------শান্তশ্রী মজুমদার
কাঞ্চন জংঘার অমোঘ আকর্ষণ আমার ভ্রমণ পিপাসু মনকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করে নিয়ে চললো দার্জিলিং।
সমুদ্রের উত্তাল ঢেউকে বারবার আলিঙ্গন করেও যেমন অতৃপ্তি থেকে যায় তেমনি ধ্যানমগ্ন গগনচুম্বী পাহাড়ের নিস্তব্ধতা ও আমাকে বারবার তার ছায়ায় নিয়ে যায় অপ্রাপ্তির আকর্ষণে।
---------
আমাদের ঊনকোটি থেকে শুরু করে দেবতামুড়া, কামাখ্যা পাহাড়, শিবালিক, গাড়োয়াল,ত্রিকূট, হিমালয় ----বহু পাহাড়ের সান্নিধ্যে আসার, পাহাড়ের বিশালতা কে হৃদয়ে ধারণ করার সৌভাগ্য আমার হয়েছে।
---------
২০২০সালের ১০ই মার্চ রওনা দিলাম দার্জিলিং এর উদ্দেশ্যে। দার্জিলিং শহরের চকবাজারেই Hill crown হোটেলে তিনতলায় আমাদের রুম বুক করা ছিলো।
পথশ্রমে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ি প্রথম দিন।
পরদিন ভোরে জানালা খুলতেই দেখি জানালার সামনে শ্বেতশুভ্র কাঞ্চন জংঘা হাসি মুখে দণ্ডায়মান।সকালের সোনালীরোদে হীরার দ্যুতি ছড়াচ্ছে তার বরফাবৃত শরীর থেকে।
আমার নয়ন জুড়ালো, মন জুড়ালো। দুচোখ ভরে এই নয়নাভিরাম দৃশ্য উপভোগ করতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর মেঘের আড়ালে চলে গেলো কাঞ্চন জংঘা।
-----------
দার্জিলিং আসার অমোঘ আকর্ষণ ছিলো টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় দেখা।
ভোর সাড়েতিনটায় হোটেলের সামনে আমাদের ভাড়া করা গাড়ি হাজির। চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার। সারি সারি গাড়ি চলেছে পর্যটক নিয়ে ----গন্তব্য একটাই টাইগার হিল।
আমাদের ওয়াগন গাড়ির ড্রাইভার সেলিম তার রেকর্ডারে শিবস্তোত্র বাজিয়ে আমাদের নিয়ে চললো টাইগার হিলের দিকে।
-----------
টাইগার হিল থেকে সূর্যোদয় -----এক অলৌকিক স্বর্গীয় দৃশ্য।চর্মচক্ষে দেখে জীবন সার্থক করলাম। যখন উদীয়মান সূর্যের প্রথম কিরণ প্রতিফলিত হোল সমগ্র আকাশ জুড়ে, তখন পুরো আকাশটা রক্তিম বর্ণে আলোকিত হোল ----এ দৃশ্য আমার মন প্রাণকে এক অনাবিল আনন্দে ভরে দিলো।
---------------
হাতজোড় করে প্রণাম করলাম -----
ওঁ জবাকুসুমসঙ্কাশ
কাশ্যপেয়ং মহাদ্যুতিং
ধ্বান্তারিং সর্ব পাপঘ্নং
প্রণতোহস্মি দিবাকরম্
--------
সুউচ্চ টাইগারহিলে দাড়িয়ে আমার মতো কয়েক শত মানুষ এই স্বর্গীয় আনন্দ উপভোগ করছে।
------পশ্চিম আকাশে শ্বেত শুভ্র কাঞ্চন জংঘা আমাদের দেখা দেবে বলে মেঘের চাদর সরিয়ে হাসি মুখে দাড়িয়ে আছে। ---আমি হিমালয়কে দেখছি,আমি তার শৃঙ্গ কাঞ্চন জংঘাকে দেখছি ---এক রোমাঞ্চ কর শিহরণ আমার দেহে।পুব আকাশে লাল টকটকে সূর্যের ঘুম ভাঙছে.... দিবাকর প্রকাশিত হচ্ছেন ধীরে ধীরে..
পাহাড়ের নীচে থেকে সূর্য উঠছে... তার রক্তিম আভা প্রতিফলিত হচ্ছে কাঞ্চন জংঘা র চূড়ায়।-----আহা কি দেখিলাম, জন্ম জন্মান্তরেও ভুলিব না।
আধাঘন্টা স্বপ্নাবিষ্ট ছিলাম। ধীরে ধীরে কাঞ্চন জংঘা চলে গেলো মেঘের আড়ালে। টাইগার হিলে উড়ে আসতে লাগলো মেঘ। মুহুর্তের মধ্যে পুরো পাহাড়টি মেঘে ঢেকে গেলো।মেঘের স্পর্শে ধন্য হলাম আমি।আকাশের মেঘকে ছুঁয়ে দেখছি আমি ---আহা এমন প্রাকৃতিক মাধুর্য ও আমার আমার জন্য অপেক্ষা করছিল।
আমরা দৌড়ে নামছি টাইগার হিল থেকে.....
পথের ওপর দেবাদিদেব মহাদেবের মন্দির, গণেশ মন্দির, হনুমানজীর মন্দির রয়েছে।
হিমালয়ে দেবাদিদেবের চরণ স্পর্শ করে মানব জন্ম সার্থক করলাম।
একরাশ ভালোলাগা নিয়ে নিস্তব্ধ পাহাড়ের সাথে আমি ফিরে চললাম......
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন