------ হেমন্ত দেবনাথ
"বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা-
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ............
সত্যিই তো, প্রকৃতির বহি:সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টিতে পড়ে, কিন্তু তার অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে ক'জন ? একমাত্র সুন্দরের পূজারীরাই এর অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন । তার জন্যে হৃদয় লাগে, লাগে অনুভূতি । প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমিয়তা ও কর্মব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি লাভের জন্যেই তো মানুষ সুযোগ পেলেই ছুটে চলে যেতে যায় প্রকৃতির বুকে, নীলাকাশের তলে। সবুজ বনানী, সমুদ্র, মন্দির, গাছগাছালির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সে লাভ করতে চায় মনের অনুপম প্রশান্তি। গত 12/04/2023 ইং তারিখ সকাল 9.35 মিনিট ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি পরিবারের (আমি ও আমাদের পরিবার, ছোড়দা ও তাদের পরিবার, অনুজ-প্রতিম বাপ্পী ও তাদের পরিবার) ছোটো-বড়ো মোট 11 জন সদস্যবিশিষ্ট একটি “ভ্রমণ টীম" হিসেবে বেড়িয়ে পড়েছিলাম ।
ধর্মনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপগামী ট্রেন AGTL KAA, SPL Sleeper এ করে আমরা আমাদের ব্যাগ, লাগিজ সবকিছু নিয়েই চেপে বসি। ট্রেন ছাড়লো সকাল 10.03 মিনিটে । দেখতে দেখতে অনেক জলাশয়, জনপদ, বৃক্ষরাজিসহ প্রায় 1340 কিমি পথ পেরিয়ে পরের দিন 13/04/2023 তারিখে বেলা 12.20 মিনিটে আমরা নবদ্বীপ রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছলাম । ছোড়দা স্টেশনে নামতেই জলের বোতল, কিছু টিফিন, শশা, ডাবের জল ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করলেন। কিছুক্ষণ পর আমরা নবদ্বীপ গঙ্গা নদী (এখানকার হুগলী নদী)-র লঞ্চের ফেরী ঘাটে এসে লঞ্চের টিকেট কেটে আমরা সবাই লঞ্চে চড়ে বসলাম । আমাদের এবারকার যাত্রাস্থল হল নবদ্বীপের শ্রীধাম মায়াপুর ।
মায়াপুরে পৌঁছে এখানকার “গীতা ভবন” নামক পান্থনিবাসে আমরা সবাই তিনটি রুম ভাড়া নিলাম । যথাসময়ে স্নানাদি সেরে দুপুরে “প্রসাদের কুপন কেটে আমরা "অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করলাম। জার্নিতে শরীরের উপর অনেক দখল যাওয়াতে সবাই বিশ্রাম নিতে গেলাম । মায়াপুরে আমরা 13/04/2023 ইং থেকে 15/04/2023 ইং পর্যন্ত এই তিনদিন অবস্থান করেছিলাম ।
মায়াপুর হল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার অন্তর্গত নবদ্বীপ ব্লক এলাকার আওতাধীন একটি স্থান । আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কৃষ্ণমন্দির । (উচ্চতা প্রায় 350 )। ISKCON-এর সদর দপ্তর হল এখানকার “চন্দ্রোদয় মন্দির”। মায়াপুরে আছে পুষ্পোদ্যান, সুরম্য পার্ক, ভজনালয়, প্রসাদ ভবন, শ্রীল প্রভুপাদের পুষ্পসমাধি মন্দির, গীতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্রহ্মজিজ্ঞাসা কেন্দ্র, শাস্ত্রোধ্যাপনা কেন্দ্র, গোশালা, বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই দর্শনীয় স্থান । এখানে একটি নির্মীয়মাণ মন্দির আছে, মূল রাধা-গোবিন্দের মন্দির হিসেবেই এটি চিহ্নিত হবে । আগামী 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তা-ব্যক্তি কর্তৃক মন্দিরটির দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে বলেই শোনা গেছে।
মায়াপুরে পদ্মভবন, ভষ্মীভবন, চৈতন্যভবন, অশ্বভবন, গদাভবন, গীতাভবন ইত্যাদি নানা নামের ভবন আছে । এদের কোনো কোনোটি পান্থনিবাস, আবার কোনোটি প্রসাদভবন । ব্রহ্মমূহুর্তে পঞ্চপ্রভু ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরে কীর্তন হয়, প্রার্থনা হয়ে থাকে । আবার প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলায় ঐ মন্দিরগুলোতে আরতি, কীর্তন ও প্রার্থনা করা হয় । এতে সবাই পবিত্র মনে যোগ দিতে পারেন। রাত 8 থেকে 8.30 মিনিট পর্যন্ত এবং রাত 8.30 মিনিট থেকে 9.30 মিনিট পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণ করা হয় । মায়াপুরের পরিবেশ খুবই পরিচ্ছন্ন, মনোমুগ্ধকর ।
ক্রমশ চলবে.......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন