সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩
সম্পাদকীয়
জুনের প্রথম দিবসে ভারতবর্ষে সাধারণত বর্ষার আগমন ঘটে। কিন্তু এবছর বর্ষারানীর আবির্ভাবে অনেক বিলম্ব। বন কেটে নগরায়ন আর যন্ত্রসভ্যতার বিষবাষ্পে আজকের বর্ষা অনেক কিছুই হারিয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও এর জন্য কি আমরা দায়ী নই? এখনো সময় আছে সচেতন হওয়ার।
দাবদাহ গ্রীষ্মে খরতপ্ত রোদে প্রচন্ড দহন দাহনে যখন মানুষ কামনা করে শান্ত নীড়ের স্নিগ্ধতা, তখনই ধরণীর বুকে আনন্দ-ধারার মতো নেমে আসে মেঘমন্দুরা বর্ষা। বর্ষার আগমন আসলে বৃষ্টির মঙ্গলধ্বনি। বর্ষাকাল মানে ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টি। সবুজে সবুজে আর নীলিমায় নীল আমাদের দেশের প্রকৃতি গেয়ে উঠেছে বর্ষামঙ্গল। বর্ষার আগমনে সহসাই মন নেচে ওঠে ময়ূরের মতো করে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠা মন কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে চায় না। নিজের অজান্তেই কেউ গেয়ে উঠে মেঘলা দিনের গান------"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন, কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ। বর্ষা জীবনের স্বপ্ন দেখায়। বর্ষার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা হয়ে ওঠে রূপসী। আমাদের দেশের বৈষ্ণব কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবি-লেখক সকলের মনকে প্রভাবিত করেছে সুন্দরী বর্ষারানী। কবি ও লেখকদের ভাবনায় বিভিন্ন রূপে ফুটে উঠেছে বর্ষার ছবি। আর তাই বর্ষার মঙ্গলময়ী রূপের কথা স্মরণ করে, বিশেষ কিছু করার ইচ্ছা থেকে প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের " বর্ষামঙ্গল উৎসব সংখ্যা ৩"। আমাদের সম্মানিত কবি-লেখকদের লেখনীর ছোঁয়ায় এবং কবি ও প্রচ্ছদশিল্পী কবিতা সরকারের অংকিত প্রচ্ছদে সংখ্যাটি পেয়েছে পূর্ণতা। আজ তবে এটুকুই থাক, বাকি কথা হবে পরে।
শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধাসহ--------
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
অমল কুমার মাজি
এবার এসো নামি
-----অমল কুমার মাজি
ক্ষুব্ধ তপন মগ্ন আপন তেজে
রুদ্রবীণায় দীপক ঝঙ্কারিছে
ক্রন্দনরোল উঠিল বিশ্বে বেজে
ভুবন বক্ষে বিষাদ সঞ্চারিছে।
দগ্ধ বৃক্ষ,প্রাণহীন জলাশয়
তপ্ত জৈষ্ঠ্য,করুণ কঠিন ক্ষণ
দীর্ঘ দিবসে কি যেন কিসের ভয়
কে যেন ক'রেছে ধ্বংসের মহাপণ।
হে আষাঢ় এসো শান্তির বারিধারে
মেঘমল্লারে হোক নব অভিষেক
ডাকিছে ধরণী তোমারেই বারে বারে।
প্রাণে প্রাণে করো আনন্দ উদ্রেক।
রমঝম তব বাজিয়ে নূপূর ধ্বনি
শান্তির বারি বরিষ ধরণী মাঝে
এসো সুন্দর শ্যামল নয়নমনি
সাজাও পৃথিবী নব পল্লব সাজে।।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
বাদল- ধরা
-----কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
জানিনে ঠিক
কোন সময় থেকে
আছি বসে
তোমার পথ চেয়ে।
এটা কী
ঊষা না গোধূলি ছিলো
তা-ও আজ আর
পড়ছে না মনে।
কবে যে তুমি
আমার সর্বাঙ্গে
দিয়েছিলে শীতল চুম্বন
আজ আর পারছি না
মনে করতে।
তোমার তো তা-তে
কী আসে যায়?
আমার উচাটন
তোমার মনে আনন্দ জাগায়!
গ্রীষ্মের দহন জ্বালা
শরীরে ফোঁটায় হূল।
বিষফোঁড়া, ঘামাচি,
চুলকানির বাড়ন্তে বাঁধে গন্ডগোল।
আমার বুকের উপর
নিজেকে যখন দাও
উজার করে ,
ময়ূর নাচে রং বেরং এ-র পেখম ধরে।
তৃষ্ণা মেটায়
তৃষিত চাতক চাতকী,
শীর্ণকায়া নদীও
হয় রূপবতী
যৌবনা,গর্ভবতী।
আমি ধরা!
আমার দেহ- মনের দহন
তোমার আগমনে হবে দমন।
তুমি এসো, এসো আমার ই 'পরে।
হে বাদল!
আমি তোমারই কল্পনা,
এসো, এসো
দু' জনে মিলে আঁকি
প্রেমেরই আলপনা।
রচনাকাল:- ০৩/৬/২০২৩, শনিবার।
মধুমিতা ভট্টাচার্য
পুনর্জন্ম হোক
---- মধুমিতা ভট্টাচার্য
গাছ,মাটি আর জলের বন্দনা করি,
ঘুমের মন্ত্র উচচারণে নেমে আসুক
পুনর্জন্ম।
আমাকে পাতার দেশে নিয়ে
চলো…
বাতাস আমার অসুখ শুষে নিক,
আমি মাটির কাছে আনত হবো,
পাতার শরীরে এঁকে দেবো
চুম্বন।
বীজ আহরণ করবো,
মন্ত্রপূত সূর্যকণা পুঁতে দেবো মৃত্তিকার
গর্ভাশয়ে।
জ্যোতির্ময় রায়
স্পর্শের ক্যানভাসে
------জ্যোতির্ময় রায়
ফাগুনপাখির আমেজ নিয়ে বসন্ত আসে ফি-বছর
ফোটে ফুল
স্তরে স্তরে জমে থাকা ধুলোর পর্দা ছিঁড়ে পথগাছে
আসে মুকুল।
বসে যাওয়া স্বরে রব আসে শিল্পীপাখির
কুহুতানে শিস
বসন্তঢাকির
অভ্যস্ত ছবিতে জীবনবসন্তে যৌবনই আগুন
জ্বলে ফাগুন।
এ যে সায়াহ্ন
মাটির পিদিমশিখায় তৃপ্ত
ফি-বছর পলাশ-শিমূলরঙে
আকাশ দীপ্ত
এবেলা মনরাঙায় ফেলে আসা পট
পাকাচুলে জীবন ছটফট
আছি স্পর্শের ক্যানভাসে
বসন্তবাতাসে।
বিধান চন্দ্র দে
অবিন্যস্ত রাত
----- বিধান চন্দ্র দে
আজ নিদ্রাহীন রাত,
সতর্ক প্রহরী সদা জাগ্ৰত ৷
অনন্ত স্বপ্নেরা উকিঝুকি দেয়
নিরন্ন হাঁড়িতে। সাজানো কথার
বর্ম খুলে ফেলেছে অক্ষর__
গণতন্ত্র মানে,মানুষের জন্যে
মানুষের দ্বারা, মানুষের শাসন।
সবই আজ ছড়ানো অক্ষর।
অবিন্যস্ত রাত,আলুলায়িত
প্রহরীরা হেঁটে যাচ্ছে পথে
আর লিখে রাখতে চেয়েছে
কয়েকটি যৎসামান্য কবিতা ।
চিরশ্রী দেবনাথ
কৈলাসহর আমার বাবার বাড়ি
-----চিরশ্রী দেবনাথ
কৈলাসহর আমার বাবার বাড়ি
আমি চলে আসার পর কৈলাসহরে প্রতিদিন আত্মহত্যা হয়
এসব আত্মহত্যার জন্য দমকল ছুটে আসে না
দেহ গুলোর পোস্টমর্টেম হয় না
আসলে তাদের দেহই ছিল না
ছায়া আর রোদ দিয়ে তৈরি ছেলেমানুষ শরীর
সংখ্যায় অনেক তারা,
আমার পঁচিশ বছরের ' আনন্দদুঃখআকাশপ্রবণতা '
যেগুলো এখনো প্রত্যেকদিন আলাদা আলাদা করে মরে যায়
আমি টের পাই, খুব বুঝতে পারি হাওয়ার দিক পরিবর্তনে
দুহাত বাড়িয়ে এই চির অশরীরীদের মুঠোতে বন্দী করে, নোনা জল ঢালি
জয়ন্ত দেবনাথ
আমার নবার্ক
------জয়ন্ত দেবনাথ
কবিতাকে পাই না খুঁজে
তুমি তাকে চাও।
ছন্দ ছাড়া লেখা-কথা, কাব্যের স্বাদ পাও।
ছন্দ যদি বা হল, নেই কোন অর্থ,
তবু হ'তে হবে কবি, নেই কোন শর্ত।
ভস্মেতে ঘি ঢেলে ছাঁইতে রত্ন খোঁজ!
যার নেই কোন বোধ, তাকেও 'বিজ্ঞ'বোঝ!
যে ফুলে সুবাস নেই পাঁপড়ির রঙ দেখ,
যার কোন জ্ঞান নেই, তার থেকেও কিছু শেখ!
যে কথা হল গাঁথা নেই রস-অর্থ ।
এখানেই সার্থকতা এ আমার 'নবার্ক'।
অনুশ্রী গোস্বামী
অনন্ত তৃষ্ণা
-----অনুশ্রী গোস্বামী
অনন্ত সময়ের অনন্ত তৃষ্ণা
জ্বলন্ত প্রদীপ আধারের নিশানা
তোমার শহরের খবর রাতের প্রহরী জানে
আমাকে খোঁজার আর নেই কোন মানে।
অমলেন্দু চৌধুরী
হে বন্ধু
-----অমলেন্দু চৌধুরী
হে মানব,
উঠো জাগো করো নাকো ভয়,
তোমা ধনে তুমি ধনী,
করো দারিদ্রতা জয়।
জাগো জাগো, বিকশিত হও
এই জ্ঞানের পাড়ে,
যতো খেদ অভাব, বিসর্জন করো
অজ্ঞানের সরোবরে।
বৃথা ভয়, সকল হবে ক্ষয় যতো
যতো বলুক লোকে,
নিন্দুকের পাল্লা ভারী,
বলে বলুক লোকে নিন্দুকে।
ঈর্ষা কিছু আসে আসুক,
করো না তুমি ভয়,
কর্তব্যের পথে চলো,
হবে হবে জয় নিশ্চয়।
দেহ আছে মৃত্যু আছে,
আছে জগত খেলা,
জাদুকর জাদু করে করে,
এ ভূবন মেলা।
নদী হয়ে মিলে যাও,
যাও তোমার মন্থন সাগরে,
তুমিই অশান্ত তুমিই প্রশান্ত,
নীলাচল লীলা করে।
ত্যাগ দাও সেবা দাও,
হও হও তুমি নিৰ্ভীক,
তুমিই এ সকল সকল,
জগত তোমাতে শিক্ষা নিক।
নিরঞ্জন দাস
বৃষ্টি কাব্য
----নিরঞ্জন দাস
চলন্ত ট্রেনের কামড়ায় পাহাড় দর্শন।
নীচে রূপালী নদী।
আকাশে মেঘের হাতছানি,
বৃষ্টি হয়ে ঝরবে সহসা।
তপ্ত হৃদয়ে কিছুটা স্বস্তি।
এসো বৃষ্টি অঝোর ধারায়।
বৃষ্টিস্নাত করো মন।
মনে পড়ে পরিযায়ী হৃদয়ে,
ভালবাসার বাইশে জুন।
কবিতা সরকার
বৈতরনী
-----কবিতা সরকার
বইছে জীবন ভিন্ন খাতে
অচেনা কোন ভৈরবীতে।
দিচ্ছে পাড়ি শূন্য হাতে
না জানি কোন গন্তব্যতে।
চলছে প্রয়াস গড়ার সাথে
আপন হাতে জগন্নাথে,
মেলে না হিসেব সাঁঝবেলাতে
বিজ্ঞ ছাড়া সেই হাতে।
মনের মাঝে স্বপ্নগুলো
ভাঙছে যখন জলের স্রোতে,
জানি সে আবার ফিরবে ঘরে
গহন পাথরে ধাক্কা খেয়ে।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
শ্রীর আতঙ্ক
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্টেশনে হঠাৎ দেখা।
সমান্তরাল পাতা ইস্পাত চকচক রেলের উপর
চলন্ত কামরায় আছি
শ্রীময়ীর সাথে।
জানতাম না সুন্দরী এখন মায়ের ভাষাতেই
স্নাতকোত্তর হচ্ছে।
কথায় কথায় জীবনানন্দের রূপসী বাংলার
বর্ষাকে সুন্দরী বলায় তার অভিমানী জিজ্ঞাসা :
বাস্তবিকই কি বর্ষা সুন্দরী?
অস্বীকারের উচ্চারণ ফুটলো না আমার।
চমকে বিদ্যুৎ চোখ বুঝতেই
নিষিদ্ধ অন্ধকারে চলে রাত্রি যাপন,
আতঙ্কিত শ্রী।
বর্ষার আরো এক রূপ
আমার পাশাপাশি আসনে ।
শ্রী রূপের আরেক অবগাহন ।
রচনাকাল:- ২৯/০৫/২০২৩ ইং সোমবার
শান্তনু মজুমদার
--------শান্তনু মজুমদার
শ্বেতা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।
অনিরুদ্ধ কিছুক্ষন বাইরে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করে গাড়িতে এসে বসলো। আসলে সিগারেট খাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সাহস করে নি আর।
শ্বেতা - আর কোনোদিন শাড়ি কেনার সময় তোমাকে অন্তত সাথে আনবো না অনি। এক ঘণ্টা দোকানে থেকেও তোমার জন্যে আজ আমার কাপড় কেনা হল না।
অনি - তুমি ভুল বলছ। এর আগে কি আমরা কখনো এক সাথে কাপড় কেনাকাটা করি নি ? আজ তোমার দোকান সিলেক্সান ভুল ছিল। আর শাড়ি যাই দেখছিলে, সব ডিজাইন অলরেডি তোমার আছে। আমি বলছি, তুমি বাড়ি গিয়ে মিলিয়ে নিও।
অনিরুদ্ধর গাড়ী চালাতে চালাতে কথা বলার ফাঁকে বার বার মনে হচ্ছিল যে এই একই বিষয় নিয়ে গাড়িতে বসেই শ্বেতার সাথে এর আগেও কোন এক দিন তার ঝগড়া হয়েছিল।
আজ পুরো শহর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে রইল। লোকাল থানার অন্য পুলিশ কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা গেল। শহরের নিউজ চ্যানেল গুলোর আজকের ব্রেকিং নিউজ এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মা।
বিকেল পাঁচটায় পুলিশ কমিশনারের রুমে অনিরুদ্ধকে হাজির হতে হল সাস্পেন্শনের ভয় মাথায় নিয়ে।
কমিশনার - ঠিক কি হয়েছিল আমাকে একটু খুলে বলো তো। তোমাকে সাসপেন্ড করা ছাড়া আর তো কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না মিডিয়াকে শান্ত করার জন্যে। উপর মহল থেকেও চাপ আসছে আমার উপর।
অনিরুদ্ধ - স্যার আমার ভুল হলে অবশ্যই আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু সাংবাদিক আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে আগে আমি অন্য কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করেছি। তাই আজ ওই মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে এরেষ্ট করি। তর্ক করছিল, তাই গায়ে হাত তুলি।
কমিশনার - কোথায় সেই সাংবাদিকের নামে তো কোথাও কোন পুলিশ রেকর্ড নেই। আর সে মাত্র এক মাস হয়েছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় এসেছে সাংবাদিকতা করতে।
অনিরুদ্ধ - সেটাই স্যার আমি ভাবছি। আমি নিজেই কেলকুলেশন মেলাতে পারছি না। বোধহয় আমার কোথাও কোন ভুল হয়েছে।
কমিশনার - দেখো অনিরুদ্ধ, তুমি আমার ছেলের বয়সি। তোমার আগের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। খুব সামনেই তোমার প্রমোশন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার কিছুদিনের রেস্ট প্রয়োজন। তুমি আজই এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দাও। সাংবাদিক হেনস্থার ব্যাপারটা আমি সব সামলে নেবো।
অনিরুদ্ধ - ধন্যবাদ স্যার।
মিডিয়া যেমন কাউকে লোকের কাছে মহান হিসেবে তুলে ধরতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন কাউকে সমাজের কাছে নামিয়ে দিতেও দু-দিন সময় লাগে না। অনিরুদ্ধর ঘনিষ্টজনরাই যেন তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে এই খারাপ সময়ে শ্বেতা নিজের অনির হাত ধরে আছে, তা যতই সাংসারিক খুঁটিনাটি ঝগড়া থাকুক।
শ্বেতা অনেকদিন ধরেই তার প্রাণপ্রিয় মানুষটির কিছু ব্যাপার লক্ষ করছে আর আজ অনিকে একটু আদর যত্ন করে বুঝিয়ে বলায় অনিও সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে রাজি হয়। নিজেদের গাড়ী করেই রয়ানা হয়।
পুলিশ কোয়ার্টার থেকে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত যাবার রাস্তায় ইকো পার্ক আর স্টেডিয়ামের মাঝের রাস্তাটা বেশ নীরব আর ফাঁকা থাকে দুপুরের দিকে। সেই জায়গাটায় গাড়ী আসতেই সামনের চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। কিন্তু অনি গাড়িতে স্টেপনি থাকা সত্ত্বেও গাড়ী থেকে নামে না বেশ কয়েক মিনিট গড়িয়ে গেলেও। শ্বেতা বিরক্ত হয়ে গাড়ী থেকে নামতে চায়। কিন্তু অনি নিষেধ করে। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দে গাড়িতে একটা গুলি এসে লাগে। অনিরুদ্ধ শ্বেতাকে নিয়ে সিটের নিচে ঝুঁকে পরে। ঠিক পর মুহূর্তেই আরো কয়েকটা গুলি এসে লাগে। অনি শ্বেতাকে থানায় ফোন করতে নির্দেশ দেয়। ছুটিতে থাকায় নিজের সার্ভিস রিভলভার সাথে না থাকলেও নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল সাথেই ছিল। তা দিয়েই সে অনুমান করে দুটো গুলি ছুরে। অন্তত সে যে সসস্ত্র অবস্থায় আছে এবং লড়াইটা এত সোঝা নয় সেটা জানান দিতে এবং তাতে কাজও হয়। ইতস্তত আরো কয়েকটা গুলি গাড়িতে এসে লাগলেও গাড়ির সামনে কেউ আসে নি। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় লোকেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরে। গাড়ির আশপাশে প্রচুর বুট পিন পাওয়া যায়। অনিরুদ্ধ গাড়ী থেকে বেরোলে নির্ঘাত মৃত্য ছিল।
আর ডাক্তারের ওখানে যাওয়া হয় নি। বিভিন্ন খুফিয়া সোর্স কে কাজে লাগিয়ে রাতেই দুজন অপরাধীকে বন্দুক সহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যারা অনেকদিন ধরেই এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মাকে প্রাণে মারার সুযোগে ছিল। পরের দিনের প্রভাতী পত্রিকায় সাহসী পুলিশ অফিসারের ছবি। মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত তার কুশল জানতে ফোন করেছেন।
আর দুদিনের মধ্যেই অনিরুদ্ধর ছুটি শেষ হচ্ছে। শ্বেতা অনিকে জিজ্ঞেস করেছিল গাড়ী থেকে সে নামে নি কেন। উত্তরে অনি শুধু বলেছিল, যে ঘটনা টা ঘটেছে সেই ঘটনার সাথে সে পূর্ব পরিচিত। শ্বেতা আর কিছু বলে নি অনিকে। আর দ্বিতীয় বার ডাক্তারের কাছে যেতেও জিধ করে নি। শুধু ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বলে, ঠাকুর তুমি যা কর ভালোর জন্যেই কর।
হেমন্ত দেবনাথ
------ হেমন্ত দেবনাথ
"বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা-
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ............
সত্যিই তো, প্রকৃতির বহি:সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টিতে পড়ে, কিন্তু তার অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে ক'জন ? একমাত্র সুন্দরের পূজারীরাই এর অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন । তার জন্যে হৃদয় লাগে, লাগে অনুভূতি । প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমিয়তা ও কর্মব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি লাভের জন্যেই তো মানুষ সুযোগ পেলেই ছুটে চলে যেতে যায় প্রকৃতির বুকে, নীলাকাশের তলে। সবুজ বনানী, সমুদ্র, মন্দির, গাছগাছালির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সে লাভ করতে চায় মনের অনুপম প্রশান্তি। গত 12/04/2023 ইং তারিখ সকাল 9.35 মিনিট ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি পরিবারের (আমি ও আমাদের পরিবার, ছোড়দা ও তাদের পরিবার, অনুজ-প্রতিম বাপ্পী ও তাদের পরিবার) ছোটো-বড়ো মোট 11 জন সদস্যবিশিষ্ট একটি “ভ্রমণ টীম" হিসেবে বেড়িয়ে পড়েছিলাম ।
ধর্মনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপগামী ট্রেন AGTL KAA, SPL Sleeper এ করে আমরা আমাদের ব্যাগ, লাগিজ সবকিছু নিয়েই চেপে বসি। ট্রেন ছাড়লো সকাল 10.03 মিনিটে । দেখতে দেখতে অনেক জলাশয়, জনপদ, বৃক্ষরাজিসহ প্রায় 1340 কিমি পথ পেরিয়ে পরের দিন 13/04/2023 তারিখে বেলা 12.20 মিনিটে আমরা নবদ্বীপ রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছলাম । ছোড়দা স্টেশনে নামতেই জলের বোতল, কিছু টিফিন, শশা, ডাবের জল ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করলেন। কিছুক্ষণ পর আমরা নবদ্বীপ গঙ্গা নদী (এখানকার হুগলী নদী)-র লঞ্চের ফেরী ঘাটে এসে লঞ্চের টিকেট কেটে আমরা সবাই লঞ্চে চড়ে বসলাম । আমাদের এবারকার যাত্রাস্থল হল নবদ্বীপের শ্রীধাম মায়াপুর ।
মায়াপুরে পৌঁছে এখানকার “গীতা ভবন” নামক পান্থনিবাসে আমরা সবাই তিনটি রুম ভাড়া নিলাম । যথাসময়ে স্নানাদি সেরে দুপুরে “প্রসাদের কুপন কেটে আমরা "অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করলাম। জার্নিতে শরীরের উপর অনেক দখল যাওয়াতে সবাই বিশ্রাম নিতে গেলাম । মায়াপুরে আমরা 13/04/2023 ইং থেকে 15/04/2023 ইং পর্যন্ত এই তিনদিন অবস্থান করেছিলাম ।
মায়াপুর হল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার অন্তর্গত নবদ্বীপ ব্লক এলাকার আওতাধীন একটি স্থান । আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কৃষ্ণমন্দির । (উচ্চতা প্রায় 350 )। ISKCON-এর সদর দপ্তর হল এখানকার “চন্দ্রোদয় মন্দির”। মায়াপুরে আছে পুষ্পোদ্যান, সুরম্য পার্ক, ভজনালয়, প্রসাদ ভবন, শ্রীল প্রভুপাদের পুষ্পসমাধি মন্দির, গীতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্রহ্মজিজ্ঞাসা কেন্দ্র, শাস্ত্রোধ্যাপনা কেন্দ্র, গোশালা, বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই দর্শনীয় স্থান । এখানে একটি নির্মীয়মাণ মন্দির আছে, মূল রাধা-গোবিন্দের মন্দির হিসেবেই এটি চিহ্নিত হবে । আগামী 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তা-ব্যক্তি কর্তৃক মন্দিরটির দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে বলেই শোনা গেছে।
মায়াপুরে পদ্মভবন, ভষ্মীভবন, চৈতন্যভবন, অশ্বভবন, গদাভবন, গীতাভবন ইত্যাদি নানা নামের ভবন আছে । এদের কোনো কোনোটি পান্থনিবাস, আবার কোনোটি প্রসাদভবন । ব্রহ্মমূহুর্তে পঞ্চপ্রভু ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরে কীর্তন হয়, প্রার্থনা হয়ে থাকে । আবার প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলায় ঐ মন্দিরগুলোতে আরতি, কীর্তন ও প্রার্থনা করা হয় । এতে সবাই পবিত্র মনে যোগ দিতে পারেন। রাত 8 থেকে 8.30 মিনিট পর্যন্ত এবং রাত 8.30 মিনিট থেকে 9.30 মিনিট পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণ করা হয় । মায়াপুরের পরিবেশ খুবই পরিচ্ছন্ন, মনোমুগ্ধকর ।
ক্রমশ চলবে.......
শান্তশ্রী মজুমদার
----শান্তশ্রী মজুমদার
গ্রীষ্ম কে ভালোবাসে এমন লোক কি সত্যি কেউ আছে! আমি খোঁজ পাইনি তার। গা জ্বালা করা রোদ, অসহ্য গরম, তৃষ্ণার্থ গাছপালা,শুকনো মনু নদী -----আমার মনের নদীতেও বালির চর ফেলে দিয়েছে।
গ্রীষ্মের কোনো ভালো গুন আছে কি না তা নিয়ে আজ ভাবতে বসেছি। রসালো আম, মিষ্টি লিচু, আর পাকা কাঁঠাল ছাড়া গরম কালের কোনো অবদান আমি খুঁজে পাই নি।
অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা ---এতোটুকু বৃষ্টির! রিমঝিম সুরে ঝরে পড়ুক আমার গাছেদের শরীরে। সবুজ সবুজ পাতাগুলো সিক্ত হোক মেঘ গলা জলে। হিমেল মেঘকে স্পর্শ করেছিলাম হিমালয়ে। মেঘের সাথী হয়ে বহুবার উড়ে বেরিয়েছি নীল আকাশে।
মেঘের যে কতো রূপ! সাদা তুলোর মতো মেঘ, পাখির পালকের মতো মেঘ,মুক্তোর মতো মেঘ। সূর্য রশ্মির আলোয় কখনো মেঘ স্বর্ণালি, কখনো রক্তিম।
মেঘ গলে গলে যখন বৃষ্টি নেমে আসে আমার বাগানে তখন তাকে স্পর্শ করে আনন্দ নিলাম দেহে মনে।
বহু বহু দূর থেকে মেঘ এসেছে আজ আমার সাথে গল্প করতে।
বৈশাখের শুরু থেকেই আকাশ মেঘলা হয় রোদ লুকিয়ে পরে মেঘের আড়ালে। কিন্তু পরক্ষণেই গণগণে সূর্য মেঘ সরিয়ে হাজির হয় মাটির প্রাণ শুষে নিতে।
আমাদের জনপদে প্রতিটি ঋতুই আসে তার নিজস্বতায়। বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্যমাসে তীব্র দহন তো থাকবেই।
কাল বৈশাখীর রুদ্ররূপ, ঘন কালো জটাজাল উড়িয়ে উন্মত্ত নৃত্য শুরু হলে মনে পড়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথকেই ----আনো আনো
আনো তব প্রলয়েরও শাঁখ
মায়ার কুঞ্ঝটিকা যাক্ দূরে।
মেঘ আর বৃষ্টিকে ছুলে মনে হয় মায়ের স্পর্শ। মা যেন অন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতার আলো।আমি মেয়ের মা, গাছেদের মা, পথে ঘুরে বেড়ানো গরুদের মা,বৃষ্টি ভেজা অনাথ বেড়াল ছানাদের মা, বারান্দার কোনে যে কুনো ব্যাঙটা থাকে তারও মা। অদ্ভুদ একটা মাতৃভাব মনকে স্বর্গীয় আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
রিমঝিম বৃষ্টি পড়ুক সবুজ সবুজ পাতার গায়ে। হাওয়ার দোলায় ঝিরিঝিরি পাতাগুলোর সাথে আমিও গাই ---
যুঁথি বনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
হায় হায় রে, দিন যায় রে
সুব্রত রায়
----- সুব্রত রায়
শহরের ভেতর যেন এক টুকরো গ্রাম। গ্রামে নদী থাকে, শহরে নদী থাকতে পারে। যদি না থাকে তবে খাল নদীর অভাব পূরণ করতে চায়।
শহর গ্রামের মতো ততটা উদার নয়। খালের ধারে ঘর বসানো অবৈধ। পুর পরিষদের লোকজন এসে ভেঙে দেয় বিনা নোটিশে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে একটা ঝুপড়ি টিকে গেছে। সবাই জানে এটা বেড়ালবুড়ির ঝুপড়ি। হ্যাঁ,বেড়াল ছাড়া বেড়ালবুড়ির কেউ নেই।
শহরের যত নোংরা, বয়ে নিয়ে যায় খালের জল। একেবারে ধার ঘেঁষে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে বুড়ির অস্থায়ী চালাঘর। হরেক রঙের পলিথিনের টুকরো চাল থেকে বেড়ার গায়ে ঝুলছে । সব মিলিয়ে ঝুপড়ির আকৃতি তাই অনির্দিষ্ট।
সকালে বেরিয়ে যায় বেড়ালবুড়ি । শহরের ঘরে ঘরে ভিক্ষে করে সারাদিন। না, একটু চাল ছাড়া আর কিছুই নেয় না সে। ঘরে ফেরার পথে বাজারটা ঘুরে আসে শেষদিকে। সেখান থেকে সংগ্রহ শুধু শুকনো মাছ ।দোকানিদের জানা আছে। ওরা বেড়ালবুড়ির জন্য ফেলে দেওয়ার মতো শুকনো মাছগুলো রেখে দেয়।
সংখ্যাটা ঠিক কত, বুড়ি নিজেও বলতে পারবে না। রান্না করে খেতে দিলে মনেহয় বেড়ালের বুঝি মেলা বসেছে।
এখন আসল কথাটা বলি ।অনেক আগেই ভিটেছাড়া করার কথা ছিল বেড়ালবুড়িকে ।একদিন কাউন্সিলর এসে দেখলেন, এ তো কোনো বাড়ি নয় বরং বেড়ালের অনাথ আশ্রম। বুড়ির সঙ্গে কথা হল। কাউন্সিলার বাবুর বিশাল চালের গুদাম। ইঁদুরের উৎপাতে তিনি ব্যতিব্যস্ত। সব শুনে দুটো শিকারি মেনি পাঠিয়ে দিল বেড়ালবুড়ি ।সেই থেকে বুড়ি ওখানেই আছে। কেউ কিছু বলে না আর।