--------শান্তনু মজুমদার
শ্বেতা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।
অনিরুদ্ধ কিছুক্ষন বাইরে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করে গাড়িতে এসে বসলো। আসলে সিগারেট খাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সাহস করে নি আর।
শ্বেতা - আর কোনোদিন শাড়ি কেনার সময় তোমাকে অন্তত সাথে আনবো না অনি। এক ঘণ্টা দোকানে থেকেও তোমার জন্যে আজ আমার কাপড় কেনা হল না।
অনি - তুমি ভুল বলছ। এর আগে কি আমরা কখনো এক সাথে কাপড় কেনাকাটা করি নি ? আজ তোমার দোকান সিলেক্সান ভুল ছিল। আর শাড়ি যাই দেখছিলে, সব ডিজাইন অলরেডি তোমার আছে। আমি বলছি, তুমি বাড়ি গিয়ে মিলিয়ে নিও।
অনিরুদ্ধর গাড়ী চালাতে চালাতে কথা বলার ফাঁকে বার বার মনে হচ্ছিল যে এই একই বিষয় নিয়ে গাড়িতে বসেই শ্বেতার সাথে এর আগেও কোন এক দিন তার ঝগড়া হয়েছিল।
আজ পুরো শহর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে রইল। লোকাল থানার অন্য পুলিশ কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা গেল। শহরের নিউজ চ্যানেল গুলোর আজকের ব্রেকিং নিউজ এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মা।
বিকেল পাঁচটায় পুলিশ কমিশনারের রুমে অনিরুদ্ধকে হাজির হতে হল সাস্পেন্শনের ভয় মাথায় নিয়ে।
কমিশনার - ঠিক কি হয়েছিল আমাকে একটু খুলে বলো তো। তোমাকে সাসপেন্ড করা ছাড়া আর তো কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না মিডিয়াকে শান্ত করার জন্যে। উপর মহল থেকেও চাপ আসছে আমার উপর।
অনিরুদ্ধ - স্যার আমার ভুল হলে অবশ্যই আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু সাংবাদিক আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে আগে আমি অন্য কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করেছি। তাই আজ ওই মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে এরেষ্ট করি। তর্ক করছিল, তাই গায়ে হাত তুলি।
কমিশনার - কোথায় সেই সাংবাদিকের নামে তো কোথাও কোন পুলিশ রেকর্ড নেই। আর সে মাত্র এক মাস হয়েছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় এসেছে সাংবাদিকতা করতে।
অনিরুদ্ধ - সেটাই স্যার আমি ভাবছি। আমি নিজেই কেলকুলেশন মেলাতে পারছি না। বোধহয় আমার কোথাও কোন ভুল হয়েছে।
কমিশনার - দেখো অনিরুদ্ধ, তুমি আমার ছেলের বয়সি। তোমার আগের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। খুব সামনেই তোমার প্রমোশন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার কিছুদিনের রেস্ট প্রয়োজন। তুমি আজই এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দাও। সাংবাদিক হেনস্থার ব্যাপারটা আমি সব সামলে নেবো।
অনিরুদ্ধ - ধন্যবাদ স্যার।
মিডিয়া যেমন কাউকে লোকের কাছে মহান হিসেবে তুলে ধরতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন কাউকে সমাজের কাছে নামিয়ে দিতেও দু-দিন সময় লাগে না। অনিরুদ্ধর ঘনিষ্টজনরাই যেন তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে এই খারাপ সময়ে শ্বেতা নিজের অনির হাত ধরে আছে, তা যতই সাংসারিক খুঁটিনাটি ঝগড়া থাকুক।
শ্বেতা অনেকদিন ধরেই তার প্রাণপ্রিয় মানুষটির কিছু ব্যাপার লক্ষ করছে আর আজ অনিকে একটু আদর যত্ন করে বুঝিয়ে বলায় অনিও সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে রাজি হয়। নিজেদের গাড়ী করেই রয়ানা হয়।
পুলিশ কোয়ার্টার থেকে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত যাবার রাস্তায় ইকো পার্ক আর স্টেডিয়ামের মাঝের রাস্তাটা বেশ নীরব আর ফাঁকা থাকে দুপুরের দিকে। সেই জায়গাটায় গাড়ী আসতেই সামনের চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। কিন্তু অনি গাড়িতে স্টেপনি থাকা সত্ত্বেও গাড়ী থেকে নামে না বেশ কয়েক মিনিট গড়িয়ে গেলেও। শ্বেতা বিরক্ত হয়ে গাড়ী থেকে নামতে চায়। কিন্তু অনি নিষেধ করে। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দে গাড়িতে একটা গুলি এসে লাগে। অনিরুদ্ধ শ্বেতাকে নিয়ে সিটের নিচে ঝুঁকে পরে। ঠিক পর মুহূর্তেই আরো কয়েকটা গুলি এসে লাগে। অনি শ্বেতাকে থানায় ফোন করতে নির্দেশ দেয়। ছুটিতে থাকায় নিজের সার্ভিস রিভলভার সাথে না থাকলেও নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল সাথেই ছিল। তা দিয়েই সে অনুমান করে দুটো গুলি ছুরে। অন্তত সে যে সসস্ত্র অবস্থায় আছে এবং লড়াইটা এত সোঝা নয় সেটা জানান দিতে এবং তাতে কাজও হয়। ইতস্তত আরো কয়েকটা গুলি গাড়িতে এসে লাগলেও গাড়ির সামনে কেউ আসে নি। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় লোকেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরে। গাড়ির আশপাশে প্রচুর বুট পিন পাওয়া যায়। অনিরুদ্ধ গাড়ী থেকে বেরোলে নির্ঘাত মৃত্য ছিল।
আর ডাক্তারের ওখানে যাওয়া হয় নি। বিভিন্ন খুফিয়া সোর্স কে কাজে লাগিয়ে রাতেই দুজন অপরাধীকে বন্দুক সহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যারা অনেকদিন ধরেই এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মাকে প্রাণে মারার সুযোগে ছিল। পরের দিনের প্রভাতী পত্রিকায় সাহসী পুলিশ অফিসারের ছবি। মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত তার কুশল জানতে ফোন করেছেন।
আর দুদিনের মধ্যেই অনিরুদ্ধর ছুটি শেষ হচ্ছে। শ্বেতা অনিকে জিজ্ঞেস করেছিল গাড়ী থেকে সে নামে নি কেন। উত্তরে অনি শুধু বলেছিল, যে ঘটনা টা ঘটেছে সেই ঘটনার সাথে সে পূর্ব পরিচিত। শ্বেতা আর কিছু বলে নি অনিকে। আর দ্বিতীয় বার ডাক্তারের কাছে যেতেও জিধ করে নি। শুধু ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বলে, ঠাকুর তুমি যা কর ভালোর জন্যেই কর।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন