সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১
সম্পাদকীয়
হঠাৎ মনে পড়ে গেল এক বছর আগের কথা। সেই বসন্তের শেষ রজনীর বিদায় লগ্নে ভারাক্রান্ত হৃদয়ে যখন শুয়ে ছিলাম এক নতুন সূর্যের অপেক্ষায়, তখন কর্ণযুগল তৃপ্ত হয়েছিল স্বপ্নে শুনতে পাওয়া এক বুড়োর কন্ঠে বেজে ওঠা গানে ---- "এসো হে বৈশাখ এসো এসো"। তাই প্রথমেই নিবেদিলাম শতকোটি প্রণতি এই মহামানবের চরণে।
১৪২৭ বঙ্গাব্দ ১লা বৈশাখ মঙ্গলবার, আমাদের বাস গ্রহে চলছিল এক মহা বিপর্যয়। এক মারণব্যাধির হাত থেকে রক্ষা পেতে আমরা নিজেদেরকে গৃহবন্দি করে রেখেছিলাম। সেই গৃহবন্দি জীবনের অবসর সময়টুকু কাজে লাগিয়ে ১৮ জন কবি-লেখক- প্রাবন্ধিকের লেখনীর স্পর্শে যত্ন নির্মিত "সাহিত্য নয়ন" নামক এই তরীখানি আমরা ভাসিয়ে দিয়েছিলাম মহাসমুদ্রের দিকে।
প্রিয় পাঠক প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশের পর আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা অভিভূত। আর তাই হয়তো আপনাদের ভালোবাসার টানেই আবারো হাজির হতে পেরেছি অনেক আশা ও স্বপ্ন জড়িত "সাহিত্য নয়ন" - এর "নববর্ষ" নামক ত্রয়োদশতম সংখ্যা নিয়ে। আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সমৃদ্ধ "সাহিত্য নয়ন"-এর এই পথ মসৃণ ও সুগম হোক। শুভকামনা রইল নতুন বছরের শুভারম্ভে।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধাসহ-----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
প্রাপ্তি(শুভেচ্ছা বার্তা)
প্রাপ্তি(শুভেচ্ছা বার্তা)
প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন----
এখনি পত্রিকা দেখতে পেয়েছি। সম্পাদকের এই প্রয়াসকে অভিনন্দন। এটি হবে একটা দর্পণ, যা সমাজ থেকে গ্লানি দূরীকরণের সহায়ক । এর সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
মধুমঙ্গল সিনহা লিখেছেন-----
খুব ভালো লাগলো।আসুন সবাই মিলে এগিয়ে চলি।অসংখ্য ধন্যবাদ....
দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন-----
উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ও প্রকাশক- সম্পাদক সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি৷ এপ্রয়াস আগামীর দিকে এগিয়ে চলুক৷ এউদ্যোগের জন্যপ্রয়োজনীয় অর্থের যোগান কিভাবে হচ্ছে৷ এব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় থাকলে বলবেন৷
তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর
বাংলাদেশ থেকে সাগর পাল লিখেছেন-----
সাহিত্য নয়ন একদিন সমাজকে সঠিক পথ দেখাবে আমার বিশ্বাস। পত্রিকার সম্পাদককে এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সাধুবাদ জানাই। সার্থক হোক এই প্রচেষ্টা।
চতুর্থতম সংখ্যা প্রকাশের পর
পশ্চিমবঙ্গ থেকে লিখেছেন কবি অমল কুমার মাজি -----
সু-প্রভাত ! একরাশ অনিশ্চয়তার বোঝা মাথায় নিয়েই শুরু হ'চ্ছে প্রতিটি সকাল !তবু আমরা সাহিত্য নয়ন পরিবার দিশা খুঁজব এক সুস্থ সংস্কৃতির।আমরা কবিতা লিখব,-গান গাইব। সুখের গান তো অনেক হ'য়েছে,এখন না হয় দুঃখের গানই গাইব,দুঃখের কবিতাই লিখব।যতদিন স্পন্দন থাকবে দেহে ততদিন থামব না আমরা।এই মাত্র প'ড়ে ফেললাম পত্রিকা। খুব সুন্দর সাজানো অলঙ্করণ ! সব লেখার সুর যেন একটি তারেই বাঁধা।কিছু সংশয়,কিছু প্রতিশ্রুতি,-"যদি ফিরে আসি,সূর্য হ'ব আমি,দগ্ধ ক'রে পুরাতনের কালিমা নব সোনালীর অবনী গ'ড়ব ! "সংশয় "আছে।"যদি"আছে কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ও তো আছে। "ধরিত্রী মাতার ললাটে চিন্তার ভাঁজ দেখেছেন কবি হেমন্ত দেবনাথ!ঠিকই! কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্য্য নীলযমুনার জলকে কালো পঙ্কিল দেখেছেন কিন্তু 'বিশুদ্ধতায় ফেরার আর্তি'আশা জাগায়!সম্পাদকীয়তে সকলকে সাথে নিয়ে চলার ঐক্যতান রণিত হ'য়েছে,-'আমরা সবাই মিলে ছোট্ট তরী খানি ভাসিয়ে দিয়েছি সাহিত্যের মহাসমুদ্রের দিকে।' অনবদ্য অভিব্যক্তি, 'মহাসমুদ্রই' তো !এমন একনিষ্ঠ কর্ণধার যখন আছেন তখন তরী আমাদের চ'লবেই !সাথে আছি।ভগ্ন হৃদয়। ক্ষুদ্র সামর্থ।তবু আছি পাশে।অনেক অনেক শুভকামনা সম্পাদক এবং অবশ্যই সমস্ত'কুশীলব'দের জন্য।
পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশের পর
অভিজিৎ চৌধুরী লিখেছেন-------
এক অসাধারণ উদ্যোগ। আমি সাহিত্য নয়ন সাহিত্য পত্রিকার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।
ষষ্ঠতম সংখ্যা প্রকাশের পর
বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি লিখেছেন ----
অনেক অভিনন্দন।পত্রিকা পেলাম।এবং অত্যন্ত আনন্দিত হ'লাম।সময় নিয়েই প'ড়ব।অনেক নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফসল।তাই নিষ্ঠার সঙ্গেই প'ড়তে হবে। "ব্যর্থ চিঠি" প'ড়ে ফেললাম,কিন্তু এই সাতসকালে না প'ড়লেইভাল ক'রতাম বোধ হয়!সকাল বেলায় কাঁদতে হ'ত না এমন ক'রে! অনেক অনেক ভালোবাসা।
সপ্তম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন-----
" সাহিত্য নয়ন" সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে, তার জন্য সন্তোষ ব্যক্ত করছি। এজন্যে প্রচ্ছদ- শিল্পী, অক্ষরবিন্যাকারী, কবি-লেখক, মুদ্রণকারী, প্রকাশক, সম্পাদক,সত্বাধিকারী, পরামর্শদাতা--- এককথায় যে যেভাবে দূর বা অদূর থেকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সত্যি এ-রকম একটা উদ্যোগ বজায় রাখা চারটে খানা কথা নয়।
বিষয়- নির্বাচন অভিনন্দনযোগ্য। প্রত্যেকের লেখার মধ্যে একটা ভিন্নস্বাদের বৈচিত্র্য রয়েছে। শব্দচয়নও সাবলীল হয়েছে।
আমি এই সাহিত্য-পত্রিকার উৎকর্ষতা কামনা করি।
শুভ কামনায়-----
হেমন্ত দেবনাথ।
দিনাঙ্কঃ-29/10/2020.
অষ্টমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
দেবিকা ভট্টাচার্য লিখেছেন-----
খুব সুন্দর হয়েছে। প্রতিটি লেখা অসাধারণ। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সাহিত্য নয়ন সাহিত্য পত্রিকা রামধনুর রং এর মত আরো রঙিন হয়ে উঠুক।
নবমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
চন্দ্রলাল নাথ লিখেছেন----
I personally congrats to Shittya Nayan as it has been raises a great
scoops to the new & old writer of North Tripura (as well as Tripura) in the
Literacy field. --- I convey my heart fail gratitude to the organizing
body's all members art.
দশমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
চন্দ্র লাল নাথ লিখেছেন -----
"Sahitya nayan" is an excellent attempts to focus the articles of different
writers. I cordially congrats to the Aditor & the all executive members of
the committee for theirs hard labour. I wish every success the E-paper of
the Sahitya Nayan.
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন-----
সম্পাদকীয় সুষমামন্ডিত হয়েছে। এছাড়া বাকি লেখাগুলো স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সর্বোপরি, স্বল্প আয়োজন হলেও গভীরতার স্পর্শে কোনো অংশেই কম নয়। আমি অনলাইন সাহিত্যপত্র"সাহিত্য নয়ন"-এর সার্বিক সমৃদ্ধি কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে---
হেমন্ত দেবনাথ।
একাদশতম সংখ্যা প্রকাশের পর
অমল কুমার মাজি লিখেছেন----
সাহিত্য নয়নের অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান একুশে ফেব্রুয়ারির একাদশ সংখ্যাটি পেলাম।অনেক অনেক অভিনন্দন সম্পাদক তথা কুশীলবদের।যাঁরা প্রত্যেকে মূল্যবান লেখা দিয়ে "সাহিত্য নয়নের"পাতা সমৃদ্ধ ক'রেছেন।তরুণ সম্পাদকের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ না জানালে সত্যের অপলাপ হয়।চরৈবেতি।
দ্বাদশতম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন------
সদ্যপ্রকাশিত " সাহিত্য নয়ন"-এর 'বসন্ত সংখ্যা' টি পাঠ করে বড়োই প্রীত হলাম। অনবদ্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভসিত প্রতিটি লেখা। মনটাতে দাগ কেটে যায় লেখাগুলো। একটি পড়ার পরই আরেকটি পড়ার ইচ্ছে আমার জেগেছিল এবং এটা হয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। সবশেষে বলি, সম্পাদকীয়টা হয়েছিল খুবই সময়োচিত ও প্রাসঙ্গিক , মাধুর্যপূর্ণ ।
কবিতার সাথে দু' একটি আর্টিকেল/ স্বল্প কলেবরযুক্ত নিবন্ধ বা ছোটগল্প থাকলে সাহিত্যপত্রিকাটি আরোও বৈচিত্র্যে ভরপুর হয়ে উঠতো।
অবশ্য তার মানে এ নয় যে এখানে কোনো কিছুর খামতি ঘটেছে। বরং লেখাগুলো যেন হয়েছে বসন্তের রঙের নেশায় এক মায়াবী স্বপ্ন নিকেতন।
আমি " সাহিত্য নয়ন"-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে----
হেমন্ত দেবনাথ।
দিনাঙ্ক:-29/03/2021.
গৌরী দেবনাথ লিখেছেন----
সাহিত্য নয়নের প্রতিটি লেখা যেমন রসপূর্ণ হয়েছে, তেমনি মাধুর্যপূর্ণ হয়েছে। এই জন্য সাহিত্য নয়নের সম্পাদককেও ধন্যবাদ জানাই। আমি সাহিত্য নয়নের অগ্রগতি কামনা করি।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
তান্ডবশ্রী
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
সকলের মানসপটে
সুপ্ত কামনা,বাসনা--
হে তান্ডব!
তোমার আগমনে ঘুচবে
মার্তণ্ডের তীব্র জ্বালা -যন্ত্রণা।
ধরিত্রী সবুজে সবুজে
হবে কুসুমিতা ললনা।
মর্ত্যবাসীর আহ্বানে দিলে সাড়া,
মাঝরাতে শুরু গুরু গুরু
নড়াচড়া।
অবশেষে আলতো ছোঁয়ায় ভেজালে ফুলকলির মুখ,
তাতেই উলুধ্বনি-সকলে খুশ।
রাত পোহাতে নতুন প্রভাত--
এলো নতুন দিন- বছর
সবদিকেই সাজ সাজ রব।
মাঝ আকাশের সূয্যিমামা
গেলো হঠাৎ ঢেকে,
দুপুরে যেন মাঝ রাত্তির
নামলো ধরার বুকে।
হে রুদ্র!
বাজলো তোমার পায়ের ঘুঙুর
ভীষণ বজ্র নাদে --
ঘূর্ণনে ঘূর্ণনে মুচড়ে পড়ে
মর্ত্যবাসী তোমায় স্মরে তীব্র আর্তনাদে।
তান্ডবলীলা থামলে তোমার
নিঃশ্বাস ফেলে বৃক্ষ- লতা নব কিশলয়ে।
কুহু- কেকা- কাকলিতে
ধরা উঠলো মেতে
ওঁ শান্তি ওঁ
স্বস্তি উচ্চারিল মানব
স্নাত-সিক্ত পরিশুদ্ধ
ধরিত্রীতে।
রচনাকাল:-১৬-৪-২০২০
বৃহস্পতিবার
হেমন্ত দেবনাথ
"সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"
-----হেমন্ত দেবনাথ
"দর্শন" শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃত 'দৃশ' ধাতু থেকে। 'দৃশ' ধাতুর শেষে অনট্ প্রত্যয় যুক্ত করে দর্শন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ব্যুৎপত্তি অর্থে 'দর্শন' কথাটির অর্থ দেখা বা সাক্ষাৎ করা। ভারতীয় মতে 'দর্শন' বলতে বুঝায় আত্মদর্শন। এখানে দর্শন হলো সত্যের সাক্ষাৎ উপলব্ধি। শ্রী অরবিন্দ বলেছেন-- "ভারতে দর্শন শাস্ত্রের জন্ম হয়েছে বৈদিক ঋষিদের জিজ্ঞাসা থেকে।" মনীষি Max Muller বলেছেন --- "একমাত্র জ্ঞান লাভের জন্য, এ জীবনে সর্বোচ্চ আদর্শের উপলব্ধির উদ্দেশ্যেই ভারতে দর্শন চর্চা শুরু হয়েছে।" ভারতীয় দর্শনের উৎপত্তির পেছনে আছে (i) Spiritual disquent ও (ii) Practical necessity, দর্শনে উদ্দেশ্য এখানে " Philosophy is not a way of thought, but a way of life."
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোকে আস্তিক ও নাস্তিক - দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। "আস্তিক বলতে বোঝায় সেইসব দার্শনিক মতবাদকে, যা বেদ বিশ্বাস করে এবং বেদের সিদ্ধান্তকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে। এই ছয়টি আস্তিক দর্শন হলো --- সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈদেশিক, মীমাংসা ও বেদান্ত। এদেরকে ষড়দর্শনও বলা হয়। নাস্তিক দর্শন বলতে বোঝায় সেইসব দার্শনিক মতবাদকে, যা বেদ বিশ্বাস করে না এবং বেদের সিদ্ধান্তকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে না। চার্বাক দর্শন, জৈন দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন হলো নাস্তিক দর্শন। এদের মধ্যে চার্বাক হল চরমপন্থী নাস্তিক দর্শন আর জৈন দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন হলো নরমপন্থী নাস্তিক দর্শন। ভারতীয় মতে কোন দর্শন যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করেও বেদের প্রামাণ্য মেনে নেয়, তবে তাকে আস্তিক দর্শন বলা হবে। যেমন--- ভারতীয় দর্শন চিন্তায় সাংখ্য দর্শন ও মীমাংসা-দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস না করেও বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেনি বলে এদেরকে আস্তিক দর্শন বলা হয়।
আবার অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতীয় দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ---- (১)বৈদিক (২)অবৈদিক ও (৩) বেদ-বাহ্য। আস্তিক দর্শন হলো বৈদিক দর্শন এবং নাস্তিক দর্শন হলো অবৈদিক দর্শন। অবৈদিক দর্শন হলো বেদ বিরোধী দর্শন।
(ধারাবাহিক চলবে)
অমল কুমার মাজি
চলমান
-----অমল কুমার মাজি
চ'লছি সবাই সমুখ পানে
পিছন সেতো থাকবে প'ড়ে পিছে
সেই অদেখার অমোঘ টানে
এগিয়ে চলি,-ভাবনা শুধুই মিছে।।
মহাকালের মহৎ কাজে
সঙ্গী মোরা জ'ন্মে থেকেই সবে
নতুন দিনের বাজনা বাজে
স্মৃতিরা রয় নিজস্ব গৌরবে!!
অনন্ত পথ হয়না তো শেষ
চিরন্তন এই বিশ্বচরাচর
ছিন্ন করি এ ছদ্মবেশ
হয় গো শুধুই একটু রূপান্তর।।
কবিতা সরকার
কালবৈশাখী
-----কবিতা সরকার
মেঘ-রোদ্দুর ভীষণ পর!
চিলেকোঠার ছাপড় ঘর
ঝুপসি আলো আঁধার করে
ঝড় আসে এই বৈশাখেতে ।
আমের বনে দামাল ছেলে
দল জুটিয়ে হল্লা করে।
নদীর ধারে মাঝিরা সব
সামাল সালাম উঠছে রব।
অনেক প্রশ্ন হৃদয় মাঝে
কালবৈশাখী ঝড় তোলে,
ঝড় কি শুধুই কলকাতাতে
নাকি তা বিশ্ব জুড়ে ?
তেমন যদি আফ্রিকাতে
ওঠে ঝড় বালির মাঝে,
ক্যাকটাসেও কি আঘাত হানে
স্নান করে কি বৃষ্টি জলে?
আবার যদি এভারেস্টে
ঝড় আসে এই বৈশাখেতে,
উড়বে কি সব বরফগুলো?
নাই কি সেথা একটু ধূলো?
স্বপ্নে দেখি আফ্রিকাতে
জমছে লোয়েস ঝড়ের স্রোতে,
সাইবেরিয়ায় যেমন করে
মেঘ চুরি যায় পুরন্দরে!
ভুটানেও কি ঝড়ের সাথে
বজ্র আসে বৈশাখেতে?
জাপানও কি উঠছে কেঁপে
আকাশ ভাঙা ঝড়ের ত্রাসে?
মধ্যরাতের নরওয়েতে
সূয্যিও কি যায় না ডুবে
কালবৈশাখীর অন্ধকারে?
সন্দেহ তো জাগছে মনে
শুধুই কেন বৈশাখেতে
অন্যরা কি বাধ সেজেছে
ঝড় কি শুধু-ই প্রলয় ডাকে?
রাত্রি নামে ঝড়ের শেষে
প্রভাত আসে রবির ডাকে,
অরুণ আলোয় জাগছে প্রাণ
প্রলয় নয় বিলক্ষণ!
জীবন ফেরে সবুজ প্রাণে
সৃষ্টি আছে ঝড়ের গানে।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
অশ্রু
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
তুমি আমাকে আঘাত না করলে
হয়তো এতো সুর খুঁজে পেতাম না।
উলঙ্গ আকাশের নীচে যেদিন
আঘাত করেছিলে অকৃপণ হয়ে,
সেদিন বৃষ্টি নামেনি ভুলেও।
নীলিমা আজও কালো।
ব্যাথা যে বরফ হয়ে আছে।
হয়তো বৃষ্টি হয়ে নামবে,
তোমার ভালোবাসার উষ্ণপরশে
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
এসো বৈশাখ
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
চৈতীর চিলতে চাঁদ, স্তব্ধ নিশিথিনী
মিষ্টি আবেগ;নির্মল হাসিতে,নতুনের উঁকি।
মনোরম প্রাতে সুললিত রবি আভায়
বৈশাখের সমাগম,চৌদিকে আশার স্বণ।
এসো নূতন; এসো আমার ঘরে এসো।
সুখ কারিগর সেজে; দৈন্যতা ঘুচায়ে;
হীনতা মুছায়ে; এসো তুমি প্রতি দ্বারে,
শূন্য প্রাণে পূর্ণতা দিয়ে সাজ নবসাজে।
বিহগ কূজনে,ঝরাপাতার বহতা স্রোতে
ভাসছে বিষাদের নির্মমতা,ক্ষুধাতুর মনে
বুভুক্ষার জলন্ত অনল ;তপ্ত দাবানল
মুখোশে আবৃত মানবিক বদান্যতা।
এসো বৈশাখ,এসো নব সাজে
দীপ্ত রবির স্নিগ্ধ আলোর পথ বেয়ে।
মিটায়ে ঔদাস্যতা ;শুচি করো ধরা
পশ্চাৎ জীর্ণতার নি:শব্দ উদ্ভাসনে।
শান্তশ্রী মজুমদার
উদাসী বসন্ত
-----------শান্তশ্রী মজুমদার
শীতবুড়ি সাদা কুয়াশার চাদর সরিয়ে যখন লাঠি হাতে ঠক্ ঠক্ করতে করতে হিমালয়ের দিকে পা বাড়ায় তখন ই কোন এক ভোরে ঘাসের বন থেকে উঁকি দেয় হলুদ, বেগুনী বুনো ফুলেরা। মনু নদীর পাড়ে পাড়ে, শুকিয়ে যাওয়া ঝোপ ঝাড়ে থোকা থোকা নয়নাভিরাম ঘেঁটু ফুলেরা হাসতে শুরু করে। নতুন পাতায় সেজে ওঠা আমগাছের ডালে ডালে প্রস্ফুটিত হয় আম্রমুকুল। আর হঠাৎ করেই প্রকৃতি মুখরিত হয়ে ওঠে কোকিলের কুঁহু ডাকে।
জানিনা বসন্তের কোকিলা এতোদিন কোথায় ঊনকোটির কোন জঙ্গলে অপেক্ষা করছিলো ঋতুরাজের। বসন্তের আগমনের বার্তা নিয়ে সুরেলা কন্ঠে গান গাইতে গাইতে হাজির হয়ে যায় আমার উঠান পাড়ের আমগাছের মগডালে। কখনো সে নীমগাছের ডালে, কখনো কৃষ্ণচূড়ার পাতার আড়ালে, কখনো বা ঝাঁকড়া দেবদারুর সরু ডালে বসে আপন মনে ডাকতে থাকে তার বসন্তের সাথীকে।
আশ্চর্য লাগে, এতো কোকিল থাকে আমাদের কৈলাসহরে! না কি একটি কোকিলা ই পূবের ঊনকোটি থেকে উড়ে বেড়ায় পশ্চিমের কাঁটাতারের বেড়া পর্যন্ত।
চিরহরিৎ অপরূপা জগন্নাথপুর চা বাগিচার ছায়াবৃক্ষের ডালে ডালে যে কোকিলাকে ডাকতে দেখেছি, তাকেই আবার দেখেছি মনুভ্যালীর হালাইছড়ার গহন বাঁশের ঝাড়ে।
আমার ভাবুক মন কোকিলাকে জিজ্ঞেস করে ----
--বনে বনে দেখিস যখন পরের বাসা, ও পাখি /
একটি বারও পরানটা তোর উদাস হয়ে যায় না কি?
মধ্যরাত থেকেই আমগাছের মগডালে বসে কোকিলার সুরেলা মদির ডাক শুরু হয়। সারাটি রাত ধরে সে অবিশ্রান্ত ভাবে ডাকতে থাকে। আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে বিরহী কোকিলা তার প্রেমিক কোকিলকে আহ্বান করতে থাকে। ভোরের সূর্য পূব আকাশে আড়মোড়া ভেঙে জেগে ওঠে তবুও কোকিলার প্রেমিক মেলে না।আমার মননে তখন একটাই সুর বাজতে থাকে ----
ভালোবাসা দেখলি শুধু, ভালোবাসা বুঝলি না।
বুকের মাঝে হারায় যে মন, সে মনটারে খুঁজলি না।
----মনে হয় একটি কোকিলারই সাথী হারিয়ে যায় প্রতি বসন্তে! না কি প্রতি বসন্তে নতুন নতুন সাথী চাই কোকিলার! তাই বোধহয় কুঁহু সুরে উদাত্ত আহ্বান জানাতে থাকে। তার মদির আহ্বান কি পৌঁছায় না সংযমী কোকিলের কানে!
----কি সাধ আজো গোপন আছে, দিব্যি করে বল না আমায় ভাই রে.....।
ফাল্গুন চলে যায়,চৈত্রও চলে যায়..... বৈশাখ এসে যায়। কিন্তু কোকিলার সাথী খোঁজার পালা,ঘর বাঁধার আশা হারিয়ে যায় না। কালবৈশাখীর ঝড় জলের দুপুরেও বৃষ্টিস্নাত সুউচ্চ গাছের মগডালে বসে, পাতার আড়ালে মুখ লুকিয়ে কোকিলা ডেকে চলে আপন মনে। কালবৈশাখীর তাণ্ডবে ভেঙে গুড়িয়ে ছত্রখান হয়ে মাটিতে পড়ে থাকে ঘুঘু, শালিকের বাসা। কোকিলার আপন বাসা নেই, তাইতো সে ভবঘুরে।
------সবারই তো ঘর রয়েছে, কেন রে তোর বাসা কোথাও নাই রে, /কখনো কি মন বলেনা, এমনি বাসা একটি আমি চাই রে /ও কোকিলা তোরে শুধাই রে....।
কৈলাসহরের অঙ্গনে বসন্তকাল, ফুল আর কোকিল যেন প্রকৃতির অপরূপ দান। ছয়টি ঋতুই এখানে নিজের নিজের সৌন্দর্যের ডালা সাজিয়ে হাজির হয়ে যায় নির্দিষ্ট সময়ে। আমাদের মনুর তীরে বসন্তে লাল পলাশের পদচারণা ঘটে না সত্যি,কিন্তু বনে জঙ্গলে অনাদরে ফুটে থাকা ঘেঁটু ফুলেরা সুমিষ্ট সুবাস ছড়িয়ে অপেক্ষা করে পথিকের। হলুদ বরণ কলকি ফুলেরা বসন্ত উত্সব করে গাছে গাছে বাসন্তী হলুদের রঙ মেখে।
ঊনকোটির ছায়ায় বিস্তৃত এই জনপদে বসন্তের রাতে ঝড়ো হাওয়া আর শিলাবৃষ্টি গাজনের নৃত্য শেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরে গেলে, ভোরের নরম আলোয় যে শীতল হাওয়া বইতে থাকে তাকেই বলে বোধহয় বসন্ত সমীরণ।
এই আদুরে শীতল হাওয়া মনে করিয়ে দেয় হারিয়ে যাওয়া মায়ের মমতার স্পর্শ কে। ঝিরিঝিরি হাওয়ায় বাগানের লাল জবা গুলো দুলতে থাকে আর বর্ষা স্নাত মাধবীলতারা লাল গোলাপী আভা ছড়াতে থাকে ভোরের সূর্যের কমলা রঙ গায়ে মেখে। দূরের কোন এক গাছে বসে কোকিলার সুরেলা উদাসী ডাক কানে আসলেই মন উদাস হয়ে যায় অজানা শূন্যতায়।
বসন্ত আসে, কোকিল ডাকে, প্রকৃতি সেজে ওঠে ----এই সবকিছুই মনোজগতের চিন্তন মননকে নাড়িয়ে দিয়ে যায়।কোন জনমের ভালোবাসার অপ্রাপ্তি মথিত করে তোলে বিরহী মনকে।
----------------------------11/04/2021
প্লাবন সরকার
আমি গাঁজাখোর
------প্লাবন সরকার
মদে আর নেশা নাইরে, পাই না আফিমে,
ভোলে বাবার নামে একটু গাঁজা এনে দে।
শেখ সিগারেট নাই শেখের,কিনেছে জাপান,
নতুন শেখ টানলে মনে হয় টানছি পচা পান।
নেভি তো হেভি লাগে হোক না বাড়তি দাম,ু
বেনসন ও টানছি মাঝে খেয়ে বন্ধুর পাম।
গোল্ডলিফটা টানছি বেশি ডার্বিতে নাই স্বাদ,
এলডি সোনালি গ্রামীন টেনে দিলাম সব বাদ
ম্যারিস রেলি ম্যাড়মেড়ে তাই ব্লাক টানে মেয়ে
গোপাল বিড়ি আজিজ বিড়ি টানি শুধু চেয়ে।
নেশা আমার পেশা নয় রে আমি রোমান্টিক,
গাঁজার ধোয়ায় নেশা হয় না হয় শুধু গ্যাস্ট্রিক
ডিম মাংস ছুই না আমি চাই একটুখানি গাঁজা
বন্ধু আমায় দে না একটু কষ্ট করে তুই সাজা।
কাজী নিনারা বেগম
বেদনার নীল আকাশ
------কাজী নিনারা বেগম
আমি জানি তুমি কেন চাওনা ফিরে,
ঘর ছেরে এসেছ দেবতার মন্দিরে।।
পুতূল খেলার সাথি তুমি,
খেলেছি তোমাকে নিয়ে।।
মনের অনুভূতিতে চোখে চোখ রেখে
চেয়ে আছি আজো তোমার পানে।।
আমি জানি তুমি কেন চাওনা ফিরে,
তুমি ছাড়া ছিল না কেউ অন্তরে ।
কাজল শিক্ত অশ্রু ছিল চোখের কোনায়,
জানি না তুমি কেন ফিরেতে চাওনা ।
সেদিন পদ চিহ্ন ছিল ছলনা ভরা ,
বন পথে লতা তোমার যে পায়ে পরা ।
গোলাপ ফুলের কাটা লেগেছে হাতে,
গেথেছি মালা শুকিয়েছে হৃদয়,
কেন জানি না মন কাঁদে সর্বক্ষন ।নির্সংগতার ফেলে আসা স্মৃতি
পেছনে ডাকে আমায়,
যেকথা শুনতে মনে ছিল আশায়।
মাটির দেবীকে পড়িয়েছে আবরন,
সব ছেড়ে নেমেছ মনের মন্দিরে,
অথৈ সমু্দ্রে আছি একা,
অভাগিনী নারী বোঝবো কেমন করে সে কথা ।
জগন্নাথ বনিক
প্রাপ্তি
-----জগন্নাথ বনিক
মানবজীবন বড়ই সুন্দর জীবন,
জন্মেছি ধরাধামে।
প্রাপ্তি এসেছে জীবনে মোর,
বাবা মায়ের কল্যানে।।
বাল্য, কৈশোর, যৌবন, বার্ধক্য,
চারটি কালের জীবন।
সুখের প্রাপ্তি, দুঃখের প্রাপ্তি থাকবে জীবনে,
ধরাধামে জনম জনম।।
সুখের প্রাপ্তি পাই যে মোরা,
মানব সেবা করে।
মাবব সেবা যে ঈশ্বর সেবা,
জনম জনম ধরে।।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত,
যতই কর্ম করি।
প্রাপ্তি আসবে মোদের জীবনে,
মানবজীবন কে ধন্য করি।।
রক্ত ঝড়েছে হাজারো বাঙালির,
লড়াই করেছেন বিপ্লবীনেতা।
প্রাপ্তি পেয়েছি মাতৃভূমির বুকে,
পেয়েছি দেশের স্বাধীনতা।।
শুভময় রায়
অস্পৃশ্য
-----শুভময় রায়
পবিত্র গঙ্গা নদীর ধারে একটি মনোরোম গ্রাম।সেই গ্রামে এক সাধু এসে বাস করতে থাকেন।সারাদিন তিনি ঈশ্বর চিন্তা নিয়ে থাকেন, পূজাপাঠ করেন।গ্রামের মানুষেরা শ্রদ্ধা, ভক্তি করে তাঁর জন্য একটি ছোট্ট কুটির বানিয়ে দিয়েছে।তারাও মাঝে মাঝে এসে সাধুর কাছে এসে নানা ধর্ম কথা শোনে।সাধু মহারাজও বোঝেন গ্রামের মানুষদের ওপর তিনি ভালোই প্রভাব বিস্তার করেছেন।
একদিন সকালবেলায়, সেই সন্ন্যাসী নিত্যদিনের মতো গঙ্গায় স্নান করে, তীরেই বসে ধ্যান করছিলেন।হঠাৎ তাঁর কানে আসে নদীর জলে প্রবল দাপাদাপির শব্দ, তার সাথে আনন্দের সাথে চিৎকার। রাগে, বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে দেখেন, একটি দশ-এগারো বছরের ছেলে আনন্দের সাথে নদীতে সাঁতার কাটছে, তার সাথে খুব চিৎকার করছে। সেই জলের ছিটে সন্ন্যাসীর গায়েও এসে লাগে। ভয়ানক রেগে গিয়ে সাধু চিৎকার করে,
"অসভ্য বালক!দেখতে পাচ্ছ না আমি ধ্যান করছি!তুমি নদীর জল এইভাবে নোংরা করছ? তোমার চিৎকারে আমার ধ্যান ভেঙে গেছে।তোমার স্নানের জল আমার গায়ে এসে লাগছে!অসভ্য!বন্ধ করো তোমার স্নান!"
সাধুর চিৎকার শুনে একজন গ্রামবাসী যুবক ছুটে আসে। সে হাতজোড় করে বলে," স্বামীজি ক্ষমা করুন। ও আমার শ্যালক, পাশের গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে। ও জানে না আপনাকে, আর নদীতে স্নান করতে ভালোবাসে তাই চলে এসেছে।আপনি ক্ষমা করে দিন।"
তারপর সে ছেলেটিকে বলে,"উঠে এসো তাড়াতাড়ি, ক্ষমা চাও স্বামীজীর কাছে।"
ছেলেটি উঠে আসতেই রাগে অন্ধ হয়ে সাধু ছেলেটির গালে এক চড় মেরে বলেন, "শয়তান কোথাকার!"
যুবকটি আবার বলে, "এমনটি আর হবে না কোনোদিন হবে না প্রভু।"
কিন্তু সন্ন্যাসীর খেয়াল হয় ছেলেটিকে চড় মারার ফলে
তাকে তো স্পর্শ করেছে সে। গ্রামের ওই যুবকটিকে তিনি জানেন, সে নীচু জাতের, তার শ্যালক ছেলেটি।তাই সন্ন্যাসী আবার স্নান করে আসে।
তা দেখে ছেলেটিও আবার নদীতে নেমে স্নান করে আসে।
যুবকটি ছেলেটিকে বলে, "তুমি আবার স্নান করলে কেন?"
ছেলেটি বলে"ওই সন্ন্যাসী ও কেন আবার স্নান করলেন?"
যুবকটি বলে," তুমি কি ভুলে গেছ আমরা ছোটো জাতের? তোমায় ছোঁয়ার জন্য গঙ্গায় না স্নান তো করতেই হবে!আমরা যে অস্পৃশ্য!"
তখন ছেলেটি বলে," উনিও তো আমায় শয়তান বলেছেন।শয়তানও তো অস্পৃশ্য, তাই আমিও আবার স্নান করলাম।"
একজন বালকের মুখে এই কথা শুনে চমকে ওঠেন সন্ন্যাসী।মনে হয় তার মুখে কেউ যেন থাপ্পড় মারলো।তার অনুভব হল রাগে অন্ধ হয়ে তিনি তো ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি সন্ন্যাসী, যার কাছে জাতপাত, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যতা সব কিছু তুচ্ছ।অথচ তিনি তা ভুলে গিয়েছিলেন নিজের অহংকারে!
সন্ন্যাসী এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে বলেন,"তুমি আমার মনের অন্ধকারকে মুছে দিলে।" বলতে বলতে তিনি ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।
শ্যামল রায়
চোখে ধরা পড়ে
-------শ্যামল রায়
উত্তরের হাওয়ায় জানালার পর্দাটা
সরালে দেখা যায়
নানান ধরনের গাছপালার ফাঁকে
গজিয়ে ওঠা নতুন পাতাদের
জোসনা রাতে ভারি মজা লাগে।
আর চারপাশে একাধিক কয়েক তালার বাড়ি
কাছাকাছি ছাদে হঠাৎ দেখা হয়েছিল
সদ্য বিবাহিত নারীকে
দু চোখে ধরা পড়েছিল তার মুখ।
নতুন । ভিতরে আতঙ্ক কাজ করছিল
অথচ দেখতে পেয়েছিলুম তার ইশারা
আমাকে ভাবিয়েছিলো, ঘুম আসেনি
একদিকে যমুনা ছিল অন্যদিকে গঙ্গা ভাগিরথী
দুয়ের মাঝে ঢেউ খেলেছিল সারাটি রাত
দু চোখে ধরা পড়েছিল তার মুখ।
হঠাৎ মুখোমুখি
নতুন কিছু করার নতুন কিছু বলার থাকে
এসব উধাও। সময় নেই বিবাহিত স্বামীর
সময় কাটে না, ভিতরে যন্ত্রনা
এ যেনো ঘন একটা অন্ধকারের জালে জড়িয়ে পড়া
শুধুই আলোর পথ খুজছিলাম
তুমি যদি আলো হও আমি হব দিশা।
আমার বেড়ানো ছাদ হয়ে উঠুক
বৃষ্টিতে ভেজা নীল শাড়ির আঁচল
তুমি থেকো সারাক্ষন চোখে চোখ রেখে
শুধুই আমার জন্য।
টিটু বনিক
অদ্বিতীয়
-----টিটু বনিক
ব্ন্ধ চোখে আমি তোমায় দেখি।
নির্বাক হয়ে ধ্বনি উঠে,
শূণ্য আকাশে তারারা যেভাবে চাঁদকে সন্ধান করে,
আমি তোমার ছবি নিয়ে জগতে অনুরূপ খুঁজি।
বিভ্রান্তিকর কিছু শব্দ আমায় ডাকে।
আমি দিশেহারা হয়ে তার সন্ধানে উন্মাদ থাকি।
চারিদিকে অস্পষ্ট পথে ঘেরাও
কালো কালো প্রাচীর ভেদ করে
যা ক্ষণিকের জন্য হাত বাড়াই
আবার ক্ষণিকে উদাও।
আমি সর্বপ্রান্ত তোমায় দেখি।
আমি তোমার সদৃশ্য খুঁজি।
অভিজিৎ দাস
"বসন্ত তুমি আমার নও"
------অভিজিৎ দাস
বসন্ত মানেই কি মাধবীলতা,
বসন্ত মানেই কি প্রেমের গান?
আমিতো দেখেছি কিছু ঝরা ফুলের,
নীরব অভিমান।
ওই দেখো চেয়ে কিশোরীর গাল,
রাঙিয়ে দিল কারা।
আমাকে দেখো এই অচিনদেশে,
একলা পাগলপাড়া।
বসন্ত তুমি আমার নও,
তুমি চলে যাও কোনো আলোর নীড়ে।
আমি বন্ধ ঘরে ভালোই আছি,
তীব্র অন্ধকারে।