সমাধান সহজেই হয়ে যায়
--------শুভময় রায়
সাত বছরের ছোট্ট ছেলে বুকান। এমনিতেই পড়াশোনায় মনোযোগী, আর বাবা মার খুব বাধ্য ছেলে। তার সাথে স্কুলে যায়, খেলাধুলো করে, মা বাবা বুকানকে নিয়ে খুব খুশি। পাড়ার লোকেরাও বুকানকে ভালোবাসে, পছন্দ করে।
কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবর্তন ঘটে যেদিন থেকে 'কুটি' এল বুকানদের বাড়িতে। বুকান মাঠে খেলতে গিয়েছিল, সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় 'কুঁই কুঁই' শব্দ শুনে দেখে রাস্তার ধারে, খড়ের কুটির মধ্যে একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। বুকান প্রথমে ওর মাকে খুঁজলো, কিন্তু আশেপাশে ছানাটার মাকে দেখতে পেল না। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে আসছে ,মাও বকবে বাড়ি না ফিরলে, আবার ছানাটা কাঁদছে, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বুকান ছানাটাকে হাতে করে তুলে নিল। মনে মনে ঠিক করল একে যখন খড়ের কুটির মধ্যে পাওয়া গেছে, তাই এর নাম দেব কুটি।
সেদিন থেকে কুটি রয়ে গেল বুকানদের বাড়িতে। বুকান তাকে নিজের হাতে খাওয়ায়, খেলে ওর সাথে। নিজের সাথে নিয়ে ঘুমায়।
বুকানের মা র কিন্তু কুকুরটাকে ভালো লাগে না। এর কারণ কিন্তু কুকুরটা নয়, বুকান। যখনই দেখ কুটি আসার পর থেকে বুকান শুধু তাকে নিয়েই আছে, আর সারাদিন খেলার জন্য বুকান এখন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। মা অনেক বুঝিয়েছে তাকে, কিন্তু বুকান এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
বুকানের মা কে প্রতিদিন অনেক ভোরে উঠতে হয়, সকালে বাড়ির অনেক কাজ করতে হয়। বুকানের বাবা সকালে অফিস যাবেন, তাঁর জলখাবার করে দিতে হয়। এর মাঝেও তিনি বুকানকে এসে উঠিয়ে দিয়ে যান, ভোরবেলায় ওঠার জন্য। বুকান ওঠে, কিন্তু মা চলে যেতেই আবার শুয়ে পড়ে। এদিকে কুটিও সারাদিন বুকানের মায়ের সাথে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, কাজে বাধার সৃষ্টি করে।বুকানের মা আরও রেগে যান।
একদিন বুকান স্কুল থেকে ফিরেই বুকান কে নিয়ে খেলতে যাবে, তার মা চিৎকার করে উঠল,
"বুকান, তুমি প্রতিদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছো, সবসময় কুকুরটার সাথে খেলছো, আর তার জন্য পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছ। আজই তোমার স্কুলের এক স্যারের সাথে দেখা হল, উনি বললেন কত পরিবর্তন ঘটেছে তোমার পড়াশোনায়! আজকাল হোমটাস্কও ঠিকঠাক করছো না। সব এটা আসার পর থেকে!তার সাথে আমারও কাজে বাধা দেয়। না, ওই কুকুরটাকে আজই পাড়ার বাইরে ছাড়ার ব্যবস্থা করে আসছি।"
মায়ের বকুনি খেয়ে বুকানের কান্না পেয়ে যায়। চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলে, "মা, আমি মন দিয়ে পড়ব গো, তাড়াতাড়ি উঠব গো!তুমি কুটি কে তাড়িয়ে দিও না..ওকে আমি খুব ভালোবাসি!প্লিজ মা!"
মা রেগেই বলেন,"না না, তোমায় অনেক বুঝিয়েছি, তুমি কিন্তু শোনোইনি। তুমি যদি আমার কথা না শোনো, আমি শুনব কেন? তোমার কুটি আর এই বাড়িতে থাকবে না।"
বুকান মনের কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কুটিও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, শুধু বুকানের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, লেজ নাড়তে থাকে বারবার।যেন বলতে চায় মনিবকে আমি তোমার সাথে আছি।
সে রাতে বুকান মনের কষ্টে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কুটিও ঘরের এক কোণে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন ভোরবেলায় উঠে রোজকার মতো বুকানের মা ঘরের কাজ সেরে বুকান কে ওঠাতে গিয়ে অবাক!দেখেন বুকান উঠে পড়তে বসে গেছে।
বুকান বলে, "মা, জানো আজ ভোর হওয়ার সাথে একটা বড়ো ব্যাপার ঘটে গেছে! আজ ভোর হওয়ার সাথে সাথে কুটি দাঁত দিয়ে আমার চাদর বারবার খুলে দিতে থাকে যতক্ষণ না আমি ঘুম থেকে উঠি। তারপর বারবার আমার বিছানা আর পড়ার টেবিলের দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে, আমি পড়তে বসলে তবে শান্ত হয়!
মা, কুটিই এবার আমায় ঘুম থেকে তুলে দেবে। মা এবার তুমি আর কুটিকে তাড়িয়ে দেবে না তো?"
বুকানের মা খুশি হন, বলেন "ঠিক আছে তুমি যদি ঠিক ঠিক সময়ে ওঠো, পড়তে বসো তাহলে কুটিও থাকবে আমাদের বাড়িতে।"
কুটি সব বোঝে, মনিবের কাছে এসে একবার লেজটা নেড়ে দেয়, যেন বলে, দেখো কত সহজে জটিল সমস্যার সমাধান করে দিলাম।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন