকায় লাগাতার লেখালেখি ক'রতে-ক'রতে এক সময় সঙ্গীতকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।বর্ধমানের তেজগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেন চন্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্র অনুমোদিত সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান রাগেশ্রী সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ।এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চন্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্রের পরীক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ছাত্র-ছাত্রীদের নিরন্তর সঙ্গীত শিক্ষা দান,নিজের সঙ্গীত চর্চা এবং সাহিত্য চর্চায় ব্যস্ত আছেন।শ্রী মাজির দর্শনে-"অবসর ব'লে কিছু নেই।অবসর মানে মৃত্যু। সুতরাং নতুন নতুন গল্প,নতুন নতুন কবিতা,ছড়া, নতুন নতুন গান লেখা এবং তাতে সুরারোপ করার মত সৃষ্টিধর্মী কাজের মাধ্যমে তিনি সর্বদাই সৃষ্ঠির আনন্দে মগ্ন আছেন।দীর্ঘ দিন তিনি মুক্তপথিক,প্রতিবিম্ব ও সুশীল পত্রিকা সম্পাদনা ক'রেছেন।স্কুল ম্যাগাজিনের গন্ডি পেরিয়ে ক্রমে তিনি "অঙ্কুর",আঁটুল-বাঁটুল","হাটে-বাজারে পত্রিকা", বর্ধমানের পাপারাৎজি,"আপনজন", দৈনিক মুক্তবাংলা",ও "দৈনিক 'সংবাদে'র পাতায় নিয়মিত ছড়া,কবিতা, ছোট গল্প,ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন।ডঃ বাসুদেব দে সম্পাদিত "মাসিক সাহিত্য পত্রিকার" তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন এবং ঐ পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তাছাড়া "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার উনি একজন নিয়মিত লেখক ।কলকাতার "মডেল পাবলিশিং হাউস"-এর প্রকাশনায় তাঁর গল্প গ্রন্থ "সময় যখন গল্পে বাঁধা" ও"জীবন যখন গল্পে গাঁথা"যথাক্রমে 2014 ও 2016-তে কলকাতা বইমেলা থেকে প্রকাশিত হয়।
কবি পরিচিতি :- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
( কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্যের দৃষ্টিতে কবি পরিচিতি)
প্রতিভাবান শিল্পী সত্তার এক নাম রাজেশ ভট্টাচার্য্য। সংস্কৃতি জগতের প্রায় সকল অঙ্গনে শিল্পীর পরশ লক্ষ্যণীয়। পেশা হিসেবে শিক্ষকতার সেবা ব্রতে নিযুক্ত।" স্মৃতিশাস্ত্রী" উপাধি রাজেশ ভট্টাচার্য্যের অলংকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরার ধর্মনগর মহাকুমার উপ্তাখালী গ্রামে কবির জন্ম। "নবার্ক"- সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক, নাট্যনির্মাতা, নির্দেশক হিসাবি খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব কবি, লেখক রাজেশ ভট্টাচার্য্য। " সাহিত্য নয়ন" এর কান্ডারী পুরুষ।
অমল কুমার মাজি
ফেব্রুয়ারি
-----অমল কুমার মাজি
এ মাস আমার এ মাস তোমার
এ মাস জাগায় আশা।
এ মাস ভালোবাসার।।
এ মাস মায়ের এ মাস ভায়ের
এ মাস যে প্রত্যাশা
এ মাস মাতৃভাষার।।
এ মাস জয়ের,নয়তো ভয়ের
এ মাস তো নয় ত্রাসের
এ মাস ইতিহাসের।।
এ মাস আলোর,নয়তো কালোর
এ মাস মুক্ত শ্বাসের
এ মাস ভীরুতা নাশের।।
এ মাস আকাশ এ মাস বাতাস
এ মাস ফেব্রুয়ারি।
কেমনে ভুলিতে পারি।।
এ মাস প্রেমের শুদ্ধ হেমের
এ মাস নর ও নারী
এ মাস ফেব্রুয়ারি।।
হেমন্ত দেবনাথ
আমার ভারতবর্ষ
-------হেমন্ত দেবনাথ
আমার ভারতবর্ষ,তোমায়
আমি ভালোবাসি।
সবুজের নেশায় তুমি
চিরসবুজ আছ চিরকাল
তোমার স্মিত হাসি আছে
একগাল।
তুমি অনন্যা; তুমি হরিদ-অঙ্গী।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
তোমার ক্রোড়ে পাখির ডাকে
আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
আর পাখির ডাকে জাগি।
আমি প্রজাপতির ডানায়
চমকে উঠি।
মুগ্ধ -মেদুরতায় ভরে উঠে
মোর নয়ন দু'টি।
আমার ভারতবর্ষ। তোমায়
আমি ভালোবাসি।
তুমি বিভেদের মাঝে---
করেছ ঐক্যস্থাপন।
আনন্দে নানা ভাষাভাষী মানুষ
এথায় করছে দিনযাপন।
"যত মত,তত পথ"-কে
তুমি করেছ লক্ষ্যের অভিমুখীন।
পরকে আপন করে---
নিজে বুকে নিয়েছ তুলে চিরদিন।
আমার ভারতবর্ষ।
তুমি পরের সহিত আপনারে করিয়াছ----
ভেতরকার মেলবন্ধন।
ভেতরকার বিচিত্র বিভাগ
ও বিভেদের মাঝে-----
এনেছ সামঞ্জস্য।
তুমি বাজাইয়াছ ঐক্যের বাঁশি।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
বিভেদকামিতার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছ তুমি।
পূতঃবারি স্নাত তব ভূমি।
তোমার আছে ' একতার দ্যোতনা।
তাই তো তুমি মোদের প্রেরণা।
তোমার আছে সভাইর সাথে "সুজনতা।"
পরমত সহিষ্ণুতা।
"জাতীয় সমাজ" তুমি গড়িলে---
তার সাথে "জাতীয়তাবোধ" যোগ করিলে।
তুমি অনিন্দিতা। তুমি আমার প্রিয় ভারতবর্ষ।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
হাওয়াই মিষ্টি
--------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
বহু চিন্তন, বহু মনন
সাথে বহু আলাপন;
অবশেষে এলো
সেই দিনক্ষণ
একঘেয়েমির ঘটলো অবসান।
বন্ধ্যাত্ব ঘুচবে --নতুনের বাণী
নতুনের ঘোষণা।
যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত অভিশাপ
অবগুণ্ঠিত পাষাণী অহল্যা রামের পরশে শিহরিত হয়ে জাগবে জাগবে,
সাজবে নতুন সাজে,
নব নব স্বাদের আস্বাদনে
রসনার ঘটবে পরিতৃপ্তি।
শ্রী রামের পাদস্পর্শে
ত্রেতা যুগেই জড় অহল্যা
সজীব হলেও
আজ কলিযুগে জড়ত্ব ঘোচানোর মিথ্যা চেষ্টা
শীতের কুয়াশাজড়ানো স্বপ্নে
হারিয়ে যাচ্ছে।
চারিধারে পরিপাটির রমরমা
কাজের ফল স্টলের গোল্লা --
হাওয়াই মিষ্টি!
সন্দেশের সাজ আগেরটাই হতে পারে--
কেবল মাল-মশলার বদল!
কিন্তু ;
এটাও যে হয়ে উঠছে না অদৃশ্যের লোল জিহবা
আরো চায়,আরো চায়।
রচনা কাল:- ২৪/১/২০২২, সোমবার।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বাধীনতার মানে
----- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বাধীনতা কাকে বলে জানো?
বলতে পারবে স্বাধীনতার মানে কী?
হয়তো বলবে খুব সহজেই
মনের মত কোনো কিছু করা বা
বলার অধিকারই স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার অর্থ বুঝে নিও তার কাছে--
যে দিন দুপুরে প্রকাশ্যে হয় ধর্ষিতা।
কত ধর্ষিত হতেও দেখেছি আমি,
রাতের অন্ধকারে কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকে।
শুধু পার্থক্য একটাই---
কেউ হয় শরীরে আর কেউ হয় মনে।
ভাগ্যের পরিহাসে যে মেয়েটি খায়
হোটেল থেকে আনা দুবেলা খাবার,
দেওয়ালে লাগায় মা দুর্গার ছবি।
সেই মেয়েটির কাছ থেকেও জেনে নিও,
স্বাধীনতা কাকে বলে!
যে মেয়েটি মাধ্যমিকে প্রথম,
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক, মস্ত বড়ো অফিসার।
কিন্তু তার রক্ত ঝরে নিজের ঘরে।
তার কাছ থেকেও জেনে নিও,
স্বাধীনতা কাকে বলে!
যে ছেলেটার শৈশব কাটছে
চায়ের দোকানের কাপ-প্লেট ধুয়ে।
সেও জানে স্বাধীনতা কাকে বলে।
স্বাধীনতার মানে তারাই বোঝে
যাদের স্বপ্ন হচ্ছে তিলে তিলে নাশ।
অন্যের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে যারা,
তাদের ভাগ্যে লেখা আছে নিশ্চিত সর্বনাশ।
রচনা কাল:- ২২শে জানুয়ারি ২০২২ ইং
সুজন দেবনাথ
স্মৃতি হয়ে থাক
------সুজন দেবনাথ
জীবন মানে যদি শুধু যুদ্ধই হবে
শান্তি তবে কোথায়?
খুঁজে খুঁজে যারে পথে পথে ফেরে
কতনা পথিক সদাই।।
কত প্রাণ রোজ মরে আর বাঁচে
জীবন রাঙাবে বলে।
কত প্রাণ রোজ হয় যে নিখোঁজ
মিথ্যে সাজানো ছলে।।
প্রত্যাশিত চাওয়া পাওয়া যত
নিমেষে ছাইয়ের স্তুপ।
কেউ চাইনা তবু হয় যে বিলীন
যতো না স্বাদের রূপ।।
এসেছি যখন ফিরে তো যাবো
এরই নাম তো জীবন।
স্মৃতি হয়ে থাক যত ইতি কথা
আসবে যখন মরণ।।
নিরঞ্জন দাস
রাতের তারা
-----নিরঞ্জন দাস
বিনিদ্র রাতে অদ্ভুত চাওয়া।
পাবো না জানা গেছে,
মিছে তরী বাওয়া।
জীবনের সব আশা দুরাশা সম।
মিছে মায়া শুধু,
কেবল মরীচিকা ভ্রম।
বিনিদ্র রাত আর আকাশের তারা।
থাকে শুধু একসাথে,
হয়তো সাথী হারা।
প্রিয়াঙ্কা নন্দী
প্রভাতের রূপ
----- প্রিয়াঙ্কা নন্দী
ভোর হয়েছে
ফুল ফুটেছে
ডাকছে গাছে পাখি।
সব মানুষের
ঘুম ভেঙেছে
মেলেছে দুটি আঁখি।
সূর্য মামা
দিচ্ছে হামা
যাচ্ছে মানুষ কাজে।
খোকা মণি
স্কুলে যাবে
তাইতো বসে সাজে।
কাকা বাবু
লাঙ্গল কাঁধে
যাচ্ছে মাঠের পানে।
ভোরের হাওয়ায়
সুবাস ছড়ায়
শিউলি ফুলের ঘ্রাণে।
মা বোনেরা
সবাই মিলে
করছে গৃহে কাজ।
লিখছি আমি
যা দেখেছি
সাত সকালে আজ।
গঙ্গা সাহা
অবহেলা
-----গঙ্গা সাহা
আমি একা থাকতে শিখে গেছি প্রিয়।
তোমার করা প্রত্যেকটা অবহেলা,
আমায় আজ সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।
জানো এখন আর কান্না আসেনা।
অকারণে আর নিজেকে কষ্ট দেইনা।
কারণ এখন নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি।
নিজেকে সময় দিতে শিখে গেছি।
জানি না কেন এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতেই ,
আমার খুব বেশি ভালো লাগে।
একটা সময় ছিল যখন সারাটা দিন শুধুই,
তোমাকে নিয়েই ভেবে গেছি।
কিন্তু দিন শেষে শুধুই হতাশ হয়েছি।
অমল কুমার মাজি
মোক্ষ
------অমল কুমার মাজি
কবির হাতের
লেখনী যখন তীক্ষ্ণ
ভয় নাই এসো
সুশ্রুত-সুর তুলি।
দূরে যাক যত
কলুষ-কালিমা-বিঘ্ন
এসো সখা এসো
বিভেদ-মন্ত্র ভুলি।।
মানবিক-প্রেমে
সিক্ত করো এ বিশ্ব
স্নিগ্ধ-মায়ায়
ভরাও পৃথিবী-বক্ষ।
মুছে যাক যত
ডাকিনী-যোগিনী-দৃশ্য
শুভ সৃজনের
পথেই র'য়েছে মোক্ষ।।
হেমন্ত দেবনাথ
অবসরগ্রহণ
-------হেমন্ত দেবনাথ।
কর্মজীবন যেন এক সুবৃহৎ জগৎ।
অবসরে যাওয়া থেকে রেহাই পাবে না কোনো মহৎ।
হৃদয়ে বেজে উঠে বিচ্ছেদের সুর।
অনুরণিত হয় চলে যাওয়ার ধ্বনি।
তবুও---
প্রকৃতির পান্থশালার যে অমোঘ রীতি।
এ রীতি চলমান থাকবে নিতি।
মনটা বড়োই ফাঁকা মনে হয়।
চেয়ে থাকি আকাশের পানে শূন্য হৃদয়ে।
কর্মক্ষেত্রটাই পেছনে পড়েই থাকলো।
এর স্মৃতি আজীবনই মনের কোণে কড়া নাড়বে।
কোমলমতি মুখমন্ডলগুলো স্নেহ বাড়াবে।
যাবো না ভুলে তাদের দুষ্টুমিগুলো।
থাকবে ওরা মম হৃদে
চিরঅম্লান হয়ে।
সহকর্মীগণের সহমর্মিতা,এলাকার মানুষের
ভালোবাসা পেয়েছি অনেক।
এ-সব স্মৃতি সুধায় ভরে
গেল চিত্তভূমি।
বিদায়কালে তাই কর্মক্ষেত্রেরে নমি।
প্রার্থনা করি,চন্দ্রের দীর্ঘবর্ষের মিলন সুষমায়---
জীবন যেন ভরে উঠে পূর্ণতায়।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পরিশ্রমী
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
আমার আকাশ কুয়াশাজড়ানো
স্বপ্নের চাদর গায়ে দিয়ে অলসতাকে ক্ষণিকের বন্ধু ভেবে হয়তোবা চলতে পারে ;
আমার আকাশ
কালো মেঘের হামাগুড়ি কিংবা ঝাঁপাঝাপি
হয়তো বা দেখেছে
কিংবা আরও দেখবে!
আমার আকাশটায় কৃষ্ণপক্ষের পরশ লাগলেও
চতুর্দশীর পরই কিভাবে যেনো শুক্লা প্রতিপদ চলে আসে! অমাবস্যার আঁধার ;---
আমার আকাশ গাঙে ঢেউ এর ছবি আঁকতে পারেনা।
আমার আকাশটা
সাতরঙা বাহারি ফুলের স্বপ্নে বিভোর।
স্বপনচারিনী ফুল- মালার ডালি নিয়ে রয়েছে প্রতীক্ষায়
কখন যে পরিশ্রমীকে বরণ করে উপহারটি দেবে হাতে।
রচনা কাল:- ১৮/২/২০২২ইং
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বামীজির প্রতি
------ রাজেশ ভট্টাচার্য্য
প্রিয় স্বামীজি,
তুমি বেঁচে আছো
বেঁচেই আছো এবং বেঁচে থাকবে।
সশরীরে বেঁচে থাকলে হয়তো
আজ মরতে তিলে তিলে।
না হয় বাঁচিয়ে দিতে।
তুমি বলেছিলে---
"হে ভারত তোমার নারীজাতির আদর্শ
সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী।"
হায়রে ভারত! হায়রে ভারতের সীতা
কত ক্লীব জ্বালিয়ে দিচ্ছে
কত সীতার অকাল চিতা।
কত রামও আজ বনবাসী
কত নারীর কারণে।
না না নারী নয়, সেও ক্লীব।
হাজারো শয়তানে মিশে
সে আর ক্লীবও নয়, সে বিধর্মী।
তুমি হয়তো জানো না যুগর্ষি,
বিবাহ এখন পুরোপুরি ব্যক্তিগত।
আর বার্ধক্য কাটে বৃদ্ধাশ্রমে।
তুমি বলেছিলে---
"হে বীর সাহস অবলম্বন কর---"
সাহস অবলম্বন করে আজ
রক্তস্নান করছে মূর্খের দল !
তাদের রক্তেও আজ নেই মানবপ্রেমের রক্ত
ভোগের নেশায় হয়েছে বিষাক্ত।
তোমার কাছে প্রার্থনা আমার
আবারও আশীর্বাদ করে বলো---
হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে,
তোমার সন্তানদের মনুষ্যত্ব দাও
ওদের মানুষ করো।
রচনা কাল:- ১২/০১/২০২২ ইং