সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১

মলাট (১৬ তম সংখ্যা)


 

সূচিপত্র (১৬ তম সংখ্যা)


 

সম্পাদকীয়

    সাগর তীরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আমার প্রিয়জনদের। পাশে আছে আমাদের সজ্জিত তরীখানি। হঠাৎ হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে। প্রিয়জনরা উপস্থিত হলেন সোনার ফসল নিয়ে। তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমি নিজেই আজ অনুপস্থিত। ঋষি দুর্বাসা হলে হয়তো অভিশাপ বাণী বর্ষিত হতো আমার জীবনে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত এই অগোছালো জীবন। কিন্তু ভালোবাসার শক্তি যে বড় ক্ষমতাশালী। ভালোবেসে ডাকলে না এসে কি থাকা যায়? সকলের ভালোবাসার টানে ফিরে এলাম মূল স্রোতে। সোনার ফসল সহ প্রিয়জনদের সাথী হয়ে ভাসিয়ে দিলাম আমাদের তরীখানি মহাসমুদ্রের দিকে। 

       প্রিয় পাঠক প্রকাশিত হল "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার ১৬তম সংখ্যা। কবি লেখকদের লেখনীর খোঁচায় নির্মিত প্রতিটি ফসল হয়েছে পুষ্টি ও গুণে পরিপূর্ণ। চলুন আমরা সবাই মিলে ফসল গুলি থেকে রস আস্বাদন করি। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আবারও দেখা হবে আগামী সংখ্যায়। সকলের সুস্থতা কামনা করছি। 


ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সহ-----

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

অমল কুমার মাজি


 

কবিতার ভাঙো ঘুম


            ------অমল কুমার মাজি                 


মন ছাড়খার

কেঁপে ওঠে হাড়

কবিতার ভাঙো ঘুম।। 

এ কালো আঁধার

ঘুচাও এবার 

অমানিশা নিঃঝুম।।

কেন কাল গোনো

কান পেতে শোনো

কাঁদিছে সংস্কৃতি !!

অদ্ভুত  হেন 

মৌনতা কেন

চাওনা কি নিষ্কৃতি !!

শোনো ওহে কবি

বেচেছ কি সবই

কলম-কালি ও খাতা!!

আর কতকাল

তালে দেবে তাল

নত ক'রি উঁচু মাথা !!

হেমন্ত দেবনাথ


 

          [মে (২০২১) মাসের সংখ্যার পর]                         


       " সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"


                                                                                                                     -------- হেমন্ত দেবনাথ


           আস্তিক দর্শন গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি :-

 প্রথম সাংখ্য দর্শন নিয়ে আলোচনা করছি। এই দর্শনের প্রবর্তক ছিলেন মহর্ষি কপিল। এটি দ্বৈতবাদী দর্শন। কারণ 'পুরুষ' (Purush) ও প্রকৃতি' (Prakriti) কে এ দর্শন স্বীকার করে। পুরুষ চৈতন্যস্বরূপ, প্রকৃতিক অবচেতন বা জড় স্বরূপ। পুরুষ অপরিবর্তনীয়, কিন্তু সব পরিবর্তনের স্বাক্ষী। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগে সৃষ্টি সম্ভব। তাই সৃষ্টিকর্তারূপে ঈশ্বর অস্বীকৃত। সাংখ্য দর্শন প্রাচীনতম দর্শন। সাংখ্য দর্শন মতে ভগবান লাভের উপায় হল তিনি প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ।

      মহর্ষি পতঞ্জলি যোগ দর্শন এর প্রবর্তক। এটি ঈশ্বরবাদী। ঈশ্বরের সাথে যোগ হওয়া - এটি সাধন শাস্ত্র। বিবেক জ্ঞান লাভ করতে পারলে সব দুঃখের নিবৃত্তি হয়। 'চিত্তবৃত্তি'- এটি মূল আলোচ্য বিষয়। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি - এই আটটি হল যোগাভ্যাসের স্তর। প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ বা বিশ্বস্তব্যক্তির বক্তব্য - হল প্রমানণ বা জ্ঞান লাভের উপায়। 

    মহর্ষি গৌতম ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। যথার্থ জ্ঞান লাভের পদ্ধতি নির্ণয় করাই -এ দর্শনের আলোচ্য বিষয়। এটি বস্তুবাদী আস্তিক দর্শন। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ - এই চারটি প্রমানের সাহায্যে জগতের যাবতীয় তত্ত্বকে তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন ।

       বৈশেষিক দর্শন ‘বিশেষ' নামক পদার্থকে এ দর্শনে মুখ্যত স্বীকৃতি দেবার জন্য এ দর্শনের নাম হয়েছে বৈশেষিক দর্শন। এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি কণাদ। ন্যায় দর্শনের সব তত্ত্ব এখানে স্বীকৃত। বৈশেষিকগণ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, সমবায় বিশেষ ও অভাব – এই সাতটি পদার্থের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের প্রকৃত সত্ত্বা ব্যাখ্যা করেছেন। বৈশেষিকরা পরমাণুতত্ত্বে বিশ্বাসী প্রত্যক্ষ ও অনুমান এ দু'টি প্রমাণকে তাঁরা স্বীকার করেছেন।

         মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা মহৰ্ষি জৈমিনি এরা ঈশ্বরবাদী নন। এঁরা বস্তুবাদী (Realist) ও বহুত্ববাদী (Pluralist)। তাঁদের মতে কর্ম অনুসারে জগৎ সৃষ্টি ও জীবের ফলভোগ হয়। তাঁরা বলেন, বেদ নির্দেশিত কর্মই হলো ধর্ম।

      বেদের শেষ অংশই বেদান্ত। বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি হল উপনিষদ। এ পর্যন্ত ১১২ খানা উপনিষদের নাম জানা গেছে। কয়েকটি প্রধান উপনিষদের নাম হল - “ঈশোপনিষদ”, “কেন”, "কঠ", "ঐতরেয়" প্রভৃতি। প্রধান আলোচ্য বিষয় - ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ। বেদাস্তের অপর নাম 'ব্রহ্মসূত্র'। ব্রহ্মসূত্রের উপর বিভিন্ন ভাষ্য রচনা করেন - শঙ্করাচার্য, রামানুজ, বল্লভ প্রমুখ। অদ্বৈতবেদান্তবাদীগণ জ্ঞানলাভের উপায় হিসেবে প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি এই ছয়টিকে স্বীকার করেছেন।

        বিভিন্ন নাস্তিক দর্শন গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের অবতারণা করছি :-

     ভারতের অতি প্রাচীন এক জড়বাদী নাস্তিক দর্শন হল চার্বাক দর্শন। ক্ষিতি (Earth), অপ্ (Water), তেজ (Light), মরুৎ (Air) এই চারটি জড় পদার্থের সমন্বয়ে জগৎ ও জগতের যাবতীয় বস্তু, এমনকি প্রাণ এবং মনও সৃষ্টি হয়েছে। আত্মা, ঈশ্বর, পরলোক, স্বর্গ, নরক, কর্মবাদ, জন্মান্তরবাদ- এ সব চার্বাক দর্শনে অস্বীকৃত। তাঁদের মতে- অর্থ (টাকা পয়সা) হল গৌণ পুরুষার্থ এবং ইন্দ্রিয় সুখ (কাম) হল মুখ্য পুরুষার্থ। "খাও-দাও-আনন্দ কর”- তাদের নৈতিক আদর্শ। মোক্ষ লাভ হাস্যাস্পদ ব্যাপার। প্রত্যক্ষই তাঁদের মতে জ্ঞানলাভের একমাত্র উৎস। চার্বাক নামে ঋষি মতান্তরে লোকপুত্র বৃহস্পতি - চার্বাক দর্শনের প্রবর্তক।

         জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন তীর্থঙ্কর ঋষবদেব, এই দর্শন নীরিশ্বরবাদী, অবৈদিক, অতীন্দ্রিয়লোকের সত্ত্বায় বিশ্বাসী। তীর্থঙ্করগণকে মানেন ও শ্রদ্ধা করেন। নিজেদের আকরগ্রন্থের প্রাধান্য স্বীকার করেন। সম্যক দর্শন, সম্যক জ্ঞান, সম্যক চারিত্র - এর মাধ্যমে মোক্ষ লাভে বিশ্বাসী। অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য্য, অপরিগ্রহ - এই পঞ্চ মহাব্রত পালন করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন- প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ (আপ্ত পুরুষের বাক্য) - তিনটিই যথার্থ জ্ঞানের উৎস।

           বৌদ্ধ দর্শনের মহর্ষি গৌতমই প্রবর্তক। বৌদ্ধ দর্শনের মূল ভিত্তি বুদ্ধের বাণী। প্রধান আলোচ্য বিষয় - মানুষের জীবন। দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে কীভাবে মানুষ পরিত্রাণ পাবে - এটাই বৌদ্ধ দর্শনের আলোচনা। বৌদ্ধমতে জগতের সবকিছুই অনিত্য – কোন কিছুই চিরন্তন বা চিরস্থায়ী নয়। চারটি আর্যসত্য, জগতের অনিত্যতা, শাশ্বত আত্মার অস্থায়ীত্ব ইত্যাদি বৌদ্ধ দর্শনের মূল কথা। জ্ঞান লাভের উপায় হল প্রত্যক্ষ ও অনুমান। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি সম্প্রদায় রয়েছে সৌত্রাস্তিক (বাহ্যনুমেয়বাদী ও হীনযানবাদী), বৈভাষিক (বাহ্যপ্রত্যক্ষবাদী ও হীনযানবাদী), মাধ্যমিক বা শূন্যবাদ, (এরা মহাযানবাদী), যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদী (এরাও মহাযানবাদী) হীনযানবাদীরা বস্তুবাদী এবং মহাযানবাদীরা হলেন ভাববাদী ।

        আমরা ভারতীয় দর্শনের একটি বিশেষ মতবাদ জানতে গিয়ে অন্যান্য মতবাদ গুলোর সাথেও পরিচিত হই। প্রতিটি দর্শন নিজ মত প্রতিষ্ঠার আগে বিরোধীপক্ষের মতবাদটি ব্যাখ্যা করেছেন। একেই বলা হয় “পূর্বপক্ষ"। এরপর যুক্তির সাহায্যে পূর্বপক্ষকে সমালোচনা ও "খন্ডন" করা হয়েছে। একে বলা হয় "উত্তরপক্ষ" (সিদ্ধান্ত)। বেদ ও উপনিষদকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় আস্তিক দর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল। বেদ ও উপনিষদের পরে ভারতে যে ছ'টি আস্তিক দর্শনের আবির্ভাব ঘটেছিল; তা হল – (i) সূত্র (ii) ভাষ্য এবং (iii) টীকা- এ তিনটি পর্যায়ে ক্রমবিকশিত হয়েছিল ।

          ভারতীয় দর্শনে বড়ো বড়ো কঠিন বাক্যগুলোকে ছোটো ছোটো অৰ্থপূৰ্ণ বাক্যে প্রকাশ করাকে বলে সূত্র। সূত্র গ্রন্থই ষড়দর্শনের আদিগ্রন্থ। সাংখ্য দর্শনের আদি গ্রন্থ হল কপিলের সাংখ্যসূত্র, বৈশেষিক দর্শনের আদি গ্রন্থ হল কণাদের বৈশেষিক সূত্র। বেদান্ত দর্শনের মূল গ্রন্থ বাদ্রায়নের ব্রহ্মসূত্র ইত্যাদি। সূত্র গুলো এতো সংক্ষিপ্ত ছিল বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থ বোঝা কঠিন হতো। এর ফলে রচিত হত ভাষ্যগ্রন্থ। যেমন – বৈশেষিক সূত্রের ভাষ্য রচনা করেন প্রশস্ত পাদ। যে সব ভাষ্যের ব্যাখ্যা অস্পষ্ট, সে ক্ষেত্রে ভাষ্যেরও ভাষ্য রচনা দরকার হল। তাই রচিত হল টীকা। যেমন ন্যায় দর্শনের প্রখ্যাত টীকাকার হলেন বাচস্পতি মিশ্র এবং তাঁর লেখা টীকা পুস্তকের নাম হল – “ন্যায়বার্তিক তাৎপর্য টীকা"। নাস্তিক দর্শন গুলোর কোনও সূত্র বা ভাষ্যগ্রন্থ নেই।

             ভারতীয় দর্শন শুরুতে দুঃখবাদী বা নৈরাশ্যবাদী হলেও পরিণামে আশাবাদী। নিয়ম শৃঙ্খলায় বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক অতৃপ্তি, ত্যাগ ও মোক্ষলাভের আদর্শ, ব্যবহারিক প্রয়োজনবোধ ইত্যাদি অপরিমিত ও অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্যে ভারতীয় দর্শন সমুজ্জ্বল। “সকল জীবকে সমান চোখে দেখা", "মানুষের প্রতি আমাদের কর্তব্য যেমন আছে, তেমনি মানুষেরও কর্তব্য হল আমাদের অধিকারকে অক্ষুন্ন রাখা"- এরকম উচ্চতর সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক নীতিশিক্ষাও দেয় ভারতীয় দর্শন। ভারতীয় আস্তিক কিংবা নাস্তিক যে-কোন দর্শনই হোক না কেন, সেগুলো মোটেই বিচার-বিযুক্ত নয়। সেগুলোতে রয়েছে চর্চা ও চর্যার সমন্বয়, রয়েছে জীবনবোধের স্পর্শ। হৃদসম্পদে সমৃদ্ধ দর্শন গুলোতে রয়েছে আশাবাদের প্রাণস্পন্দনতা।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


 

       বরষা


               ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য

 

দাওয়ায়  আছি বসি

দেখি তব শ্যামলী  হাসি। 

হে বরষা! 

আরো চাই শ্যামলিমা 

গগনে নাহি দেখি

মেঘের কালিমা।

কৃষক চাহিয়া তবে পানে

আকুল গলায় বলে, 

আয় বরষা!  

আয় নেমে।

মাঠ হইবে শস্য - শ্যামলা

তোর পরশে ;

মোদের শ্রম আর ঘামে।

আকুলতায় সাড়া দিয়ে 

বরষা নামিল শেষে ধীর লয়ে

চাষি ভাই চালালো কোদাল,

চালালো লাঙ্গল, 

উপ্ত বীজে সাজিলো

চারা তলা, 

পাহাড়- টিলায় হইলো জঙ্গল।হে ধরিত্রী! 

আষাঢ়ের প্রথমে তুমি ছিলে চাতকিনী  ;

বারিধারা পান করি 

আজিকে তুমি শস্য প্রসবিনী! 

হে বরষা! 

তুমি  আসিও যথাকালে 

থাকিও মোদের সাথে

সময়ের তালে তালে।

শ্রাবণের ধারা শেষে 

ভ্রমিও ভিন্ন দেশে 

ফিরিয়া আসিও পুনরায় 

গ্রীষ্মের দহন শেষে।



 রচনাকাল:- ৩০/৬/২০২১ ইং বুধবার

রাজেশ ভট্টাচার্য্য


 

 তোমায় প্রয়োজন


         -------- রাজেশ ভট্টাচার্য্য


প্রিয় স্বামীজি,

আজ তোমায় বড্ড প্রয়োজন। 

তুমি বলেছিলে----

"তোমার রক্ত, তোমার ভাই"।

আজও তোমার বাণী দিয়ে

সজ্জিত হয় দেওয়াল কিংবা মঞ্চ। 

তোমাকে নিয়ে খই ফুটে, 

ছোট-বড়ো মঞ্চে, জনসম্মুখে।

কিন্তু কালো আর আলো হয় না, 

তোমার লেখনীর হাজারো প্রদীপে।

এইতো সেদিনের কথা--- 

রাতের অন্ধকারে যে ভবঘুরে 

ঢুকেছিল ডাস্টবিনের বুকে

দু'মুঠো খাবারের আশায়।

হে সন্ন্যাসী,  তোমার ভাষায় 

সেও তো তোমার রক্ত, তোমার ভাই।

পেটের তাগিদে তোমার দরজায়, 

হাত পেতে ছিল যে অসহায়, 

খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে তাকে 

তিরস্কার আর ভর্ৎসনায়। 

সেও তো তোমার রক্ত, তোমার ভাই।

হে মহামানব, তুমি জাগ্রত হও, 

এই অমানবিক সংসারে 

আজ তোমায় বড্ড প্রয়োজন।



রচনাকাল :- ২৪/০৬/২০২১ ইং

শান্তশ্রী মজুমদার


 

     জল ও জীবন 


            ------শান্তশ্রী মজুমদার 


আমি জল বলি তাকে 

তুমি বলো জীবন 

কখনো সে মেঘ হয়ে ঝরে 

কখনো ঝর্ণার মতো। 


কখনো আঁকাবাঁকা নদী হয়ে বয়ে চলে কতো নামে। 

মনু, দেও লঙ্গাই গোমতী 

কখনো ঢেউ এর তালে তালে 

আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে আরবসাগরের কুলে। 


জল, কখনো থাকে কুয়োতে 

কখনো দীঘি,হ্রদ, বিলে। 


যখন দুই পাহাড়ের মাঝে 

টলটল করে শান্ত নীল আকাশতলে,

 তখন আমি ডাকি তারে ঝিল বলে। 


আমি তো প্রথমেই বলেছি 

তুমি ডাকো তারে  জীবন বলে। 


জীবন চলছে নানা রূপে 

শৈশব, কৈশোর প্রৌঢ়,বার্ধক্য। 

জলের মতোই তার বিচিত্র চলা। 


জল আর জীবন 

বহমানতার একটাই সঙ্গীত

 'আনন্দ '

অনন্তের সাথে মিলনের 

মেঘের সাথে পুর্নমিলনের উৎসব।।

বোধিসত্ত্ব


 

                   নির্মাল্য আলোর বিকেল


                                            ------বোধিসত্ত্ব


শ্রীহরিৎ বিকেলের আকাশ জুড়ে লেগে থাকা নির্মাল্য আলো আমার 'আমি'-কে নির্মেদ পথিক করে তুলেছে। 


এমন স্নেহের নিচে সহস্র জন্মের আপন ঘাসগুলো ছুঁয়ে হাঁটতে হাঁটতে পথিক কখন যে ঈশ্বর হয়ে যান নিজেই বোঝেন না।


পৃথিবীর সকল উদারতা গৌড়ীয় মেঘের কোলেপিঠে আশ্রয় নিয়ে কী সুমহান এক আশ্রম হয়ে গেছে!


পূর্ণানন্দ সন্ন্যাসী এসে যেন শুনিয়ে যাচ্ছেন ভাগবত আলোর রচনাবলী।


এই শিরোনামহীন পড়ন্ত বেলায় ভীষণভাবে ইচ্ছে করছে ---


তোমার বোঝা হালকা করে আমার কাঁধে রাখি

আমার সকল আলোর চলা নিজের পায়েই হাঁটি।


এমন আকাশ বোতাম খোলা পবিত্র জলঘর

এই ঠিকানায় বেঁচে থাকুক জীবন হাজার বছর।

কৃত্তিকা ভট্টাচার্য


 

তুলির আঁচড়

শিল্পী:- কৃত্তিকা ভট্টাচার্য

সুজন দেবনাথ


 

             কলুর বলদ


                       ------সুজন দেবনাথ


পুঁজিপতিরা লুঠছে সমাজ

আর সমাজ পতিরা দেখছে।

অসহায় জাতি কুল হারিয়ে

নিয়ত পথেঘাটে শুধু মরছে।।


সবার আছে হারাবার ভয়

তাইতো রয়েছে সবে নিরব।

যাঁতাকলে কেহ খাচ্ছে পেষাই

তবুও হচ্ছে না ভয়ে সরব।।


পৃথিবী ভরেছে স্বার্থলোভে

দৃশ্য যত স্বার্থ বাদীর দল।

ক্ষমতা ফলিয়ে দরিদ্র ঘরে

শাসিত করছে যত দুর্বল।।


অসহায় জাতিও কলুর বলদ

নিয়ত খেটে মরছে দিবানিশি।

পাওয়াটা তাদের হোক না শুন্য

তবুও চায় একটু মুখের হাসি।।

বর্ণা দাস


 

             মেয়ে 


                          ------বর্ণা দাস


শুনো মেয়ে তোমার বড্ড বার ,

কথায় কথায় বুলি উড়াও ,

বিদ্যেধরী হবার ?


বাইরে যাওয়া বারন জেনো ,

চারদেওয়ালে আটকে থেকো , 

এতো পড়াশুনার কী দরকার  ?


দেখে কষ্ট হয় ভীষণ রকম  ,

শিখল বাঁধা পায়ের জখম ,

সে মেয়ে এটাই কী তার অপরাধ  ?


আওয়াজ উঠবে এবার সদলবলে ,

ছিন্ন করে পায়ের শিখল ,

পূরণ করবে মনের সাধ ।


আর চলবে নাকো দাবিয়ে রাখা ,

এবার বিদ্রোহেতে হবে দেখা ,

হুঙ্কারেতে আগুন পড়বে ঝরে ।


দেখবে সবাই নয়ন ভরে  ,

ঘরের মেয়ে ফিরছে ঘরে  ,

যুদ্ধক্ষেত্র জয় করে ।


সে নয় ছন্নছাড়া  ,

পাল্টে দিয়ে চিন্তাধারা ,

চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আবার ।

এই মেয়ে তোর বড্ড বার ,

এবারও কী বলবে আর ?

পুণ্ডরীকাক্ষ হাজরা (মুখোপাধ্যায়)


                   প্যারাডক্স


                ------পুণ্ডরীকাক্ষ হাজরা (মুখোপাধ্যায়)


যতোটা বিদীর্ণ ‘কর্ণ’ ততোটাই অভিমন্যু-জায়া : 

এই কি কাব্যের নীতি, প্যারাডক্স, মায়া ? 

কাব্যেও যদি হয় অন্যায় বোধি হয় জয়টা প্রধান–

 তৈমুর হিটলার তবে সপ্তরথী মতো হবে কাব্যের প্রাণ?


হিরোশিমা নাগাসাকি লেলিহান সেও এক অভিমন্যু বধ : 

জয়-রুট ওই কূট হার্মাদ দুর্নীতি কই আজ রদ ?

 যুগ-বধূ কাঁদে কতো হাত পাতো মর্মাহত অভিমন্যু বধূ - 

অবিরাম অশ্রু নাও ঝরে লাভা তপ্ত বিষ-মধু ।

কাজী নিনারা বেগম


 

             বোবা আকাশ


                       ------কাজী নিনারা বেগম


অবুঝ পৃথিবীতে বোবা আকাশে,,

এক অচিনপুড়ের অচিনপাখি অন্তিম যন্ত্রনায়।।

একতারার সুতোয় দিয়ে বেঁধে আছে জীবন।। 

সশস্ত্র কাহিনীর  অদৃশ্য স্মৃতি রোমন্থন ঠাই দিলাম! 

সেই অবূঝ হৃদয়াশে,,

সহসা মূছেগেছে লাবণ্য আর অস্থিরতা মনের সিড়িতে।। 

বেচেঁ থাকার নিরন্তর অভ্যাসের অভ্যস্ত ,,

হৃদয় দেয়ালে মনে রাখিও! মুক্ত আকাশে মেঘের খেলায়।।

সুপর্না কর


 

                      চন্দ্রমা


                                ------- সুপর্না কর


অপরূপ রূপের অধিকারী চন্দ্রমা তুমি,

তোমার ঐ রূপের ছটায় মোহিত হলাম আমি।


তোমার আলোতেই যে পূর্ণিমা রাত পূর্ণতা পায় ।

তোমার রূপ দেখে প্রকৃতিও যেন বাংলার গান গায়।।


তোমার স্নিগ্ধ আলোতে যেমন কেটে যায় রাতের অন্ধকার।

তেমনি তোমার জ্যোৎস্নায় কেটে যাক সবার মনের অহংকার।।


যতই বলুক না কেন সবাই চাঁদেরও কলঙ্ক আছে।

বেলাশেষে সেই নতমস্তক হতে হবে তোমার ঐ রূপের কাছে।।

ঈশিতা দেবনাথ


       তুলির আঁচড়

      শিল্পী:- ঈশিতা দেবনাথ

প্রসেনজীৎ সাহা


 

                     বর্ষা 


                               ------প্রসেনজীৎ সাহা 


নব নব মেঘে আজ গুরু গুরু ডাক।

প্রকৃতি দেবী ধারণ করিলো নতুন সাজ।।

নব অঙ্কুরে আজ প্রাণ সঞ্চার করিলো বৃষ্টির কণা।

এ বৃষ্টি কি দেবী শতাক্ষীর অশ্রুকণা।।

বৃষ্টির ফলে পূর্ণ হলো কৃষকের শস্যভূমি।

এ যে আশীর্বাদ স্বয়ং মাতা শাকম্ভরী।।

বৃষ্টির দেবতা নাকি দেব পুরন্দর।

গ্রামে গ্রামে হয় নাকি তারই পূজন।।

তবুও ফসলের দেবী শাকম্ভরী।

যার সর্বাঙ্গে ভরে থাকে ফল-মূল, শাক-সব্জি।।

আষাঢ়ের বৃষ্টি ধারায় নদ-নদী হলো পরিপূরণ।

আজ ধরিত্রীর বুক ফাটা তৃষ্ণা নিবারণ।।

বৃষ্টি ধারায় আটদিক হলো জলে পূর্ণ।

শ্রাবণে দিন-রাত হলো একত্র।।

বর্ষা যে প্রকৃতির প্রাণের দেবী।

তাইতো বর্ষার আগমনে নাচে মত্ত ময়ূরী।।

প্লাবন সরকার

              

                  পুরুষ


                             ------প্লাবন সরকার


পুরুষ এমনই যার হাতে আয়ের চাবি,

কর্মঠ হাত ক্লান্ত শরীর তবু মেটায় দাবী।

কর্ম শেষে ফেরেন ঘন গভীর রাতে,

সদা সংসারী মন বাজারের থলি হাতে।

পুরুষ এমনই ভালো থাকার করে অভিনয়,

শরীরে নানা রোগ,ক্লান্ত ধীর দেয় না সংশয়।

পাছে চিন্তায় পড়ে স্ত্রী সন্তান পরিবার,

একা হাতে সদা ব্যস্ত টানতে সংসার।

পুরুষ এমনই এক বস্ত্রে কাটে ঈদ পূজা,

হোক বহু পুরোনো ছেঁড়া ধুলোমাখা সোজা।

পুরুষ এমনই হাতে যার সমগ্র সংসারের সুখ,

কোনো কষ্টে সদরে কাঁদে না সে লুকায় ব্যথা দুখ।