সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

শনিবার, ১৫ আগস্ট, ২০২০

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

         
                      তবুও ভুলিনি
    
                                    ----রাজেশ ভট্টাচার্য্য

অষ্টাদশের মধ্য যুগ পরে
১৭৬৫ খ্যাত সাল।
পশিল বণিক সাজে ভারত ভূতলে
ইংরেজ মুষিক পাল।
মাগিলো থাকিতে ব্যবসা করিতে
মাথা গোঁজার মতো ঠাঁই।
লিখে দিলো ভিসা বাহাদুর বাদশা
ব্যবসাতে বাঁধা ধরা নেই।
পাইয়া স্বীকৃতি খুলিল নিয়তি
পলকেতে মজিলো সন্ত্রাসে।
জাগে ধনে ভোগ লোভে ফাটে বুক
ফুটিয়া পুড়িছে গো-গ্রাসে।
হেরিয়া বাংলার সিরাজউদ্দৌলার
কেশরে টংকার মারে।
সিপাহী সাজাইয়া আইলো ধাইয়া
সাসাতে পলাশী প্রান্তরে।
উঠে গরজিয়া কামান, কার্তুজ,
বর্ষা, তরবারি, ঢাল
সিংহ সম যুদ্ধে, বিকট নিনাদে,
মীরমোহন, মদন লাল।
শোণিত লহরী বহে ময়দানে
কৌতুহলী সমর বাঁধিয়া।
মীরজাফর যুদ্ধে করিল বেইমানি,
ক্লাইভে যায় নবাবে ত্যাজিয়া।
সমর অবসানে সিরাজের প্রাণে
বিধিলো বিষ মাখা ছুরি‌।
ডুবিলো বাংলা ভারত দিবাকর
ইংরাজ মসনদ নিলো কাড়ি।
চালালো শাসন শোষণ নিপীড়ন
চালাল চাবুক কষাঘাতে।
রাজা মন্ত্রী দাস ত্যাজিয়া প্রয়াস
বাঁচিবারে চায় কোনো মতে।
পরাধীন নারী, নর চোখে বারী
কপোল ভিজিল শোকে-দূঃখে।
হরিল রতন, টাকা কড়ি ধন
বসন অসন হীনে ভূখে।
দশ হাতে হরা লুটে করে সাড়া
 তবুও লালসে নাহি অন্ত।
চাষে বাসে বিধি দিশা দিল নিধি
নীল চাষে ধরিল দিগন্ত।
মাঠে ঘাটে চাষী মুখে নাহি হাসি
মাথাতে ঠেকানো দুটো কর।
মরিল কাতারে অন্ন নাহি ঘরে
খ্যাত ছিয়াত্তরের মন্বন্তর।
মাথেনিতো কেহ দেশপ্রেমী শ্রেয়
বিদ্রোহে বিক্ষোভে জ্বলে সবে।
মাতোয়ারা হয়ে ক্ষুধা জ্বালা সহে
পশিল লড়িতে অঙ্গ দহে।
দমাতে ব্রিটান ধায় আগুয়ান
পুড়ালো কাতারে কত বাড়ি।
নারী কলঙ্ক বিধিলো অসংখ্য
আবাল-বৃদ্ধা-যুবা নারী।
বাড়ে যতদিন কাজে পরাধীন,
চেতনা বাড়িলো তিলে তিলে।
নিয়ে বাহুবল শপথে অটল,
নেতাতে ভিড়লো দলে দলে।
ব্যাপিয়া ভারতী জাগে মহারথী
নবজাগরণে জাগে নিষ্ঠা।
শিহরণে জাগে উথলিয়া বেগে
শপথে অমনি প্রচেষ্টা।
পাঞ্জাবে গর্জে লালা লাজপৎ,
বালগঙ্গাধর মারাঠে।
বাংলার বিপিন-ভগৎ-যতীন
 গান্ধী উদিত গুজরাটে।
হাহাকারে আরও অনাহারে মিশে
নির্যাতনের পুড়ে সারা দেশে দেশে।
দেশহীতে বন্দি মহাত্মা গান্ধী
প্রকাশিত পিড়িতের পাশে।
নেতাজী সুভাষ থাকিয়া প্রবাস
আনিল বাহিনী আজাদহিন্দ।
পরাধীন পাশ কাটিয়ে সুভাষ
আওয়াজ পরিল জয় হিন্দ।
নেতাজির ক্রোধে প্রাণপণ যুদ্ধে
ব্রিটেন কাঁপালো  জানু অঙ্গ।
পরিয়া বিপাকে মুষিক শাবকে
চুপাতে কুড়িল সুরঙ্গ।
এত অবিচার গুনে রাখা ভার
নিরবে সমরে মুখ‌
৪৭ সনে ভারত স্বাধীনে
মাউন্টব্যাটেনে দিল খসড়া।
ভাগে দুটো স্থান ভারত পাকিস্তান
লেখনি আনিল মেপে মুসড়া।
১৫ ই আগস্ট ৪৭ সাল,
নিল সপে নেতা দুদেশের হাল।
পাকিস্তান রাখে মোহম্মদ জিন্না
ভারত সপিল জওহরলাল।।

মলাট (পঞ্চম সংখ্যা)


সূচিপত্র (পঞ্চম সংখ্যা)


সম্পাদকীয়

  
    
      প্রিয় পাঠক, আজকের এই পবিত্র দিনে "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার সদস্য/সদস্যাদের পক্ষ থেকে আপনাদেরকে জানাচ্ছি স্বাধীনতা দিবসের প্রীতি এবং শুভেচ্ছা। জীবনের অনেক ঋণই শোধ করা যায় না, শুধু মাত্র স্বীকার করেই পাওয়া যায় পরম শান্তি। সেই সব অপরিশোধনীয় ঋণের স্বীকৃতিস্বরূপ আজকের এই পবিত্র দিনে প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের 'মুক্তকণ্ঠ' নামক পঞ্চম সংখ্যা। ১৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট রত্নগর্ভা ভারত-জননীর বীরসন্তানদের আত্ম বলিদানের ফলে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। অত্যাচারী ব্রিটিশের রক্তচক্ষুকে পরাভূত করে আমরা পেয়েছিলাম মুক্ত জীবনের উচ্ছ্বাস। আগস্ট মাস হল স্বাধীনতার মাস, আগস্ট মাস হল ত্যাগের মাস, আগস্ট মানেইতো বিজয়ের মাস, আবার আগস্ট মাস মানেই মহামিলনের মাস। তাই আগস্ট মাস প্রতিটি ভারতবাসীর মনকে বারবার উদ্বেলিত করে তুলে। সাহিত্য নয়নের এবারের সংখ্যা যাঁদের লেখনীর স্পর্শে "মুক্তকণ্ঠ" নামের সার্থকতা পেয়েছে তাঁদের সান্নিধ্য পেয়ে এই পত্রিকার সম্পাদক হিসেবে আমি গর্বিত। আমাদের স্বাধীনতা এবং স্বদেশ বিষয়ে উনাদের লেখনীর স্পর্শে সৃষ্ট বাগিচা রংবেরঙের ফুলে সুসজ্জিত হয়েছে। আমাদের প্রচ্ছদ শিল্পী এবং কবি কবিতা সরকার অসামান্য প্রচ্ছদ এঁকে মুক্তকণ্ঠকে এক অনন্য মাত্রা দান করেছেন। ভারতের মুক্তিপথের অগ্রদূতেরা বহু রক্তের বিনিময়ে রক্তপিপাসু ইংরেজদের হাত থেকে ছিনিয়ে এনে আমাদের উপহার দিয়েছেন আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা। উনাদের চরণে নিবেদিলাম শত কোটি প্রণতি। উনাদের আশীর্বাদের ধুলো মাথায় ঠেকিয়ে আমরা সাহিত্যের আঙিনায় গড়ে তুলবো এক নতুন রংমহল। বন্ধুরা, এই নতুন রংমহল তৈরিতে আপনারা আমাদের হাত ছাড়বেনা না তো ? অনেক কথা হল। আজ তবে এইটুকু থাক, বাকি কথা পরে হবে।

ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা-সহ
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন 

হেমন্ত দেবনাথ


                                                                                              রাখীবন্ধন ও রবীন্দ্রনাথ
                                                                                                                   -------হেমন্ত দেবনাথ

রাখীবন্ধন উৎসব হচ্ছে আমাদের প্রাণের সম্পদ। রাখী হচ্ছে রঙীন সুতোয় বাঁধা এমন বন্ধন যা স্নেহ-ভালোবাসা-বীরত্বের এবং সংহতি-সম্প্রীতি এক ঐতিহ্যবাহী প্রতীক। এই রঙীন মঙ্গলসূত্রটি ভাই-বোনের হাতে, ভাই ভাইয়ের হাতে, বন্ধু বন্ধুর হাতে, স্ত্রী স্বামীর হাতে, এক সম্প্রদায়ের মানুষ অপর সম্প্রদায়ের মানুষের হাতে রাখী বেঁধে দেয়। একে অপরের শুভকামনায়, সংহতি কামনায় এরা রাখী বেঁধে দেয়।
                 রাখীবন্ধনের মাহাত্ম্য বড়োই অর্থবহ। যেমন:-
*(১) ভারতের মধ্যযুগে শক্তিমান নৃপতি রা বিলাসিতা ও পারস্পরিক ঐক্যহীনতার হেতু দুর্বল রাজ্য গুলোর উপর আক্রমণ করে পরাজিত করে ঐ রাজ্যগুলোর রাজাদের সিংহাসনচ্যুত করে নিতেন। ফলে তৎকালীন নারীদেরকে সতীত্ব ও মর্যাদা হারিয়ে অপমানিত হতে হতো। তাই রাজপুত নারীরা নিজেদের সম্মান বাঁচাতে "জওহর ব্রত''-র মাধ্যমে প্রাণ বিসর্জন দিতেন। গুজরাটের রানী কর্ণাবতী বিপন্ন হয়ে দিল্লির সম্রাট হুমায়ূনকে 'ভাই' বলে সম্বোধন করে তার কাছে রাখী পাঠিয়েছিলেন। সেই রাখী পাওয়া মাত্রই হুমায়ুন ছুটে গিয়ে তাঁকে বিপদ থেকে বাঁচিয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছিলেন।
*(২) আবার শাস্ত্রীয় মতে, শ্রাবণী একাদশীতে যার প্রারম্ভ আর পূর্ণিমা তিথিতে সমাপ্তি-- এরই নাম কৃষ্ণের ঝুলন বাসর। রাধাকৃষ্ণের এই পবিত্র মিলনের সদ্ভাবকে রক্ষাবন্ধন মন্ত্র আবদ্ধ করা হয় এবং পরস্পর পরস্পরের হাতে মঙ্গলের প্রতীক হিসেবে রাখী বেঁধে দেন।
*(৩) আর স্বদেশপ্রেমের দ্যোতনায় রাখী বন্ধন এর মধুর তাৎপর্যকে বহন করে নিয়ে এলেন ১৯০৫ সালে রবীন্দ্রনাথ ও রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী।
            কাজেই রাখী বন্ধন এর ইতিহাস আমাদের দেশে অনেক পুরোনো। আমাদের দেশ দীর্ঘ প্রায় ২৫০ বছর যাবৎ ব্রিটিশ শাসনাধীন ছিল। "Divide and Rule policy" প্রয়োগ তারা আমাদের দেশে শাসন ব্যবস্থা কায়েম করেছিল। বড়োলাট লর্ড কার্জন এই নীতির মাধ্যমে গোটা বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে ঐক্য বিনষ্ট করে তাদের দেশপ্রেমে ভাটা আনয়নের তাগিদে বাংলাকে ভাগ করে নেবার সিদ্ধান্ত নিলেন। লর্ড কার্জনের যুক্তি ছিল এত বড়ো প্রদেশের শাসনকার্য সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার সুবিধার্থে তিনি নাকি বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁর মতে, প্রশাসনিক সুবিধার্থে প্রদেশের পুনর্গঠন খুবই জরুরী। তাঁর পরিকল্পনা অনুযায়ী---(১) পূর্ববঙ্গ ও আসাম নামে একটি নতুন প্রদেশ গঠন। (২) "বঙ্গদেশ" নামক একটি প্রদেশ গঠন-- এখানে যুক্ত হবে বর্ধমান প্রেসিডেন্সি বিভাগ তার সাথে থাকবে ছোটনাগপুর ও বিহার।
                 লর্ড কার্জনের সুপারিশ অনুসারেই ভারত সচিব বঙ্গভঙ্গের প্রস্তাব অনুমোদন করেন। অবশেষে ১৯ জুলাই, ১৯০৫- এ সরকারিভাবে বঙ্গভঙ্গের কথা ঘোষিত হয়। সমগ্রদেশ জুড়ে মিছিল, মিটিং, হরতাল ইত্যাদির মাধ্যমে শুরু হয়ে যায় তীব্র প্রতিবাদ, আন্দোলন। এই বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন আরও তীব্রতর রূপ ধারণ করেছিল নিম্নোক্ত তিনটি সরকারি ষড়যন্ত্রের জন্যেও:-
(I) ইউনিভার্সিটি বিল (1904) :- দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে সরকারের আয়ত্তে এনে উচ্চ শিক্ষাকে ব্যয়বহুল করতে উদ্যত হন। উচ্চ শিক্ষা লাভের পথ এরূপ ভাবে বন্ধ করে দেবার অভিসন্ধি দেশবাসী উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন।
(ii) প্রাথমিক শিক্ষা সংক্রান্ত পরিকল্পনা (11 মার্চ, 1904) :- এর পেছনেও দেশকে ভাগ করে দেবার অপপ্রয়াস।
(iii) কার্লাইল সার্ক্যুলার (10 অক্টোবর, 1905):-  এ সার্ক্যুলার মূলে বলা হয়, বঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে কোনো ছাত্র-ছাত্রী যোগদান করা থেকে বিরত না থাকলে অথবা "বন্দেমাতরম্" ধ্বনিও উচ্চারণ করা থেকে বিরত না থাকলে তাকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিষ্কার করা হবে। এই তিনটি সরকারি ঘোষণা বঙ্গ বিরোধী আন্দোলনকে তীব্র থেকে তীব্রতর আকারে নিয়ে গেল।

                     ছাত্ররা পিকেটিং করে বড়ো বাজারে বিলেতি দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করেছে। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে বহিস্কৃত হতে থাকলো। এজন্যে ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি গড়ে তোলার প্রস্তাবও গৃহীত হল। এ উদ্দেশ্যে প্রচুর অর্থ সংগৃহীত হতে লাগলো। রবীন্দ্রনাথও বিদ্যালয় স্থাপনের আহ্বান জানালেন। পুলিশি নির্যাতন চলতেই থাকলো।
                    এই প্রেক্ষাপটে বঙ্গের মানুষের ঐক্যকে সুদৃঢ় ও অক্ষয় রাখার উদ্দেশ্যে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদী সক্রিয় ভূমিকা পালনে উদ্যত হলেন। তাঁরা দেশের সংহতির প্রতীক হিসেবে "রাখীবন্ধন" উৎসব পালনের আহ্বান জানালেন। মানুষ তাতে সাড়া দিয়েছিলেন। মানুষকে প্রাণিত করার লক্ষ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করলেন সেই গানটি-------
"বাংলার মাটি, বাংলার জল,
 বাংলার বায়ু, বাংলার ফল----
 পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, পুণ্য হউক, হে ভগবান"

অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর (রবীন্দ্রনাথের ভাতুষ্পুত্র) রাখি বন্ধন এর সূচনা প্রসঙ্গে "ঘরোয়া" নামক গ্রন্থে লিখেছেন----- " রওনা হলোম সবাই গঙ্গা স্নানের উদ্দেশ্যে, রাস্তায় দু'ধারে বাড়ির ছাদ থেকে আরম্ভ করে ফুটপাথ অবধি লোক দাঁড়িয়ে গেছে------ মেয়েরা খৈ ছড়াচ্ছে, শাঁক বাজাচ্ছে, মহা ধুমধাম----যেন একটা শোভাযাত্রা........।" সবাই গান গাইতে গাইতে ছুটলেন। স্নান সেরে নেবার পর গঙ্গার ঘাটে একে অপরের হাতে রাখী পরিয়ে দিয়েছিলেন এবং তাঁরাও সেটা সাদরে গ্রহণ করেছিলেন। বাংলার ঘরে ঘরে পালিত হল অরন্ধন। স্বদেশী দ্রব্য গ্রহণ করতে লাগলেন সবাই আর বিদেশি দ্রব্য বর্জন করতে শুরু করলেন দেশবাসী। আজও রাখীবন্ধন উৎসব প্রাসঙ্গিক। আর দেশের অসাম্প্রদায়িক ও ধর্মনিরপেক্ষতা চরিত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে রবীন্দ্রনাথই আমাদের প্রেরণার উৎস। আমরা সেদিন রবীন্দ্রনাথের কন্ঠেই শুনেছিলাম সেই বার্তাটি---------
"সবার পরশে পবিত্র করা তীর্থনীরে,
এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে।"

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


           
               মুক্তকণ্ঠ----

                          -----কিশোর কুমার ভট্টাচার্য 

ডিম ফুটেছিল ;
কিন্তু চোখ ফুটে নি
বাঁচার তাগিদে কিচিরমিচির
মা ময়নার যতনে ধীরে ধীরে
চোখ ফুটলো-- পৃথিবীর রূপ দেখে দিশেহারা
বুঝতে পারেনি-- কী হবে!
ডানা ঝাপটে যেদিন উড়লো
ময়না ছানা ভাবলো--
সে মুক্ত - স্বাধীন।
নভোতলে ওর মুক্ত বিচরণ।
বটের শাখায় বসে ডাকছিলো
মুক্তকণ্ঠে-- কী আনন্দ!
 দূর থেকে শোনে ময়নারবুলি 
 জেগে উঠে উদগ্র বাসনা গুলি।
ফাঁদে আটকে ময়না ছানা
খাঁচায় বন্দী জীবন - নতুন ঠিকানা।
খাঁচা ভাঙার কত-না তোড়জোড়
ডানা ঝাপটানো,চেঁচামেচি
কিন্তু হায়!
মনিবের পঞ্চ ইন্দ্রিয়  সচেতন,
বন্দীর যন্ত্রণায় ওর মনে উড়ে  বিজয় কেতন।
 বন্দী জীবন - পরাধীন
কঠোর শাসন সারাদিন।
শিখলো কিছু নতুন বুলি
বুঝলো মানুষের ভাষা
সভ্যতার কিছু গন্ধ
লাগলো খাঁচার গায়ে।
মনিবের মনে জাগলো আশা।
কিন্তু, আদবকায়দা শিখে
মাঝেমাঝে প্রভুর বদনাম বলে
আগন্তুক জনে।
এতো বড়ই বেমানান
আমার খায়,আবার
আমারই বদনাম গায়
তা-ই তো একদিন রাগে গোঁসায়
দু' একটা চড়  কষায়
দিলো পাখিটিকে ছেড়ে,
বন্দী জীবন পেলো নতুন মুক্তির আস্বাদন
মুক্তকণ্ঠে  নতুন দিনের আবাহন।
কাকলিতে সবুজ উঠলো মেতে ;
বারিধারা শেষে
আকাশ আজ নির্মল
নতুন এ প্রভাতে।
মুক্তকণ্ঠে গাহিল চাষা সবুজের গান,
 লেখনীর জোরে মানবের মনে
  উঠিবে জাগিয়া পুনরুত্থান।


রচনাকাল-- ০৫-০৮-২০২০

অমল কুমার মাজি

 
         বারণ আছে

                  -----অমল কুমার মাজি

 একটা সময় তখন ছিল
মূল্য ছিল চেঁচিয়ে কাঁদার
বোল ফোটেনি,দাঁত ওঠেনি
হয়নি সময় স্বার্থ বাঁধার।।
পার হ'য়ে সেই গন্ডিগুলো
ঘাঁটতে-ঘাঁটতে অনেক কাদা
আজ বুঝেছি জীবনটা এক
মস্ত বড় গোলকধাঁধা।।
যোগ-গুণ-ভাগ শেষ ক'রে আজ
শুধুই এখন বিয়োগ সাধা
আড়াল খুঁজে গুমড়ে মরা
বারণ আছে চেঁচিয়ে  কাঁদা।।

কবিতা সরকার

           
             অচেনা ভারত 
              
                              -----কবিতা সরকার 


পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি
আমার চেনা দেশের মাটিতে
মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সন্ধ্যা নামে
কোনো এক ক্লান্ত কাকের বিদীর্ণ চিৎকারে,
 রাত্রির ঘন অন্ধকারে শিকারী পেঁচার ভিড়,
যান্ত্রিক সভ্যতার পাথুরে জীবনে
চলছে এক গভীর দেওয়া নেওয়ার খেলা,
মানুষের পৃথিবীতে উদ্বাস্তু মানুষ-ই ।
পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি
আমার চেনা দেশের মাটিতে
চতুর্দিকে সকলই অচেনা
ম্লান হয়েছে অতীতের স্মৃতি
হারিয়েছে তীতু- কবীর-নেতাজি,
একদিন যারা ছিল দেশপ্রেমিক
আজ তারাই দেশদ্রোহী
ঐতিহ্যের নামে ধর্মের রাজনীতি,
মুখোশের আড়ালে ঢাকছে পৃথিবী ।
রাতের অন্ধকারে শিকারী হায়না
দিনের আলোয় সেও গভীর আধ্যাত্মিক
রঙ ছড়ানো পৃথিবীতে এ এক অন্য দেশ,
কালাপানি নয়, মান্দালয় নয়,
না না রেঙ্গুনও নয়
এ আমার চেনা ভারতবর্ষ
তবুও পথ হারিয়ে ফেলেছি আমি
আমার চেনা ভারতবর্ষের মাটিতে ।

অভিষিক্তা রায়


                      আমার ভারত

                                 -----অভিষিক্তা রায়

আমার ভারত বিশ্বসেরা নজরুল-রবি গানে,
ভারতীয়বোধে গর্বিত মোরা,তৃপ্তি মনেপ্রাণে।
বিনয়,বাদল,ক্ষুদিরাম আর সূর্যসেন মিলে,
স্বাধীন ভারত জন্ম দিয়েছে,সয়েছে আঘাত তিলে তিলে।
এদেশের মাটি লাল হয়েছে,বয়েছে রক্তগঙ্গা,
ইংরেজ রোধে প্রাণ বলিদান,চলেছে তীব্র সংঘাত।
ইডেনের মাটি আজও পরিচিত মহারাজার সিক্সারে,
বিশ্বকাপে এদেশ আমার সর্বসেরার রেকর্ড গড়ে।
বিবেকানন্দ, নিবেদিতা কিংবা কাদম্বিনী,
সেবায় উৎসর্গ করেছে নিজেকে,লিখেছে জীবনের বাণী।
সর্বধর্মসহিষ্ণুতা ভারত মায়েরই তো শিক্ষা,
অন্যায়ের পথে আঘাত হানো,করোনা আপোস-ভিক্ষা।
আর জনমে জন্ম মাগো তোমার কোলেই যেন পাই,
তেরঙ্গা পতাকা হৃদি মাঝে যত দূরেতেই যাই।

শান্তশ্রী মজুমদার


             আমাদের সংবিধান 

                                 -----শান্তশ্রী মজুমদার

ব্রহ্মাণ্ড বাঁধা অদৃশ্য নিয়মের সুতোয়।
সমাজ, রাষ্ট্র ও চলে নিয়মের নীতিতে।
কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী একটাই আকাশ।
ছোটো ছোটো আইনের গ্রন্থীতে যুক্ত আকাশটি।

সংবিধান, আসমুদ্র হিমাচলের সর্বোচ্চ আইন।
ক্রীপস্ মিশন গণপরিষদ
নেহরু প্যাটেল আম্বেদকর।

একটা সময় একটা কাল
সাতচল্লিশ থেকে ঊনপঞ্চাশ।

অবশেষে অশোকচক্রের চাকা ঘুরে ১৯৫০।
সাম্য স্বাধীনতা অধিকার কর্তব্য।

স্বাধীনদেশে নতুন সংবিধানের পথ চলা শুরু।
আমরা ভারতের জনগণ সংবিধানের রচয়িতা।

সার্বভৌম ক্ষমতা নিয়ে আমি একটা চাঁদ খুঁজছি।
যেখানে থাকবেনা কোনো অপ্রাপ্তির দীর্ঘ শ্বাস।
মায়াবী চাঁদের কলঙ্ক ঢাকবে কর্মের অধিকারের জ্যোৎস্না।

আমি আশাবাদী কমলা সূর্য হাসবেই অনাগত নতুন  ভোরে।


রচনা কাল :- 09/08/2020

শিশির অধিকারী


         স্বাধীনতা 

                   -----শিশির অধিকারী

শিশুর কলরবে পৃথিবী
 কখনো হাসে কখনো কাঁধে
বিহঙ্গ বিহঙ্গী আনন্দেতে নাচে
স্বাধীনতা।

মুক্ত বাতাসের স্পর্শে
মাঠে ময়দানে
প্রাণ ভরে মন খোলে
একটু আড্ডা একটু গল্প
 পাশাপাশি বসে থাকা
আর শরীরচর্চা করা
স্বাধীনতা।

মাকে মিথ্যা বলে
কলেজ ফাঁকি দিয়ে
বন্ধুদের  সাথে
সিনেমা হলে
সিনেমা দেখা
স্বাধীনতা  ।

নারীদের আজ জয় জয়কার
এগিয়ে গেছে সব দিকে
দেশের কাজে সৈনিক বেশেও
পাহাড় জঙ্গলে
স্বাধীনতা।

বাসে ট্রামে
রেল স্টেশনে রাজপথে
নানা রূপে ভিক্ষা মাগে
স্বাধীনতা।

পার্কে রেস্টুরেন্টে
মলের সামনের সিঁড়িতে বসে
মেট্রোর সামনেতে
লাগামহীন আড্ডা মারা
স্বাধীনতা।

তোমার কপালে
আমার ঠোঁটের স্পর্শের
উষ্ম চুম্বনে
এঁকে দিলাম
ভালবাসার চিহ্ন
স্বাধীনতা।

ডা. ফুলশ্রী চক্রবর্তী


    ভারত আমার জন্মভূমি

                          ------ ডা. ফুলশ্রী চক্রবর্তী

শোনো ওগো বন্ধুগন ,   
ভারত মোদের জন্মভূমি
দাও জয়ধ্বনি তাহার তুমি।
বল ভারত মাতার জয়,
জয় ভারতের পতাকার জয়
উড়িছে গগনে সগৌরবে
গাইছে ভারতের জয় গাথা
বল জয় জয় ভারতমাতা।
জয় শুভ্র হিমালয়ের জয়,
শস্য শ্যামল ভারতের জয়,
নীলা চঞ্চল সমুদ্রের জয়।
স্নিগ্ধ পাবন গঙ্গা যমুনা গোদাবরী
বইছে এই দেশে যুগ যুগ ধরী।
ভারতের পবিত্র ভূমি,
কত মনীষীর জন্মভূমি।
আর্যভট্ট সুশ্রুত স্বামী বিবেকানন্দ
সরোজিনী গার্গী লক্ষ্মীবাঈ।
সবাই দেশের বরেণ্য সন্তান
চলো সবে জয় গান গাই।
সংস্কৃত মোদের আদি ভাষারে
শূন্য দশমিক এই দেশেরই দানরে।
নানান ভাষা নানান জাতি
নানান বর্ণের বিভেদ অনেক বেশি,
তবু এই দেশে মোরা থাকি মিলিমিশি।
ভারত আমার জন্মভূমি
তাকেই ভালোবাসি   আমি।
বল জয় ভারতমাতার জয়।।

বর্ণা দাস


                 মোরা ভারতবাসী 

                                 -----বর্ণা দাস

রাম হোক কিংবা রহিম  ,
ওদের রক্ত সেতো একই লাল।
ওরা বলে মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম,
তবে কীসের এতো বিভেদ হিন্দু-মুসলমান।

হিন্দু হোক বা মুসলিম ; হিংসা বিদ্বেষ নয়,
ওদের রক্তে মাখানো ছিল স্বাধীনতার ঘ্রাণ।
ওরা রক্ত জড়িয়ে ফিরিয়ে দিয়েছিল  ,
স্বদেশের মাটিতে স্বাদেশিকতার  প্রাণ।

সেসব ভুলে মেতে উঠেছি ,
নিয়ে জাতপাতের লড়াই।
জাতের নামে বজ্জাতি কত চলবে আর ?
কত হবে আর জাতের বড়াই  ?

সব শেষে চেয়ে দেখি একই সুতোয় বাঁধা মোরা  ,
ঝড়-ঝাপটা পেরিয়ে একই স্রোতে ভাসি ।
তাই বিশ্বের দরবারে হোক একটাই পরিচয়  ,
মন্ত্র একটাই হোক মোরা ভারতবাসী।

মধুমিতা ভট্টাচার্য


             ধ্যানে নেতাজী 

                            ------মধুমিতা ভট্টাচার্য

 একশো ত্রিশ কোটি মানুষের মাঝে
আমিও পথ হাঁটি,
দিন-রাতের অন্তরালে ভ্রাম্যমান শব্দের মাঝে
তোমার ডাক শুনি ।
হয়ত আমিও ছিলাম
দীর্ঘ মিছিলের পিছে পিছে,
দেখেছি তোমার দৃঢ় প্রত্যয়
শুনেছি উদাত্ত বাক।
অন্ধকারের অতল জলে
নুড়ি পাথর ফেলে ফেলে
বের করেছিলে জলের
আস্তরণ, মৃত মানুষের শব ঠেলে
ক্লান্ত তুমি, মৃত সঞ্জীবনীর
সন্ধান দিলে ।
আবার জন্মেছি আমি এখানে
ভ্রান্ত অবক্ষয়ের মাঝে ।
আজও আবার সেই যমকালো চারপাশ,
খুঁজি তোমাকে অদৃশ্য স্মৃতি
হাতড়ে ফেলে আসা পথের বাঁকে,
এসো আর একবার,
উত্তরণের পথে
দুর্দম্য প্রাচীর ভাঙ্গতে
নুতন বিজয় রথে ।

শুক্লা রানী দাস

           
                 স্বাধীনতা  
   
                          ----শুক্লা রানী দাস

বহু রক্তের বিনিময়ে বাঙ্গালীর
বিজয় উৎসব
মুখরিত জনতার ঢল
তুলিছে বিজয়ের কলরব।
পনেরো আগস্ট গাহি মোরা
বিজয়ের জয়গান।
লক্ষ বলিদানে এল এই স্বাধীনতা
চেয়ে দেখো উন্মত্ত আজি জনতা
দীর্ঘ অন্ধকার দিন পর নব সূর্যের অভিসারী
বন‍্যার মত বাজে মাদল লহরী।

সুকমল গুপ্ত



                    অনলাইন শিক্ষা

                                         ----সুকমল গুপ্ত

হায়রে শিক্ষা ;

অনলাইনে তুমি ঘুরছো এখন ,
                                    জ্ঞান বিতরনের তরে।
সত্যিই কী তুমি  দিচ্ছ ধরা,
                                    সব বিদ্যার্থীর ঘরে।।

এখনো সবাই যে হয়নি এক  ,
                                    কবে তুমি তা জানবে?
শিক্ষা তোমার বড়‌ই যে জেদ ,
                                 অনলাইনেই তুমি থাকবে।।

শিক্ষা , তুমি কী রেখেছ খবর,
                                   কার আছে কী পরিবেশ?
তোমাকে স্বাগত জানাতে অনেকে,
                                   খুইয়েছে তার সর্বশেষ।।

অনেকে তো লেপটপ, আর মোবাইল হাতে ,
                               স্বাগত জানায় তোমাকে।
কেউবা আবার হারিয়েছে বাবা ,
                           আবার কেউবা তার মেয়েকে।।

কী দোষ ছিল সেই মেয়েটির ?
                           চাইছিল তো তোমায় জানতে।
বাবাকে দিতে হলো তার জীবন খানি ,
                               একটি মোবাইল আনতে।।

ভাষায় প্রকাশ করবো কেমনে ,
                                    এই বিভৎসতার কথা।
অনলাইনে শিক্ষা,তুমি বুঝবে কবে
                                    দীনদুঃখীদের ব্যথা।।

কী হবে কেটে ,  সেথায় এখন ,
                                  অনলাইন শিক্ষার ফিতে।
এখনো  ফিরেনি, সাম্য যেথায় ,
                                    অর্থনীতির ভিতে।।

ছিলনা টিভি তাই এলো সে ,
                                    উঁকি দিলো জানালায় ।
দুর দুর করে তাড়িয়ে দিয়েছো ,
                                     নিদারুণ অবহেলায়।।

স্যারের ক্লাস আর দেখা হলোনা ,
                                জানা হলোনা বিজ্ঞান।
অপরাধ তার গরীব ছিল সে ,
                              তাই  স‌ইতে হবে অপমান।।

অনলাইন তুমি শিক্ষা মাধ্যম,
                                       বিশ্ব করেছ জয়।
বলতে পারো কি, এত অবহেলায় , 
                                        অনলাইন শিক্ষা হয়?

ডিজিটালাইজড পরিকাঠামো আর ,
                                        সমাজে সাম্য নীতি।
যদি না হয় তবে, অনলাইন সুফলে ,
                                         টানতে হবে যে ইতি।।

রেহেনা খাতুন

                 
                           স্বাধীনতা 

                                       -----রেহেনা খাতুন

দেশের জন্য দিয়েছে প্রাণ হাজারো মায়ের সন্তান,
ব্যর্থ হয়নি তাদের বলিদান।

জাতি ভুলেনি পলাশির যুদ্ধে ব্রিটিশদের তরবারি,
পরাধীন করেছে মোদের,
আমরা সবই জানি।

শহীদ হয়েছে সেনাপতি মীরমদন,মোহনলাল।
 অনেক সিপাহী লড়াই করে স্বাধীনতার তরে,দিয়েছে তাদের বলিদান।

জাতি ভুলেনি জলিয়ানওয়ালাবাগের ব্রিটিশ বাহিনীর হত্যা কাণ্ডের কথা।

জাতি ভুলেনি নেতাজী সুভাষচন্দ্র  বসু তথা বাংলার বীর সন্তানদের বুকের তাজা রক্ত কথা।

জাতি ভুলেনি সেই অত্যাচারী ব্রিটিশ বাহিনীর কথা।

আজও আমাদের কানে ভাসে শহীদ মায়ের কান্না।
দেশবাসীর মনের গহীনে এরা সবাই ভারত মাতার বীর সন্তান।

আগস্ট মাস আসলেই যেন শিহরিত হয় স্বাধীনতার সুখ,
আমরা কি সত্যি পেয়েছি স্বাধীনতার সেই সুখ ?

আমরা সবাই ভারতবাসী সব ঐক্যের সমাবেশ।
মনে রাখতে হবে আজ আমাদের এসো দেশবাসী হাতে হাত ধরি
নির্মল করি দেশ।

মিঠু মল্লিক বৈদ‍্য

               
                প্রিয় স্বদেশ

                                 -----মিঠু মল্লিক বৈদ‍্য

নতজানু শির,নিবেদিনু প্রণাম,
একাত্ববোধে যেথায় বিহগ মেলে ডানা,
ফসলের সোনালী মাঠ, হরিৎবাহার
স্নিগ্ধতায় ভরে বুক,
এ স্বদেশ ভূম আমার সুখ।

যেথায় বর্ণবিদ্বেষ মূল‍্যহীন,
রাম -রহিম এক সুরে ধরে গীত
অসাম‍্যের অনল,নীলাভ ধোঁয়ায়
মহাশূন‍্যে বিলীন
সে ভূমি আমার প্রিয় জন্মভূমি।

পাখীদের নিস্বনে নীরব কলরব,
প্রকৃতির মনোহরা রূপের বাহার
ঝড়া শিউলীর শুভ্রতা
হিমেল বায়,শিশির ভেজা  কচি ঘাস
জোছনা ভরা রাত,আমার প্রাণ।

স্রোতস্বতীর বালুচর,
চিক্কণ রবি আভায়,করে চিকচিক,
উন্মুক্ত নীলাকাশ তলে,মুক্ত সমীরণে
প্রসারিত বাহু, অসীম তৃপ্ততায়
ভরে মন,সুদূরে মেলায় তট।

রাঙ্গাই কত রঙ্গে,স্বপ্নীল গগনে,
  বাঁধি প্রাণের বাঁধনে।
বিচিত্রতার নৈবদ‍্য,তবু শুনি মিলনের গীত;
একতার জয়,সাম‍্যের শিখ-
তাই ভালোবাসি বেশুমার ;
হে প্রিয়- মম প্রিয় স্বদেশ তোমায়।