"সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"
-----হেমন্ত দেবনাথ
"দর্শন" শব্দটির সৃষ্টি হয়েছে সংস্কৃত 'দৃশ' ধাতু থেকে। 'দৃশ' ধাতুর শেষে অনট্ প্রত্যয় যুক্ত করে দর্শন শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। ব্যুৎপত্তি অর্থে 'দর্শন' কথাটির অর্থ দেখা বা সাক্ষাৎ করা। ভারতীয় মতে 'দর্শন' বলতে বুঝায় আত্মদর্শন। এখানে দর্শন হলো সত্যের সাক্ষাৎ উপলব্ধি। শ্রী অরবিন্দ বলেছেন-- "ভারতে দর্শন শাস্ত্রের জন্ম হয়েছে বৈদিক ঋষিদের জিজ্ঞাসা থেকে।" মনীষি Max Muller বলেছেন --- "একমাত্র জ্ঞান লাভের জন্য, এ জীবনে সর্বোচ্চ আদর্শের উপলব্ধির উদ্দেশ্যেই ভারতে দর্শন চর্চা শুরু হয়েছে।" ভারতীয় দর্শনের উৎপত্তির পেছনে আছে (i) Spiritual disquent ও (ii) Practical necessity, দর্শনে উদ্দেশ্য এখানে " Philosophy is not a way of thought, but a way of life."
ভারতীয় দর্শনের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলোকে আস্তিক ও নাস্তিক - দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। "আস্তিক বলতে বোঝায় সেইসব দার্শনিক মতবাদকে, যা বেদ বিশ্বাস করে এবং বেদের সিদ্ধান্তকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে। এই ছয়টি আস্তিক দর্শন হলো --- সাংখ্য, যোগ, ন্যায়, বৈদেশিক, মীমাংসা ও বেদান্ত। এদেরকে ষড়দর্শনও বলা হয়। নাস্তিক দর্শন বলতে বোঝায় সেইসব দার্শনিক মতবাদকে, যা বেদ বিশ্বাস করে না এবং বেদের সিদ্ধান্তকে প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করে না। চার্বাক দর্শন, জৈন দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন হলো নাস্তিক দর্শন। এদের মধ্যে চার্বাক হল চরমপন্থী নাস্তিক দর্শন আর জৈন দর্শন ও বৌদ্ধ দর্শন হলো নরমপন্থী নাস্তিক দর্শন। ভারতীয় মতে কোন দর্শন যদি ঈশ্বরের অস্তিত্বে বিশ্বাস না করেও বেদের প্রামাণ্য মেনে নেয়, তবে তাকে আস্তিক দর্শন বলা হবে। যেমন--- ভারতীয় দর্শন চিন্তায় সাংখ্য দর্শন ও মীমাংসা-দর্শন ঈশ্বরের অস্তিত্ব বিশ্বাস না করেও বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করেনি বলে এদেরকে আস্তিক দর্শন বলা হয়।
আবার অন্য একটি দৃষ্টিভঙ্গি থেকে ভারতীয় দর্শনকে তিন ভাগে ভাগ করা যায় ---- (১)বৈদিক (২)অবৈদিক ও (৩) বেদ-বাহ্য। আস্তিক দর্শন হলো বৈদিক দর্শন এবং নাস্তিক দর্শন হলো অবৈদিক দর্শন। অবৈদিক দর্শন হলো বেদ বিরোধী দর্শন।
(ধারাবাহিক চলবে)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন