সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

মলাট


 

সম্পাদকীয়

          ৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট রত্নগর্ভা ভারত-জননীর বীরসন্তানদের আত্ম বলিদানের ফলে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। অত্যাচারী ব্রিটিশের রক্তচক্ষুকে পরাভূত করে আমরা পেয়েছিলাম মুক্ত জীবনের উচ্ছ্বাস। আগস্ট মাস হল স্বাধীনতার মাস, আগস্ট মাস হল ত্যাগের মাস, আগস্ট মানেইতো বিজয়ের মাস, আবার আগস্ট মাস মানেই মহামিলনের মাস। তাই  আগস্ট মাস প্রতিটি ভারতবাসীর মনকে বারবার উদ্বেলিত করে তুলে। 

          তবে আজ অনেকেরই মনে এক লজ্জিত জিজ্ঞাসা ---- "প্রত্যেক ভারতবাসী কি পেয়েছেন সত্যিকারের স্বাধীনতা? এই স্বাধীনতা কি দিবালোকে বিবস্ত্র করার স্বাধীনতা?" স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্য মণিপুরের নির্মম ও জঘন্যতম ঘটনা প্রায় সকলেই অবগত। সে দিক থেকে বিচার করলে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে, হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কাঠগড়ায়। 

        তারপরেও আগস্ট মাস আমাদের প্রাণের মাস।  আগস্ট মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভারতের মুক্তিপথের সে সকল অগ্রদূতদের কথা, যাঁরা বহু রক্তের বিনিময়ে রক্তপিপাসু ইংরেজদের হাত থেকে ছিনিয়ে এনে আমাদের উপহার দিয়েছিলেন আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা।  উনাদের উদ্দেশ্যে নতশিরে সম্মান জানাতে প্রকাশিত হলো "সাহিত্য নয়ন"- এর "মুক্তকণ্ঠ" নামক এবারের সংখ্যা। গল্পকার শান্তনু মজুমদার মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং  কবি-লেখকদের লেখনী স্পর্শে পূর্ণতা পেল এই সংখ্যাটি। সর্বোপরি  সহৃদয় পাঠকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের চলার পথের পাথেয়।  তাই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনাদের  মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। 



ধন্যবাদ ও অভিনন্দন সহ---

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

জ্যোতির্ময় রায়

 বন্ধুবৎসল

         ------জ্যোতির্ময় রায়


মৃত্যু আমাকে চিনেছে ভালোই

নিত্য রেখেছে নজরে । 

ঠিক সময়েই টেনে নেবে বুকে

থামবে না আপত্তি ওজরে ।। 

জন্ম থেকেই চিহ্নিত আমি

চিনে সে আমার ঠিকানা । 

কখন আসবে কাছেতে আমার

আছে তো তাহার জানা ।। 

আমিই চিনি না মৃত্যুটা কী

কী তার অবয়ব । 

শুধু দেখেছি কবর কিংবা 

চিতায় শায়িত শব ।। 

এটুকু ধরেছি জন্মমৃত্যু

পাশাপাশি পথ চলে । 

সঠিক সময়ে জীবন ছাড়ায়ে

মৃত্যুতে পড়ে ঢলে ।। 

জন্ম-মৃত্যু যুগলেই চলে

একক নয় তো কেউ  । 

জন্মের পরেই মৃত্যুঠিকানায়

আছড়ে পড়ে সে ঢেউ  ।। 

জন্মটা আমার সফেদ কাগজে

আগুন ফাগুনে যাওয়া

মৃত্যুটা আমার বন্ধু বৎসল

বৃহত্তমকে পাওয়া  ।।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য

 নীলের পরশ

        ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য 


ঐতো সেদিন নীলশাড়ি 

করে পরিধান,

বলেছিলে, চলো,চলো

যাবে কোন্ স্থান? 

আমি তো ভাবতেও পারিনি 

তুমি যে হঠাৎ করে 

পড়বে এসে আমার কাছে

দাঁড়িয়ে ফটো উঠবে 

আমার পাশে। 

নিজের দিকে দেখি চেয়ে  

কোন্ কাকতালীয় ঘটনায় 

আমার অঙ্গাবরণ নীল বর্ণের, 

তোমার শ্বেতাঙ্গে নীল 

আমার দৃষ্টিকে করলো 

দূর আকাশে স্থির। 

সকাল থেকেই সূর্যের মেজাজ

বড়োই দাপটি,

নীল আঁচলে দিলে ঢেকে আমার মাথাটি।

পেট্রোল পাম্পের সামনে 

রাস্তার মোড়ে 

আধপড়া কড়ই গাছের 

ছায়া ছিলো 

অপেক্ষায় বোধহয় 

কবে জানি হবে

নীল আর নীলার উদয়।

ছায়ায় দাঁড়াতেই 

কোথা থেকে এলো চলে একখানি ছোটখাটো যান

মন খানি গেলো উড়ে 

নারকেল কুঞ্জে,

চায় দেখতে 

ডম্বুরের মাঝখান।

নীল ডম্বুরের দোলা নীচে

উপরে নীলাকাশ 

সাদা মেঘের বিছানা 

মন উদাসী কেনো জানি না।

কী যে হলো জানিনে

আজো ভুলতে পারি নে

চারদিকে দেখি নীলের ছোঁয়া।




 রচনাকাল :- ৩০/৭/২০২৩, রবিবার।

অমল কুমার মাজি

 নেই-নেই-নেই

       -----অমল কুমার মাজি


পকেটে পয়সা নেই

বুকে ভালোবাসা নেই

ঠাম্মা দাদুরা নেই

আদর সোহাগ নেই

কপালে লটারি নেই

স্কুলে শিক্ষক নেই

এই আছি বেশ !!


নেতার সততা নেই

পাশ ফেল কিছু নেই

চাকরি-বাকরি নেই

চোরের অভাব নেই

মিথ্যার শেষ নেই

কোথাও শান্তি নেই

কি আজব দেশ !!


মন্ত্রীর দোষ নেই

ভাষণের শেষ নেই

মানুষের দাম নেই

ব্যবসায় লাভ নেই

শিল্পের আশা নেই

সঙ্গীতে সুর নেই

সব কিছু শেষ?


এর পরও কথা আছে

এখনও মানুষ আছে

এক বুক আশা আছে 

রাত শেষে ভোর আছে

অকুলেরও কূল আছে

শুনি সন্দেশ !!

রমেন্দ্র নাথ

 প্রেরণা

          ------রমেন্দ্র নাথ


তোমারি অনুপ্রেরণায়

এগিয়ে চলছি–

হয়তো তোমার মত 

সফলতার শিকড়ে 

যেতে পারবো না,

হয়তো বা 

তোমার অসীমতার সীমানা  পারবো না ছুঁতে,

যতটুকুই উৎসাহে 

এগিয়ে চলেছি

এটা আমার কাছে 

বিরাট প্রাপ্তি।

একটু একটু করে 

এগোতে যাক না কেটে 

শত -সহস্র বছর 

তবু আমি তো 

হবো না বুড়ো,

থাকবো 

তোমারই মতো কিশোর। 

পর্বতারোহী হয়ে

গুটি গুটি পায়ে 

যাব এগিয়ে। 

হয়তো বা 

নদী-ঝর্ণার মতো

দ্রুতগামী হবে না

আমার গতিবেগ, 

তবুও সৃষ্টিকর্মে

স্রষ্টার সবুজ সতেজ প্রেরণা, 

এটাই আমার কাছে 

বড় পাওনা।

হয়তো বা 

হতাশার তাপে

শুকিয়ে যাওয়া 

ভাবনাগুলি

ভাবনা হয়েই থেকেছিল!

যদিও কিছুটা 

সিক্ত হয়ে

ডানা মেলেছে , 

প্রেরণার আর্দ্রতায়,

এটাই বা কম কিসে?



রচনাকাল:-  20-07-2023

চিরশ্রী দেবনাথ

 নিঃশর্ত

         -----চিরশ্রী দেবনাথ



তুমি যাকে ভালবাসলে


আর তাকে দিতে চাইলে তোমার    ' না পাওয়া '


অবাক হয়ে দেখলে তার কাছে আছে শুধু    'হাহাকার '


বাধ্য হয়ে তুমিও কুড়িয়ে নিলে সেই  ' হাহাকার '


তারপর খাদের পাশে দাঁড়িয়ে দুজনে


কি ভয় ! কি ভয় ! 


যদি ফিরে আসে আরো বিকট শূন্যতা, 


ভীতু পাখির মতো নামানো চোখ শুধু বলে যাচ্ছে , "নিঃশর্ত, নিঃশর্ত "!

ভবানী বিশ্বাস

 স্মরণ

       -----ভবানী বিশ্বাস


রাখলে সবকিছুই থেকে যায়–


পূর্বপুরুষদের নাম করে

পিন্ড দিই– 

কৃষ্ণের নাম করে

নিজেকে রাধা সাজাই–

যেমন জলশুদ্ধির মন্ত্রচ্চারণে 

সাতটি নদীকে স্মরণ করি–


রাখলে স্মৃতিও কৃতজ্ঞ হয়–

মধুমিতা ভট্টাচার্য

 দেখেছি সূর্যোদয়

             ----- মধুমিতা ভট্টাচার্য


ভেবেছিলে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দেবে

 দিতে পারো নি,

মৃত্যু এসে ফিরে গেছে কয়েকবার,

গ্ৰিলের ফাঁক দিয়ে দেখেছি তোমার উঠোন থেকে

সূর্য নেমে গেছে,

 সারারাত জেগেছি….

 দেখেছি সূর্যোদয়।

শুধু….

ভেজা গামোছা থেকে জল টপ টপ করে পড়ছিল 

 চোখের কোণ ঘেঁসে।



রচনা কাল :- ১২/০৮/২৩

শান্তশ্রী মজুমদার

 স্মরণীয়া

  -----শান্তশ্রী মজুমদার, কৈলাসহর (শিক্ষিকা রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়) 


পুণ্যসলিলা মা গঙ্গার পবিত্র  জলধারা 

বয়ে চলেছে  হিমালয় থেকে বঙ্গভূমে।

বহু মুনি ঋষির তপোভূমি শান্ত সমাহিত ঋষিকেশ


প্রভাতে সূর্য রশ্মির প্রথম আলো থমকে গেলো

পুণ্যভূমি র গঙ্গার তীরে।

পঁচাত্তর  বছরের  এক অগ্নিকন্যার মৃতদেহকে 

পরম স্নেহে অবগাহন করাচ্ছে মুক্তিদায়িনী  মা গঙ্গা।


গঙ্গার পাড়ে  কৌতুহলী জনতার কোলাহল 

পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ চারধার। 


কে এই নারী মৃতদেহ?কি তার পরিচয়?

হঠাৎ  অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মৃতদেহটি।

কন্ঠে তার ভয়ংকর  বিদ্রুপ!


আমি কে?এই নারী মৃতদেহ কার?


শোনরে,বিস্মৃত জাতি ----


আমি বীণা দাস, আমি অগ্নিকন্যা, আমি সশস্ত্র, অহিংস আন্দোলনের নীর্ভিক সৈনিক।

আমি বীণা দাস,আমিই  সেই বিপ্লবী-আমার 

পিতা, বেনী মাধব দাস,মাতা সরলা দাস।


আমার পিতা ছিলেন  নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের শিক্ষক

আমি একুশ বছর বয়সী তাজা তরুণী 

আমি যুগান্তর দলের সদস্যা

আমিই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে 

পিস্তলের গুলি চালিয়েছিলাম, ব্রিটিশ  গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে।

তাই তো আমাকে নয়টি বছর কাটাতে হোল কালাপানির দীপান্তরে।


দেশ স্বাধীন হলো, আমি হলাম পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভার সদস্য।


কিন্তু দেশ সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত আমার মনন,চিন্তন

আবারো কাঁধে তুলে নিলাম নারী  শিক্ষার ভার।


হে আত্ম বিস্মৃত দেশবাসী, তোমরা আমায় মনে রাখোনি।

আজ যে বৃদ্ধার লাশ দেখছো কৌতুহল ভরে 

যে লাশ অবজ্ঞায় অবহেলায় পড়ে আছে গঙ্গা মায়ের কোলে। 

সে আর কেউ না, সে হোল অগ্নি কন্যা, নেতাজীর শিষ্যা 

বীণা দাস। 

কোন বেওয়ারিশ লাশ নয়!

অমলেন্দু চৌধুরী

 আমার মৃত্যু 

      ----অমলেন্দু চৌধুরী 


যখন আমি ভূমিষ্ট হলাম সদ্য প্রভাতে, 

এই সবুজ ঘরের আতুর ঘরে, 

আনন্দে মুখরিত আমার আগমনের পর, 

উলোধ্বনি, শঙ্খ বেজেছিল, 

মায়ের কোলে আমি এক নব রাজপুত্তুর, 

তখন সবাই হেসেছিল, 

কিন্তু আমি কেঁদেছিলাম। 

দিনে দিনে এসব রব, 

শৈশব কৈশোর যৌবনের পর সায়ন, 

আর আর সৃষ্টি মুখর আর 

এই তো আমার আনন্দ নিকেতন! 

তবে, দিন শেষে বিকেলে,

একদিন সবাই চলে গেলো, 

সবাই ভুলে গেলো, 

আমারও কিছুকিছু অগোছাল, 

আর রয়ে গেল যতো সব আয়োজন; 

কিন্তু, আমার প্রতীক্ষায় বসে আছে আমার প্রিয়জন, 

এই সত্য এই সত্য, 

আমার অন্তিম মুহূর্তে আমার বন্ধুবর, 

আমার যতো সাধ হলো শেষ, 

তার যে নেই কোন অবসাদ, 

যেতে হবে যেতে হবে, 

সে শুধু আমার প্রতীক্ষায়, 

আমার বন্ধু আমার মৃত্যু।

অর্চিতা ভট্টাচার্য

 আধুনিকতা

             -----অর্চিতা ভট্টাচার্য 

   

 এযাবৎ ,ভাতের ফ্যানে সুখ

উথলাতে দেখেছি বহুবার!

মা নিজের সমস্ত ক্লান্তি

দুহাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে

দুমুঠো ভাত হাতে নিতেই মুখে হাসি....


আমি মায়ের মুখের হাসিকে

ডাস্টার দিয়ে মুছে

কংক্রিট ও বালিতে সুখ খুঁজে 

নিয়ে আধুনিক হয়ে উঠি।

কণিকা দাস

 অর্ঘ্য 

      -----কণিকা দাস


যতবার এই পথ ধরে এগিয়ে চলি

যতবার ধসের পাশে এসে দাঁড়াই

ততবার আমার মনে জাগো তুমি নব নব রূপে।

বুকের ভেতর লাবডুব শব্দটা

তোমাকে আরো আপন করে নেওয়ার,

আরও ভালোবাসার আকুতি জানায়।

ঐ যে সাদা মেঘ ছুঁয়েছে তোমার কপোল

ঐ যে তিরতির ঝরে পড়ছে অভিমানী অশ্রু...

সেখানে ধ্যানে কাটাতে চাই কিছুটা সময়।

বিধ্বস্ত জীবনের হাহাকার পৌঁছে না কোন

সুখী মানুষের অন্তরমহলে।

ওরা তোমায় নিয়ে কাব্য করে, গান বাঁধে 

ওরা শুনতে পায়না তোমার দগ্ধ বুকের হাহাকার।

তোমার মাঝে দেখতে পাই 

আমার যন্ত্রণাঘন হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি 

তাই বারবার ছুটে আসি তোমার স্নেহছায়ায়

বারবার তোমার ছোঁয়ায় নবজন্ম লাভ করি।

কুমকুম দে

 মেঘবৃষ্টির গল্প

         -----কুমকুম দে 


কান্নাগুলো ভীষণরকম দামি,

কান্না গুলো শুধুই একা আমার,

নাগাল পাওয়ার সময় গেছে চুরি,

মন পড়ার ইচ্ছে নেইকো তোমার।


আমি এখন বৃষ্টি বৃষ্টি নদী,

সময় হলে জল ছুঁয়ে দাও যদি,

দেখবে শুধুই ধু ধু মরুর বালি,

মুহূর্তরা খরা দেবে খালি।


ক্যাকটাস আর খেজুর কাঁটার বন,

দূর প্রবাসে ছুটন্ত এক মন,

পাহাড় ডিঙিয়ে ঝড় যদি এক আসে,

মেঘ বৃষ্টি এক হয়ে তবে মেশে।

সম্রাট শীল

 চাবুকের মতো চাপরায়

                  ------সম্রাট শীল


আমার বসে থাকায়

বাবার চোখে হতাশার

চিহ্ন ভেসে উঠতে দেখি।


একবুক মেঘ

গর্জন করে উঠে

ভয়ে আতকে উঠি,

যেন বজ্রের আঘাত

সারা শরীরে চাবুকের

মতো চাপরায়!

সংহিতা চৌধুরী

 আমি সেই মেয়েটা

               ----সংহিতা চৌধুরী


কপটতা মাকরসার রাজ্য দখলে সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়

বাস্তবতা বাড়ি বদলে দ্বীপের এক কোনা বেছে নেয়, 


সম্পর্করা এক সুতোয় যন্ত্রনায় কাতর, ছিঁড়তে চায় অসামাজিক সম্পর্ক। 


পাঁকে পরে নদী ঘোলাটে হয়

অবশেষে যাত্রা শুরু এক নতুন নিয়মে। 


অভিমান, অভিযোগ দরজায় দাঁড়িয়ে, ওরা কিছু বলতে চায়। 

শকুনির সবকিছুই ব্যর্থ হয়


একদিন ধরা পড়ে, সব নষ্ট রাস্তায় চেপে যায়, 

ঘোড়ার চামড়া পিতল বর্ণের রূপ নেয়। 


আর কেউ নেই! 

বোকা, অপদস্থ আমি সেই মেয়েটা।

রূপালী দেবনাথ

 সত্ত্বা

      ----রূপালী দেবনাথ


লুকিয়ে জানার ইচ্ছায়

আয়নায় পড়েছি ধরা,

প্রতিনিয়ত ঢিল ছুঁড়েছো 

ফের, ভাঙা কাঁচে মুখ খুঁজেছি।

অনুভূতিদের বিষ খাইয়েছি,

মৃত্যু বার্তা -

আমকে যেন না পাও

হয়তো অতৃপ্ততায় মানুষ সুন্দর।

রাজকুমার ধর

 কবিতা 

    ---- রাজকুমার ধর 


কবিতা আমার সাথেই

তবু খুঁজে বেড়াই তাকে

সে আমাকে ডাকে

আমিও তাকে ডাকি

তার অনুভূতি জাগায় শিহরণ 

হৃদয়ের টানে 

তার হাত ধরে চলে যাই 

দূর থেকে দূরান্তে-

মহাসাগর থেকে মহাশূন্যে 

সাক্ষী কত যে চেনা-অচেনা দৃশ্য 

কত অণু-পরমাণু !

সুবল চক্রবর্তী

 অ আ ক খ

      -----সুবল চক্রবর্তী

      

না, ভয় নেই

এভাবে ইংরেজির তোড়ে 

ভাসিয়ে নিতে দেবো না

তোমাদের ।

শিশুর রাত ভেজা আদরের 

কাঁথার মতো তুলে রাখবো 

কাগজে কালো কালো অক্ষর।


যদিও এলোমেলো হাওয়া -

শুধু আমি নই, শত শত কবি

ঈশ্বরের খাজানা অ থেকে চন্দ্রবিন্দু

পৌঁছে দেবো প্রজন্মে

দুধদাঁত ওঠা সুবোধের কাছে।

উপমা বেগম

 খুব করে চাই

        -----উপমা বেগম


খুব করে চাই

কেউ একজন থাকুক,

হাসিতে বা কান্নায় মিশে

ভিড়ে বা জীবনের একাকিত্বে।

যাকে সবকিছু বলা যায়

হঠাৎ করে দূরে ঠেলা যায় ,আবার

কোন কারন ছাড়াই বুকে জড়িয়ে নেওয়া যায়।

খুব করে চাই

কেউ একজন থাকুক,

যাকে ভালোবাসা যায় কিংবা ঘৃণা ,

যাকে নিয়ে ঘর কুনো হওয়া যায়

অথবা হারিয়ে যাওয়া যায় দূর দূরান্তে-------

থাকবে না চিনা কেউ

শুধু থাকবে একজোড়া হাত খুব বিশ্বস্তের।

খুব করে চাই 

কেউ একজন থাকুক

যাকে কারণে-অকারণে জ্বালানো যায়,

যাকে মনে করে কেঁদে বুক ভাসানো যায়,

হঠাৎ সামনে আসলে হেসে বলা যায় ভালোবাসি।

যাকে নিয়ে একসাথে বৃদ্ধ হওয়া যায় মৃত্যু কামনায় 

অথবা চাই অমরত্ব। 

সত্যি খুব করে চাই কিন্তু কোথায় পাই।

শান্তনু মজুমদার

 কুয়াশা   

                                        ----শান্তনু মজুমদার, ত্রিপুরা


       জ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের এক শীতের ঘন কুয়াশা মাখা সকাল। জানুয়ারির ১ তারিখ। কলেজের থার্ড ইয়ারের গৌরবের পলিটিক্যাল সায়েন্স স্যারের বাড়িতে ক্লাস শুরু হয় সাতটা থেকে। কিন্তু গৌরব ঠিক সাড়ে ছয়টায় সাইকেল নিয়ে স্যারের বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে। হাতে লাল খামে লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলের নকশা করা লাল গ্রিটিংস কার্ড।

      গৌরব, পলাশ, রাজা, সুমিতা, মুন্নি, স্বপ্না, অপরাজিতা, জয় সব্বাই একসাথে ক্লাস নাইন থেকে একসাথে স্যারের বাড়ি পড়ছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এবার কলেজ লাস্ট ইয়ার। দীর্ঘ সাত বৎসর একসাথে। ঝগড়া, মান অভিমান, আবার মিল লেগেই থাকে। প্রচন্ড ভালো বন্ধুত্ব তাদের। কিন্তু এই সাত বৎসরের মধ্যে মুন্নির সাথে গৌরবের এক দিনও সামান্য কথা কাটাকাটিও হয় নি। গৌরব বরাবরই সেই প্রথম দিন থেকে মুন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। আর মুন্নিও তাকে বেশ অন্য চোখেই দেখত। এটা সবাই বেশ বুঝতে পারতো।

     এই শীতেও গৌরব ঘামছে। একই ব্যাপার শুধু ঘুরে ফিরে তার মাথায় আসছে। তাদেরই সহপাঠী অঞ্জনের বোনের বিয়ে ছিল গত মাসে। তাদের সবারই নিমন্ত্রণ ছিল। অঞ্জন ওরা বেশ বড়োলোক। কলেজে একজন স্যারের একটি বাজাজ স্কুটার ছাড়া যেখানে আর সবাইর শুধু সাইকেল, সেখানে অঞ্জন হিরো বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানেও ছিল বেশ জাঁকজমক। সেখানে সেদিন শাড়ী পরা মুন্নিকে দেখতে দুর্দান্ত লাগছিল গৌরবের। আর কেন যে কি হয়েছিল মুন্নিও সেদিন বিয়েবাড়ি থেকে বেরোনো অব্ধি গৌরবের সঙ্গ ছারে নি। সেদিনই গৌরব বুঝে গিয়েছিল যে মুন্নিও তাকে সমানতালে ভালোবাসে। পরের দিন অপরাজিতা আর স্বপ্নার কাছেও জেনেছে যে মুন্নি নিজে বলেছে, সে গৌরবকে পছন্দ করে। সেই শাড়ী পরা মুন্নির ছবিই বার বার গৌরবের চোখে আজ ভেসে উঠছে। সে যে আজ লাল গোলাপ সজ্জিত নিউ ইয়ার গ্রিটিংস দিয়ে তার ভালোবাসার কথা ফিল্মি কায়দায় মাটিতে হাটু গেড়ে মুন্নিকে জানাবে। ঠিক যেমন ছোট গাড়ির পেছনে স্টিকার লাগানো থাকে সেইভাবে।

     সাতটা বাজতে আর কিচ্ছুক্ষন বাকি। শীতের সকাল তাই সবাই একটু দেরি করেই আসে। কিন্ত মুন্নি তো ল্যান্ড লাইনে রাতেই জানিয়েছিল যে সে আজ তাড়াতাড়ি আসবে। তাহলে দেরি করছে কেন।

     একটা মোটরসাইকেলের আওয়াজ শোনা গেলো। ঘন কুয়াশা ভেদ করে একটা হেডলাইট সামনে আসছে। অঞ্জনের বাইকের পেছন থেকে শাড়ী পরা জিন্সের জেকেট গায়ে জড়ানো মুন্নি নামলো হাসি হাসি মুখ নিয়ে। বাড়িয়ে দিল গৌরবের দিকে নিউ ইয়ার ফ্রেন্ডশিপ গ্রিটিংস। যাতে লেখা, টু ডিয়ার ফ্রেন্ড গৌরব, উইথ লাভ ফ্রম অঞ্জন এন্ড মুন্নি। 

     এক ঝটকায় যেন গৌরবের সব দুশ্চিন্তা, মুখের ঘাম, হঠাৎ মন খারাপের অনুভূতি সব চলে গেলো। যেন নিজেকে প্রচন্ড হালকা, দুশ্চিন্তা মুক্ত লাগছে। ভগবান কে ধন্যবাদ জানিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই সোজাসুজি একদম লো কলেজ। এবার জীবন গড়ার পথে মন দিতে হবে। লাভ ইস নট লাইফ, ইটস আ পার্ট অফ 

লাইফ। কুয়াশা কেটে রোদের আলো পড়ছে গৌরবের চোখে মুখে।

হেমন্ত দেবনাথ

       বেড়িয়ে পড়লাম সবুজের নেশায়

                                                                                    ------ হেমন্ত দেবনাথ


জুন ২০২৩ ইং সংখ্যা প্রকাশের পর......... 


            মায়াপুরে অবস্থানকালীন আমরা 14/04/2023 ইং সনে আমি, আমার সহধর্মিণী, কন্যা ও ছোড়দা শুধুমাত্র এই চারজন নবদ্বীপের “বলদেব জীঙ্গ”-র আশ্রমে চলে এসেছিলাম লঞ্চের মাধ্যমে। এখানে আমাদের গুরুগৃহ থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে চৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের বাড়ি বা জন্মস্থান, 60 উচ্চতাবিশিষ্ট চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তি, বিখ্যাত বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দির পরিদর্শন করলাম। ঐ বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দিরে মহাপ্রভুর পাদুকা সংরক্ষিত আছে, যে পাদুকা জোড়া আজীবন বিষ্ণুপ্রিয়া কর্তৃক অর্চিত হয়েছে। শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব সংস্কৃতির ঐকান্তিক সমন্বয়ে নবদ্বীপ ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃত ও ন্যায় চর্চার উপযুক্ত স্থান হিসেবে একদিন নবদ্বীপ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। নবদ্বীপ বাংলার সেন রাজাদের শাসনকালে (সম্ভবত 1159-1206 সালে) বাংলার সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। উল্লেখ্য, 2019 সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবদ্বীপকে "Heritage Town" বলে ঘোষিত হয়েছে। যাক, নবদ্বীপ পরিক্রমা শেষে আমরা পুনরায় মায়াপুরে ফিরে এসেছিলাম ।

        পরিশেষে গত 16/04/2023 ইং তারিখে মায়াপুর থেকে রাধাগোবিন্দকে প্রণাম জানিয়ে 1 ঘন্টা 20 মিনিটে "INTERLITY Exp" ট্রেনের জার্নি করে আমরা কোলকাতার হাওড়া স্টেশনে আসি ও অদূরবর্তী দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে যাই। মন্দির প্যালেস গেষ্ট হাউসে” রুম ভাড়া করে থাকলাম দক্ষিণেশ্বরে । এখানে আমরা 17/04/2023 ইং এবং 18/04/2023 ইং ঐ দুইদিন অবস্থান করেছিলাম ।

        উল্লেখ্য, 17/04/2023 ইং তারিখে সকালে আমরা মেট্রো ট্রেন সহযোগে চলে গিয়েছিলাম দক্ষিণ 24- পরগণা জেলার অন্তর্গত আলিপুর বুটানিক্যাল ও জুওলজিক্যাল পার্কে । 1876 সালের 1 লা জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রিন্স অব্ ওয়েলস 7ম এডওয়ার্ড প্রায় 45 একর এলাকা আয়তনবিশিষ্ট আলিপুর চিড়িয়াখানা উদ্বোধন করেছিলেন । প্রথমেই চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশদ্বারে ঢুকে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু জলযোগ সেরে নিয়ে আমরা পরিক্রমা শুরু করে দিলাম । এখানে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম শিম্পানি, সিংহ, বাঘ, হরিণ, হাতি, জেব্রা, বানর প্রভৃতি । নানা প্রজাতির পাখিও দেখেছিলাম, যেমন- কালিডা পাখি, Red Data List অনুসারে এরা “Least Concern" পৰ্য্যায়ভুক্ত, “Painted Stork” পাখি । এগুলো ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এমু পাখি, গ্রেট গ্রীণ ম্যাকাও পাখি (এগুলো Critically Endangered পর্য্যায়ভুক্ত)।

      স্পন-বিল বা খুন্তে বক (Plantalea Leu Coradia), Rosy Pelicam, যা পাঞ্জাব, আসাম ও দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায়। আর আছে সাদা কাস্তে বক বা White Ibis [Threskiornis Aelhiopica] এগুলো নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়। আর আছে Sulpher Crested Cockatoo বা কাকাতুয়া গ্যালেরিটা - এগুলো নিউ গিনি, অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় ।

         পরের দিন 17/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে এসেছিলাম কোলকাতার হাওড়া জেলার হুগলী নদী (এখানকার গঙ্গা নদী)-র পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও পীঠস্থান সেই বিখ্যাত বেলুড় মঠ। সাংস্কৃতিক সমন্বয়বাদের একটি অনুপম নিদর্শন । শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের পবিত্র অস্থি কাঁধে করে এনে স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে কথিত হয় । উল্লেখ্য, 1938 সালের 10ই জানুয়ারী মন্দিরের উদ্বোধন হয় । প্রায় 40 একর জমির উপর অবস্থিত বিভিন্ন কক্ষের মধ্যে আছে :- মন্দিরের ভেতরে বেদীর উপর অধিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণের শ্বেতমর্মর মূর্তিটি, বিশাল উপসনাকক্ষ, শ্ৰীমা সারদাদেবীর মন্দির, স্বামী ব্রক্ষ্মানন্দ মন্দির, গ্রন্থাগার, আম্রকানন, পুষ্পোদ্যান ইত্যাদি । গঙ্গার ফুরফুরে বাতাস মন্দিরের গা ঘেঁষে যায়, এতে মন এক অনাস্বাদিত অনুভূতি লাভ করে । ভ্রমণ শেষে আমরা আবার হোটেলে ফিরে এলাম ।

       পরের দিন অর্থাৎ 18/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে গেলাম, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ স্মৃতি বিজড়িত ও রাণী রাসমণি কর্তৃক নির্মিত কামারহাটি বিধানসভাভুক্ত উত্তর 24 পরগণা জেলাস্থিত দক্ষিণেশ্বরের সেই ভারত খ্যাত ভবতারিণী মন্দির পরিদর্শনে । দক্ষিণেশ্বরের ঐ মন্দিরটি গঙ্গা নদীর (এখানে হুগলি নামে খ্যাত) পূর্ব পাড়ে অবস্থিত । উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনকালে 1847 সালে মন্দিরের কাজ শুরু হলেও 1855 সালে মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছিল । আমরা লঞ্চে করে সেখানে উপস্থিত হলাম । প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে দুপুর 12 টা এবং বিকেল 3 টা থেকে রাত 9 টা পর্যন্ত মন্দির দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে । সকাল ৪ টায় আমরা সেখানে চলে গিয়েছিলাম । তারপর টিকিট কেটে, মোবাইল ও জুতো বাইরে নির্দিষ্ট সংরক্ষণ-কক্ষে জমা রেখে ফুল-বেলপাতা হাতে নিয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশ করে, পুজো দিই । এখানে রয়েছে 12 টি শিব মন্দির, 1 টি রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং 1 টি মূল কালি মন্দির । শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ব্যবহৃত কিছু স্মৃতিচিহ্ন একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে । পবিত্রধাম বিচার করে অনেকেই দক্ষিণেশ্বরকে “বারাণসীর যমজ শহর” বলে অভিহিত করেছেন ।



ক্রমশ চলবে........ 


সুব্রত রায়

 এক্সপেরিমেন্ট

                                    -----সুব্রত রায়

         খারাপ খবর দ্রুত ছড়ায়। ব্যতিক্রম ঘটলো না এবারও। দলে দলে লোক এসে জড়ো হলো অহর্নিশবাবুর উঠোনে । উঠোন আসলে একটা সেকেলে শব্দ। কথাটার সঙ্গে ব্যক্তি মালিকানার ভাবনা জড়িত। ফ্ল্যাটবাড়ির উঠোন সার্বজনীন। অহর্নিশবাবু এখন এখানেই শায়িত। পুরপরিষদে খবর গেছে, জবাব ভাল আসেনি। শব-গাড়ি পাওয়া যায়নি। ব্যর্থতার এই খবর জনতা লুফে নিলেন। অহর্নিশবাবু সেই আলোচনার তলায় চাপা পড়ে গেল।

       বাঁশ ,দড়ি, চাটাই, কলসী জোগাড় করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেল। উৎসবের আবহে অহর্নিশবাবু পড়ে রইলেন একপাশে।

        বহন করছে চারজন। এর মধ্যে মাত্র একজন অহর্নিশবাবুর আওলাদ। বাকিদের পেছনে অলরেডি খরচা হয়ে গেছে একরাউণ্ড। যেতে যেতে পাড়ার কাজের মাসি থেকে রাজনীতি ছুঁয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান ,সব আলোচনাই শুনতে হল অহর্নিশবাবুকে। সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন হবে। কথার বৈচিত্রে আবারও একবার হারিয়ে গেলেন অহর্নিশবাবু।

      উনুনে চাপিয়ে সটকে পড়লেন প্রায় সকলে। অফিস, চেম্বার, স্কুল,কলেজ, দেরী হয়ে যাচ্ছে যে। এখন মাত্র দুজন পেইড ডোম ,আর কেউ কোথাও নেই। ওরা এইমাত্র আড়ালে চলে গেছে। উদ্দেশ্য একটু ঢুকুঢুকু। এই সুবর্ণ সুযোগ।দ্রুত উনুন থেকে নেমে চোঁ-চা দৌড় লাগালেনঅহর্নিশ বাবু । পুরপরিষদকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন মনে মনে ।