সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
সম্পাদকীয়
হেমন্তর শীতের পর এবার শীতের শীতের পালা। পারদ নামতে শুরু করলো সর্বনিম্নের দিকে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা দিগন্ত মিটিমিটিয়ে তাকাচ্ছে সূয্যি মামার দিকে। কনকনে এই শীতের প্রভাতে হারিয়ে যায় মন এক স্বপ্নের জগতে। যেখানে ছনের ছাউনি দেওয়া একচালা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে চা পূর্ণ মাটির পেয়ালায় চুমু দেবো প্রিয়জনদের সাথে।
প্রিয় পাঠক, 'শিশু দিবস' সংখ্যার পর আবারো হাজির হলাম "সাহিত্য নয়ন"- এর নবম সংখ্যা নিয়ে আপনাদের ভালোবাসার টানে। কর্মব্যস্ততাই কর্ম পিপাসু মানুষের প্রথম প্রত্যাশা। কর্মব্যস্ততা মানবজীবনকে করে তুলে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর। আর এই ব্যস্ততায় সময়ের অভাবে বিলম্বিত হলো এবারের সংখ্যা প্রকাশে। এবারের সংখ্যায়ও কলমের কালি দিয়ে মিলন হলো এপার বাংলা ও ওপার বাংলার কবি-লেখকদের সাথে ত্রিপুরার কবি-লেখকদের। কবি-লেখকদের অসাধারণ সৃষ্টি সংখ্যাটিকে অনন্য মাত্রা দান করেছে। প্রচ্ছদ শিল্পী ভাস্কর মজুমদার একটি অসাধারণ প্রচ্ছদ এঁকে সংখ্যাটিকে পূর্ণতা দান করেছেন। সাহিত্যকর্মী, সাহিত্য ব্যক্তি, সাহিত্য প্রেমী এবং সর্বপরী পাঠকরা এর মুল্যায়ণ করবেন এবং অবশ্যই মন্তব্যের ঘরে মন্তব্য করে আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করিয়ে দেবেন এই আশা রাখছি।
অনেক বকবক করলাম। আর বেশি কিছু বলছিনা। আগামী সংখ্যায় না বলা কথাগুলো বলে ধন্য হবো আপনাদের ভালোবাসায়।
ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধাসহ-----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
অমল কুমার মাজি
মা
------অমল কুমার মাজি
সৃষ্টির সুখ থাকে
প্রস্থিত প্রেমের গহীনে
বুকের গভীরে থাকে
পীযূষের ধারা।
কখনো দয়িতা রূপে
কখনো সে কন্যা
মেটে না মাতৃত্ব-সাধ
ভালবাসা ছাড়া !
নিরন্তর ফল্গুধারা
বালুকা-গভীরে
ব'হে চলে তবু তারে
দেখা নাহি যায়
পাষাণী অহল্যা-বক্ষে
গহন-নিবিড়ে
বাসব-কলঙ্ক শুধু
করে হায়-হায়!!
কবিতা সরকার
শুধুই দৃষ্টিকোণে
-------কবিতা সরকার
চারিদিকে বিজ্ঞাপন
খোয়া গেছে একজন,
সবখানে কোলাহল
খোঁজ করে দলবল।
না পাইয়া তারে বেঁহুশ বদনে,
কহে শুধু বারে বারে,
হায়রে মোর প্রানপ্রিয় সুখপাখী!
কোথায় হারালি তুই?
হতাশ নয়নে ভাবে একমনে
কিভাবে হারালো,
কোথায় কোন পথে?
সময়ের রীতে
বুঝিল সে বটে,
যাই না তো সুখ
কভু মাঠে ঘাটে।
ছিল আর আছে - চির অম্লানে
দৃষ্টিতে নয়.....
সে যে শুধুই দৃষ্টিকোণে।
হেমন্ত দেবনাথ
তিমির বিদারী
------হেমন্ত দেবনাথ
ছুটেছে বিশ্ব গতির নেশায়
রূপ-রূপান্তরের পথে---
নবছন্দে পথ-চলা তার
হবে না কভু স্থবির।
দিগন্তের-ই লাল সূর্য
করেছে প্রকাশ মহামানবের সৌর্য।
দিগন্তের হাওয়ার বেগে তিমিরের অপনোদন।
চিন্তনের বিশুদ্ধিতে চলার পথ
যেন আনন্দঘন।
দিনাঙ্কঃ-১০/১২/২০২০ ইং।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
শিল্পী
-----কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
ধন্য আমি --- ধন্য মোর জীবন
শিল্পী হবে মোর বন্ধু
ভেবেছি কী কখন!
শিল্পীর মন অনেক বড়ো
সৃষ্টিই তার লক্ষ্য ;
নেতির সাথে ঘোর বিরোধ
ইতির সাথে সখ্য।
নিত্য নতুন দিশা দেখায়
তাতে কাটে কতো পক্ষ
হাতে কলমে ভবিষ্যতকে
করে তোলে পরিপক্ব।
দিনাংকঃ-২৪-৫-২০২০
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
বেকারত্বের মর্মযন্ত্রণা
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
স্বপ্নের ডালি সাজিয়ে জন্মদাতা সেদিন-
পাঠিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে ঘুচায়ে দারিদ্রতা
মুছায়ে অশ্রুধারা,তরুলতা হবে মহীরূহ,
এ দারুণ প্রত্যয়ে।
বাড়ন্ত স্বপ্ন,ভবিষ্যৎ এর হাঁক;
নিত্য চড়াই উৎরাই,জীবন আস্ফাট,
ফাইলবন্দী যোগ্যতার শংসাপত্র,
বেকার যুবকের খাতায় খচিত নাম।
ছুটি এদিক ওদিক, দিকভ্রষ্ট পথিক যেমন
জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে অবিরাম পথচলি,
হয়তো জুটবে চাকুরী,ঘুচবে বেকারত্ব
পলিত কেশবতী জননী হাসবে জয়ের হাসি।
পড়ন্ত বেলার পথ বেয়ে ফিরে আসি আলয়ে,
নিরাশার বালুচরে স্বপ্নরা কাঁদে অঝোরে,
মাথাকুঁড়ে ফাইলবন্দী যোগ্যতা,
জন্মদের বিশ্বাস বেকারত্বের বেড়াজালে অস্ফুট।
নির্বিকার বুদ্ধিজীবী,শংসাপত্রের নীরব ক্রন্দন,
তবুও আধাঁরের শেষে আলোর হাতছানিতে
ভোরের পথে আবার যাত্রাশুরু,একদিন আসবে সময়
দূর ভবিষ্যতে হবে অপসারিত বেকারত্বের মর্মযন্ত্রণা।
পায়েল মজুমদার
লড়াই
-------পায়েল মজুমদার
জীবনের সে কি পরিহাস,
জন্মের পর থেকে শুরু---
লড়াই,লড়াই আর লড়াই।
মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে,
লড়াই করতে হয়েছে পরিবারের সাথে।
মেয়ে বলেই,লড়াই করেছি লেখাপড়া শিখার জন্য।
আমি লড়াই করেছি--
নিজের স্বাধীনতার জন্য,
মুক্তির জন্য,সমাজে বেঁচে থাকার।
আমি লড়াই করেছি,
মানবের সাথে মনুষ্যত্বের।
আমি লড়াই করেছি,
ভালবাসার সাথে অর্থের।
লড়াই করতে করতে ক্ষত-বিক্ষত আমি,
ডানা কাটা পাখির মতো ছটপট করছি আজ।
আমি আর পারছি না
ক্লান্তি আমায় ঘিরে নিয়েছে।
আজ অবসর নিতে চাই,
লড়াই এর ময়দান থেকে চিরতরে।
মধুমিতা ভট্টাচার্য
শেষ পাতার মতো
------মধুমিতা ভট্টাচার্য
মন খারাপী শব্দগুলো
একঝাঁকে উড়ে বসে জানালায়,
টুপ করে তা ধরতে গেলেই
হারায় হাঁকা ডাকায় ।
একটা ঘর, দুইটা ঘর
সব ঘরেতেই দিচ্ছে উঁকি
তারপরেতে জোনাক হয়ে
আঁধার পথে তার পাড়ি ।
ভাবনার আকাশ কুসুম
নীলদিঘির জলে শালুক হয়ে ফোটে,
বিকেল শেষের সন্ধ্যে পিওন
ডাকটি পাড়ে চাঁদের পাহাড় টপকে ।
জলপরীটির পায়ের ঘুঙুর
ঝিঙুর হয়ে মাঝরাতে ডেকে ওঠে ।
তার অনুরণিত ছন্দ রাগ
মনের তারে ঝঙ্কার তোলে ।
ছন্নছাড়া স্মৃতির ঘরে
অধিকার বোধের ঝড় ঝাপটা,
ভেতরে যতই টানাটানি
বাইরে বাঁধন জোড় দেওয়া ।
তবুও আশাটা 'শেষ পাতার 'মতো,
যতক্ষণ সবুজ
বেঁচে থাকাটাও ততক্ষণ ।
শুক্লা রানী দাস
রাধার অভিমান
------শুক্লা রানী দাস
বাশিঁ কেন বাজে না বৃন্দাবনে?
রাধা কেন যায় না ছুটে যমুনায়
বাঁশি তান তুলেনা কদমতলায়
রাধা কাঁদেনা ধোঁয়ার ছলনায়
শ্রীমতি তাকায় না মেঘ পানে
শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তার অভিমান
কৃষ্ণ কতই সাধে রাধার মান
পরমাত্মায় মিলন হয় দুজনে
চিরসখা দুজন জনমে জনমে৷
লিটন শব্দকর
খেলাঘর-২
-----লিটন শব্দকর
কেমন অকারণ সবকিছু
হেসে খেলে মুক্তি
সূর্যেরই গ্রহণ পেরিয়ে যায় একবেলা শেষে,
জীবন তো ভালোরাখার অর্থ লিখে রাখে পরতে পরতে।
কবিতা জলছবি নয়,একটা আত্মীয় রামধনু
যেখানে বহুদিন যায়
-ঠিকানা নেই কোনো তুমি'র
ঠিকানা নেই কোনো আমি!
শুধু বৃষ্টির পর সুখি আকাশ সুখি বাতাসের মুখ,
শহরে কিছু নিশ্বাস ধরে রাখে নামধাম
বাকি হাঁটাপথই বেনামী।
অভিষিক্তা রায়
মান্যতা
------অভিষিক্তা রায়
বাক্যগুলো হিজিবিজি,কাটছে মনে দাগ-
শব্দেরা আজ হয়েছে বোবা,চাহনি নির্বাক;
শ্রোতারা যে ব্যস্ত ভীষন,যুক্তিতর্ক বোধে-
মন জানালায় খিল পরেছে,বিবেকের প্রতিরোধে;
কল্পনাতে গল্প বাঁচে,আগলে ধরে খাতা-
কলম খোঁজে কালির ছোঁয়া,পাতার স্পর্শে শূন্যতা;
ভাবনাগুলো কাব্যি করে,বেহিসেবি ধরন-
শিস ভাঙা ওই পেন্সিলে তাই স্তব্ধতার বিস্ফোরণ;
স্তব্ধতাতেই জীবন পাবে সন্ধি করার উপন্যাস-
ধ্বনি ছাড়াই জমুক তবে যোগ-বিয়োগের সহবাস।।
শ্যামল রায়
সূর্য হয়ে থেকো
------শ্যামল রায়
আমি তো বেশ আছি, ভালো আছি
অন্ধকার দেখে দেখে । তবুও
নদীর পাড় ভাঙ্গা শব্দ বন্ধ রেখে
উষ্ণতা খুঁজে নেবো
তুমি পাশে থেকো
সূর্য হয়ে থেকো।
এই পৃথিবীর সবকিছু সুন্দর
ভাবনাটার রকমভেদ হতে পারে
রং-তুলিতে নানান ছবি হতে পারে
তবুও আমরা চাইছি সুন্দরতা
বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্নে মোড়া
সুন্দর একটা পৃথিবী---।
তাই কপূরের মত উবে যাওয়া
ভালোবাসা, গতিশীল চিন্তা, উন্নয়ন
চাইনা কখনো---
চিরস্থায়ী সবুজতা নিয়ে,
নীল আকাশ দেখবো
এ পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর
আমরা সকলেই পাশাপাশি থাকবো
ভালোবাসাবাসিতে---
তুমি সূর্য হয়ে থেকো খুব কাছাকাছিতে।
শুভময় রায়
সেদিনের ভয়ঙ্কর রাতে
--------শুভময় রায়
যেসময়ের গল্প বলছি তা আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের। তখনও আমাদের বর্ধমান জেলার অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি। আমার মামার বাড়ি দামোদর নদের ধারে বেড়ুগ্রামেও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া আসেনি। তবে ছোটোবেলা থেকে মামারবাড়ি যাবার একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিল মামাদাদু। সম্পর্কে উনি মায়ের মেজমামা, তাই আমার মামাদাদু। কোলকাতায় চাকরি করতেন, বিয়ে করেননি, তাই আমার মামারবাড়িতেই চলে আসতেন ছুটি পেলেই। পরে চাকরি ছেড়ে তো পাকাপাকি ভাবে বেড়ুগ্রামেই রয়ে গেলেন। সারাদিন মামাদের চাষের কাজের তদারকি করতেন। এই দাদুর ছিল অজস্র গল্পের সম্ভার। আমরা মামাতো, মাসতুতো ভাই-বোনেরা দাদুকে ঘিরে থাকতাম। একবার এমনই এক গল্পের আসরে আবদার করলাম,"দাদু, আজ একটা ভুতের গল্প শুনবো।"
দাদু বললো, "তোরা এখনকার ছেলে, ভুতে বিশ্বাস করিস?"
আমি বললাম, "খুব একটা করি না, কিন্তু ভয় একটা লাগে।"
দাদু বলল, "বেশ আজ তবে তোদের আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা আজও আমার কাছে যেমন ভয়ের, তেমনি বিস্ময়ের।"
দাদুর জবানিতেই গল্পে বলছি।
"তখন আমি অনেক দেরি করেই, প্রায় চার পাঁচ মাস অন্তর বেড়ুগ্রামে আসতাম। তখন বেড়ুগ্রাম ছিল রীতিমতো বন জঙ্গলে ঘেরা, দিনের বেলাতেও শেয়াল ডাকতো।রাতে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর, তার ওপর সাপখোপের ভয় তো ছিলই। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হতো বর্ষাকালে, খেয়া ঘাটে মাঝিদের পাওয়া যেত না সবসময়। এমনি এক বর্ষার সকালে চিঠি পেলাম, বড়দি মানে তোদের দিদুন ডেকে পাঠিয়েছেন পিসিমার শরীর অসুস্থ। পড়িমড়ি করে অফিসে ছুটি নিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু হাওড়া থেকে মেমারি আসতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। জামালপুরে এসে পৌঁছাবার আগেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। আমি তো প্রমাদ গুনলাম।খেয়া ঘাটে কেউ নেই।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি পড়ছে, আমি একা। একটু ঘাবড়ে গেলাম। একটা গাছের নীচে দাঁড়ালাম। ভাবছি এখনও অনেকটা রাস্তা যেতে হবে,আর নৌকা না পেলে বাঁধের এর পাশ দিয়ে শ্মশানের ওপর দিয়ে যেতে হবে। এমনিতে আমি খুবই ডাকাবুকো, ভুত বা অশরীরী আত্মা এসবে ভয় খাই না। কিন্তু রাত বিরেতে একা যাওয়াটাও একটু বিপদের। যদিও সাথে কোনো দামি জিনিস নেই, ব্যাগে পিসিমার পছন্দের একটু সন্দেশ আর পকেটে আছে কিছু টাকা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বৃষ্টিটা ছেড়ে এল,আমি তাকিয়ে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই।ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে বাঁধ বরাবর হাঁটতে লাগলাম। এমনিতে এই রাস্তা আমার তো চেনা, কিন্ত সেদিন যেন কেমন হঠাৎ করেই একটা গা ছমছমে ভাব লাগলো। একটা রাতচড়া পাখি ট্যাঁ ট্যাঁ করে দূরে ডেকে উঠলো। বোধহয় অমাবস্যা ছিল, আরও অন্ধকার চারিদিকে। আমি হনহন করে হাঁটছি। প্রায় মিনিট পনেরো হাঁটার পরে হঠাৎ দেখি আমার পাশেই একটা ছাগল 'ম্যা ম্যা' করে ডেকে উঠলো। আন্দাজে ভাবলাম রাত প্রায় ন'টা, এত রাতে নদীর ধারে ছাগল! নির্ঘাত চড়তে এসে বৃষ্টিতে আটকে পড়েছিল।আমি কিছু না বলে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ ভাবলাম, আচ্ছা নদীর বালিতে ছাগল চড়তে আসবে কেন? তারপর যেই তাকিয়েছি দেখি ছাগল উধাও! একটু থমকে গেলাম, কিন্তু সাহসটা হারালাম না। হাঁটতে লাগলাম বালির ওপর দিয়ে। কিন্তু এবার কিছুটা গিয়েই দেখি একটা সাদা গরু, মসমস করে ঘাস খাচ্ছে। এবারে সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। বালিতে গরুর ঘাস খাবার তো কথা নয়। আমি কিন্তু থেমে পড়িনি, জানতাম অশরীরী আত্মাকে এগুতে দিলে চলবে না। হঠাৎ গরু চলে গেল, আর একটা সাদা কাপড় উড়তে উড়তে শ্মশানে গিয়ে পড়ল। মনে মনে খুব ভয় পেলেও টর্চটাকে শক্ত করে ধরে মনে মনে মা দুর্গাকে ডেকে এগুতে লাগলাম। জানি ভয় পেয়ে থেমে গেলেই আমার আর নিস্তার নেই। ভাবতে ভাবতে শ্মশানের কাছে আসতেই দেখি বামদিকে বিরাট এক শাল গাছ। এখানে তো শাল গাছ কোনোদিন থাকেনি! তার মানে আমায় সেই আত্মা এখনও পিছু ছাড়েনি।আমার এবার মনে সাহস হারাতে থাকলাম।পাগলের মতো দৌড়াতে লাগলাম, যে করেই হোক আমায় গ্রামে পৌঁছাতে হবে, না হলে আজ আমায় ছাড়বে না এরা।
গ্রামের মুখেতেই একটা আমগাছ ছিল। দৌড়াতে দৌড়াতে সেখানে আসতেই দেখি সাদা কাপড় পরা এক ছায়ামূর্তি আমগাছের ডালে বসে পা দোলাচ্ছে আর বলছে "সন্দেশ না দিয়ে কোথায় যাবি?"
আমার মনে পড়ল পিসিমার জন্য ব্যাগে সন্দেশ আছে।আমি ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। পায়ে আমার একটুও শক্তি নেই।আর সেই ছায়ামূর্তি বারবার বলেই চলেছে।
হঠাৎ দেখি মাঝের পাড়ার দীনুকাকা গান গাইতে গাইতে আসছেন ছিপ নিয়ে নদীর দিকে। দীনু কাকার মাছ ধরার নেশা খুব জানি। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,"দীনু কাকা! আমায় বাঁচাও।"
দীনু কাকা 'কে' বলেই বললেন "অ সদানন্দ!তা এত রাতে তুমি!আসার কথা ছিল বুঝি!" তারপর দেখি সেই ছায়ামূর্তিকে দেখেই বললেন,"যাঃ!যত্তসব ঘাটের মড়া"।
বলতে বলতে ছায়ামূর্তিও অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি তো অবাক। আমায় কিছু বলতে না দিয়েই তিনি বললেন, "বুঝলে, রাত বিরেতে কত কি হয়!তা তুমি তো বাড়ি যাবে।চলো এগিয়ে দিয়ে আসি তেমাথা অবধি।"
রাস্তায় আসতে আসতে দীনুকাকা অনেক কিছুই বললেন। আমি বললাম,"কাকা, আজ আপনি না এলে বোধহয় মারাই যেতাম।!"
বলতে বলতে তে মাথার মোড়ে আসতেই বললেন, "যাও দিদির বাড়ি চলে যাও, আমি একটু নদীর দিকে যাব।"
দিদির বাড়িতে পৌঁছাতাই দিদি বললেন,"কিরে এত রাত হলো! আমরা ভাবলুম আসবি না আজ।"
আমি এক এক করে সব কথা বলতেই ওরা তো কেমন হয়ে গেল।বড়দির শাশুড়িমা একটু আগুন জ্বেলে বললেন তাপ নিতে আর একটা লোহা ছুঁতে। আমি বললাম,"কেনো?"
বড়দি বললেন, "কি দীনুকাকা বলছিস? দীনুকাকা আজই মারা গেছে সকালে, বিকালে সবাই তাকে নদীতে দাহ করে এল।"
আমি তো শুনে হতবম্ব! এতটা রাস্তা একজন অশরীরীর সাথে গল্প করতে করতে এলাম! আবার সে- ই আমায় বাঁচালো!"
এই বলে মামাদাদু থামলেন। আমরা ভাই বোনেরা চুপ করে শুনছিলাম। সত্যিই আমাদের গায়েও যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো দাদুর জীবনের এই ভয়ঙ্কর রাতের কথা শুনে।
জগন্নাথ বনিক
কলম হলো শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার
------জগন্নাথ বনিক
কলম যে আমার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার
সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখবো বারেবার ।
তাই তো আমার কলমটাকে বানিয়েছি
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখার তলোয়ার ।।
জানি আমি পেরে উঠবো না
অপরাধীদের সাথে।
তাই তো আজ কাগজ আর কলম দিয়ে
লিখতে থাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ।।
সাহস করে কলম ধরে,
শপথ নিয়েছি আমি ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা গুলো
টুকরো টুকরো কাগজে লিখে রাখি আমি ।।
কলম দিয়ে লিখব যত
অপরাধীরা ভয়ে কাঁপছে তত ।
বন্ধুকের চেয়েও বেশী শক্তিশালী
কলম যে আমার হাতের শক্তি ।।
সমাজটা আজ অন্ধকারে
ভয়ে কাঁপছে চারিদিকে ।
সমাজের আলো ফেরাতে হলে
কলম যে থাকতে হবে সবার হাতে হাতে ।।
রাজীব পাল
পঙ্গুত্ব
------রাজীব পাল
ভারী শরীরকে হালকা করার পালকগুলি
আমার সঙ্গী হয়না,
আলগা করে ছাড়িয়ে নেয় নিজেদেরকে।
অভিব্যাক্তি অভিযোজনেও তাদের জড়াতে পারিনা
আজ তাই আমার আকাশে উড়বার সাধ্য নাই।
ফুলকা পাখনার চরপড়ালি, আমার সঙ্গী হয়না,
ছাড়িয়ে নেয় নিজেদেরকে এই দুর্বাসা থেকে।
অভিব্যাক্তি অভিযোজনেও তাদের জড়াতে পারিনা
আজ তাই আমার জলে ডুবে থাকার সাধ্য নাই।
আছে শুধু কলঙ্কিত ভারী হাত
তাই আকাশ আর পাতালের মাঝে ফেঁসে
আজ আমি পঙ্গু কুপোকাত।
পরদেশী ভালোবাসা কাজী নিনারা বেগম
পরদেশী ভালোবাসা
-------কাজী নিনারা বেগম
রাতের নির্জনে একাকী
নিঃস্ব হৃদয়,,
হাতরে এক অচেনা মানুষকে।।
গাঢ় অন্ধকার ভালোবাসায়,,
খুঁজে বেড়ায় এক অজানা অনুভবে।।
অনুভূতি তবে দিশেহারা হয়ে
মৃত্যুতে,,
নিঃশব্দে নীরবে ভালবাসায় আনমনা বাহানা রুদ্ধ দ্বারে।।
নামুক না হৃদয়ের রঙিন তুলিতে,,
অপেক্ষার ঘোলাটে আলো আঁধারে বেমানান আবেগের জমা ভিড়ে।।
উন্মুক্ত হোক বন্ধ কপাট,,
সিক্ত কাঠ গোলাপ ফুলের পাপড়ির ছোঁয়ায়।।
বেঁচে থাকে অফুরন্ত স্বপ্ন মনের গহীনে,,
তার মুখে অবিচ্ছিন্ন হাসি আছে।।
নীরবে নিভৃতে নির্জনে ,,
সে দৃঢ়তা গোপন করে যা প্রায় ভীতিজনক।।
জীবনে কিছু প্রশ্ন থাকে তার উত্তর নেই ,,
কিছূ ভুল থাকে তা শোধরানো যায় কি??
বেদনার বিষাদ কালো ছায়ায় বিদূর ক্লান্তি পথের তুমি ,,
বিমোচিত শ্রান্তি রথে মেটাবে বুকের প্রবল পিপাসা ।।
পলাশ পোড়েল
মাটির ফুলদানি
------পলাশ পোড়েল
হৃদয়ে ভালোবাসার মিনার গড়তে
খুঁজি আঁচল
পাবো জানি,
ঘাতকের অনুগত বুলেট আসে
ভেঙে দেয় সব মাটির ফুলদানি।
সময় নীরবতা নিয়ে হাঁটে সীমান্তে
বিশ্বাসের সেতুতে
স্বপ্ন ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
প্রত্যাশার ঝড় তখন আসছে-
তৃপ্তির নিশ্বাস খেলে মাটির বুকে শুয়ে।
অনুপ কুমার রায়
কেউ আসে না
-------অনুপ কুমার রায়
মনে কথা মনেই রয়ে যায়,
ভাই, বোনের সঙ্গ যে না পায়।
সম্পর্কের আড্ডায় ছিলাম বহু,
সর্বনাশা শীতে, দেখা মিলে কভু।
ওরে আমার দুষ্টু গোপাল ,
সময় থাকতে ধররে হাল ।
কররে কিছু আগ বেলাতে,
নষ্ট করিসনা ছেলে খেলাতে।
আগের মত কেউ আসেনা,
জানার ছিল কেন আসেনা ?
রাগ, অনুরাগ বৃথাই করিস,
সম্পর্কের আড্ডায় দেখা করিস।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
চুপ চতুর্দশপদী
------সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
চুপ থাকার থেকে সপাটে
না উচ্চারণই ভালো।
প্রতিধ্বনিতে মিলিয়ে যাক
আবছা সম্পর্কগুলো।
উপহাসের থেকে কটু ভাষ
অনেক স্বাস্থ্য সম্মত
বাঁকা হাসির তর্জমার
প্রত্যাঘাতও অসংযত।
বন্ধনের বন্ধ্যাত্ব অনেকটা
শুকনো ক্ষেতের মতো
চোখের জলে চাষ করলে
অনুশোচনায় ডেকো।
জীবন কি আর মুহূর্ততে থামিয়ে রাখা যায়!
বসন্তকে জানিয়ে রেখো শীতের অভিপ্রায়।
সুুজন দেবনাথ
বড্ড অসহায়
------সুুজন দেবনাথ
একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে নেমেছি পথে,
বাস্তবতার ভিড়ে পূর্নতা পাওয়ার আশে।
মনে হয়,,
কুল হীন সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসেই চলেছি
একাকিত্ব আমি, কেউ নেই পাশে।
অসহায় অনুভব করেছি অনেক
কেটেছে জীবন একা।
চলতে পথে মিলেছে কত, ভেবেছি আপন
স্বপ্ন ভেঙে হৃদয়াতুর হলো।
আলো ভেবে আলেয়ার পিছে
ছুটেছি বহুকাল,
অবশেষে দেখি সব স্বার্থান্বেসির পাল!
নিস্বার্থে ভালোবেসেছি,
দিয়েছি মন উজার করে,
দু-হাত ভরে করেছি গ্রহণ সবাকার করুনা।
অবহেলায়, তাচ্ছিল্যতায়
একটা একটা করে কখন যে,
আমার মুঠোভরা স্বপ্নরা হারিয়ে গেলো
বাস্তবতার ভিড়ে বুঝতেই পারলাম না।
পিছন পানে তাকিয়ে সেই ভিড় থেকে
হাড়ানো স্বপ্ন কুড়িয়ে নেবার সাহস হয়নি,
মেটেনি সেই আশা দু-চোখে কুয়াশা,
আর স্বপ্ন নয় বাস্তব নিয়ে বাঁচা এবং
বাঁচানোর তাগিদেই চাই
এক নব উন্মুক্ত আলোকিত সূর্যোদয়।
জীবনের চরম শিখরে পৌঁছাবার বৃথা চেষ্টায়, শূন্যতার পথপ্রান্তে দাড়িয়ে আজও
বড্ড অসহায়।।....
সুস্মিতা মহাজন
তোমার হতে পারিনি
------সুস্মিতা মহাজন
তোমার ছলনার ছল বুঝতে পারি না বলে,
আমি অভিমান করে থাকি।
অতীব সুন্দরী নই বলে,
তোমার প্রেমিকা হয়ে প্রেমের স্পর্শ চাইনি।
আমি বিশাল আকাশ হতে পারিনি বলে,
তোমায় আশমানী রঙের তুলিতে রাঙাতে পারিনি।
আমি কোনো লেখিকা নই বলে,
তোমায় নিয়ে আজও কোনো কবিতা লিখতে পারিনি।
আমি উড়ন্ত পাখি নই বলে,
তোমায় নিয়ে ওই দূরে উড়ে যেতে পারিনি।
তোমার মনের মতো হতে পারিনি।
এলিনা সাহা
প্রেম নিবেদন
------এলিনা সাহা
অনেক লিখলাম প্রেম নিয়ে
এবার তোমাকে প্রেম নিবেদন করতে চাই
বাবা,,
আমি সেই বেয়াদব
অভদ্র মেয়ে যতই হইনা
কেন উপর থেকে ৷
তোমার কাছে আমি
সেই ছোট্ট মেয়েটাই রয়েছি
সেই ছোট্ট সোনাটা ৷
তুমি ছাড়া এক মুহূর্ত
আমার কাঁটবে না
সারা জীবন এই ভাবে আগলে রেখো ৷
তোমাকে হারাতে যে চাই না বাবা ৷
বাবা এই ভাবে তোমার
মুখ দেখে পেরোতে চাই
সব বাঁধা বিঘ্ন ৷
জীবনটা কত কঠিন সেটা
তোমায় দেখে বুঝি ৷
আবার ,তোমায় দেখে ঐ
আমার দুনিয়াটা সহজ হয়ে যায় ৷
কারন তুমি যে সাথে আছো সারাক্ষণ আমার ৷
আমার সব আয়ো তোমার হোক ৷
আমার মায়ের সিঁথির
সিঁদুর অক্ষয় হোক ৷
কিছু বড় করার সার্মথ্য
তো আমার হয়নি বাবা
ছোট্ট একটা গোলাপ দিয়ে
আজ না হয় তোমায়
প্রেম নিবেদন করলাম ৷