------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
শ্রীচরনেষু মা,
আমি তোমার খুকি বলছি।
একবার আকাশ পানে চেয়ে দেখো মা,
তোমার মেয়েটি আজ আকাশের সবচেয়ে বড় তারা হয়ে ঝলমল করছে।
তোমার মনে আছে মা?
ছোটোবেলায় আমি ডাক্তার ডাক্তার খেলতাম,
কখনো বালিশকে কখনোবা তোমাকে রোগী বানিয়ে নিতাম,
আর আমি হয়ে উঠতাম মস্ত বড় ডাক্তার।
কেউ যখন আমাকে জিজ্ঞেস করত---
কিরে পুচকী বড় হয়ে কি হবে তুই?
আমি অম্লান মুখে বলে দিতাম, আমি হব এক মস্ত বড় ডাক্তার।
পড়াশোনায় খুব ভালোই ছিলাম তাই না মা?
যেদিন মাধ্যমিকের রেজাল্ট বেরোলো----
সেই দিনের কথা তোমার মনে আছে মা?
আমি ছিলাম আমাদের স্কুলের একমাত্র ফার্স্ট ডিভিশন।
রেজাল্ট জেনে দৌড়ে এসে
তোমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছিলাম।
কিন্তু সেদিন কি আর জানতাম, আমার স্কুল জীবন এখানেই শেষ!
বাবা আমার সব স্বপ্ন ভেঙ্গে দিল
আমার ভালোর কথা ভেবে।
আমাকে তোমরা এই পৃথিবীর আলো দেখালে,
আমার এই ছোট্ট শরীরটাকে অনেক যত্নে আগলে রেখে বড় করলে মা।
কিন্তু তোমাদের সংসারে আমার আর কটা বছর ঠাঁই হলো না মা।
না না, তোমরা যা করেছ ঠিকই করেছ।
কন্যাদায় যে অনেক বড় দায় মা।
বাড়িতে কন্যা সন্তান থাকলে কত জ্বালা,
লোকে আঙ্গুল তুলে ছি: ছি: করে বলবে---
মেয়েটাকে বিয়েও দিতে পারছেনা।
জানো মা, আমার নতুন জীবনের প্রথম কটা দিন খুব ভালোই কেটেছিল,
ঠিক যেমনটা তোমরা চেয়েছিলে।
তারপর ধীরে ধীরে ডুবে গেলাম অভিশপ্ত জীবনে।
যখন আর তপ্ত ধাতব আমার শরীরে লাগানোর মত জায়গা রইল না,
সেদিন দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকলো তোমাদের যত্নে বড় করা আমার এই শরীর।
তখন খুব কষ্ট হচ্ছিল মা।
আমার যন্ত্রণার কাতর চিৎকারে কেউ এগিয়ে এলো না!
শেষ নিঃশ্বাসে ভগবানের চরণে এইটুকু প্রার্থনা করলাম---
হে ভগবান, তুমি আমার মতো অভাগী কন্যাসন্তানকে,
কোনো মায়ের কোলে ভুলেও পাঠিও না।
এখন একবার আমার দিকে চেয়ে দেখো মা,
তোমার খুকি সব স্বপ্ন নিয়ে আকাশে ঝলমল করছে।
এখন আমি খুব ভালো আছি মা,
খুব ভালো আছি মা,
খুব ভালো আছি।
অসাধারণ লেখনী। চোখে জল চলে এলো।
উত্তরমুছুন