বেলুন
-----রনিতা নাথ
-----রনিতা নাথ
প্রচুর হইহুল্লো়, গান, নাচ, মোমবাতি নেভানো, বেলুন ঠুস ঠাস ফাটানো, কেক কাটা, জন্মদিনে পাওয়া উপহার গুলি কে কার আগে দেখবে। রঙিন কাগজে মোড়া গিফটের বক্সের ভেতর কি আছে তা নিয়ে কৌতুহলী দৃষ্টিতে ছোট ছোট মাথা গুলিয়ে এক জায়গায় হয়ে যায়।
এমন এক মুহূর্তে সামিল হয় সৃজু টুষ্টির জন্মদিনের পার্টিতে। টুষ্টি সৃজুর প্রিয় বন্ধু। প্রাইমারীতে পড়ে তারা। মায়ের সঙ্গে সৃজু জন্মদিনের পার্টিতে যায়। এই দিন সন্ধ্যা হবার আগেই পার্টিতে যাবার জন্য নিজে নিজেই তৈরি হয়ে নেয়। সেখানে গিয়ে বন্ধুদের সাথে আনন্দে উল্লাসে মেতে থাকলেও একটি বেলুন সবার আড়াল করে আগলে রাখে। সৃজুর প্রিয় বস্তুর মাঝে বেলুন একটি। মাকে বলে বাড়ি নিয়ে যাবে। কিন্তু মায়ের লাল চোখ নিষেধ করে। তবুও বেলুন থেকে মন সরাতে পারে না সৃজু। তখন সৃজু বন্ধুর মায়ের কাছে হাজার কষ্ট করে বেলুনটি নিয়ে যায়। আর বলে সেটি বাড়ি নিয়ে যাবে। টুষ্টির মা খুশি হয়ে তার আবদারে বেলুনটি সযত্নে সরিয়ে রাখেন। খাওয়া দাওয়া শেষ হলে বাড়ি যাবার সময় বেলুনটির কথা সৃজু বন্ধুর মাকে বলতে ভুল করে না। বেলুন নিয়ে রওনা হয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। দাদু ঠাম্মাকে দেখাবে সেটাই বায়না। প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা বাড়ি অব্দি। গাড়িতে উঠে যেতে যেতে ফুর ফুর শব্দে বেলুনটিকে বাতাসে উড়িয়ে নিয়ে চলে সৃজু। বাড়ির সামনে গাড়ি থামতে না থামতেই দরজা খুলে মাকে ফেলে রেখে দৌড়ে ছুটে যায় বাড়ির দিকে। গেইট খুলে বেলুন হাতে উড়িয়ে প্রাণপণ ছুটতে থাকে দাদু ঠাম্মাকে দেখানোর বুকভরা আনন্দে। চিৎকার করতে থাকে আমার হাতে কি!
কিন্তু সেই আওয়াজ ঘর অব্দি ঠাম্মার কানে গিয়ে পৌছায়না। গেইট পেরিয়ে উঠানে প্রবেশ করার আগে মাঝখানটায় সৃজুর ঠাম্মার হাতে সাজানো সুন্দর ফুলের বাগান। বাগানটা চারিদিক দিয়ে বাঁশের বেড়ায় ঘেরা। তাতে বাগানের সৌন্দর্যে কোন আঁচ লাগেনা। কিন্তু সৃজু আনন্দে আত্মহারা বুঝতে পারে না কখন বাগানের বেড়ায় তার বেলুন ঠেকে যায়।
লাগা মাত্রই বেলুন ঠাস !
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন