সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

শান্তনু মজুমদার

 কুয়াশা   

                                        ----শান্তনু মজুমদার, ত্রিপুরা


       জ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের এক শীতের ঘন কুয়াশা মাখা সকাল। জানুয়ারির ১ তারিখ। কলেজের থার্ড ইয়ারের গৌরবের পলিটিক্যাল সায়েন্স স্যারের বাড়িতে ক্লাস শুরু হয় সাতটা থেকে। কিন্তু গৌরব ঠিক সাড়ে ছয়টায় সাইকেল নিয়ে স্যারের বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে। হাতে লাল খামে লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলের নকশা করা লাল গ্রিটিংস কার্ড।

      গৌরব, পলাশ, রাজা, সুমিতা, মুন্নি, স্বপ্না, অপরাজিতা, জয় সব্বাই একসাথে ক্লাস নাইন থেকে একসাথে স্যারের বাড়ি পড়ছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এবার কলেজ লাস্ট ইয়ার। দীর্ঘ সাত বৎসর একসাথে। ঝগড়া, মান অভিমান, আবার মিল লেগেই থাকে। প্রচন্ড ভালো বন্ধুত্ব তাদের। কিন্তু এই সাত বৎসরের মধ্যে মুন্নির সাথে গৌরবের এক দিনও সামান্য কথা কাটাকাটিও হয় নি। গৌরব বরাবরই সেই প্রথম দিন থেকে মুন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। আর মুন্নিও তাকে বেশ অন্য চোখেই দেখত। এটা সবাই বেশ বুঝতে পারতো।

     এই শীতেও গৌরব ঘামছে। একই ব্যাপার শুধু ঘুরে ফিরে তার মাথায় আসছে। তাদেরই সহপাঠী অঞ্জনের বোনের বিয়ে ছিল গত মাসে। তাদের সবারই নিমন্ত্রণ ছিল। অঞ্জন ওরা বেশ বড়োলোক। কলেজে একজন স্যারের একটি বাজাজ স্কুটার ছাড়া যেখানে আর সবাইর শুধু সাইকেল, সেখানে অঞ্জন হিরো বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানেও ছিল বেশ জাঁকজমক। সেখানে সেদিন শাড়ী পরা মুন্নিকে দেখতে দুর্দান্ত লাগছিল গৌরবের। আর কেন যে কি হয়েছিল মুন্নিও সেদিন বিয়েবাড়ি থেকে বেরোনো অব্ধি গৌরবের সঙ্গ ছারে নি। সেদিনই গৌরব বুঝে গিয়েছিল যে মুন্নিও তাকে সমানতালে ভালোবাসে। পরের দিন অপরাজিতা আর স্বপ্নার কাছেও জেনেছে যে মুন্নি নিজে বলেছে, সে গৌরবকে পছন্দ করে। সেই শাড়ী পরা মুন্নির ছবিই বার বার গৌরবের চোখে আজ ভেসে উঠছে। সে যে আজ লাল গোলাপ সজ্জিত নিউ ইয়ার গ্রিটিংস দিয়ে তার ভালোবাসার কথা ফিল্মি কায়দায় মাটিতে হাটু গেড়ে মুন্নিকে জানাবে। ঠিক যেমন ছোট গাড়ির পেছনে স্টিকার লাগানো থাকে সেইভাবে।

     সাতটা বাজতে আর কিচ্ছুক্ষন বাকি। শীতের সকাল তাই সবাই একটু দেরি করেই আসে। কিন্ত মুন্নি তো ল্যান্ড লাইনে রাতেই জানিয়েছিল যে সে আজ তাড়াতাড়ি আসবে। তাহলে দেরি করছে কেন।

     একটা মোটরসাইকেলের আওয়াজ শোনা গেলো। ঘন কুয়াশা ভেদ করে একটা হেডলাইট সামনে আসছে। অঞ্জনের বাইকের পেছন থেকে শাড়ী পরা জিন্সের জেকেট গায়ে জড়ানো মুন্নি নামলো হাসি হাসি মুখ নিয়ে। বাড়িয়ে দিল গৌরবের দিকে নিউ ইয়ার ফ্রেন্ডশিপ গ্রিটিংস। যাতে লেখা, টু ডিয়ার ফ্রেন্ড গৌরব, উইথ লাভ ফ্রম অঞ্জন এন্ড মুন্নি। 

     এক ঝটকায় যেন গৌরবের সব দুশ্চিন্তা, মুখের ঘাম, হঠাৎ মন খারাপের অনুভূতি সব চলে গেলো। যেন নিজেকে প্রচন্ড হালকা, দুশ্চিন্তা মুক্ত লাগছে। ভগবান কে ধন্যবাদ জানিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই সোজাসুজি একদম লো কলেজ। এবার জীবন গড়ার পথে মন দিতে হবে। লাভ ইস নট লাইফ, ইটস আ পার্ট অফ 

লাইফ। কুয়াশা কেটে রোদের আলো পড়ছে গৌরবের চোখে মুখে।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন