সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০

মলাট (অষ্টম সংখ্যা)


 

সূচিপত্র (অষ্টম সংখ্যা)


 

সম্পাদকীয়

    "শিশু" শব্দটির দ্বারা কি শুধু পুত্র সন্তানকে বোঝায় ? না, একদম না। শিশু শব্দটি দ্বারা যেমন শুধু পুত্রসন্তানকে বুঝায় না, ঠিক তেমনি শুধুমাত্র দরিদ্র অথবা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তানকেও বুঝায় না। শিশুদের নানান সমস্যার সমাধান এবং শিশু কল্যাণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উৎসাহিত করাই 'শিশু দিবস'-এর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে অগণিত সমস্যায় জর্জরিত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের  অথবা পথশিশুদের নিয়ে 'শিশু দিবস' উদযাপন করা ডুমুরের ফুলের মতো। প্রতিদিন অগণিত হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিভা সম্পন্ন শিশুদের প্রতিভার অপমৃত্যু হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানায় অথবা কোনো বিপদের ঝুঁকি সম্পন্ন কাজে। কন্যা নামক ফুলের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই হচ্ছে নির্মম হত্যা। আমরা যতই আধুনিকতার বড়াই করি না কেনো, এখনো কন্যা সন্তান ও পুত্র সন্তানের ভেদাভেদ করার মত নিছক মানসিকতা থেকে আমরা অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারিনি। 'শিশু দিবস' তখনই সার্থক হবে, যেদিন পুত্রকন্যা ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের সমস্যা সমাধানে এবং কল্যাণে সমাজের সকল অংশের মানুষের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে। 

       প্রিয় পাঠক, প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের "শিশু দিবস সংখ্যা"  নামক অষ্টম সংখ্যা। সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের কল্যাণ কামনা করে তাদের উদ্দেশ্যে এবারের সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হল। এবারের এই বিশেষ সংখ্যাটি পুষ্ট  হয়েছে যে সকল দীপ্তমান কবি-লেখকদের লেখনীর স্পর্শে সকলের প্রতি রইল  শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন। একটি অসামান্য প্রচ্ছদ অংকন করে সংখ্যাটির পূর্ণতা দান করেছেন প্রচ্ছদ শিল্পী মিঠন দেবনাথ মহোদয় এবং অকৃপণ সহযোগিতার জন্য মাননীয়া নিবেদিতা চক্রবর্তী মহোদয়ার প্রতিও রইল অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আবারো দেখা হবে আপনাদের ভালোবাসার টানে আগামী সংখ্যায়।


ধন্যবাদ-শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাসহ----

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

হেমন্ত দেবনাথ


'লালিত ভীরু' শিশুরাই জেগে উঠবে 'আকাশের ডাকে'

                                       ------হেমন্ত দেবনাথ


      শুভ্রপ্রাণ শিশুরাই আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন ও সম্পদ। এরাই দেশের সুনাগরিক। অথচ পূর্ণবিকশিত হওয়ার আগেই পথ-প্রান্তরে অগণিত শিশু-পুষ্প অকালে ঝরে পড়ে। অতীতকালেও শিশুরা ঘরে-বাইরে সর্বত্র ছিল অনাদৃত। প্রচন্ড মারপিট ও শারীরিক ক্লেশই ছিল অতীতে শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ব্যাধি ছিল বেশিরভাগ শিশুদের নিত্য সাথী। এছাড়া কল-কারখানায়ও শিশুদের অমানবিক শ্রমদান করতে হতো অতীতেও।

       ইউনেস্কোর মতে, চৌদ্দ বছর বয়সের নিচে ছেলে-মেয়েদের শিশু ও কিশোর বলে গণ্য করা হয়। এই অপরিণত বয়সের গরিব ছেলে-মেয়েরা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ক্ষেতে-খামারে, ঘরের কাজে, দোকানে-রেস্টুরেন্টে, কলকারখানায়, কার্পেট বোনা, হীরে কাটা, চুড়ি তৈরি, তাঁত ও জরির কাজ, দেশলাই-বিড়ি-বাজি-কাগজ তৈরি, কয়লা খনিতে কাজ, ইট ভাটায় কাজ, গালা তৈরি, সাবান তৈরি, রাজমিস্ত্রীর জোগান দেওয়ার কাজ, কাজ ও কীটনাশক ঔষধ তৈরি, চা ও বাগিচার কাজ, অবস্থাপন্ন মালিকের বাড়িতে ঝি-চাকরের কাজ, রেলস্টেশনে মালপত্র বহন------- এরকম নানা পেশায় আমাদের দরিদ্র শিশুদের শ্রম দিয়ে পয়সা রোজগার করতে হয়। অথচ ভারতীয় সংবিধানের ২৪( চব্বিশ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "১৪ বছরের নীচে কোনোও শিশুকে কোনোও কারখানা, খনি বা কোনোও বিপদজনক কাজে নিযুক্ত করা যাবে না।" ১৯৮৬ সালে শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন রচিত হয়। আবার, ১৯৯৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের শ্রম মন্ত্রক national authority of elimination of child labour সংস্থাটি গঠন করেন। তবুও শিশুশ্রম থেকে আমাদের শিশুকে পুরোপুরি মুক্ত করা যায়নি।

       আজও শুধু ভারতেই নয়, সারা পৃথিবীতে শিশু শ্রমিক রয়েছে। এরা কলকারখানায় প্রতিদিন দশ/বারো ঘন্টা কাজ করতে গিয়ে শিশু শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে রাসায়নিক পদার্থ ও দূষিত পরিবেশে সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সার, ত্বকের রোগ, যক্ষা, কখনও বা অপুষ্টিজনিত রোগেও শিশুরা ভোগে।

      শিশু শ্রমিকের কারণ হিসেবে যেসব বিষয়কে মোটামুটি ভাবে চিহ্নিত করা যায়, সেগুলো হচ্ছে---------

১) শিশুর পিতা- মাতার নিরক্ষরতা ও দরিদ্রতা। অর্থক্লীষ্টতার জন্যই তাঁরা তাঁদের শিশুকে বিদ্যালয়ের না পাঠিয়ে রোজগারের জন্য পাঠিয়ে দেন।  ২) শিশুদের কম বেতনে সহজেই বেগার খাটানো যায়।  ৩) শিশুরা বয়স্ক শ্রমিকদের মতো প্রতিবাদ করতে পারে না।  ৪) ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের সহজে নিয়োগ করা যায়।  ৫) কিছু কিছু নেশাগ্রস্ত পিতা-মাতার নেশা দ্রব্য কেনার জন্য যে অর্থ দরকার, তা মেটাতে শিশুকে কাজে পাঠিয়ে দেন।

                 শিশুদের উক্ত সমস্যার প্রতিবিধানের জন্য নানা উদ্যোগ জরুরী, যা নিম্নে উল্লেখিত হল :---

* ১) শিশু প্রতিভা অন্বেষণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, ছবি আঁকা ও বক্তব্য প্রতিযোগিতা বর্ষব্যাপী অব্যাহত রাখতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষকেও বেশি করে ভূমিকা নিতে হবে।

* ২) সমাজের প্রতিটি কোণ থেকে দরিদ্র ও লাঞ্ছিত শিশুদের খুঁজে বের করে এনে তাদের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। দরিদ্র শিশুদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করতে হবে। 

* ৩) নতুন আইন তৈরি করে সেই আইনের বাস্তব প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।

* ৪) সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ, দারিদ্র্য বিমোচন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, এমনকি প্রয়োজনে জাতীয় বাজেটে শিশু কল্যাণের জন্য আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা।

* ৫) সরকারি উদ্যোগে শিশুদের শিক্ষার অধিকারের প্রয়াস ঘটানো, "বিদ্যালয় ছুট" শিশুদের শিক্ষার অঙ্গনে নিয়ে আসতে হবে।

* ৬) শিশুশ্রমিকদের পূনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা করা এবং শিশুদের সুস্থ জীবনে প্রতিষ্ঠার কার্যকারী "অ্যাকশন প্ল্যান" গ্রহণ করতে হবে।

* ৭) সভা, আলোচনা চক্রের আয়োজন তৎসঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে।

 অবশ্য, শিশু শোষণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সহানুভূতি, সহমর্মিতা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থেরও। এব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শিশুদান তহবিল, আরো এগিয়ে এসেছে। দেশীয় পর্যায়ে সরকার অনুমোদিত অর্থ ও বেসরকারি সাহায্য এবং ব্যক্তিগত সাহায্য রয়েছে।

শিশুদের কল্যাণের প্রতি বিশ্বমানবতার প্রেরণা যোগাতে আন্তর্জাতিক স্তরে ও জাতীয় স্তরে উদ্যোগেরও শেষ ছিল না। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১ লা জুলাই তারিখটি সারা পৃথিবীতে "আন্তর্জাতিক শিশু দিবস" হিসাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৯৭৯ সালের ১ লা জানুয়ারি--এ দিনটিতে ভারতে" আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ" এরও শুভ সূচনা হয়েছিল। আজকের কোভিড-19 মহাসংকটের সময়েও সারাবিশ্বে স্লোগান হচ্ছে---- "যেকোনো সময় এর থেকে এই মুহূর্তে বেশি করে, শিশুদের শ্রম থেকে বাঁচান।"  আজকের শিশু দিবসের শুভক্ষণে এ বিষয়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।

     ১৪ ই নভেম্বর আমাদের ভারতবর্ষে শিশু দিবস হিসেবে প্রতি বছরই উদযাপিত হয়। এর উদ্দেশ্য হল :-  শিশুদের নানা সমস্যার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও শিশুকল্যাণে সকলকে উৎসাহিত করা। আমাদের স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শিশুদের সাথে খুব বেশি মিশতেন। তিনি বলতেন, "শিশুরা বাগানে গোলাপের কুঁড়ির  মতো, যা প্রস্ফুটিত হয়ে চারিদিকে সুগন্ধ বিতরণ করে।" তাদের সঠিক পরিচর্যা করা একান্ত জরুরী। শিশুদের কাছে তিনি "চাচা নেহেরু" নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রতিবছর তাঁর জন্মদিন অগণিত শিশুদের নিয়ে উৎসবের মেজাজে পালন করেন। তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমাদের শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের "মিড ডে মিল"-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শিশুদের অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর এই ভালোবাসার স্মৃতিকে স্মরণ করে রাখার উদ্দেশ্যে তাঁর জন্মদিনকে "শিশু দিবস" হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পালন করা হয়।

     শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিবছর যে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, অঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী হয়ে থাকে, তাতে সমাজের আভিজাত্য অবস্থাপন্ন পরিবারের শিশুরাই অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ঐ যে খেটে-খাওয়া শ্রমিক শিশুরা রেস্টুরেন্টেই কাজ করছে, ভাঙ্গা টিন সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে ঐ দরিদ্র শিশুগুলোকে যতদিন পর্যন্ত আমরা শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে শামিল করতে না পারবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের শিশু দিবসের অনুষ্ঠান সার্থক হবে না, পরিপূর্ণতা পাবে না। আমরাও সঠিক দিশাতে উপনীত হতে পারবো না। এ ব্যাপারে সমাজের বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।

      আজকের শিশুদের নানা সমস্যা, তাদের দারিদ্র্য, শ্রমিক হিসেবে বেগার খাটানো------ এসব থেকে মুক্তির বার্তা দিতে পারে "শিশু দিবস।" শিশু কল্যাণে মানুষকে ব্রতী করার লক্ষ্যেই এ দিবস উদযাপন।

       আগামী দিনের শিশুকে সামগ্রিক সমস্যা মুক্ত রাখতে ও তাদের অগ্রগতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উদ্যোগ আমাদের অন্তরে আশার আলো জাগিয়ে তোলে। "এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি" --- কবি সুকান্তের এ প্রত্যয় একদিন ফুলে-ফলে সৌরভিত হয়ে উঠবেই। কবি রবীন্দ্রনাথের শিশু তার মাকে নিয়ে মনের দুর্জয় শক্তি ও আনন্দ নিয়ে মুক্তমনে তেপান্তরের মাঠে আবারো পাড়ি দেবে।

 

কবিতা সরকার


 

    তোমার লাগিয়া

       

                    -----কবিতা সরকার


হাটে জমাইতে পসার

সকলই ভুলিয়া

জাগিছে বিধাতা

তোমার লাগিয়া।

ঢুলু ঢুলু তব খোলো আঁখিদ্বয়, 

ছাড়ো মলিনতা

জাগিছে বিধাতা 

তোমার লাগিয়া। 

অচেনা শহর পথ নাই চেনা, 

যেতে হবে কোথা তাও নেই জানা

জাগিছে বিধাতা 

তোমার লাগিয়া। 

ভুলিয়াছ যারে সকল সৃজন - প্রলয়ে, 

সহিয়া সকল উপেক্ষা 

জাগিছে বিধাতা 

তোমার লাগিয়া। 

মুদিলে নয়ান নিভিলে আলো

রুধিলে দ্বার আঁধার কালো, 

ভাবনা কি তোর আলোর শিখা 

জাগিছে বিধাতা 

তোমার লাগিয়া।

অমল কুমার মাজি


 

              রূপান্তর


                          ------অমল কুমার মাজি


আগেও ছিলাম এখনও আছি

আগামী দিনেও থাকবো

মহাবিশ্বের রহস্য মাঝে

ঘুমাবো আবার জাগবো।

অন্তরে বৃথা তোলপাড় ক'রি

শুরু ও শেষের দ্বন্দ্বে

ফিরে-ফিরে আসে দিন ও রাত্রি

মহাজাগতিক ছন্দে।

দূর্দমগতি মহাকাল চলে

অনন্ত গরিমায়

কোথায় যে আদি কোথায়  অন্ত

বৃথা খুঁজে ফিরি হায়!!

প্রতি পলকেই বিস্মিত করে

গতিময় চরাচর

উপলব্ধির একতারে বাজে-"সকলই রূপান্তর!!"

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


 

         চারাগাছ


                      ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য 


অনাবাদী ঊষর ভূমি  

দখলসহ নানা ধরনের কথা 

অবশেষে  ঘর্ম-অশ্রু ঝরিয়ে  

রোপন করেছে চারাগাছে মনের কথা।

শ্রমের ফলে আশাবাদী

যতনে নাই ত্রুটি  

আপন মনের পরিচর্যায় 

চারাগুলো বেড়ে ওঠে  গুটি গুটি।  

গাছে গাছে মধুকরের আনাগুনা

বিহগ- বিহগীর আলাপন

ফুলে-ফলে সেজেগুজে 

মানবশিশুকে করে আবাহন।

বৃক্ষপানে শিশুমন ছুটে চলে 

কিছু পাবার আশে

মা - বাবার আদর-স্নেহ

চলেছে ওদের পাশে পাশে। 



দিনাংকঃ-০৯ -১১-২০২০

রাজেশ ভট্টাচার্য্য


 

                    ঋতু পাঁচালী


                                     ------রাজেশ ভট্টাচার্য্য


বারো মাসে ছয়টি ঋতু বসন্ত হবে তার শেষ

প্রথম হবে কোন্ ঋতু ভাই গ্রীষ্ম হলেই বেশ।

গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি মামার বাড়ি যাবো,

আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু মনের মত খাবো।

তারপর আসবে যখন বর্ষা ঋতু ঘুরে,

খাল-বিল-নদী-পুকুর কানায় কানায় ভরে।

বর্ষা ঋতু যাবে যখন সুখে-দুখে চলে,

আনন্দে মনটা ভরে উঠে শরৎ ঋতু এলে।

শিউলি ফুলের গন্ধে তখন দুর্গাপূজা চলে,

কালীপূজা এলেই বুঝি হেমন্তের দেখা মিলে।

হাঁড় কাঁপানো শীতে আমার ঘুমোতে ইচ্ছে করে,

বসন্তের চড়ক মেলায় আনন্দে মনটা ভরে।

মিঠু মল্লিক বৈদ‍্য


 

                    নিমন্ত্রণ


                                  ------মিঠু মল্লিক বৈদ‍্য


নবান্নের আমন্ত্রণে সবুজ টিয়ার ঝাঁক;

সায়াহ্নের কালে হরষিত চিত্তে

আপন আধারে প্রত‍্যাবর্তন,

অসীম তৃপ্ততায় এক আকাশ স্বপ্ন- সমাহারে।


শরৎ এর মোহনীয়তা

হৈমনের সোনালী দোলায়

নবান্নের আঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতি,

টিয়ার কলস্বনে নেচে উঠে ধরনী।


নবারুণের আলো বেয়ে ঐ পাড়ার 

মুখুর্জ‍্যে বাড়িতে বইছে আনন্দবন‍্যা,

রকমারী ব‍্যঞ্জন,লুচি, পুড়ি, আলুরদম

আরো কত শত আয়োজন ;বংশধরের মুখে ভাতে।


ও পারার 'খুদে নয়ন' অপেক্ষায় পথ চেয়ে

আসবে নিমন্ত্রণ,মিটাবে ক্ষুধার জ্বালা,

হবে একবেলা শাখ ভাতের নিবৃত্তি,

উদরপুর্তিতে আসবে পরিপূর্তি।


নবান্নের ঘ্রাণে স্বপ্নবুনে দিবানিশি,

বয়ে গেছে দিন,ফুরিয়েছে বেলা,আসেনিতো কেউ, 

নিমন্ত্রণ রইলো বাঁধা আজও জাতিভেদের পরম্পরায়।

স্বপ্নভঙ্গের করুণ রোদনে নয়নের সাথে সবুজ টিয়াও বুঝি কাঁদে!!

প্রিয়াঙ্কা নন্দী


          হারানো সুর


                           ------প্রিয়াঙ্কা নন্দী


তোমারে আমার মনে পড়ে

এক শারদ প্রভাতে

যেখানে ঘাসের উপর শিশির পড়ে 

বায়ুতে সুবাস দোলাতে।

তোমারে আমার মনে পড়ে

এক নিঝুম রজনীতে

যেখানে সূর্য ঘুমিয়ে পড়ে

 কিরণ ভরা পূর্ণিমাতে।

তোমারে আমার মনে পড়ে

প্রতিটি স্মরণীয় দিন গুলিতে

যেখানে লাল, নীল রশ্মি পরে

রচিত থাকে হৃদয়ের লিপিতে।

তোমারে আমার মনে পড়ে

লোমহর্ষক ঘটনাবলীতে

যেখানে থাকে অশ্রু, বেদনা নীড়ে

ঝরে পড়ে নীরবে-নিভৃতে।

তোমারে আমার মনে পড়ে

স্রোতে বয়ে চলা প্রতিটি মুহূর্তে

যেখানে থাকে দুঃখ, করুনার তরে

ব্যথাগুলো না পারে লুকাতে।

মধুমিতা ভট্টাচার্য


 

                        বিকেল 


                                 ------মধুমিতা ভট্টাচার্য


একদিন ঠিক বিকেল বেলা হারিয়ে যাবো।

হলুদ দুপুর মাড়িয়ে, লালচে বিকেলে হারিয়ে যাবো।

শৈশবের সেই টিয়েপাখিটাকে খুঁজতে যাবো।

মেঘের ছাদ ফেটে বৃষ্টি এলে, 

ভিজে বৃষ্টিতে, তার গল্প লিখবো।

হাতের মুঠোয় জোনাক ধরে খুঁজবো শৈশবের পথভোলা সেই জোনাক পোকা।

বন পলাশের তলায় বসে খুঁজবো, সারা সন্ধ্যে জুড়ে, 

হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট বেলা।

বিকেল শেষের দীর্ঘ ছায়ায় 

ভিড় করেছে স্মৃতির মেলা, 

লুকোচুরি, সোনারটুক্কি, কাবাডি আর বন্দিখেলা।

সেই বিকেলটা কোথায় গেলো , একলা একা 

কেউ জানে না।

আজ বিকেল তুমি খুঁজে আনো, হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলা।

আমি যে সঙ্গী তোমার 

ফিরবো না আর ঘরের টানে।

একলা খোঁজার উড়ান ভরবো , ও বিকেল তোমার সাথে।

পায়েল মজুমদার


   

        যে ভাবে বুঝবো তোমায়

               

                                 -----পায়েল  মজুমদার


আমি শুধু বার বার তোমায় বলে যাবো,

ভালোবাসি--ভালোবাসি--ভালোবাসি।

তুমি নির্বাক হয়ে শুনবে,

নিস্তব্ধ অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে,

আর মিটিমিটি হাসবে। 


তোমার চাউনিতে আমি বুঝে নেবো,

তোমার মনে আমার গুরুত্ব কতটা। 

তোমার হাসিতেই আমি খুঁজে নেবো,ভালোবাসার গভীরতা। 

তোমার অবাক করা দৃষ্টিতে বুঝে নিতে চাই, 

আমায় কতটা আগলে রাখতে চাও। 

তোমার নিস্তব্ধতায় অনুভব করতে চাই,

তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো।

লিটন শব্দকর



              পারিজাত


                                 ------লিটন শব্দকর 


সরল স্নিগ্ধ মায়াময়,সত্য ও সুন্দর, 

অনাবিল হাসিমুখ আঁকা জীবন্ত ঈশ্বর।

ফুল ভালোবেসে ভালোবেসে সুর

প্রতিদিন শিখি শিশুর থেকে,

নতুন সূর্যই সভ্যতার রোজনামচায়

মধুগানের স্বরলিপি লিখে রাখে।

ডাঃ রথীন্দ্র কুমার নাগ


     

          পাঁচ পূরণ


                         -----ডাঃ রথীন্দ্র কুমার নাগ

  

রন্ধনেতে মসলা সেরা,

হলদী , মরিচ আর জিড়া। 

একেক মসলার একেক বাহার,

মসলা ছাড়া হয়না সুখাবার।


পাঁচক মশাইর যতই থাকুক গুণ,

রন্ধনেতে যদি না থাকে নুন।


সঠিক মাপের তেল নুন আর মসলা,

তবু বাকি থাকে সেরা মসলা।

আঙুলেতে যতই কর গনন,

যদি না থাকে পাঁচ পূরণ।

রান্নায় না হয় সুঘ্রাণ।।  

পাঁচক মশাই না হয় ক্ষমতাবান।

মসলার মাঝে সবার রাজা,

রন্ধনেতে পাঁচ পূরণ সেরা।


মানুষের মাঝে ও আছে তেমন,

সকল রান্নায় পাঁচ পূরণ যেমন।

ওরা সকল ঘটে ঢালে জল ,

সঙ্গে চলে না না দল বল। 

সকল দলের সাথে চলে,

পাঁচ পূরণ যেমন লাগে।


কলির জমানায় কতনা বাহানা

পাঁচ পূরণ এর মত কতনা ছলনা।

রাহুল নাগ


  

           ছোট্ট বেলার খুকুমণি


                                    ------রাহুল নাগ


ছোট্ট বেলার খুকুমণি গিন্নী গিন্নী সাজে।

গামছাটাকে ওড়না করে মাথায় জড়িয়ে রাখে।।

 

এই পাড়ারই ছোট্ট ছেলে , খুকীর পাশে বর।

পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতে সুখের করে ঘর।।


তাদের সুখে অবাক হয়ে বড়রা সব দেখে।

কেমন‌ করে এতো সুখী সেই কথাটাই ভাবে।।


ছোট্ট বেলার খুকুমণি আজ নববধূ সাজে ।

লাল রঙের শাড়ি পড়ে শশুর বাড়ি যাবে।।

জগন্নাথ বনিক


 

         শিশুর শপথ 


                        ------জগন্নাথ বনিক 

 

আজকের   শিশু  হবে ,

আগামী দিনের কান্ডারী।

তাই তো আমরা শিশু কিশোরদের,

মানুষের মতো মানুষ হবার শপথ নিতে বলি।।


চৌদ্দ নভেম্বর আমাদের দেশে,

মহান একটি  দিন ।

ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী

পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর শুভ জন্মদিন ।।


জানি আমরা শুভ জন্মদিনটি,

স্মরণ  করে  রাখবো ।।

তাই তো আমরা শিশু কিশোরদের,

নতুন নতুন শপথ নিতে  বলবো ।।


তোমরা  শিশু উজ্জ্বল  তারা ,

এই  দেশের  সুখ শান্তি ।

তাই তো আজ শপথ  নাও , 

দেশের বুকে আনবে  না  কোনো  অশান্তি ।।


তোমরা শিশু,তোমরা কিশোর ,

তোমরা   যে  আজ স্বাধীন ।

সব দুঃখ  কষ্ট ভুলে  গিয়ে , 

আমাদের দেশটাকে ভালো রাখবে চিরদিন।।

মাম্পী সরকার


   

               ব্যর্থতা 


                         ------মাম্পী সরকার



তোমার শহর রঙিন ভীষণ, 

        আমার শহর কালো। 

তোমায় ভালোবাসতে গিয়ে

          আমিই আগোছালো।।

সত্ত্বাটা আজ হারিয়ে গেছে 

          তোমার অন্তরালে। 

  গানগুলো সব বেমানান, 

              বিনা সুর-তালে।

   সব রং বিলীন যে আজ, 

             বিবর্ণতায় সাজি। 

নিজের মাঝে নিজেকে আজ 

                হন্যে হয়ে খুঁজি। 

জীবন আমার পথ হারালো

                স্বপ্ন হলো মিছে। 

আলো ভেবে ছুটেছি কেবল

             আলেয়ার পিছে।।

ভোলাও এবার অন্য পথিক...

            ভ্রমের মরিচীকা। 

 তোমার আমার স্মৃতিগাছায়

            টেনেছি যবনিকা।।

প্রানেশ পোদ্দার


         ডিজিটাল 


                      -------প্রানেশ পোদ্দার


ছুটল গাড়ি হাই স্পিডে

থামছে গাড়ি ব্রেক কষে

নামছে যাত্রী

মুচকি হেসে ।।


যায় যে জন নিজের কর্মে

অটুট বিশ্বাস নিজ ধর্মে

এমনি করে আসা যাওয়া

মাসের শেষে মাইনে পাওয়া   ।। 


সবাই এখন ব্যস্ত ভীষণ

ছেলে মেয়ের লেখাপড়া

আত্মীয় স্বজন ভুলে গিয়ে

মোবাইলেতে দায় সাড়া  ।।


পিতা মাতার বৃদ্ধাশ্রম

এটা যেন পারফেক্ট

ডাকে না মা, বাবা

বলছে মম ড্যাড  ।।


লাখো টাকার গহনা ছেড়ে

ইমিটেশনের যুগ

ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে

এটাই যেন সুখ  ।।


শাড়ি নয় জিন্স পেন্ট

ভীষণ কদর ফাস্ট ফুড

কী মজা কী মজা

ভেরি গুড,ভেরি গুড

  

শুভময় রায়

    

                          সমাধান সহজেই হয়ে যায়


                                                --------শুভময় রায়


       সাত বছরের ছোট্ট ছেলে বুকান। এমনিতেই পড়াশোনায় মনোযোগী, আর বাবা মার খুব বাধ্য ছেলে। তার সাথে স্কুলে যায়,  খেলাধুলো করে, মা বাবা বুকানকে নিয়ে খুব খুশি। পাড়ার লোকেরাও বুকানকে ভালোবাসে, পছন্দ করে।

কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবর্তন ঘটে যেদিন থেকে 'কুটি' এল বুকানদের বাড়িতে। বুকান মাঠে খেলতে গিয়েছিল, সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় 'কুঁই কুঁই' শব্দ শুনে দেখে রাস্তার ধারে, খড়ের কুটির মধ্যে একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। বুকান প্রথমে ওর মাকে খুঁজলো, কিন্তু আশেপাশে ছানাটার মাকে দেখতে পেল না। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে আসছে ,মাও বকবে বাড়ি না ফিরলে, আবার ছানাটা কাঁদছে, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বুকান ছানাটাকে হাতে করে তুলে নিল। মনে মনে ঠিক করল একে যখন খড়ের কুটির মধ্যে পাওয়া গেছে, তাই এর নাম দেব কুটি।

সেদিন থেকে কুটি রয়ে গেল বুকানদের বাড়িতে। বুকান তাকে নিজের হাতে খাওয়ায়, খেলে ওর সাথে। নিজের সাথে নিয়ে ঘুমায়।

বুকানের মা র কিন্তু কুকুরটাকে ভালো লাগে না। এর কারণ কিন্তু কুকুরটা নয়, বুকান। যখনই দেখ কুটি আসার পর থেকে বুকান শুধু তাকে নিয়েই আছে, আর সারাদিন খেলার জন্য বুকান এখন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। মা অনেক বুঝিয়েছে তাকে, কিন্তু বুকান এর কোনো পরিবর্তন হয় না।

বুকানের মা কে প্রতিদিন অনেক ভোরে উঠতে হয়, সকালে বাড়ির অনেক কাজ করতে হয়। বুকানের বাবা সকালে অফিস যাবেন, তাঁর জলখাবার করে দিতে হয়। এর মাঝেও তিনি বুকানকে এসে উঠিয়ে দিয়ে যান, ভোরবেলায় ওঠার জন্য। বুকান ওঠে, কিন্তু মা চলে যেতেই আবার শুয়ে পড়ে। এদিকে কুটিও সারাদিন বুকানের মায়ের সাথে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, কাজে বাধার সৃষ্টি করে।বুকানের মা আরও রেগে যান।

একদিন বুকান স্কুল থেকে ফিরেই বুকান কে নিয়ে খেলতে যাবে, তার মা চিৎকার করে উঠল,

"বুকান, তুমি প্রতিদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছো, সবসময় কুকুরটার সাথে খেলছো, আর তার জন্য পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছ। আজই তোমার স্কুলের এক স্যারের সাথে দেখা হল, উনি বললেন কত পরিবর্তন ঘটেছে তোমার পড়াশোনায়! আজকাল হোমটাস্কও ঠিকঠাক করছো না। সব এটা আসার পর থেকে!তার সাথে আমারও কাজে বাধা দেয়। না, ওই কুকুরটাকে আজই পাড়ার বাইরে ছাড়ার ব্যবস্থা করে আসছি।"

মায়ের বকুনি খেয়ে বুকানের কান্না পেয়ে যায়। চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলে, "মা, আমি মন দিয়ে পড়ব গো, তাড়াতাড়ি উঠব গো!তুমি কুটি কে তাড়িয়ে দিও না..ওকে আমি খুব ভালোবাসি!প্লিজ মা!"

মা রেগেই বলেন,"না না, তোমায় অনেক বুঝিয়েছি, তুমি কিন্তু শোনোইনি। তুমি যদি আমার কথা না শোনো, আমি শুনব কেন? তোমার কুটি আর এই বাড়িতে থাকবে না।"

বুকান মনের কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কুটিও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, শুধু বুকানের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, লেজ নাড়তে থাকে বারবার।যেন বলতে চায় মনিবকে আমি তোমার সাথে আছি।

সে রাতে বুকান মনের কষ্টে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কুটিও ঘরের এক কোণে ঘুমিয়ে পড়ে।

পরদিন ভোরবেলায় উঠে রোজকার মতো বুকানের মা ঘরের কাজ সেরে বুকান কে ওঠাতে গিয়ে অবাক!দেখেন বুকান উঠে পড়তে বসে গেছে।

বুকান বলে, "মা, জানো আজ ভোর হওয়ার সাথে একটা বড়ো ব্যাপার ঘটে গেছে! আজ ভোর হওয়ার সাথে সাথে কুটি দাঁত দিয়ে আমার চাদর বারবার খুলে দিতে থাকে যতক্ষণ না আমি ঘুম থেকে উঠি। তারপর বারবার আমার বিছানা আর পড়ার টেবিলের দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে, আমি পড়তে বসলে তবে শান্ত হয়!

মা, কুটিই এবার আমায় ঘুম থেকে তুলে দেবে। মা এবার তুমি আর কুটিকে তাড়িয়ে দেবে না তো?"

বুকানের মা খুশি হন, বলেন "ঠিক আছে তুমি যদি ঠিক ঠিক সময়ে ওঠো, পড়তে বসো তাহলে কুটিও থাকবে আমাদের বাড়িতে।"

কুটি সব বোঝে, মনিবের কাছে  এসে একবার লেজটা নেড়ে দেয়, যেন বলে, দেখো কত সহজে জটিল সমস্যার সমাধান করে দিলাম।

  

এলিনা সাহা


     আমার মা 


                -------এলিনা সাহা 



জন্মিলে মৃত্যু হবে

এ নহে নতুন কথা 

ফিরে পাবো জানি 

পাই যে মনে ব্যাখ্যা ৷


আমার মা মৃত্যু শয্যায় 

আজ কী বা কাল 

ছেড়ে চলে যাবে বহু দূর

আমার হতে চিরকাল ৷


খুকু বলে ডাকা বুঝি 

শুনব না কো আর 

বলবে না আয় খুকু 

তোকে দেখি একটি বার ৷


চোখ ফেটে আসে জল

পাশে বসে শয্যায়

বুক ফেটে যায় শুধু বোবা কান্নায় ৷


কী করে বুঝাই বল 

মন আর বাঁধা মানে না

সান্তনা দিয়ে বলে 

খুকু কিছু ভাবিস না তুই  ৷



ঐ আকাশে ছোট তারা হয়ে

আছি সারাক্ষণ তোর সাথে 

যখন আমায় পরবে মনে 

তোর মুখে মা বলে একটি ডাকে 

আসব নেমে তোর কাছে ৷

পুনম মজুমদার


         ওরা বাড়ছে


                               -----পুনম মজুমদার


  লতার মতো ওরা রোজ বাড়ে

  পৃথিবীর বাগিচা জুড়ে

  রঙে-রসে রূপের ডালি সাজাবে বলে।


 মোদের অজান্তে ওরা নীতি নির্ধারে

 ক্ষুদ্র হাত-পা আর বোধশক্তি নিয়ে।

 প্রতি সেকেন্ড চেয়ে থাকে

 নীরব উৎসুক চোখে।


অনুকরণ-অনুসরণের শিকড় দুটি

ক্রমশ বিস্তারে গুটি গুটি।

মায়ালোকের অন্ধকার খনি ভেদে

ওরা জেগে ওঠে মানবতার গানে।