সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

বৃহস্পতিবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২১

শুভময় রায়


 

                              অস্পৃশ্য


                                         -----শুভময় রায়


     পবিত্র গঙ্গা নদীর ধারে একটি মনোরোম গ্রাম।সেই গ্রামে এক সাধু এসে বাস করতে থাকেন।সারাদিন তিনি ঈশ্বর চিন্তা নিয়ে থাকেন, পূজাপাঠ করেন।গ্রামের মানুষেরা শ্রদ্ধা, ভক্তি করে তাঁর জন্য একটি ছোট্ট কুটির বানিয়ে দিয়েছে।তারাও মাঝে মাঝে এসে সাধুর কাছে এসে নানা ধর্ম কথা শোনে।সাধু মহারাজও বোঝেন গ্রামের মানুষদের ওপর তিনি ভালোই প্রভাব বিস্তার করেছেন।

একদিন সকালবেলায়, সেই সন্ন্যাসী নিত্যদিনের মতো গঙ্গায় স্নান করে, তীরেই বসে ধ্যান করছিলেন।হঠাৎ তাঁর কানে আসে নদীর জলে প্রবল দাপাদাপির শব্দ, তার সাথে আনন্দের সাথে চিৎকার। রাগে, বিরক্ত হয়ে চোখ মেলে দেখেন, একটি দশ-এগারো বছরের ছেলে আনন্দের সাথে নদীতে সাঁতার কাটছে, তার সাথে খুব চিৎকার করছে। সেই জলের ছিটে সন্ন্যাসীর গায়েও এসে লাগে। ভয়ানক রেগে গিয়ে সাধু চিৎকার করে,

"অসভ্য বালক!দেখতে পাচ্ছ না আমি ধ্যান করছি!তুমি নদীর জল এইভাবে নোংরা করছ? তোমার চিৎকারে আমার ধ্যান ভেঙে গেছে।তোমার স্নানের জল আমার গায়ে এসে লাগছে!অসভ্য!বন্ধ করো তোমার স্নান!"

         সাধুর চিৎকার শুনে একজন গ্রামবাসী যুবক ছুটে আসে। সে হাতজোড় করে বলে," স্বামীজি ক্ষমা করুন। ও আমার শ্যালক, পাশের গ্রাম থেকে বেড়াতে এসেছে। ও জানে না আপনাকে, আর নদীতে স্নান করতে ভালোবাসে তাই চলে এসেছে।আপনি ক্ষমা করে দিন।"

তারপর সে ছেলেটিকে বলে,"উঠে এসো তাড়াতাড়ি, ক্ষমা চাও স্বামীজীর কাছে।"

ছেলেটি উঠে আসতেই রাগে অন্ধ হয়ে সাধু ছেলেটির গালে এক চড় মেরে বলেন, "শয়তান কোথাকার!"

যুবকটি আবার বলে, "এমনটি আর হবে না কোনোদিন হবে না প্রভু।"

কিন্তু সন্ন্যাসীর খেয়াল হয় ছেলেটিকে চড় মারার ফলে

তাকে তো স্পর্শ করেছে সে। গ্রামের ওই যুবকটিকে তিনি জানেন, সে নীচু জাতের, তার শ্যালক ছেলেটি।তাই সন্ন্যাসী আবার স্নান করে আসে।

তা দেখে ছেলেটিও  আবার নদীতে নেমে স্নান করে আসে।

যুবকটি ছেলেটিকে বলে, "তুমি আবার স্নান করলে কেন?"

ছেলেটি বলে"ওই সন্ন্যাসী ও কেন আবার স্নান করলেন?"

যুবকটি বলে," তুমি কি ভুলে গেছ আমরা ছোটো জাতের? তোমায় ছোঁয়ার জন্য গঙ্গায় না স্নান তো করতেই হবে!আমরা যে অস্পৃশ্য!"

তখন ছেলেটি বলে," উনিও তো আমায় শয়তান বলেছেন।শয়তানও  তো অস্পৃশ্য, তাই আমিও আবার স্নান করলাম।"

একজন বালকের মুখে এই কথা শুনে চমকে ওঠেন সন্ন্যাসী।মনে হয় তার মুখে কেউ যেন থাপ্পড় মারলো।তার অনুভব হল রাগে অন্ধ হয়ে তিনি তো ভুলেই গিয়েছিলেন তিনি সন্ন্যাসী, যার কাছে জাতপাত, স্পৃশ্য-অস্পৃশ্যতা সব কিছু তুচ্ছ।অথচ তিনি তা ভুলে গিয়েছিলেন নিজের অহংকারে!

সন্ন্যাসী এগিয়ে গিয়ে ছেলেটিকে বলেন,"তুমি আমার মনের অন্ধকারকে মুছে দিলে।" বলতে বলতে তিনি ছেলেটিকে বুকে জড়িয়ে ধরেন।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন