সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

হেমন্ত দেবনাথ

       বেড়িয়ে পড়লাম সবুজের নেশায়

                                                                                    ------ হেমন্ত দেবনাথ


জুন ২০২৩ ইং সংখ্যা প্রকাশের পর......... 


            মায়াপুরে অবস্থানকালীন আমরা 14/04/2023 ইং সনে আমি, আমার সহধর্মিণী, কন্যা ও ছোড়দা শুধুমাত্র এই চারজন নবদ্বীপের “বলদেব জীঙ্গ”-র আশ্রমে চলে এসেছিলাম লঞ্চের মাধ্যমে। এখানে আমাদের গুরুগৃহ থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে চৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের বাড়ি বা জন্মস্থান, 60 উচ্চতাবিশিষ্ট চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তি, বিখ্যাত বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দির পরিদর্শন করলাম। ঐ বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দিরে মহাপ্রভুর পাদুকা সংরক্ষিত আছে, যে পাদুকা জোড়া আজীবন বিষ্ণুপ্রিয়া কর্তৃক অর্চিত হয়েছে। শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব সংস্কৃতির ঐকান্তিক সমন্বয়ে নবদ্বীপ ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃত ও ন্যায় চর্চার উপযুক্ত স্থান হিসেবে একদিন নবদ্বীপ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। নবদ্বীপ বাংলার সেন রাজাদের শাসনকালে (সম্ভবত 1159-1206 সালে) বাংলার সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। উল্লেখ্য, 2019 সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবদ্বীপকে "Heritage Town" বলে ঘোষিত হয়েছে। যাক, নবদ্বীপ পরিক্রমা শেষে আমরা পুনরায় মায়াপুরে ফিরে এসেছিলাম ।

        পরিশেষে গত 16/04/2023 ইং তারিখে মায়াপুর থেকে রাধাগোবিন্দকে প্রণাম জানিয়ে 1 ঘন্টা 20 মিনিটে "INTERLITY Exp" ট্রেনের জার্নি করে আমরা কোলকাতার হাওড়া স্টেশনে আসি ও অদূরবর্তী দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে যাই। মন্দির প্যালেস গেষ্ট হাউসে” রুম ভাড়া করে থাকলাম দক্ষিণেশ্বরে । এখানে আমরা 17/04/2023 ইং এবং 18/04/2023 ইং ঐ দুইদিন অবস্থান করেছিলাম ।

        উল্লেখ্য, 17/04/2023 ইং তারিখে সকালে আমরা মেট্রো ট্রেন সহযোগে চলে গিয়েছিলাম দক্ষিণ 24- পরগণা জেলার অন্তর্গত আলিপুর বুটানিক্যাল ও জুওলজিক্যাল পার্কে । 1876 সালের 1 লা জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রিন্স অব্ ওয়েলস 7ম এডওয়ার্ড প্রায় 45 একর এলাকা আয়তনবিশিষ্ট আলিপুর চিড়িয়াখানা উদ্বোধন করেছিলেন । প্রথমেই চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশদ্বারে ঢুকে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু জলযোগ সেরে নিয়ে আমরা পরিক্রমা শুরু করে দিলাম । এখানে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম শিম্পানি, সিংহ, বাঘ, হরিণ, হাতি, জেব্রা, বানর প্রভৃতি । নানা প্রজাতির পাখিও দেখেছিলাম, যেমন- কালিডা পাখি, Red Data List অনুসারে এরা “Least Concern" পৰ্য্যায়ভুক্ত, “Painted Stork” পাখি । এগুলো ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এমু পাখি, গ্রেট গ্রীণ ম্যাকাও পাখি (এগুলো Critically Endangered পর্য্যায়ভুক্ত)।

      স্পন-বিল বা খুন্তে বক (Plantalea Leu Coradia), Rosy Pelicam, যা পাঞ্জাব, আসাম ও দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায়। আর আছে সাদা কাস্তে বক বা White Ibis [Threskiornis Aelhiopica] এগুলো নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়। আর আছে Sulpher Crested Cockatoo বা কাকাতুয়া গ্যালেরিটা - এগুলো নিউ গিনি, অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় ।

         পরের দিন 17/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে এসেছিলাম কোলকাতার হাওড়া জেলার হুগলী নদী (এখানকার গঙ্গা নদী)-র পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও পীঠস্থান সেই বিখ্যাত বেলুড় মঠ। সাংস্কৃতিক সমন্বয়বাদের একটি অনুপম নিদর্শন । শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের পবিত্র অস্থি কাঁধে করে এনে স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে কথিত হয় । উল্লেখ্য, 1938 সালের 10ই জানুয়ারী মন্দিরের উদ্বোধন হয় । প্রায় 40 একর জমির উপর অবস্থিত বিভিন্ন কক্ষের মধ্যে আছে :- মন্দিরের ভেতরে বেদীর উপর অধিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণের শ্বেতমর্মর মূর্তিটি, বিশাল উপসনাকক্ষ, শ্ৰীমা সারদাদেবীর মন্দির, স্বামী ব্রক্ষ্মানন্দ মন্দির, গ্রন্থাগার, আম্রকানন, পুষ্পোদ্যান ইত্যাদি । গঙ্গার ফুরফুরে বাতাস মন্দিরের গা ঘেঁষে যায়, এতে মন এক অনাস্বাদিত অনুভূতি লাভ করে । ভ্রমণ শেষে আমরা আবার হোটেলে ফিরে এলাম ।

       পরের দিন অর্থাৎ 18/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে গেলাম, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ স্মৃতি বিজড়িত ও রাণী রাসমণি কর্তৃক নির্মিত কামারহাটি বিধানসভাভুক্ত উত্তর 24 পরগণা জেলাস্থিত দক্ষিণেশ্বরের সেই ভারত খ্যাত ভবতারিণী মন্দির পরিদর্শনে । দক্ষিণেশ্বরের ঐ মন্দিরটি গঙ্গা নদীর (এখানে হুগলি নামে খ্যাত) পূর্ব পাড়ে অবস্থিত । উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনকালে 1847 সালে মন্দিরের কাজ শুরু হলেও 1855 সালে মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছিল । আমরা লঞ্চে করে সেখানে উপস্থিত হলাম । প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে দুপুর 12 টা এবং বিকেল 3 টা থেকে রাত 9 টা পর্যন্ত মন্দির দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে । সকাল ৪ টায় আমরা সেখানে চলে গিয়েছিলাম । তারপর টিকিট কেটে, মোবাইল ও জুতো বাইরে নির্দিষ্ট সংরক্ষণ-কক্ষে জমা রেখে ফুল-বেলপাতা হাতে নিয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশ করে, পুজো দিই । এখানে রয়েছে 12 টি শিব মন্দির, 1 টি রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং 1 টি মূল কালি মন্দির । শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ব্যবহৃত কিছু স্মৃতিচিহ্ন একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে । পবিত্রধাম বিচার করে অনেকেই দক্ষিণেশ্বরকে “বারাণসীর যমজ শহর” বলে অভিহিত করেছেন ।



ক্রমশ চলবে........ 


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন