----শান্তশ্রী মজুমদার
গ্রীষ্ম কে ভালোবাসে এমন লোক কি সত্যি কেউ আছে! আমি খোঁজ পাইনি তার। গা জ্বালা করা রোদ, অসহ্য গরম, তৃষ্ণার্থ গাছপালা,শুকনো মনু নদী -----আমার মনের নদীতেও বালির চর ফেলে দিয়েছে।
গ্রীষ্মের কোনো ভালো গুন আছে কি না তা নিয়ে আজ ভাবতে বসেছি। রসালো আম, মিষ্টি লিচু, আর পাকা কাঁঠাল ছাড়া গরম কালের কোনো অবদান আমি খুঁজে পাই নি।
অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা ---এতোটুকু বৃষ্টির! রিমঝিম সুরে ঝরে পড়ুক আমার গাছেদের শরীরে। সবুজ সবুজ পাতাগুলো সিক্ত হোক মেঘ গলা জলে। হিমেল মেঘকে স্পর্শ করেছিলাম হিমালয়ে। মেঘের সাথী হয়ে বহুবার উড়ে বেরিয়েছি নীল আকাশে।
মেঘের যে কতো রূপ! সাদা তুলোর মতো মেঘ, পাখির পালকের মতো মেঘ,মুক্তোর মতো মেঘ। সূর্য রশ্মির আলোয় কখনো মেঘ স্বর্ণালি, কখনো রক্তিম।
মেঘ গলে গলে যখন বৃষ্টি নেমে আসে আমার বাগানে তখন তাকে স্পর্শ করে আনন্দ নিলাম দেহে মনে।
বহু বহু দূর থেকে মেঘ এসেছে আজ আমার সাথে গল্প করতে।
বৈশাখের শুরু থেকেই আকাশ মেঘলা হয় রোদ লুকিয়ে পরে মেঘের আড়ালে। কিন্তু পরক্ষণেই গণগণে সূর্য মেঘ সরিয়ে হাজির হয় মাটির প্রাণ শুষে নিতে।
আমাদের জনপদে প্রতিটি ঋতুই আসে তার নিজস্বতায়। বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্যমাসে তীব্র দহন তো থাকবেই।
কাল বৈশাখীর রুদ্ররূপ, ঘন কালো জটাজাল উড়িয়ে উন্মত্ত নৃত্য শুরু হলে মনে পড়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথকেই ----আনো আনো
আনো তব প্রলয়েরও শাঁখ
মায়ার কুঞ্ঝটিকা যাক্ দূরে।
মেঘ আর বৃষ্টিকে ছুলে মনে হয় মায়ের স্পর্শ। মা যেন অন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতার আলো।আমি মেয়ের মা, গাছেদের মা, পথে ঘুরে বেড়ানো গরুদের মা,বৃষ্টি ভেজা অনাথ বেড়াল ছানাদের মা, বারান্দার কোনে যে কুনো ব্যাঙটা থাকে তারও মা। অদ্ভুদ একটা মাতৃভাব মনকে স্বর্গীয় আনন্দে ভরিয়ে তোলে।
রিমঝিম বৃষ্টি পড়ুক সবুজ সবুজ পাতার গায়ে। হাওয়ার দোলায় ঝিরিঝিরি পাতাগুলোর সাথে আমিও গাই ---
যুঁথি বনে ঐ হাওয়া
করে শুধু আসা যাওয়া
হায় হায় রে, দিন যায় রে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন