সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২২
সম্পাদকীয়
কথা রেখেছে সবাই,
রাখিনি শুধু আমি।
ক্ষমা করে দিও আমায়,
তোমাদের ভালোবাসায় বাঁচি আমি।
কথা ছিল নতুন বছরের প্রথম দিনেই ভাসিয়ে দেবো সোনার তরী মহাসমুদ্রের দিকে। কিন্তু পারিনি। জীবন প্রতিকূলতায় চলতে চলতে আজ ষোড়শতম দিনে এসে পৌছালাম।
প্রিয় পাঠক প্রতিটি সংখ্যা প্রকাশের পর আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা অভিভূত। আর তাই হয়তো আপনাদের ভালোবাসার টানেই আবারো হাজির হতে পেরেছি অনেক আশা ও স্বপ্ন জড়িত "সাহিত্য নয়ন" - এর "নববর্ষ সংখ্যা ২" নামক ২০ তম সংখ্যা নিয়ে। আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সমৃদ্ধ "সাহিত্য নয়ন"-এর এই পথ মসৃণ ও সুগম হোক। নতুন বছরের অনেক অনেক শুভকামনা রইল ।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধাসহ-----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
প্রাপ্তি (শুভেচ্ছা বার্তা)
প্রাপ্তি(শুভেচ্ছা বার্তা)
প্রথম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন----
এখনি পত্রিকা দেখতে পেয়েছি। সম্পাদকের এই প্রয়াসকে অভিনন্দন। এটি হবে একটা দর্পণ, যা সমাজ থেকে গ্লানি দূরীকরণের সহায়ক । এর সাফল্য অবশ্যম্ভাবী।
মধুমঙ্গল সিনহা লিখেছেন-----
খুব ভালো লাগলো।আসুন সবাই মিলে এগিয়ে চলি।অসংখ্য ধন্যবাদ....
দ্বিতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য লিখেছেন-----
উদ্যোক্তা ব্যক্তিত্ব ও প্রকাশক- সম্পাদক সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করছি৷ এপ্রয়াস আগামীর দিকে এগিয়ে চলুক৷ এউদ্যোগের জন্যপ্রয়োজনীয় অর্থের যোগান কিভাবে হচ্ছে৷ এব্যাপারে আমাদের কিছু করণীয় থাকলে বলবেন৷
তৃতীয় সংখ্যা প্রকাশের পর
বাংলাদেশ থেকে সাগর পাল লিখেছেন-----
সাহিত্য নয়ন একদিন সমাজকে সঠিক পথ দেখাবে আমার বিশ্বাস। পত্রিকার সম্পাদককে এই উদ্যোগ গ্রহণ করার জন্য সাধুবাদ জানাই। সার্থক হোক এই প্রচেষ্টা।
চতুর্থতম সংখ্যা প্রকাশের পর
পশ্চিমবঙ্গ থেকে লিখেছেন কবি অমল কুমার মাজি -----
সু-প্রভাত ! একরাশ অনিশ্চয়তার বোঝা মাথায় নিয়েই শুরু হ'চ্ছে প্রতিটি সকাল !তবু আমরা সাহিত্য নয়ন পরিবার দিশা খুঁজব এক সুস্থ সংস্কৃতির।আমরা কবিতা লিখব,-গান গাইব। সুখের গান তো অনেক হ'য়েছে,এখন না হয় দুঃখের গানই গাইব,দুঃখের কবিতাই লিখব।যতদিন স্পন্দন থাকবে দেহে ততদিন থামব না আমরা।এই মাত্র প'ড়ে ফেললাম পত্রিকা। খুব সুন্দর সাজানো অলঙ্করণ ! সব লেখার সুর যেন একটি তারেই বাঁধা।কিছু সংশয়,কিছু প্রতিশ্রুতি,-"যদি ফিরে আসি,সূর্য হ'ব আমি,দগ্ধ ক'রে পুরাতনের কালিমা নব সোনালীর অবনী গ'ড়ব ! "সংশয় "আছে।"যদি"আছে কিন্তু দৃঢ় প্রত্যয়ও তো আছে। "ধরিত্রী মাতার ললাটে চিন্তার ভাঁজ দেখেছেন কবি হেমন্ত দেবনাথ!ঠিকই! কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্য্য নীলযমুনার জলকে কালো পঙ্কিল দেখেছেন কিন্তু 'বিশুদ্ধতায় ফেরার আর্তি'আশা জাগায়!সম্পাদকীয়তে সকলকে সাথে নিয়ে চলার ঐক্যতান রণিত হ'য়েছে,-'আমরা সবাই মিলে ছোট্ট তরী খানি ভাসিয়ে দিয়েছি সাহিত্যের মহাসমুদ্রের দিকে।' অনবদ্য অভিব্যক্তি, 'মহাসমুদ্রই' তো !এমন একনিষ্ঠ কর্ণধার যখন আছেন তখন তরী আমাদের চ'লবেই !সাথে আছি।ভগ্ন হৃদয়। ক্ষুদ্র সামর্থ।তবু আছি পাশে।অনেক অনেক শুভকামনা সম্পাদক এবং অবশ্যই সমস্ত'কুশীলব'দের জন্য।
পঞ্চম সংখ্যা প্রকাশের পর
অভিজিৎ চৌধুরী লিখেছেন-------
এক অসাধারণ উদ্যোগ। আমি সাহিত্য নয়ন সাহিত্য পত্রিকার উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি কামনা করি।
ষষ্ঠতম সংখ্যা প্রকাশের পর
বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি লিখেছেন ----
অনেক অভিনন্দন।পত্রিকা পেলাম।এবং অত্যন্ত আনন্দিত হ'লাম।সময় নিয়েই প'ড়ব।অনেক নিষ্ঠা ও পরিশ্রমের ফসল।তাই নিষ্ঠার সঙ্গেই প'ড়তে হবে। "ব্যর্থ চিঠি" প'ড়ে ফেললাম,কিন্তু এই সাতসকালে না প'ড়লেইভাল ক'রতাম বোধ হয়!সকাল বেলায় কাঁদতে হ'ত না এমন ক'রে! অনেক অনেক ভালোবাসা।
সপ্তম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন-----
" সাহিত্য নয়ন" সমস্ত প্রতিকূলতার মধ্য দিয়েও আত্মপ্রকাশ করতে পেরেছে, তার জন্য সন্তোষ ব্যক্ত করছি। এজন্যে প্রচ্ছদ- শিল্পী, অক্ষরবিন্যাকারী, কবি-লেখক, মুদ্রণকারী, প্রকাশক, সম্পাদক,সত্বাধিকারী, পরামর্শদাতা--- এককথায় যে যেভাবে দূর বা অদূর থেকে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করেছেন, তাঁদের সবাইকে বিনম্র শ্রদ্ধা ও ধন্যবাদ জানাচ্ছি। সত্যি এ-রকম একটা উদ্যোগ বজায় রাখা চারটে খানা কথা নয়।
বিষয়- নির্বাচন অভিনন্দনযোগ্য। প্রত্যেকের লেখার মধ্যে একটা ভিন্নস্বাদের বৈচিত্র্য রয়েছে। শব্দচয়নও সাবলীল হয়েছে। আমি এই সাহিত্য-পত্রিকার উৎকর্ষতা কামনা করি।
শুভ কামনায়-----
হেমন্ত দেবনাথ।
দিনাঙ্কঃ-29/10/2020.
অষ্টমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
দেবিকা ভট্টাচার্য লিখেছেন-----
খুব সুন্দর হয়েছে। প্রতিটি লেখা অসাধারণ। অনেক অনেক শুভকামনা রইল। সাহিত্য নয়ন সাহিত্য পত্রিকা রামধনুর রং এর মত আরো রঙিন হয়ে উঠুক।
নবমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
চন্দ্রলাল নাথ লিখেছেন----
I personally congrats to Shittya Nayan as it has been raises a great scoops to the new & old writer of North Tripura (as well as Tripura) in the Literacy field. --- I convey my heart fail gratitude to the organizing body's all members art.
দশমতম সংখ্যা প্রকাশের পর
চন্দ্র লাল নাথ লিখেছেন -----
"Sahitya nayan" is an excellent attempts to focus the articles of different writers. I cordially congrats to the Aditor & the all executive members of the committee for theirs hard labour. I wish every success the E-paper of the Sahitya Nayan.
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন-----
সম্পাদকীয় সুষমামন্ডিত হয়েছে। এছাড়া বাকি লেখাগুলো স্ব স্ব বৈশিষ্ট্যে সমুজ্জ্বল। সর্বোপরি, স্বল্প আয়োজন হলেও গভীরতার স্পর্শে কোনো অংশেই কম নয়। আমি অনলাইন সাহিত্যপত্র"সাহিত্য নয়ন"-এর সার্বিক সমৃদ্ধি কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে---
হেমন্ত দেবনাথ।
একাদশতম সংখ্যা প্রকাশের পর
অমল কুমার মাজি লিখেছেন----
সাহিত্য নয়নের অত্যন্ত প্রাসঙ্গিক এবং মূল্যবান একুশে ফেব্রুয়ারির একাদশ সংখ্যাটি পেলাম।অনেক অনেক অভিনন্দন সম্পাদক তথা কুশীলবদের।যাঁরা প্রত্যেকে মূল্যবান লেখা দিয়ে "সাহিত্য নয়নের"পাতা সমৃদ্ধ ক'রেছেন।তরুণ সম্পাদকের এই ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ না জানালে সত্যের অপলাপ হয়।চরৈবেতি।
দ্বাদশতম সংখ্যা প্রকাশের পর
হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন------
সদ্যপ্রকাশিত " সাহিত্য নয়ন"-এর 'বসন্ত সংখ্যা' টি পাঠ করে বড়োই প্রীত হলাম। অনবদ্য ও স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে উদ্ভসিত প্রতিটি লেখা। মনটাতে দাগ কেটে যায় লেখাগুলো। একটি পড়ার পরই আরেকটি পড়ার ইচ্ছে আমার জেগেছিল এবং এটা হয়েছিল স্বতঃস্ফূর্তভাবেই। সবশেষে বলি, সম্পাদকীয়টা হয়েছিল খুবই সময়োচিত ও প্রাসঙ্গিক , মাধুর্যপূর্ণ ।
কবিতার সাথে দু' একটি আর্টিকেল/ স্বল্প কলেবরযুক্ত নিবন্ধ বা ছোটগল্প থাকলে সাহিত্যপত্রিকাটি আরোও বৈচিত্র্যে ভরপুর হয়ে উঠতো। অবশ্য তার মানে এ নয় যে এখানে কোনো কিছুর খামতি ঘটেছে। বরং লেখাগুলো যেন হয়েছে বসন্তের রঙের নেশায় এক মায়াবী স্বপ্ন নিকেতন। আমি " সাহিত্য নয়ন"-এর সার্বিক সাফল্য কামনা করি।
ধন্যবাদান্তে----
হেমন্ত দেবনাথ।
দিনাঙ্ক:-29/03/2021.
গৌরী দেবনাথ লিখেছেন----
সাহিত্য নয়নের প্রতিটি লেখা যেমন রসপূর্ণ হয়েছে, তেমনি মাধুর্যপূর্ণ হয়েছে। এই জন্য সাহিত্য নয়নের সম্পাদককেও ধন্যবাদ জানাই। আমি সাহিত্য নয়নের অগ্রগতি কামনা করি।
১৫ তম এবং ১৬ তম সংখ্যা প্রকাশের পর সম্মানিত পাঠক কর্তৃক কিছু প্রাপ্তি :-
ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ মহাশয় লিখেছেন------
"সাহিত্য নয়ন"-এর ষোলতম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমরা গর্বিত। খুব ভালো লাগছে প্রচ্ছদ দেখে, সম্পাদকীয় লেখাটা শৈল্পিক দ্যোতনা লাভ করেছে। এজন্য সম্পাদককে ব্যক্তিগত ভাবে স্বাগত জানাই।
প্রতিটি লেখাই আমার হৃদয়কে নাড়া দিতে পেরেছে। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। যাদের ঐকান্তিক প্রয়াসেই সফলতা এসেছে, তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি। আমি সাহিত্যপত্রটির অগ্রগমন কামনা করছি।
সশ্রদ্ধ অভিনন্দন সহ----
হেমন্ত দেবনাথ।
তারিখ :-01/08/2021.
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি মহাশয় লিখেছেন-------
আমার প্রিয় "সাহিত্য নয়ন পত্রিকার জুলাই 2021 সংখ্যা পেলাম।অজস্র ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা পত্রিকার কর্ণধার ভ্রাতৃপ্রতিম রাজেশ ভট্টাচার্যকে।তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এমন একটি সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়ে চলেছে নিয়মিত।শুভেচ্ছা র'ইল সমস্ত কলাকুশলীদের।যাঁদের সুচিন্তিত লেখনীর আঁচড়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে পত্রিকা।আমি কণামাত্র অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেক অনেক শুভকামনা।
ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকে জয়ত্রী চক্রবর্তীর মহোদয়া লিখেছেন-----
বাহ্...সম্পাদক মহাশয়... খাসা হয়েছে সম্পাদকীয় খানা...বড় ভালো লাগলো ভাই...
বাংলাদেশ থেকে দিলারা বেগম লিখেছেন-------
সাহিত্য নয়ন সমাজের দর্পণ। সম্পাদক মহাশয়ের এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। সকল কবিদের প্রতি রইল শুভকামনা। সাহিত্য নয়ন এগিয়ে যাক।
ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ মহোদয় লিখেছেন-------
" সাহিত্য নয়ন"-এর পঞ্চদশতম সংখ্যা ( বর্ষামঙ্গল বিষয়ক সংখ্যা--2) প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকসহ সংস্থার সকলকে জানাই হার্দিক ভালোবাসা ও আন্তরিক অভিনন্দন। লেখাগুলো মনোমুগ্ধকর ও সুখপাঠ্য হয়েছে।
আমি জোর গলায় বলবো যে, পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির বেলাল্লাপনার বিরুদ্ধে ও ঐক্যস্থাপনের পক্ষে " সাহিত্য-নয়ন" আজকের দিনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে ও মনকে পরিশীলিত করার ব্যাপারে লেখাগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। আমি সাহিত্য পত্রিকাটির অগ্রগতি কামনা করি।
শুভকামনায়--
হেমন্ত দেবনাথ।
ধর্মনগর থেকে গৌরী দেবনাথ মহোদয়া লিখেছেন-----
সম্পাদককে ধন্যবাদ জনাই পত্রিকা প্রকাশের জন্য।প্রতিটি লেখা পড়ে মন ভরে গেল।
বাংলাদেশ থেকে বিমল বিশ্বাস মহোদয় লিখেছেন-----
আজকের সমাজে সাহিত্য নয়নের বড়ো প্রয়োজন। আমি সাহিত্য নয়নের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
১৭ থেকে ১৯ তম সংখ্যা প্রকাশের পর
ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ মহোদয় লিখেছেন------
অনাবিল আনন্দ লাভ করেছি "সাহিত্য নয়ন"-এর সতেরতম সংখ্যা পাঠ করে। লেখাগুলো অনবদ্য। সম্পাদকীয় চমৎকার হয়েছে। যাঁদের লেখনী স্পর্শে সাহিত্যপত্রিকাটি পূর্ণতা লাভ করেছে, তাঁদের জানাই ধন্যবাদ।
"সাহিত্য-নয়ন"-এর জয় হোক্।
দক্ষিণ ত্রিপুরা থেকে মিঠু মল্লিক বৈদ্য লিখেছেন----
আন্তরিক ধন্যবাদ ও শুভকামনা। এগিয়ে চলুক সাহিত্য নয়ন।
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি লিখেছেন-----
অনেক অনেক অভিনন্দন নির্দিষ্ট দিনে পত্রিকা প্রকাশের জন্য।অনেক ভালোবাসা।শুধুমাত্র সম্পাদকীয়টি প'ড়লাম। অসাধারণ এবং প্রাসঙ্গিক সম্পাদকীয় প্রশংসার দাবী রাখে এ কথা বলাই বাহুল্য।
খোয়াই ত্রিপুরা থেকে শিল্পী আচার্য লিখেছেন------
শুভকামনা রইল এগিয়ে যাক সাহিত্য নয়ন
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি লিখেছেন----
আমার প্রিয় "সাহিত্য নয়ন পত্রিকা "পরিবারের সকল লেখক -লেখিকা ও শুভানুধ্যায়ীদের জানাই হার্দিক অভিনন্দন।আর পত্রিকাটিকে যিনি দীর্ঘদিন নিরলস ভাবে পরিচালনা ও সুচারু সম্পাদনায় মহিমাণ্বিত ক'রে চলেছেন সেই ভ্রাতৃপ্রতিম রাজেশের জন্য র'ইল অন্তহীন ভালবাসা।
ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ লিখেছেন-----
"সাহিত্য নয়ন" সমস্ত প্রতিকূলতার সাথে লড়াই করে তার বিজয়-পতাকা উড্ডীন রেখেছিল,রাখছে এবং রাখবেও। এটা আমার প্রত্যাশা। তাই তো দেরী করে হলেও পত্রিকার এ সংখ্যাটা সগৌরবে আত্মপ্রকাশ করেছে। এ জন্যে আমি সম্পাদকসহ সাহিত্যনয়ন পরিবারকে অভিনন্দন জানাচ্ছি।
এ সংখ্যার প্রতিটি লেখা সাহিত্য-গুণে ভরপুর ও আকর্ষণীয়। কিছু কবি,লেখকের পরিচিতির সংযোজন পত্রিকাটিকে ভিন্নমাত্রা প্রদান করেছে।
আমি "সাহিত্য-নয়ন" -এর সর্বতোভাবে মঙ্গল কামনা করছি।
বাংলাদেশ থেকে বিল্লাল হোসেন লিখেছেন-----
প্রতিটা লেখা আমার হৃদয় স্পর্শ করেছে। আমি আপনাদের পত্রিকার নিয়মিত পাঠক বলতে পারেন। সাহিত্য নয়নের সফলতা কামনা করছি।
চিরশ্রী দেবনাথ
নববর্ষ
-----চিরশ্রী দেবনাথ
এসো নববর্ষ অর্ণবমেঘে, এই পৃথিবীতে আবার
যারা চলে গেছে, অকালে অঝোরে ঋতুচিহ্ন নিয়ে
সকল নৃশংসতা... বিষ ও আগুনের মতো হৃদয়ে ধারন করে
ক্ষমা করো তোমরা এই পৃথিবীরে, সদ্যজাত বঙ্গাব্দকে
আসতে হয় ক্ষীণ ধর্মবোধ আর শ্বেতপ্রদাহ নিয়ে নিয়ম করে
তাই আসা, তাই আসা, উন্মাদ কালবৈশাখীর সঙ্গে
মধ্যরাতে পিচ ঢালা রাস্তায় নীলাভ হিমকর ধরাচ্ছে নেশা
দুপাশের বাড়ি থেকে কাচের জানালয় আলো পড়ছে ভেঙেচুরে বুঁদ হয়ে
জল ছিটকে চলে যাচ্ছে গাড়ি, নির্জনতা পছন্দ করেনি সে
তরুণ ড্রাইভার বন্দিশের ঠিকানা বদলাচ্ছে বার বার
তাই দেখে ফ্রক পরা কিশোরী পুনর্বার নেমেছে বর্ষবরণে
দুহাতের খই ভরা ডালায় তার বারোটি মাস রাখা সুঘ্রাণে
কাঁচা কাঁঠালের আসক্তি কষ লেগে যাচ্ছে হাতে ও স্পর্শে
মথুরা শহর যেমন করে পারে না ভুলতে দূর বৃন্দগ্রামকে
আজকাল নির্বাচনী প্রচারের পর যুবকের দল ফিরে যায়
সঙ্গে কী থাকে, কী লাভ , কী হয় আসলে, তবুও অমোঘ নেশা,
সমুদ্র দ্বীপ যেমন করে দার্ঢ্য থাকে ঢেউয়ের নরম রিরংসায়,
অশ্রু ও রক্ত ভুলে গনতন্ত্র ধরতে চায় কেবল এক প্রত্যয়ী হাত ;
স্লোগান মিথ্যা হয়, প্রতিশ্রুতিও, তবুও দেশ বলে
জাগিয়ে রাখো ; জেগে থাকো ; হাজার অন্ধকার আলোরই মতন অবশেষে,
পথ শেষে তাই এই নববর্ষ মায়াময়, রোদময় ;
বৈশাখে জন্ম নেওয়া পাখি শিস দিতে শিখেছে আজই, খিস্তিও ;
তার শিশুকাল নিস্তব্ধতা শেখেনি, অচিরেই আছড়ে পড়েছে যৌবন ;
প্লাবন তাই সমকালে, আগামীতে উর্বরা পলি, স্বতন্ত্র শস্যক্ষেত্র।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
চলো যাই
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
চলো, চলো যাই
হেমন্ত নিবাসে,
টাকা চাই না, পয়সা চাইনা,
চলো যাই
একটুখানি শান্তির আশে।
হে কিশোর!
প্রৌঢ় হেমন্ত
এখনো দেখো কেমন
যৌবনের ছোঁয়ায় প্রাণবন্ত।
পাতা গুলো ঝিরিঝিরি স্বরে
পড়ছে ঝড়ে
এক একটি দিন করে।
সময় যাবে চলে
বসন্ত শেষে গ্রীষ্ম এসে যাবে ;
রবির পরশে নতুন বরষে সাজবে বৈশাখ।
চলো যাই বৈশাখী পূর্ণিমায়
রবির সাজানো আঙ্গিনায়,
বসে সময় কাটাই
কিছু কথায়;
হাসি ঠাট্টায়,
রবি-চন্দ্রের
আশিস্ পাবার আশায়।
রচনা কাল:- ২১/৪/২০২২, বৃহস্পতিবার।
হেমন্ত দেবনাথ
সাম্যের কবি
------হেমন্ত দেবনাথ
যার লেখায় ছিল, বিদ্রোহের ছোঁয়া
স্বভাব ছিল না তাঁর কারো কাছে মাথা নোয়া।
শোষণের বেদীমূলে ঢেলে দিয়ে ঘৃণা
বাজালেন তিনি বিদ্রোহের “অগ্নিবীণা”।
লিখলেন তিনি “কান্ডারী হুঁশিয়ার” আর “বিদ্রোহী”
রক্তক্ষরা তাঁর লেখায় চমকে গেল মহী।
লিখলেন তিনি বাউল, শ্যামা, ভজন, কীর্তন আর গজল,
অফুরন্ত সুর-বৈভব এবং বাণীর অপর ঐশ্বর্যে মুগ্ধ সকল ।
লেখনী তাঁর গর্জে উঠেছে দুর্বলের শোষণ নীতির বিরুদ্ধে,
সৃজনগাথার পংক্তিতে বিধৃত সবলের সাথে দুর্বলের যুদ্ধে।
বললেন তিনি “বাজাও শঙ্খ, দাও আজান।”
তাঁর হৃদয় থেকে বাঙ্ময় হল ঐক্যের জয়গান।
নজরুলের সৃষ্টিগাথায় আমরা পাই যে বাঁচার আশা,
‘টর্ণেডো’-র মতো আঘাত আসুক যতই সর্বনাশা।
অমল কুমার মাজি
মন বলে
-----অমল কুমার মাজি
নাইবা গেলাম এক্ষুণি সব ছেড়ে
আর কিছুকাল থাকলে কিসের ক্ষতি
জানি গো সব নেবেই তুমি কেড়ে
তবুও দাও সামান্য সম্মতি।।
কখনো বা মন বলে যাই-যাই
একটু পরেই তাকাই ফিরে -ফিরে
স্বজন-মায়ায় বাঁচারই গান গাই
সময় তুমি একটু চলো ধীরে।।
ফুরিয়ে যাওয়ার রৌদ্র -ছায়া খেলা
চ'লতে থাকে শুধুই নিরন্তর
একটু সোহাগ একটু অবহেলা
এসব নিয়েই চ'লছি জীবন 'ভর।।
এমনি ক'রেই যায় যদি দিন যাক
আর ক'টা দিন গাইতে যে চায় মন
দিনের আলো আর কিছুক্ষণ থাক
জীবন ক'রি একটু রোমন্থন।।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
সন্নিবদ্ধতার উপসংহারে
-----মিঠু মল্লিক বৈদ্য
আগুণ পাখির চরম উদ্যামতায়,
অংশুমালীর সারল্যতায় যাদের ভয়,
তাদের সমুখে হও হিমালয়।
অবিশ্বাস, কূটনীতি আর
হীনমন্যতা যাদের হাতিয়ার
তাদের সমুখে ছড়াও রক্তিম ভালোবাসা।
ভালোবাসায় যারা বাণিজ্য দেখে,
সৌহার্দ্যে খোঁজে সৌজন্যতা
তাদের সমুখে হও বহমান শৈবলিনী।
শিষ্টতায় যারা কপটতা খোঁজে
মিষ্টি হাসির আড়ালে লুকায় ছলনা
তাদের সমুখে হও দিলদরিয়া।
যারা সামনে নয়
পেছনে রচে কপটতার খেলাঘর
তাদের লাগি সাজ উন্মাদ কালবৈশাখী।
নৈতিকতায় যাদের প্রশ্নচিহ্ন,
অন্যের ছায়াতলে খোঁজে নিজের অস্তিত্ব,
তারা কখনো হয়না কারোর আপন।
যাদের ভালোবাসার ঋণে হয়েছ ঋণী
ঋণ শোধের ডাকে হও আগুসারী
দাবানলের মতো জ্বালিয়ে দাও সকল বিদ্বেষ নীতি।
সকল সন্নিবদ্ধতার উপসংহারে
আগুন পাখিরা উড়ুক নিজ মহিমায়
অংশুমালী ছড়াক আলো আপন গরিমায়।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
নীলকণ্ঠ প্রেমিক
--------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
ভালোবেসে করেছি বিষ পান।
বিষের নেশায় হয়েছি আসক্ত।
আত্মহত্যা করতে চাইনি।
চেয়েছিলাম বাঁচতে, ভালোবাসতে।
মনের রানী বানিয়ে ভালোবেসেছিলাম
তোমার নারী রূপকে।
কথা হয়েছিল----
জন্ম-জন্মান্তর হাতে হাত রেখে পথ চলার।
আমার প্রথম ভালোবাসা,
কত স্বপ্ন, কত কথা আজ তাসের ঘর।
বিশ্বাসের হল অপমৃত্যু।
মারণ রোগ তোমাকে করেছে গ্রাস, বলেছিলে।
কেঁদেছিলাম দেবতার পায়ে।
চেয়েছিলাম জীবন, জীবনের বিনিময়ে ।
অমৃতের সন্ধানে খুঁজে পেয়েছি বিষকুম্ভ।
ঢেলেছো বিষ আমার জীবন পথে।
বিষপান করে হয়েছি বিশ্বম্ভর।
তোমার নারীত্বের সম্মান বাঁচাবো বলে।
জগন্নাথ বনিক
জীবন যুদ্ধ
-----জগন্নাথ বনিক
জীবন যুদ্ধ বড়ই কঠিন,
যদি না, সামলাতে পারে।
সংসার নামক পরিবারটি,
অপবাদ দেয় বারে বারে।।
স্ত্রী বলো আর সন্তান বলো,
সবার চাহিদা অনেক অনেক থাকে।
আমি যে গৃহকর্তা খাঁটছি গাধার মতো,
আমাকে বলে না কেউ থামতে।।
বড়ই দুঃখ বৃদ্ধ বয়সে,
যখন চলে না শরীরের একটি অঙ্গ।
আপন ভেবে আর,কেউ ভালোবাসে না,
পাইনা আর আগের মতো আমার পরিবারের সঙ্গ।
এই হলো আমার বৃদ্ধ জীবন,
চলছে জীবনের দুখ।
গৃহকর্তা সেজে ধরেছি হাল,
তবুও আসেনি জীবনের সুখ।।
চিন্ময় রায়
বিশ্বাসযোগ্যতা
------চিন্ময় রায়
মানব চলছে মানবের মতো-
সঙ্গে নানা কথা।
মনে রেখো মানবের মাঝে,
শ্রেষ্ঠ হচ্ছে বিশ্বাসযোগ্যতা।
বিশ্বাসেই তো মানুষ চলে,
নানা রকম কথা বলে বিশ্বাস অর্জন করে-
বিশ্বাসঘাতক অবিশ্বাসের ফলে,
ডিপ্রেশনে ভোগে মরে।
যোগের সাথে তাল মিলিয়ে চলছি মোরা সকলেই,
সমবয়সী ছোটরাও আজ,
প্রাণ হারাচ্ছে অকালে।
বিশ্বাস আছে বলেই তো মানুষ সম্পর্কগুলো গড়ে,
অবিশ্বাসের ফলেও আবার সম্পর্কে ফাটল ধরে।
বিশ্বাসেই তো জীবন চলে-
সে কথা জ্ঞানীরা ও বলে,
তাইতো বলি মানবজাতি,
বিশ্বাস রেখো অপরের প্রতি,
বিশ্বাসের ফলে ক্ষতি হবে না সমাজ ও মানুষের-
অপর ক্ষেত্রে দেখলাম আমি অন্ধ বিশ্বাসের ফলে,
সকল মানুষ নিজের নিজের স্বার্থ বুঝে চলে।
স্বার্থের জন্য মানব আবার খুনোখুনি করে,
সেই কারণে ও মানব জাতি,
সত্যিই ভোগে মরে।
মন্দিরা বিশ্বাস
জিজ্ঞাসা
-----মন্দিরা বিশ্বাস
সিঁদুর এর মূল্য কী
তা একজন নারীকে জিজ্ঞেস করো।
সাদা কাপড়ের যন্ত্রনা কী
তা একজন বিধবাকে জিজ্ঞেস করো।
সৎ থাকার মূল্য কী
তা একজন পরিশ্রমীকে জিজ্ঞেস করো।
অপরাধের যন্ত্রনা কী
তা একজন আসামীকে জিজ্ঞেস করো।
অন্নের মূল্য কী
তা একজন কৃষককে জিজ্ঞেস করো।
অনাহারের যন্ত্রনা কী
তা একজন ভিক্ষুককে জিজ্ঞেস করো।
সন্তান এর মূল্য কী
তা একজন মা-বাবাকে জিজ্ঞেস করো।
মা-বাবা না থাকার যন্ত্রনা কী
তা একজন অনাথকে জিজ্ঞেস করো।
মঙ্গলবার, ২৯ মার্চ, ২০২২
সম্পাদকীয়
প্রকৃতি কথা বলে, কথা শোনেও, কিন্তু কখনো বেইমানি করে না। ঠিক সময়েই হাজির হয় ভিন্ন ভিন্ন রূপে। আজও সেজেছে অপরূপ সাজে। গাছে গাছে কত রাঙা শিমুল, কত পলাশ, চারিদিক মুখরিত কোকিলের কুহু কুহু গানে। কৃষ্ণচূড়া যেন অঞ্জলি দিতে প্রস্তুত। ঋতুরাজ বসন্ত যেন প্রকৃতির মুখ দিয়েই জানান দিচ্ছে তার আগমন বার্তা। আকাশে বাতাসে ধ্বনিত হচ্ছে কবিগুরুর সুরে---"ওরে গৃহবাসী খোল দ্বার খোল লাগলো যে দোল"। বসন্তের আগমনে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের মনও হয়ে উঠে রঙিন। মনে দোল খায় এক সুন্দর অনুভূতি। স্বপ্নের রংমহলে এবছর তৃপ্ত হব প্রিয়জনদের রঙিন ভালোবাসায়।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের ভালোবাসা এবং প্রেরণাকে সাথী করে সাফল্যের যাত্রাপথে আমরা আরো এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। এবারে প্রকাশিত হলো "সাহিত্য নয়ন"-এর "বসন্ত উৎসব সংখ্যা ২" নামক ১৯তম সংখ্যা। সম্মানিত কবিদের লেখনীতে যেন লেগেছে বসন্তের ছোঁয়া। স্বকীয়তা, মাধুর্য, গভীরতা সবকিছু মিলিয়ে নয়নের পাতাকে কবি-লেখনী দিয়ে সাজিয়েছেন অপরূপ সাজে। চলুন আমরা সবাই মিলে উনাদের সাজানো পাতা থেকে রস আস্বাদন করি। আপনাদের সার্বিক মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আবারো দেখা হবে আগামী বাংলা নববর্ষের কোনো একদিনে।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সহ----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, "সাহিত্য নয়ন"
অমল কুমার মাজি
আজ বসন্ত
-----অমল কুমার মাজি
ফুলকুঁড়িরা উঠল জেগে
দখিন বাতাস গাইল গান
শিমূল-পলাশ উঠল জেগে
দোয়েল-কোকিল ধ'রল তান।।
মৌমাছিরা ফুলের কানে
গোপন কথা ব'লল তাই
আশাবরীর কোমল স্বরে
উঠল বেজে তার -সানাই।।
সাজল ফাগুন আগুন রঙে
উঠল দুলে প্রেমিক-মন
আজ বসন্ত,তাই মাধবীর
গন্ধে মাতাল কুঞ্জবন।।
আজ মধুমাস,বাজল যে তাই
প্রেম-সোহাগের মধুর বীণ
সব কিছু তাই অন্য রকম
ভালোবাসার নতুন দিন।।
হেমন্ত দেবনাথ
পথ
-----হেমন্ত দেবনাথ
পথ তুমি কার?
তুমি তো সবার।
তোমার উপর আনাগোনা
যাত্রী আর যানবাহন,
সংখ্যা নাহি যায় গুণা।
তোমার বুকে সহসা
যতসব "যানজট।"
সেই 'জ্যাম' খোলে না চটপট।
তোমার কালো পীচের উপর
স্বাচ্ছন্দ্যে যাতায়াতে ----
সবারই যেন নজর।
তুমি নীরব স্বাক্ষী,
দেখেছো কত না দুর্ঘটনা---
এ নিয়ে তোমার বুকে নির্বাক যাতনা।
মাঝে মাঝে তুমি হাঁফিয়ে পড়ো।
তবুও তুমি দায়িত্ব পালিতে দৃঢ়।
অবিরত যানবাহনের চাপে
তোমার যেন নাভিঃশ্বাস।
বুঝতে চায় না কেউ তোমার দীর্ঘশ্বাস।
সবাই তোমায় ব্যবহার করি
স্বার্থপরের মতো।
বর্জ্য-আবর্জনা তোমার উপর
ফেলে দেয় যত।
তোমার শরীরের ক্ষত সারাতে
বেমালুম যায় ভুলে।
সারিয়ে তোমার দায়িত্ব পিঠে----
সহসা নিতে চায়নি তুলে।
পথ,তুমি সর্বক্ষণের সাথী।
ধন্য যাত্রীরা হৃদয়ে তোমায় গাঁথি।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
করুয়া মন
-------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
আজমতের আজ হয়েছে
বড়ো খিদমত ;
বেজায় আছে চটে
একটা ঘটনাও আছে বটে।
কেউ জানুক বা
না জানুক,
জানে একজনা
সকাল থেকে সন্ধ্যা গড়ালো
একবারও খবর নিলো না।
সামনে এলেই জানার ভান
কেমন আছেন আজমত খান!
আজ কাজের ভারে সামনা-সামনি কথা হয়নি
তা-ই বলে কী হয়ে গেলো
দূরের মেহমান।
রাগে গোঁসায় ফুঁসছে আলি
টের পাবিরে বাগান মালি ;
খামখেয়ালি মেজাজ করে
হোস না যেনো চোখের বালি।
রচনাকাল :-১৭/৩/২০২২ইং
সুজন দেবনাথ
শুধু তোমায় রাঙাবে বলে
-------সুজন দেবনাথ
ওগো আমার প্রাণের সখা
আঁখি খুলে তুমি দেখো,
নবীন আজি ডাকছে তোমায়
তারে তব হৃদয়ে রেখো।
প্রভাতের এই মুক্ত হাওয়ায়
পুলকিত হোউক প্রাণ,
প্রতিটা সকাল উজ্জ্বল হয়ে
ধরা দিক তব স্থান।
উজ্জ্বল হোক আগামী তোমার
এই নবীন প্রাতের মতো,
প্রতিটা বসন্ত তোমারই হয়ে
ফুল ফুটুক শতো শতো।
যেমন কাটে আঁধার যামিনী
শশী চন্দ্রিমা দিয়ে ধরা,
তোমারও আঁধার কাটবে বন্ধু
হইওনা কো দিসে হারা।
চেয়ে দেখো আজো কতো কুঁড়ি
ওই পলাশের ডালে ডালে,
কোকিল আজো গায়নি সে গান
শুধু তোমায় রাঙাবে বলে।
শান্তশ্রী মজুমদার
বসন্তে সোজা পথ
------শান্তশ্রী মজুমদার
বাঁকা পথ, সোজা পথ। পথ চলেছে পথের টানে। পথ চলেছে পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে গহন সবুজ বনের ছায়া ছায়া পথে। পথ চলেছে গভীর খাদের গা ছুঁয়ে। পিচ ঢালা মসৃন পথের সাথী হয়ে দেবস্থল আর বেলকম পাহাড় চলেছে অনাদিকাল ধরে কৈলাসহর থেকে ধর্মনগরের পথের সাথী হয়ে। বাঁকা পথে বৃদ্ধ বৃক্ষদের শীতল সুনিবিড় ছায়াময় পথে চলে যেতাম পাহাড়ের গা ঘেঁষে। শীত শেষে বসন্তের শুষ্ক হাওয়ায় পাহাড়ের পথে চলতো ঝরাপাতার উদাসী বৈরাগ্য।
আলোছায়ার খেলায় ঊনকোটি র মহাদেবকে প্রণাম করে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে যেতে যেতে, বাঁকা পথটি পাহাড়ের বাঁকে বাঁকে গহন সবুজ বনের ছায়া ছায়া পথে এগিয়ে যেতো ডানে বামে দোল খাওয়াতে খাওয়াতে।হঠাত্ করে পাহাড়ি রাস্তা শেষ হয়ে যেতো আনন্দ বাজারে।আনন্দবাজারের পথ পৌঁছে যেতো নয়নাভিরাম হাফলংছড়া চা বাগানের পশ্চিম ঘেঁষে।
শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা, বসন্ত প্রতিটি ঋতুতে পাহাড় প্রকৃতির ভিন্ন ভিন্ন রূপ মনকে স্নাত করতো হৃদয় ছোঁয়ার নেশায়।
বাঁকাপথে ধুলোর বসন্তে, ধুলোর আবির উড়ছে আকাশে বাতাসে। বাঁকা পথটি বেলকম টিলার বুকচিরে সোজা হচ্ছে।পাহাড়ের বুক বিদীর্ণ করে সভ্যতার পথ এগিয়ে চলেছে.....।
হাজারো শতাব্দীর সাক্ষী শ্যাওলা ধরা বৃক্ষগুলোর নিথর দেহ পড়ে আছে পথের ধুলোয়। শাল সেগুনের ঘন সবুজ বনে শুধু ধুলোর ঝড়। আকাশে বাতাসে ধুলো আর ধুলো। নিস্তব্ধ ধ্যানমগ্ন বৃদ্ধ পাহাড় সভ্যতার যন্ত্রে বিদীর্ণ হয়ে প্রতিনিয়ত সোজা হচ্ছে, পথ করে দিচ্ছে বুকের পাঁজর চিরে।
সোজা তাকে হতেই হবে, মাথা তাকে নত করতেই হবে, ধুলোময় ধরণীর মাটিতে মিশে যেতেই হবে।প্রাগৈতিহাসিক যুগের পথ ধরে বহু রাজা মহারাজারা হাতির পিঠে চড়ে বনের বাঘ,শেয়াল,বিষধর সাপের সাথে লড়াই করে পথ চলেছে বেলকম আর দেবস্থল পাহাড়ঘেরা পথে। ব্যাকট্রীয় সভ্যতার গল্প,কতো মুনি ঋষির গল্প,কতো রাজা,মহারাজার গল্প, পথ চলার সাক্ষী এই পাহাড়।পাহাড়ের পশ্চিম দিগন্তে সূর্য ডোবার শোভা, অস্তগামী সূর্যের লুকোচুরির খেলা সবই হারিয়ে গেলো সোজা পথের নেশায়।
কাঁটা পাহাড় থেকে ঝুলে থাকা মৃত বৃক্ষদের বুকফাটা আর্তনাদ প্রতিধ্বনিত হোতে থাকে আমার শুষ্ক হৃদয়ে।শৈশব থেকে যে পথে পথ চলা শুরু, জীবনের শেষ প্রান্তে এসে জাতীয় সড়কের সোজা পথে গতিশীল যানে হু হু করে পোঁছে যাবো বহু স্মৃতি কে রোমন্থন করতে করতে।
ধুলোর বসন্তে, ধুলোর আবিরে, ধুলোময় পৃথিবীতে
বসন্তদিনের গান গাইবো নতুন আশায়, নতুন স্বপ্নে, কমলা আবিরে ।
রচনাকাল:--- 23/03/2023
চিরশ্রী দেবনাথ
------চিরশ্রী দেবনাথ
রুক্ষ পর্বতগাত্রে সূর্যদেব তাহার প্রখরকিরণ উদার সন্ন্যাসীর ন্যায় ঢালিয়া দিতেছে। চারিদিকে বিস্তৃত ক্রান্তীয় পর্ণমোচী অরণ্য, সকল পত্ররাজি বসন্তের ক্ষুধার্ত হস্তে নিজেদের সমর্পণ করিয়া বিরহী যক্ষের মতো অপেক্ষমান, কখন তাহাদের কাণ্ডে পৃথিবীর সকল বাধা অতিক্রম করিয়া কচি সবুজ পত্র নব উৎসাহভরে উঁকিঝুঁকি দিবে ইহাই কামনা। শন শন করিয়া বাতাস বহিতেছে। চক্ষুকর্ণ মুদ্রিত করিয়া কেহ যদি প্রাণপনে এই শনশন শব্দ শ্রবণ করে, তাহা হইলে সে বুঝিবে ইহাকে প্রণয়তাড়িত দীর্ঘশ্বাস বলে। কন্টক ও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পাথর সমাকীর্ণ উঁচুনিচু পথ চলিয়া গেছে বহুদূর। পাল্কী লইয়া বেহারাগণ যাইতেছে ধীরে ধীরে। সম্মুখে একটি ক্ষীণ ঝর্ণার কুলু কুলু নাদ শোনা যাইতেছে। কোন এক অত্যাশ্চার্য কারণে দীর্ঘদিন বর্ষণ না পাইয়াও সে তাহার জলধারায় কৈশোরের যৌবন লালন করিতেছে। বোধ করি পর্বতগাত্রের সকল স্বেদ ধুইয়া দিতে ঝর্ণাটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ, এই তাহার নারীত্ব।
ত্রিপুর দেশের রাজার আমন্ত্রণে ব্রহ্মচাঁদ মলয়াদিত্যের এই বিপজ্জনক, হিংস্র পশু ও বিষাক্ত সর্প কবলিত বহির্বিশ্বের নিকট প্রায় অজ্ঞাত কিরাতভূমিতে আগমন। উপলক্ষ ভীষণ গুরুতর নহে। ভ্রমণ এবং কিছুদিন রাজ আতিথেয়তায় থাকিয়া সংস্কৃত শাস্ত্রাদি অধ্যয়ন, রাজকুমারদিগকে পাঠ দান, সেইসঙ্গে রাজপুরুষদের সঙ্গে বসিয়া বেদ উপনিষদ ইত্যাদি বিষয়ে চর্চা,পারস্পরিক মত বিনিময় ইত্যাদি।
তিনি শীতের প্রাক্কালে আসিয়াছেন। শীত সমাপ্ত হইয়া চলিয়া গেছে। এইক্ষণে ঋতুরাজ বসন্তকালের আগমণে প্রকৃতিতে পুষ্প সৌরভ প্রবাহিত হইতেছে। মলয়াদিত্যের বয়স বেশী নয়। নিষ্ঠাবান ব্রহ্মচারী এবং প্রকৃতিপ্রেমী। কাব্য ও সঙ্গীতে তাহার আগ্রহ রহিয়াছে। তিনি সংস্কৃতর সহিত ফার্সীও অধ্যয়ন করিয়াছেন। প্রকৃতির রূপ দেখিতে তাহার ভালো লাগে। তাই রাজধানী হইতে নিস্ক্রান্ত হইয়া এই ভ্রমণ পরিকল্পনা। তাঁবু খাটাইয়া বনাঞ্চলে দুই তিন রাত্রি থাকিতে চাহেন।
যে জায়গায় পৌঁছাইয়াছেন, তিনদিকে তিনখানা গিরিশিরা বিস্তৃত।
ত্রিকালদর্শী শিবের মতো তাহারা আপন আপন রহস্য বিস্তার করিয়া আহ্বান করিতেছে, বলিতেছে এখানেই গরল, এখানেই অমৃত।
বনজ অপরাহ্ন সমাগত। রৌদ্রের তেজ কমিয়া আসিতেছে। স্থানে স্থানে ধুলোরাশি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ঝটিকা বাতাসের দ্বারা মাঝে মাঝে বৃত্তাকার ঘূর্ণনের সৃষ্টি করিয়া চারপাশের শুষ্ক পত্ররাজি নিজের মধ্যে টানিয়া নিতেছে, হয়তো তাহাতে কোন এক হোমাগ্নি জ্বলিয়া উঠিবে, শুষ্ক পত্ররাজি নিঃশব্দে ফিসফিস করিয়া বলিবে বসন্ত মানে দগ্ধ হওয়া তিলে তিলে।
পর্বতগাত্রগুলিতে অসংখ্য কদলী বৃক্ষ । এক প্রকার কষা গন্ধ হঠাৎ হঠাৎ বাতাসে ভাসিয়া আসে। ইহা ছাড়াও আম্র ও পনস বৃক্ষ রাজি তাহাদের আসন্ন ফলসম্ভবার কথা সগৌরবে জানান দিতেছে। কচি কচি পনস বৃক্ষ হইতে ঝুলিয়া রহিয়াছে। আম্র মুকুল গুলি কিয়ৎ ঝড়ে ঝরিয়া যাইবে, তথাপি মৃত্যু সম্ভাবনাকে বাতিল করিয়া তাহারা সান্ধ্য আয়োজনে বিকশিত হইয়াছে। দোল পূর্ণিমা গত হইয়াছে। ক্ষয়াটে জ্যোৎস্না কৃষ্ণবিহীন বৃন্দাবনের ন্যায় নিষ্ঠুর পাহাড়কে জড়াইয়া ধরিয়া দেহ হইতে গোধূলির রঙ মুছিবার আপ্রাণ চেষ্টা করিতেছে। মলয়াদিত্য যত দেখেন ততই অবাক হইয়া যান। তাহারা গুটিকতক মানুষ এই বিপুল পৃথিবীর ক্ষুদ্র একটি অংশে ঋতুরাজকে অনুভব করিতে আসিয়াছেন, ইহা অপেক্ষা বৃহৎ কোন ঘটনা এই মুহূর্তে পৃথিবীর বুকে কি আর ঘটিতেছে? চতুর্দিকে বিহঙ্গ কুজন। বৃক্ষে তাহাদের পত্রগৃহ। অদূরেই প্রায় জলবিহীন একটি জলাশয়, তাহাতে দুই খানা শামুকচী নিভৃতে বসিয়া আছে, জলাশয়ে পদ্ম ফুটিয়াছে, কর্দমাক্ত জলের নীচে পদ্মের কোমল ডগা বিস্তৃত রহিয়াছে, সেই মসৃণ গাত্রে লোভী সূর্য রশ্মি পড়িয়াছে জলের আয়না ভেদ করিয়া। একটি অনুচ্চ টিলার ওপর কিংশুক গাছ। পত্র নাই বলিলেই হয়, শুধু শত শত রক্তাভ কিংশুক ফুটিয়া আছে। কোনও একটি নিভৃত স্থান হইতে কোকিল ডাকিতেছে, তাহা অপেক্ষা অধিক বসন্তদূত
দুঃখকষ্টবিরহলালিত পৃথিবীর পড়ে আর কেহ নাই। সহসাই একটি ঘটনা ঘটিল। বনাঞ্চল যদিও এখন অনেকটাই রিক্ত তথাপি তাহার গভীরতার একটি হা হুতাশ আছে, অন্তরাল আছে। সেই অন্তরাল হইতে উঠিয়া আসিতেছে গুটিকতক বনবাসী পুরুষ ও রমণী। তাহারা শিকার করিয়াছে। বংশকাণ্ডের মধ্যে ধনেশ, ভৃঙ্গরাজ প্রভৃতি বৃহদাকায় কয়েকটি পাখি বাঁধা রহিয়াছে, ছোট ছোট খাঁচার মধ্যে টিয়া, মুনিয়া পক্ষীশাবকেরা। সেইসময় এইধরনের পক্ষী পার্বত্য দেশ হইতে বৃহৎ বঙ্গে চালান হইতো।
দলটির নেতৃত্ব দিতেছে একটি খর্বকায়, স্বাস্থ্যবতী পার্বতী রমণী। তাহার গ্রীবায় পাথরের মালা, চূড়া করিয়া বাঁধা কেশে গোঁজা সাদা আর নীলাভ পাখির পালক। মলয়াদিত্যের হৃদয় ব্যথিত। আহা, এই পক্ষীগুলা কোন্ অজানা ন়ৃশংস পৃথিবীতে তাহাদের উড্ডয়ন স্তব্ধ করিয়া নীল আকাশের দিকে তাকিয়া কি ভাবিবে কে জানে! তিনি বিচলিত হইয়া দলটির সামনে দাঁড়াইলেন। তাহারা পরস্পরের কাছে অবোধ্য। তথাপি পাল্কীর বেহারা গনের সাহায্যে তিনি তাহাদের বোঝাতে সমর্থ হইলেন, সমস্ত পক্ষী তিনি লইতে চান। অবশেষে সামান্য বাকবিতণ্ডার পর উপযুক্ত তাম্রমুদ্রা এবং তাহাদের সঙ্গে আনা চাউল ও কিছু ফলমূলের বিনিময়ে তাহারা পক্ষী দিতে স্বীকৃত হইল। তৎক্ষণাৎ মলয়াদিত্য আদেশ দিলেন সমস্ত পক্ষী যেন তাহারা বন্ধন খুলিয়া ছাড়িয়া দেয়। বেহারাগণ তাই করিল। আর সেই বিহঙ্গকুল হয়তো প্রথমে বিশ্বাস করিতে পারে নাই, বিশ্বাস হওয়া মাত্র তাহাদের আহত পঙ্খ ঝটপটাইয়া উঠিল। ফুলের রেনু আর গন্ধে মুখরিত বায়ুপ্রবাহকে হৃদয়ে ধারণ করিয়া, দিবাকরের বৈকালিক রাগে রঙীন হইয়া ওঠা বিশাল আকাশে একে একে পক্ষীরা উড়িয়া যাইতে লাগিল। একটি পর্বত ঢালে দাঁড়াইয়া সে দৃশ্য দেখিতেছিলেন মলয়াদিত্য, চক্ষু অশ্রুসিক্ত হইয়া উঠিয়াছে, তিনি অস্ফুট কণ্ঠে বলিতেছেন,
"দ্রুমাঃ সপুষ্পাঃ সলিলং সপদ্মং
স্ত্রিযঃ সকামাঃ পবনঃ সুগন্ধিঃ .
সুখাঃ প্রদোষা দিবসাশ্চ রম্যাঃ
সর্বং প্রিযে চারুতরং বসন্তে .. "
তাহার পাশে বনবাসী গন দাঁড়াইয়া আছে। এমন সময়ে একটি আশ্চর্য ঘটনা ঘটিল, সেই রমণী যাহাকে দেখিলে সর্বাপেক্ষা হিংস্র মনে হয়, সে তাহার পিঠে বাঁধিয়া রাখা বংশশলাকা নির্মিত ঝুড়ির ভেতর লতাপাতার তলা হইতে একটি বৃহদাকায় জীবিত পানকৌড়িকে বাহির করিয়া, ধীরে ধীরে নীচের জলাশয়ের কাছে গিয়া ছাড়িয়া দিলো, তাহার পর মলয়াদিত্যের চক্ষুতে চক্ষু রাখিল, সেই দৃকপাতে দিগন্তের আহ্বান ছিল না, কোনরূপ সম্মতিও ছিল না, যাহা ছিল তাহা হইল ব্রহ্মচারী আমারো হৃদয় আছে, শুধু বিরাট ক্ষুধার নিকট সবকিছু হারাইয়া যায়। কাল আবার তীরধনুক চালাইব, রক্ত মাখিব। এই বসন্তও থাকিবে কিন্তু তুমি থাকিবে না এই অরণ্যে...
সুব্রত রায়
মা
----- সুব্রত রায়
গ্রীষ্মকাল কেটে যায় কোনরকম। শীতে কষ্ট অনেক বেশি। শীতের রাতে ফুলমতির ঠিকানা রেলষ্টেশন।
ছোটলোকের মেয়ে ফুলমতি দারুণ সুন্দরী। তাছাড়া ঝাডুর জন্ম-বৃত্তান্ত সবার জানা। চারবছর আগের ঘটনা। তখন থেকেই ছেলে ঝাড়ুকে নিয়ে ফুলমতি রাতটা ষ্টেশনে কাটিয়ে দেয়। একটা বাড়তি অনুকম্পা পাওয়া যায়।
রাত দশটায় শেষ লোকেল ঢুকে।ঐ ট্রেনে শহর থেকে ফেরে ফুলমতি। ইদানিং কাজটা নিয়েছে। ওখানে রোজগার অনেক বেশি।
দাঁড়িয়ে থাকলেও ইঞ্জিন সারা রাত চালু থাকে।তা ছাড়া সারাদিনের ক্লান্তি ঝেড়ে ফেলতে থাকে তপ্ত যন্ত্রশকট।ইঞ্জিনের প্রায় তলায় আশ্রয় নেয় মা আর ছেলে,যান্ত্রিক ওম শুষে নেয় দুটো রক্তমাংসের শরীর। পাথরের ধারালো প্রান্তগুলো পিঠে খোঁচা দেয়।জোরে টানলে ছেড়া কাঁথা আরও ছিঁড়ে যায় । মনে মনে হাসে ফুলমতি, ইঞ্জিনটা কি পুরুষ!
আজ শীত বড্ড বেশি।সন্ধ্যা থেকে ঝাড়ুর কাঁপন আর থামছে না। মায়ের অপেক্ষায় যেন শীত আরও তীব্র হতে থাকে।
একটা হট্টগোল।ঝিমুনি এসেছিল।
চেচাঁমেচিতে তন্দ্রা ছুটে যায় ঝাডুর।
ব্রিজ ভেঙে ট্রেন নাকি নীচে পড়ে গেছে। এটাই শেষ ট্রেন।মা ফেরার কথা ছিল। ঝাড়ুর ছোট্ট শরীর, কাঁপন বেড়ে গেছে প্রচণ্ড।
মধুমিতা ভট্টাচার্য
মধ্যবিত্ত
-----মধুমিতা ভট্টাচার্য
একটি গোবরে পোকা,ভো ভো করে উড়ে।
আবার মাটিতে পড়ে যায়,
আবার উড়ে,আবার পড়ে,
একসময় শান্ত হয়ে মাটিতেই পড়ে থাকে।
ঠিক যেনো মধ্যবিত্তের মতো।
দু' নৌকায় পা দিয়ে চলতে চলতে,একসময় ভরাডুবি ঘটে।
সমাজ বিলাসের হাই স্ট্যাটাসে নাম লিখাতে ব্যস্ত বাইরে-
ঘরে তখনও
মাসকাবারি হিসেব নিয়ে তুমুল ঝগড়া বউয়ের সাথে -
" অমুক বাবুর ছেলে বিদেশ গেছে পড়তে,
মেয়ে বিয়েতেও কোটি টাকার বাজেট,
স্ট্যাটাস নিয়ে কথা !
ছেলেকে ডোনেশনে পড়াতে হবে বিদেশে।
দেশের পড়ার মুখে ছাই,
আর লোনে হবে মেয়ের বিয়ে,, ঠিক অমুক বাবুর মেয়েরই মতো।
পরে খাবো কি?আঙুল চুষবো?
এখন তা ভাববার সময় নেই।"
বছর খানেক পরে যখন
চাকরিতে রিটায়ার্ড,
কিছু গেল ছেলেকে বসাতে
কিছু গেল লোনে।
এবার,বাবুর আর সেই ঠাঁট নেই,বাট আছে ঝুলে।
পুরনো কাপড়ে ইস্ত্রি দিয়ে
রেশনে মুখ ঢেকে।
"রেগার খাতায় নাম লেখাতে
পারবো না তো কভু?"
পকেট খালি হলেও
মধ্যবিত্তের স্ট্যাটাস ভারি।
বড়লোকের নাইট পার্টিতে
ইনভাইটেশন আসেনা তবু !
এ দলের নয়,ও দলের নয়
মাঝখানে হাবুডুবু।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
হোক লুকোচুরির অবসান
----- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী পথে
আমাদের প্রথম যোগ।
পথে ছিলনা কোনো কালো ছাপ।
দেখেছি সেই পথ
তোমার চোখে, তোমার কবিতায়।
ভাঙা পথেই প্রথম পেয়েছি তোমাকে,
তোমার সৃষ্টিতে, তোমার কারিগর কবিতায়।
চার চোখ কথা বলেনি আজও।
তবু করেছো, আপনার চেয়েও আপনার।
হে কিশোর কবি!
চলো যাই হেমন্তের কাছে।
হোক লুকোচুরির অবসান।
সোমবার, ২১ ফেব্রুয়ারী, ২০২২
সম্পাদকীয়
সম্পাদকীয়
"আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি?"
একুশে ফেব্রুয়ারী প্রতিটি বাঙালির কাছে একটি স্মরণীয় দিন। আমরা স্বাধীনতা পেলাম মাতৃভূমিকে ত্রিখন্ডিত করে। ইংরেজ ও তৎকালীন দেশীয় নেতৃবৃন্দের প্রবল ইচ্ছায় ভৌগোলিক দিক দিয়ে দূরত্ব থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র ধর্মীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার উপর নির্ভর করে প্রতিষ্ঠিত হলো পূর্ব পাকিস্তান এবং পশ্চিম পাকিস্তান মিলে পাকিস্তান নামক রাষ্ট্র। শরীরের অংশ হয়ে গেলো প্রতিবেশী দেশ। পশ্চিম পাকিস্তানের ঊর্দুভাষীরা ধর্মের দোহাই দিয়ে পূর্ব পাকিস্তানকে করায়ত্ত করতে চাইলো ঐ ভাষাকে আশ্রয় করেই। কেড়ে নিতে চাইল নিষ্পাপ শিশুর মুখের বুলিকেও। এমনি এক দিনে একুশে ফেব্রুয়ারী ১৯৫২ সাল তারই প্রতিবাদে বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা নেমে আসে রাজপথে। জ্বলতে থাকে সারাবাংলা। এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম পরবর্তীকালে পথ দেখালো সারা পৃথিবীকে এবং হয়ে রইল এক অবিস্মরণীয় দৃষ্টান্ত। ১৯৯৯ সালের ১৭ই নভেম্বর জাতিসংঘের শিক্ষা-বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা, ইউনেস্কো ২১শে ফেব্রুয়ারীকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" হিসাবে স্বীকৃতি দিল। আজকের এই দিনে দাঁড়িয়েও মাতৃভাষাকে কি আমরা উপযুক্ত সম্মান দিতে পারছি? মাতৃ দুগ্ধসম মায়ের ভাষাকে অবহেলা করে আজ আমরা পুষ্টির অভাবে বিকলাঙ্গ হতে চলছি।
প্রিয় পাঠক, আপনাদের ভালোবাসার টানে প্রকাশিত "অমর একুশে ২" নামক সাহিত্য নয়নের ১৮ তম সংখ্যাটি শ্রদ্ধা নিবেদন পূর্বক ভাষা শহীদদের প্রতি উৎসর্গ করা হলো। আপনাদের সার্বিক মতামত পাবো এই আশা নিয়ে এবারের মতো বিদায় নিচ্ছি। আবারো দেখা হবে বসন্তের সংখ্যায়।
ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা সহ ----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
কবি পরিচিতি
"সাহিত্য নয়ন"- এর পাতায় যাদের লেখনি বিরাম নেয়নি কখনো। হয়তো জানেই না বিরাম কাকে বলে। উনাদের জীবন সমুদ্রের কয়েক ফোঁটা জলের কথা:---
কবি পরিচিতি :- হেমন্ত দেবনাথ
লেখক, প্রাবন্ধিক ও কবি হেমন্ত দেবনাথ হলেন একজন অবসরপ্রাপ্ত স্নাতকোত্তর শিক্ষক। তিনি দশদা দুর্গারাম দ্বাদশমান বিদ্যালয়ে এবং পরবর্তীতে কৃষ্ণপুর দ্বাদশমান বিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর শিক্ষক ছিলেন। তিনি পেশায় শিক্ষক হলেও নেশায় একজন সাহিত্যিক এবং সংস্কৃতিপ্রেমিক মানুষ। তিনি ধর্মনগর "স্বকাল সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংস্থা"-র একজন কার্যকরি কমিটির সদস্য। ধর্মনগর শহর সংলগ্ন গ্রাম দেওছড়া উত্তরাংশের তিন নং ওয়ার্ডের স্থায়ী বাসিন্দা এবং এটিই লেখকের জন্মস্থান। “সন্ধিক্ষণ”, "দেও", "সাহিত্য-নিলয়", "বোধন", "উত্তরা", "উদীরণ", “ফুলবাড়েং” ইত্যাদি বিভিন্ন সাহিত্য পত্রগুলোতে লেখকের বিভিন্ন প্রবন্ধ ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে। "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার জন্মলগ্ন থেকেই নয়নের পাতায় ওনার নিয়মিত বিচরণ। লেখকের প্রকাশিত দু'টি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- "সাহিত্য নিলয়” এবং "নির্বাচিত প্রবন্ধগুচ্ছে।”
কবি পরিচিতি :- কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য, ক্ষুদ্র পার্বত্য রাজ্য ত্রিপুরার শিক্ষা দপ্তরে শিক্ষকতার সেবায়( ইতিহাস বিষয়) নিয়োজিত। মাঝে মধ্যে জীবনপথে চলার অবসরে কলমের কালি দিয়ে সাদা কাগজে আঁচড় কাটা তাঁর চিরদিনের অভ্যাস।
আঁচড় কাটা দাগগুলো দেখে কেউ বলেন- কবিতা, কখনো কেউ বলেন - নাটক,আবার কখনো বা কারো ভাষায় ছোট গল্প ; সে যা-ই হোক। মধ্যবিত্ত বামুন পরিবারের সন্তান হওয়ার সুবাদে সমাজ ও অর্থনীতিকে একেবারে সামনে থেকে দেখার সুযোগ ঘটেছে।'কোকনদ ' নামে একখানি ছোট কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া 'সাহিত্য নয়ন' এর পাতায় লেখার নিয়মিত প্রয়াস রয়েছে। 'বিশ্ববঙ্গ সাহিত্য সম্মেলনে ' র আজীবন সদস্য। এই লেখা লেখির বিষয়ে সর্বাধিক অনুপ্রেরণার উত্স বন্ধুবর সংস্কৃতিমনা শিল্পী শিবাজী ভট্টাচার্য এবং স্বর্গীয়া পিসিমণি নীলিমা ভট্টাচার্য।
কবি পরিচিতি :- অমল কুমার মাজি
একাধারে কবি,সাহিত্যিক,গীতিকার ও সঙ্গীতশিল্পী শ্রী অমল কুমার মাজির জন্ম 19শে আগষ্ট 1955 পশ্চিমবঙ্গের পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রত্যন্ত গ্রাম ঘোষ কামাল পুরে।পিতা প্রয়াত পার্বতী চরণ মাজি এবং মাতা মঞ্জুবালা দেবীর প্রথম সন্তান শ্রী মাজির শৈশব থেকে কৈশোর তথা যৌবনে উত্তরনের পথ মসৃণ ছিলনা।ক্লাস সেভেনে পড়ার সময়েই মা কে হারাতে হয়।উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার পর থেকেই পরিস্থিতির চাপে শুধুমাত্র বেঁচে থাকার তাগিদে তাঁকে গ্রামের জোতদারদের জমিতে দিনমজুরী এবং পরবর্তী সময়ে দীর্ঘ কয়েক বছর ট্রেনে হকারি ক'রতে হয়।প্রচন্ড অর্থাভাবের মধ্যে একসময় দুই পুত্র কল্যাণ,কৌশিক ও স্ত্রী বাসন্তীকে নিয়ে চ'লে আসেন বর্ধমান শহরে।ক্রমে সহজাত প্রতিভা তাঁকে সঙ্গীত জগতের দিকে আকর্ষিত করে।শ্রী অজিত পন্ডিত,নিশাকর মল্লিক এবং পরবর্তীকালে তিনি কলকাতায় পন্ডিত শ্রীকান্ত বাকড়ে ও পন্ডিত সমরেশ চৌধুরীর কাছে শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের পাঠ নেন।নিয়মিত শিক্ষা ও শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের কঠোর অনুশীলনের সাথে সাথে তিনি বিভিন্ন পত্র -পত্রিকায় লাগাতার লেখালেখি ক'রতে-ক'রতে এক সময় সঙ্গীতকেই পেশা হিসাবে গ্রহণ করেন।বর্ধমানের তেজগঞ্জে প্রতিষ্ঠা করেন চন্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্র অনুমোদিত সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান রাগেশ্রী সঙ্গীত বিদ্যাপীঠ।এছাড়া তিনি দীর্ঘদিন যাবৎ চন্ডীগড় প্রাচীন কলাকেন্দ্রের পরীক্ষক হিসাবে নিয়োজিত আছেন।চাকুরী জীবন থেকে অবসর গ্রহণের পর ছাত্র-ছাত্রীদের নিরন্তর সঙ্গীত শিক্ষা দান,নিজের সঙ্গীত চর্চা এবং সাহিত্য চর্চায় ব্যস্ত আছেন।শ্রী মাজির দর্শনে-"অবসর ব'লে কিছু নেই।অবসর মানে মৃত্যু। সুতরাং নতুন নতুন গল্প,নতুন নতুন কবিতা,ছড়া, নতুন নতুন গান লেখা এবং তাতে সুরারোপ করার মত সৃষ্টিধর্মী কাজের মাধ্যমে তিনি সর্বদাই সৃষ্ঠির আনন্দে মগ্ন আছেন।দীর্ঘ দিন তিনি মুক্তপথিক,প্রতিবিম্ব ও সুশীল পত্রিকা সম্পাদনা ক'রেছেন।স্কুল ম্যাগাজিনের গন্ডি পেরিয়ে ক্রমে তিনি "অঙ্কুর",আঁটুল-বাঁটুল","হাটে-বাজারে পত্রিকা", বর্ধমানের পাপারাৎজি,"আপনজন", দৈনিক মুক্তবাংলা",ও "দৈনিক 'সংবাদে'র পাতায় নিয়মিত ছড়া,কবিতা, ছোট গল্প,ও প্রবন্ধ লেখা শুরু করেন।ডঃ বাসুদেব দে সম্পাদিত "মাসিক সাহিত্য পত্রিকার" তিনি নিয়মিত লেখক ছিলেন এবং ঐ পত্রিকার সম্পাদনার কাজেও তিনি নিয়োজিত ছিলেন। তাছাড়া "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার উনি একজন নিয়মিত লেখক ।কলকাতার "মডেল পাবলিশিং হাউস"-এর প্রকাশনায় তাঁর গল্প গ্রন্থ "সময় যখন গল্পে বাঁধা" ও"জীবন যখন গল্পে গাঁথা"যথাক্রমে 2014 ও 2016-তে কলকাতা বইমেলা থেকে প্রকাশিত হয়।
কবি পরিচিতি :- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
( কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্যের দৃষ্টিতে কবি পরিচিতি)
প্রতিভাবান শিল্পী সত্তার এক নাম রাজেশ ভট্টাচার্য্য। সংস্কৃতি জগতের প্রায় সকল অঙ্গনে শিল্পীর পরশ লক্ষ্যণীয়। পেশা হিসেবে শিক্ষকতার সেবা ব্রতে নিযুক্ত।" স্মৃতিশাস্ত্রী" উপাধি রাজেশ ভট্টাচার্য্যের অলংকার। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ছোট্ট পাহাড়ি রাজ্য ত্রিপুরার ধর্মনগর মহাকুমার উপ্তাখালী গ্রামে কবির জন্ম। "নবার্ক"- সাহিত্য সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং সম্পাদক, নাট্যনির্মাতা, নির্দেশক হিসাবি খ্যাতিমান ব্যক্তিত্ব কবি, লেখক রাজেশ ভট্টাচার্য্য। " সাহিত্য নয়ন" এর কান্ডারী পুরুষ।
অমল কুমার মাজি
ফেব্রুয়ারি
-----অমল কুমার মাজি
এ মাস আমার এ মাস তোমার
এ মাস জাগায় আশা।
এ মাস ভালোবাসার।।
এ মাস মায়ের এ মাস ভায়ের
এ মাস যে প্রত্যাশা
এ মাস মাতৃভাষার।।
এ মাস জয়ের,নয়তো ভয়ের
এ মাস তো নয় ত্রাসের
এ মাস ইতিহাসের।।
এ মাস আলোর,নয়তো কালোর
এ মাস মুক্ত শ্বাসের
এ মাস ভীরুতা নাশের।।
এ মাস আকাশ এ মাস বাতাস
এ মাস ফেব্রুয়ারি।
কেমনে ভুলিতে পারি।।
এ মাস প্রেমের শুদ্ধ হেমের
এ মাস নর ও নারী
এ মাস ফেব্রুয়ারি।।
হেমন্ত দেবনাথ
আমার ভারতবর্ষ
-------হেমন্ত দেবনাথ
আমার ভারতবর্ষ,তোমায়
আমি ভালোবাসি।
সবুজের নেশায় তুমি
চিরসবুজ আছ চিরকাল
তোমার স্মিত হাসি আছে
একগাল।
তুমি অনন্যা; তুমি হরিদ-অঙ্গী।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
তোমার ক্রোড়ে পাখির ডাকে
আমি ঘুমিয়ে পড়ি।
আর পাখির ডাকে জাগি।
আমি প্রজাপতির ডানায়
চমকে উঠি।
মুগ্ধ -মেদুরতায় ভরে উঠে
মোর নয়ন দু'টি।
আমার ভারতবর্ষ। তোমায়
আমি ভালোবাসি।
তুমি বিভেদের মাঝে---
করেছ ঐক্যস্থাপন।
আনন্দে নানা ভাষাভাষী মানুষ
এথায় করছে দিনযাপন।
"যত মত,তত পথ"-কে
তুমি করেছ লক্ষ্যের অভিমুখীন।
পরকে আপন করে---
নিজে বুকে নিয়েছ তুলে চিরদিন।
আমার ভারতবর্ষ।
তুমি পরের সহিত আপনারে করিয়াছ----
ভেতরকার মেলবন্ধন।
ভেতরকার বিচিত্র বিভাগ
ও বিভেদের মাঝে-----
এনেছ সামঞ্জস্য।
তুমি বাজাইয়াছ ঐক্যের বাঁশি।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
বিভেদকামিতার বিরুদ্ধে এগিয়ে এসেছ তুমি।
পূতঃবারি স্নাত তব ভূমি।
তোমার আছে ' একতার দ্যোতনা।
তাই তো তুমি মোদের প্রেরণা।
তোমার আছে সভাইর সাথে "সুজনতা।"
পরমত সহিষ্ণুতা।
"জাতীয় সমাজ" তুমি গড়িলে---
তার সাথে "জাতীয়তাবোধ" যোগ করিলে।
তুমি অনিন্দিতা। তুমি আমার প্রিয় ভারতবর্ষ।
তোমায় আমি ভালোবাসি।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
হাওয়াই মিষ্টি
--------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
বহু চিন্তন, বহু মনন
সাথে বহু আলাপন;
অবশেষে এলো
সেই দিনক্ষণ
একঘেয়েমির ঘটলো অবসান।
বন্ধ্যাত্ব ঘুচবে --নতুনের বাণী
নতুনের ঘোষণা।
যুগ যুগ ধরে সঞ্চিত অভিশাপ
অবগুণ্ঠিত পাষাণী অহল্যা রামের পরশে শিহরিত হয়ে জাগবে জাগবে,
সাজবে নতুন সাজে,
নব নব স্বাদের আস্বাদনে
রসনার ঘটবে পরিতৃপ্তি।
শ্রী রামের পাদস্পর্শে
ত্রেতা যুগেই জড় অহল্যা
সজীব হলেও
আজ কলিযুগে জড়ত্ব ঘোচানোর মিথ্যা চেষ্টা
শীতের কুয়াশাজড়ানো স্বপ্নে
হারিয়ে যাচ্ছে।
চারিধারে পরিপাটির রমরমা
কাজের ফল স্টলের গোল্লা --
হাওয়াই মিষ্টি!
সন্দেশের সাজ আগেরটাই হতে পারে--
কেবল মাল-মশলার বদল!
কিন্তু ;
এটাও যে হয়ে উঠছে না অদৃশ্যের লোল জিহবা
আরো চায়,আরো চায়।
রচনা কাল:- ২৪/১/২০২২, সোমবার।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বাধীনতার মানে
----- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বাধীনতা কাকে বলে জানো?
বলতে পারবে স্বাধীনতার মানে কী?
হয়তো বলবে খুব সহজেই
মনের মত কোনো কিছু করা বা
বলার অধিকারই স্বাধীনতা।
স্বাধীনতার অর্থ বুঝে নিও তার কাছে--
যে দিন দুপুরে প্রকাশ্যে হয় ধর্ষিতা।
কত ধর্ষিত হতেও দেখেছি আমি,
রাতের অন্ধকারে কিংবা প্রকাশ্য দিবালোকে।
শুধু পার্থক্য একটাই---
কেউ হয় শরীরে আর কেউ হয় মনে।
ভাগ্যের পরিহাসে যে মেয়েটি খায়
হোটেল থেকে আনা দুবেলা খাবার,
দেওয়ালে লাগায় মা দুর্গার ছবি।
সেই মেয়েটির কাছ থেকেও জেনে নিও,
স্বাধীনতা কাকে বলে!
যে মেয়েটি মাধ্যমিকে প্রথম,
বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বর্ণপদক, মস্ত বড়ো অফিসার।
কিন্তু তার রক্ত ঝরে নিজের ঘরে।
তার কাছ থেকেও জেনে নিও,
স্বাধীনতা কাকে বলে!
যে ছেলেটার শৈশব কাটছে
চায়ের দোকানের কাপ-প্লেট ধুয়ে।
সেও জানে স্বাধীনতা কাকে বলে।
স্বাধীনতার মানে তারাই বোঝে
যাদের স্বপ্ন হচ্ছে তিলে তিলে নাশ।
অন্যের স্বাধীনতা কেড়ে নিচ্ছে যারা,
তাদের ভাগ্যে লেখা আছে নিশ্চিত সর্বনাশ।
রচনা কাল:- ২২শে জানুয়ারি ২০২২ ইং
সুজন দেবনাথ
স্মৃতি হয়ে থাক
------সুজন দেবনাথ
জীবন মানে যদি শুধু যুদ্ধই হবে
শান্তি তবে কোথায়?
খুঁজে খুঁজে যারে পথে পথে ফেরে
কতনা পথিক সদাই।।
কত প্রাণ রোজ মরে আর বাঁচে
জীবন রাঙাবে বলে।
কত প্রাণ রোজ হয় যে নিখোঁজ
মিথ্যে সাজানো ছলে।।
প্রত্যাশিত চাওয়া পাওয়া যত
নিমেষে ছাইয়ের স্তুপ।
কেউ চাইনা তবু হয় যে বিলীন
যতো না স্বাদের রূপ।।
এসেছি যখন ফিরে তো যাবো
এরই নাম তো জীবন।
স্মৃতি হয়ে থাক যত ইতি কথা
আসবে যখন মরণ।।
নিরঞ্জন দাস
রাতের তারা
-----নিরঞ্জন দাস
বিনিদ্র রাতে অদ্ভুত চাওয়া।
পাবো না জানা গেছে,
মিছে তরী বাওয়া।
জীবনের সব আশা দুরাশা সম।
মিছে মায়া শুধু,
কেবল মরীচিকা ভ্রম।
বিনিদ্র রাত আর আকাশের তারা।
থাকে শুধু একসাথে,
হয়তো সাথী হারা।
প্রিয়াঙ্কা নন্দী
প্রভাতের রূপ
----- প্রিয়াঙ্কা নন্দী
ভোর হয়েছে
ফুল ফুটেছে
ডাকছে গাছে পাখি।
সব মানুষের
ঘুম ভেঙেছে
মেলেছে দুটি আঁখি।
সূর্য মামা
দিচ্ছে হামা
যাচ্ছে মানুষ কাজে।
খোকা মণি
স্কুলে যাবে
তাইতো বসে সাজে।
কাকা বাবু
লাঙ্গল কাঁধে
যাচ্ছে মাঠের পানে।
ভোরের হাওয়ায়
সুবাস ছড়ায়
শিউলি ফুলের ঘ্রাণে।
মা বোনেরা
সবাই মিলে
করছে গৃহে কাজ।
লিখছি আমি
যা দেখেছি
সাত সকালে আজ।
গঙ্গা সাহা
অবহেলা
-----গঙ্গা সাহা
আমি একা থাকতে শিখে গেছি প্রিয়।
তোমার করা প্রত্যেকটা অবহেলা,
আমায় আজ সব কিছু শিখিয়ে দিয়েছে।
জানো এখন আর কান্না আসেনা।
অকারণে আর নিজেকে কষ্ট দেইনা।
কারণ এখন নিজেকে ভালোবাসতে শিখেছি।
নিজেকে সময় দিতে শিখে গেছি।
জানি না কেন এখন নিজেকে নিয়ে ভাবতেই ,
আমার খুব বেশি ভালো লাগে।
একটা সময় ছিল যখন সারাটা দিন শুধুই,
তোমাকে নিয়েই ভেবে গেছি।
কিন্তু দিন শেষে শুধুই হতাশ হয়েছি।
অমল কুমার মাজি
মোক্ষ
------অমল কুমার মাজি
কবির হাতের
লেখনী যখন তীক্ষ্ণ
ভয় নাই এসো
সুশ্রুত-সুর তুলি।
দূরে যাক যত
কলুষ-কালিমা-বিঘ্ন
এসো সখা এসো
বিভেদ-মন্ত্র ভুলি।।
মানবিক-প্রেমে
সিক্ত করো এ বিশ্ব
স্নিগ্ধ-মায়ায়
ভরাও পৃথিবী-বক্ষ।
মুছে যাক যত
ডাকিনী-যোগিনী-দৃশ্য
শুভ সৃজনের
পথেই র'য়েছে মোক্ষ।।
হেমন্ত দেবনাথ
অবসরগ্রহণ
-------হেমন্ত দেবনাথ।
কর্মজীবন যেন এক সুবৃহৎ জগৎ।
অবসরে যাওয়া থেকে রেহাই পাবে না কোনো মহৎ।
হৃদয়ে বেজে উঠে বিচ্ছেদের সুর।
অনুরণিত হয় চলে যাওয়ার ধ্বনি।
তবুও---
প্রকৃতির পান্থশালার যে অমোঘ রীতি।
এ রীতি চলমান থাকবে নিতি।
মনটা বড়োই ফাঁকা মনে হয়।
চেয়ে থাকি আকাশের পানে শূন্য হৃদয়ে।
কর্মক্ষেত্রটাই পেছনে পড়েই থাকলো।
এর স্মৃতি আজীবনই মনের কোণে কড়া নাড়বে।
কোমলমতি মুখমন্ডলগুলো স্নেহ বাড়াবে।
যাবো না ভুলে তাদের দুষ্টুমিগুলো।
থাকবে ওরা মম হৃদে
চিরঅম্লান হয়ে।
সহকর্মীগণের সহমর্মিতা,এলাকার মানুষের
ভালোবাসা পেয়েছি অনেক।
এ-সব স্মৃতি সুধায় ভরে
গেল চিত্তভূমি।
বিদায়কালে তাই কর্মক্ষেত্রেরে নমি।
প্রার্থনা করি,চন্দ্রের দীর্ঘবর্ষের মিলন সুষমায়---
জীবন যেন ভরে উঠে পূর্ণতায়।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পরিশ্রমী
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
আমার আকাশ কুয়াশাজড়ানো
স্বপ্নের চাদর গায়ে দিয়ে অলসতাকে ক্ষণিকের বন্ধু ভেবে হয়তোবা চলতে পারে ;
আমার আকাশ
কালো মেঘের হামাগুড়ি কিংবা ঝাঁপাঝাপি
হয়তো বা দেখেছে
কিংবা আরও দেখবে!
আমার আকাশটায় কৃষ্ণপক্ষের পরশ লাগলেও
চতুর্দশীর পরই কিভাবে যেনো শুক্লা প্রতিপদ চলে আসে! অমাবস্যার আঁধার ;---
আমার আকাশ গাঙে ঢেউ এর ছবি আঁকতে পারেনা।
আমার আকাশটা
সাতরঙা বাহারি ফুলের স্বপ্নে বিভোর।
স্বপনচারিনী ফুল- মালার ডালি নিয়ে রয়েছে প্রতীক্ষায়
কখন যে পরিশ্রমীকে বরণ করে উপহারটি দেবে হাতে।
রচনা কাল:- ১৮/২/২০২২ইং
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
স্বামীজির প্রতি
------ রাজেশ ভট্টাচার্য্য
প্রিয় স্বামীজি,
তুমি বেঁচে আছো
বেঁচেই আছো এবং বেঁচে থাকবে।
সশরীরে বেঁচে থাকলে হয়তো
আজ মরতে তিলে তিলে।
না হয় বাঁচিয়ে দিতে।
তুমি বলেছিলে---
"হে ভারত তোমার নারীজাতির আদর্শ
সীতা, সাবিত্রী, দময়ন্তী।"
হায়রে ভারত! হায়রে ভারতের সীতা
কত ক্লীব জ্বালিয়ে দিচ্ছে
কত সীতার অকাল চিতা।
কত রামও আজ বনবাসী
কত নারীর কারণে।
না না নারী নয়, সেও ক্লীব।
হাজারো শয়তানে মিশে
সে আর ক্লীবও নয়, সে বিধর্মী।
তুমি হয়তো জানো না যুগর্ষি,
বিবাহ এখন পুরোপুরি ব্যক্তিগত।
আর বার্ধক্য কাটে বৃদ্ধাশ্রমে।
তুমি বলেছিলে---
"হে বীর সাহস অবলম্বন কর---"
সাহস অবলম্বন করে আজ
রক্তস্নান করছে মূর্খের দল !
তাদের রক্তেও আজ নেই মানবপ্রেমের রক্ত
ভোগের নেশায় হয়েছে বিষাক্ত।
তোমার কাছে প্রার্থনা আমার
আবারও আশীর্বাদ করে বলো---
হে গৌরীনাথ, হে জগদম্বে,
তোমার সন্তানদের মনুষ্যত্ব দাও
ওদের মানুষ করো।
রচনা কাল:- ১২/০১/২০২২ ইং