সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১
সম্পাদকীয়
প্রিয় পাঠক, আবারো হাজির হলাম আপনাদের ভালোবাসার টানে। দাবদাহ গ্রীষ্মে খরতপ্ত রোদে প্রচন্ড দহন দাহনে যখন মানুষ কামনা করে শান্ত নীড়ের স্নিগ্ধতা, তখনই ধরণীর বুকে আনন্দ-ধারার মতো নেমে আসে মেঘমন্দুরা বর্ষা। বর্ষার আগমন আসলে বৃষ্টির মঙ্গলধ্বনি। বর্ষাকাল মানে ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টি। সবুজে সবুজে আর নীলিমায় নীল আমাদের দেশের প্রকৃতি গেয়ে উঠেছে বর্ষামঙ্গল। বর্ষার আগমনে সহসাই মন নেচে ওঠে ময়ূরের মতো করে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠা মন কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে চায় না। নিজের অজান্তেই কেউ গেয়ে উঠে মেঘলা দিনের গান------"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন, কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।" তাইতো বর্ষাকে আমরা এতটা ভালবাসি। বর্ষা জীবনের স্বপ্ন দেখায়, বর্ষার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা হয়ে ওঠে রূপসী। আমাদের দেশের বৈষ্ণব কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবি-লেখক সকলের মনকে প্রভাবিত করেছে সুন্দরী বর্ষারানী। কবি ও লেখকদের ভাবনায় বিভিন্ন রূপে ফুটে উঠেছে বর্ষার ছবি। বর্ষার মঙ্গলময়ী রূপের কথা স্মরণ করে, বিশেষ কিছু করার ইচ্ছা থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিলো সাহিত্য নয়নের " বর্ষামঙ্গল উৎসব" নামক তৃতীয় সংখ্যা। দেখতে দেখতে আবারো বছর ঘুরে বর্ষার মঙ্গলধ্বনি বাজিয়ে হাজির হলো এই উৎসবের মাস। গত বছরের উৎসবের সংখ্যাটির সাথে সেতুবন্ধন করতে প্রকাশিত হল সাহিত্য নয়নের "বর্ষামঙ্গল উৎসব সংখ্যা ২" নামক পঞ্চদশতম সংখ্যা। আমাদের সম্মানিত কবি-লেখকদের লেখনীর ছোঁয়ায় এবং কবি ও প্রচ্ছদশিল্পী কবিতা সরকারের অংকিত প্রচ্ছদে সংখ্যাটি পেয়েছে পূর্ণতা। স্মৃতিচারণ অনেক হলো, এবার চলুন বর্ষার মঙ্গলধ্বনির তালে তালে আমরা সবাই মিলে চোখ মেলি নয়নের পাতায়।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছাসহ------
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পলি
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পলি পাড়ে শুয়ে থেকে
ভাবে নতুন কিছু করার।
বানের জলে থৈথৈ ছিলো
বর্ষার নদীর পাড়,
কতকিছু গেছে শেষ হয়ে
থাকেনি পলি ছাড়া কিছু আর।
এখন সেই পলি ডাকছে
হাতছানি দিয়ে
এসো এসো
মামা- চাচা আছো যত
আমাকে কাজে লাগিয়ে
ফসল তোলো ইচ্ছে মতো।
আমি খোয়াই, মুহুরি,জুরি
থেকে শুরু করে রয়েছি গঙ্গা, যমুনা ,গোদাবরী।
আমি কালো কিংবা ধলো
যাই হই না কেনো
আমি তো কৃষক তারিণী । নদী মা!
আমায় বহে এনে রেখে যায়
চড়ায়, চড়ায়
আমার বুকে শিশু চারা ঘুরে ফিরে বেড়ায়।
শিশু চারা দিনে দিনে বাড়ে,
আমি থাকি যে কোনো নদী পাড়ে।
রচনা কাল:-০৮/৬/২০২১,
মঙ্গলবার।
হেমন্ত দেবনাথ
বর্ষা
------হেমন্ত দেবনাথ
বর্ষায় মেঘমেদুর বিষণ্ণ দিনগুলো,
মুছে দেয় গ্লানি আর পথ-প্রান্তের ধুলো।
চঞ্চলা বর্ষা-বালিকা খেলে পূর্বাকাশে
মেঘের এলো কেশ ছড়িয়ে দেয় প্রতি নিঃশ্বাসে।
হৃদয়-মন হয় যে ব্যাকুল
অজানা রিরহ-বেদনায়--
ঘনবৃষ্টির রিম ঝিম বেজে
উঠে 'সবুজের' অঙ্গুলি হেলনায়।
ঝড়ের রাতে প্রেয়সীর অভিসার
মনের গহনে জাগে বার বার।
বরষা-কল্যাণী তুমি! তব পরশে ফসল ফলে,আবেগ ঝরে।
বনবীথি পায় প্রাণ তব বরে।
কলুষিত মন করো বিমল--
বিশ্বজগৎ ধুয়ে-মুছে করো তুমি অমল।
অমল কুমার মাজি
আসতে চাই
------অমল কুমার মাজি
কোনো একদিন নতুন সকালে
মাস্ক ছুঁড়ে ফেলে হাসতে চাই
আলো-ঝলমল সোনা-রোদ মেখে
খুশীর জোয়ারে ভাসতে চাই
আগের মত মুখোমুখি বসে
তোমাকেই ভালবাসতে চাই
সেদিনের মত ছুটির বিকেলে
তোমাদের বাড়ি আসতে চাই।।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
আজও স্মৃতির বীণা বাজে
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
ঠিক যেন প্রাণের টানে
প্রাণের পথে বেরিয়ে পড়া
সপ্তম আষাঢ়ের প্রভাতপথে।
সাথে দুই বোন আর
প্রাণের ছোঁয়া পাওয়ার আশা।
কবিগুরুর ঝিক্ ঝিক্ শব্দে,
বোলপুরের সাথে প্রথম যোগ।
টোটো হয়েছে আজ ক্লান্ত
যেন ভার বইতে অক্ষম।
বাতাসে শুধু বাড়ছে ঘনত্ব
রবি-শান্তির তৃপ্ত গন্ধ।
সুয্যি মামা স্বাগত জানালেন
তার উজ্জ্বল তপ্ত আলিঙ্গনে।
শ্যামলী-উদীচী-পুনশ্চ বেয়ে
দু'চোখ মেললাম উত্তরায়ণের অন্তঃপুরে।
সোনার ফসল দু'চোখে ভরে
ফিরে এলাম প্রকৃতির কোলে।
পৃথিবীমাতা কালো চুল ছেড়ে
জানান দিলেন মুচকি হেসে
বর্ষারাণীর আগমন বার্তা।
গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে
নেমে আসা টিপ্ টিপ্ ধারা
আজ অপরূপ সাজে সজ্জিত।
স্মৃতিপূর্ণ সোনারতরী নিয়ে
ফিরে আসা আমার মাঝে
আজও স্মৃতির বীণা বাজে।
রচনাকাল:- ১২/০৬/২০২১ ইং শনিবার
সনৎ কুমার কুন্ডু
শ্রাবণের কালোমেঘ
------সনৎ কুমার কুন্ডু
পুষ্ট দেহের পরিপক্ক আগুনে
ঝলসে গেল সারাটা মন
দিগন্ত থেকে ভেসে আসা গাংচিল
চোখেমুখে অশ্রু অসাধারণ ক্লান্তির ছাপ ।
বিদগ্ধ চেতনাগুলো
এতদিন বাসন্তী রং মেখেছিল
দীপ্ত আলোর সোহারায় উন্মাচিত হলো
তার অবগুন্ঠিত অবয়ব ।
বেরিয়ে আসা লুকায়িত রহস্যবৃত আগুন
নির্বাপিত হয়না,
শ্রাবন্তী বাসরে রিমঝিম শব্দ ও
অবিশ্রান্ত জেগে থাকা জোনাকীর আলোয়
পুষ্ট দেহের রংটা
সারাক্ষণ হৃদয়ে আলোড়িত হচ্ছে,
আমার নয়ন জুড়ে শুধু শ্রাবণের উদ্ভ্রান্ত মেঘ
বোধহয় আজ নির্বাপিত করবে মনের আগুন ।
রামপ্রসাদ কুন্ডু
বাদলের পরী
------রামপ্রসাদ কুন্ডু
আষাঢ়-শ্রাবণের হাতে রেখে হাত
বর্ষার প্লাবনে পথঘাট হয় চিৎপাত,
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর এই বর্ষায়
কৃষক ফলায় ফসল বর্ষার আশায়।
এ যে সেই আষাঢ়ে বর্ষা আঁখিতে অশ্রুধারা
শ্রাবনে উত্তাল নদী জলোচ্ছ্বাসে বুকে বুকে ভরা,
যেদিকে তাকাই শুধু কালো মেঘে ঢাকা
কবির কবিতায় যেন তাতে অনেক স্বপ্ন আঁকা ।
বর্ষায় থৈথৈ নদী-বিল-খাল
খাবার জোগাড়ে গরিব যেন হয়ে যায় বেসামাল,
কালি-মাখা মেঘে যেন আঁধার ঘনিয়ে আসে
রোদ-বৃষ্টির মিলনে প্রকৃতি মিটমিটিয়ে হাসে ।
''বাদলের পরী'' যেন এই দুমাস আষাঢ় শ্রাবণে
দিনে রাতে মন ভরে যায় কদম ফুলের ঘ্রানে,
প্রকৃতির নিয়মে থাকবো তোমারি অপেক্ষায়
উদাস মনে চেয়ে রব দিগন্তের ঐ সীমানায় ।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
পথশিশু
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
হে পথশিশু তুমি লুকিয়ে কোথায়?
তাকিয়ে দেখো নগ্ন রাজার উদ্দামতা,
প্রজারা সব বিকিয়েছে বুদ্ধি বিবেক
নগ্নতা দেখেও হাততালিতে জয়জয়কার।
শত অবিবেকের মাঝে আছ শুধু তুমি
সবুজ মনে অবুঝের স্বচ্ছতা নিয়ে।
সহস্র ভিড়ে নির্ভীক চিত্তে বলে যাও
রাজার লজ্জা ঢাকার কথা।
বর্ণা দাস
"জোর যার মুলুক তার"
-----বর্ণা দাস
পথের ধারে ক্ষুধার টানে ,
মরছে যারা রোজ।
বাঁচার লড়াই কঠিন ভীষণ,
ওদের কেউ রাখেনা খোঁজ।
স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত সবাই ,
কে রাখে কার খোঁজ ?
এই শহরে মানুষ আছে ,
শুধু মনুষ্যত্ব নিখোঁজ।
চাষার ঘরে ভাত নেই ,
শ্রমিকরা দিনরাত খেটে চলে।
পথ শিশুটা পথের ধারে,
কেঁদে ভাসায় চোখের জলে।
গুনে ধরা সমাজের চারপাশ,
নামডাকওয়ালা শিক্ষিতদের বাস।
হিংসার আগুনে দেশ পুড়ে ছাই,
পথে ঘাটে মাঠে কত জ্যান্ত লাস।
মিথ্যার কবলে সত্য নাজেহাল,
ছিনিয়ে নেওয়া হয় বাঁচার অধিকার।
মুখ ফুটে কিছু বলা বারণ,
এখানে জোর যার মুলুক তার।
আইনের চোখ সত্যি বাঁধা,
প্রতিবাদীরা শব্দ হারা ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলে,
ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় শিরদাঁড়া।
দেবাঞ্জনা সেন
ইচ্ছে শক্তি
-----দেবাঞ্জনা সেন
একদিন হারিয়ে যাব অন্যকোন দেশে
নীল আকাশ, সবুজ ঘাস
লালচে সূর্যের আলো,যেথায় গিয়ে মেশে
ফড়িং ও পাখি হয়ে আকাশে উড়ি
মনেহয় যেন নিজে একটি উন্মুক্ত ঘুড়ি।
ইচ্ছেগুলো জাগিয়ে রেখে, চলব সেই
ইচ্ছের হাতেই হাত রেখে
শুনেছি ,জীবনে নাকি
অসাধ্য বলে কিছুই নেই
তাই ভাবি, পথ চলে এবার
তাহলে দেখিয়ে দিই
অনেক তো হলো ঘরের কোনে থাকা
মেয়ে সেজে নিজেকে গুটিয়ে রাখা
এবার তো নিজেকে স্বাধীন করি
অনন্য করে নিজেকে তোলে ধরি
কথায় আছে, "আমরা নারী, আমরা সব পারি"
ভবছি এবার এই কথা শক্তির হাতটি ধরি।
কাজী নিনারা বেগম
যন্ত্র মানব
----- কাজী নিনারা বেগম
শুন্য হৃদয়ে সুপ্ত বীনা বেজে উঠলো নিগুঢ় নিশ্বাসে,
বীনা তারগুলোকে যেন নতুন স্পন্দন গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।।
জানিনা আজ মনটা বড়ই উচাটন,
কেন এক অসিম প্রশ্ন ?
গভীর রাত অজস্র তারা মিট মিট করে জ্বলছে।।
চাদেঁর আলোয় আলোকিত,
পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষ মুভি অথবা ফেইসবুকে ছোট স্ক্রিনে নিমগ্ন।।
কর্ম ক্লান্ত জীবনের চাপ!
ভোরে বাস আরোহণ জীবন যেনো ঘড়ির কাটার মতো একটি পড় একটি দিন চলে যাচ্ছে।।
বাসে আরোহণ করতে আমি যেন হচকিত!
গালে টোলপড়া মায়াবী এক ছিমছাম তরুণী যাত্রী দের ধাক্কায় এপাশে অপাশে যাচ্ছে,
আমি যেনো এক অনাবিল রোমান্সে মেতে উঠেছিলম।।
শিউরে উঠেছিল শরীরের অঙ্গ!
পাশে বসার অধিক আগ্রহ এই বঙ্গ ললনার ,
ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন থ্যাংকস!
আমার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অগ্রসর আমি গন্তব্যে যাওয়ার,
গাড়ি থামল মনের গহিন অন্তরালের এক ভালো বাসার পসরা।।
আমি এক হৃদহীন এক যন্ত্র মানব,
হৃদয়ে স্পন্দন মানে যানি না।।
সুপর্না কর
হতাম যদি
-------সুপর্না কর
হতাম যদি পাখি,
উড়ে যেতাম ঐ নীল আকাশে।
স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতাম
প্রকৃতির ঐ কোমল বাতাসে।।
কোকিলের ন্যায় মধুর সুরে
গেয়ে যেতাম প্রকৃতির গান।
সেই গানের ছন্দে মৃদু আনন্দে
তৃপ্তি হতো সকলের প্রাণ।।
হতাম যদি স্নিগ্ধ নদী
বয়ে যেতাম তরঙ্গের ন্যায়।
হিমালয়ের শুভ্রতায় মিলিত হতে,
করতাম না যে সময় ব্যয়।।
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে,
সত্যি যেন ক্লান্ত আজ।
মনুষ্যত্বের বিষাক্ত মায়াজালে
কলুষিত আজ গোটা সমাজ।।
তাপস দও
মুখোশের আড়ালে
------তাপস দও
খরস্রোতা নদী প্রবাহ বয়ে চলে এঁকে বেঁকে,
আপন গতিতে মিশে যায় সমুদ্রের বুকে।
বয়ে চলে কত নুঁড়ি কাঁকড়
কত শেকল ছেঁড়া জীবন।
হিসাব কেউ রাখে?
খোঁজ নিয়ে দেখো ....
অভিনয়ে নয় কত শত শৈবাল আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে।
পৃথিবীতে চলছে সভ্যতার এক নির্লজ্জ অভিনয়,
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা।
হারানো যৌবন ধরে রাখার এক মরিয়া প্রয়াস,
অহংকারের মোড়কে সাজিয়ে করেছো আড়াল।
জীমূতের সূর্য কিরণ রুদ্ধ করার ব্যার্থ প্রয়াস
আর থাকবে কত দিন.......
আত্মগ্লানির যন্ত্রনা নিয়ে,
এখন অন্য মুখোশের আদলে।
অভিজিৎ দাস
ঝরা পাতা
------অভিজিৎ দাস
আমি নির্জনে পথ চলি মেঠোপথে
দু-পাশে ছোট-বড়ো গাছ যত।
আমাকে দেখে,একা সেই পথে
পাখিদের ঝাক, কলরব করে কত!
আমি সহসা দাঁড়িয়ে দেখি
গাছেরা নিশ্চুপ,একটিও নড়েনা পাতা।
তারাও বুঝি, কাঁদে নিরবধি
গোপনে লুকিয়ে রেখেছে, দুঃখ কথা!
অতীতের কত, স্মৃতি রীতিমতো
ভেসে উঠে মননে সতত।
কত সুখ, হায়! স্মৃতি হয়ে যায়
ঠিক ঝরা পাতাদের মতো।
কত দুঃখ গত,স্মৃতি বিজরিত,
ঝরা পাতা সম কাঁদে মর্মর।
কত রূপকথা হল কবিতা,
যারা আপন তারা আজ পর।
টিটু বনিক
চোখ ভালোবাসার প্রথম স্তর
-------টিটু বনিক
তোমার চোখের মাঝে এক মায়া আছে,
যা দিয়ে একটা সূর্যকেও গ্রাস করা যায়,
যা দিয়ে অনায়াসে বশীভূত করা যায় ,
তুমি কী জানো ? এই চোখে প্রশান্তি আছে,
যা দেখলে হৃদয়ের উন্মাদ ঢেউও শান্ত হয়,
নদীর চলা বন্ধ করে দেয় আর চেয়ে থাকে,
ভুলে যায় মোহনার আসক্ত শুধু তুমি।
যা দেখলে পথিকও হারিয়ে ফেলে ঠিকানা,
ভুলে যায় জীবন কি মৃত্যু কি।
ভুলে যায় অতীত কি ভবিষ্যৎ কি।
ভুলে যায় দুঃখ কি সুখ কি।
থাকেনা কোনো বাস্তবতার সচেতনা,
যেন সবকিছু মায়া আর মায়া,
চোখ হেন এক বৃহৎ স্বস্তির ছায়া।
পূজা মজুমদার
নিদারুণ প্রেম
-----পূজা মজুমদার
কি নিদারুণ সত্যি! আমি তোমায় ভালোবেসে ছিলেম...
দিন মাস ঘন্টার হিসেব না রেখে!
কি নিদারুণ সত্যি -
কতো সহস্রবার তুমি খুন হয়েছো
আমার চোখ-ঠোট-নাকে - চিবুকে!
কি নিদারুণ সত্যি -
আমরা কখনো বদ্ধ হইনে জীবনে
কতো রোগ-শোক-তাপ
তবুও বড় সাধ স্বেচ্ছা মরণে!
সত্যি যে বড় নিদারুণ -
হাজার রাত অথবা সহস্রদিন
শেষে কালান্তরে যাত্রা!
এক নশ্বর শরীর ছেড়ে অশরীরী জগতে-
চিনি কি তোমায়?
চেনো কি আমায়??
আত্মা কি কাঁপে বাতাসে?
এ কি নিদারুণ সত্যি,
আমি জন্মান্তরবাদ ভুলেছি ভালোবেসে।।
শিবাশীষ মিত্র
অলৌকিক ভালোবাসা
------শিবাশীষ মিত্র
দুই মেরুতে দুটি মন এক অলৌকিক কর্ষণ।
দুই গোলার্ধে একই ঋতু শ্রাবন ধারার বর্ষন ।।
দুটি মনে জোয়ার শুধু ভাটার নেইকো স্হান ।
পূর্ণিমা হওক অমাবস্যা জোয়ারে ভাসে প্রান ।।
গ্রহণ?সেতো ভুলেই গেছি দু'হৃদয়ে সদালোক।
ভালোবাসায় মন গহীনে আঁকি নতুন ভূলোক।।
এক অলৌকিক ভালোবাসা ধরা ছোঁয়ার আড়ে।
স্বপ্নের সোনা রূপার কাঠি প্রান শিয়রে নাড়ে।।
বুকের বাঁদিক হয়না শুন্য সদাই ভরা প্রেমে।
সুখে দুঃখে রাখি বেঁধে মনিকোঠায় টেনে।।
আঁধার যখন আসে তেড়ে কালবৈশাখী রাতে,
মনপ্রদীপটা আগলে রাখি দোহে চারি হাতে।।
দুরত্বটা মন এককে হয়নি নাপা আদৌ।
সুখে দুঃখে একই আছি শ্রাবন কিংবা ভাদৌ।।
দুটি খাঁচা এক আত্মা এক সমুদ্র প্রেম।
মনকাঁচেতে বাঁধানো তবু অটুট এই ফ্রেম।।
দিলারা বেগম
জলের বসন্ত
-----দিলারা বেগম
হাজার বছর ধরে নির্ঘুম রাতের আঁধারে
ফালি চাঁদ জেগে উঠে সঁপে দেয় অন্ধকারে,
জল বসন্ত চলে যায় নদীও মরে যায়
কত দুঃখ রয়ে যায় ভাঙ্গা নদীর বুকে
নিজেকে মানিয়ে নেয় নদী নিজের বিরুদ্ধে।
শব্দহীন পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে
সর্বস্ব হারায় নদী কিসের বিহনে?
দ্বিচারিণী নাম তার স্বভাবজাত দোষে
সভ্যতা মানেনা সে নব্যতার খোঁজে।
অদৃষ্টের সীমানার থাকেনা নির্দিষ্ট সীমারেখা
পাহাড় ভুলে যায় তার বিশালত্বের কথা,
ডেকে বলে ঝর্ণাকে বাঁচাও নদীকে
প্রকৃতি একে অন্যের জন্যই বেঁচে থাকে।
নদী যখন মরে যায় ঝর্ণার অবহেলায়
পাহাড় ফেলে দীর্ঘশ্বাস অজানা আশঙ্কায়,
ঝর্ণা জল ঢালে নদীর তপ্ত বুকে
নদী মিটিমিটি চোখ মেলে আনন্দে হেসেখেলে,
ক'জনায় পারে হাসিমুখে শত্রুকে বাঁচাতে?
প্রকৃতির ধর্ম দেখে নষ্ট চেতনারা জেগে উঠে
সর্ব সুখ বুঝি নিজেকে সপে দেওয়ার মাঝে,
বিবেক শিক্ষা নেয় মহানুভব প্রকৃতির কাছে।
মনচলি চক্রবর্তী
অট্টালিকায় নেই প্রাণ
------মনচলি চক্রবর্তী
অট্টালিকার সৌন্দর্যের মাঝে
ছোট্ট নদী
নদীতে শুধুই পাথর আর
নুড়ি
রয়েছে সেজেগুজে
ছোট্ট ছোট্ট ঘর
আছে ঘরে কৃত্রিম
জলসাগর
কোন ঘরে সবুজ পাহাড়,গাছ,
আর মনুষ্য সৃষ্ট ঘাস
ঘরের মাঝের ছোট্ট কাচের পুকুরে
লাল নীল হলুদ মাছেরা খেলা করে
কৃত্রিম আলোকে জ্বলে উঠে
বাতি রাশি রাশি
নেই ঘরে চাঁদের
উজ্জ্বল হাসি
রাতে ঘরে নেমে আসে
গভীর আঁধার
অট্টালিকার সুসজ্জিত ঘরে
থেকেও নেই প্রকৃত আলোর ঝার
মনুষ্য জীবন অট্টালিকায়
হাঁপিয়ে উঠে, চায় ত্রাণ
পায়না সাজানো জীবনের মাঝে ওরা
সবুজ প্রকৃতি আর প্রাণ।
ভবানী বিশ্বাস
প্রকৃতি মা আমার
------ভবানী বিশ্বাস।
মাগো,, দীর্ঘদিন হলো তোমার সাথে
দেখা হয় না সেরকমভাবে।
আজ প্রকৃতি মেঘমেদুর বর্ষায় সমাদৃত।
চারিদিকে মিষ্টি পাখির কূজন, সবুজের সমারোহ, তুমি নবসাজে সেজেছো।
তবুও দেখছি মনটা তোমার ভারাক্রান্ত গো..
হবে নাই বা কেন!
কত না অত্যাচার করেছি তোমার উপর,
কলুষিত করেছি তোমায়।
আগুন জ্বালিয়েছি তোমার ফুসফুসে,
রক্তাক্ত করেছি তোমার হৃদয়।
তাই বুঝি এতো রাগ আমাদের উপর,
রুদ্রানী রুপ করলে তুমি ধারন!
মাগো,, এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।
কথা দিচ্ছি, তোমার জন্য সময় বের করবো।
শুনেছি,, মা মমতাময়ী!
একটিবার সুযোগ দাও তোমার অবাধ্য সন্তানদের।
শুধু একটিবার....
নাফিসা খান
সুর
------নাফিসা খান
পলাশের ওপারে দাঁড়িয়ে ভিজছে আমার বৃষ্টি
তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে,
আবির তরঙ্গ বাঁধ ভেঙ্গেছে,মনের গায়ে মন লেগেছে,
ভিজছে আকাশ,ভিজছে নদী, ভিজছে স্রোত ,
ভিজছে আমার নোঙর খানি কৌমুদী বাহারে....
দু,চোখের নক্ষত্রে বেঁধেছে কুঠি গানের খেয়ালে,
তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে,
আমি বৃষ্টিভেজা সকালখানি রেখেছি তোমার গানের ওপারে...
ভিজছে সকাল,ভিজছে বৃষ্টি,ভিজছে রাগ
ভিজছে নদীর অঙ্গখানি মেহুল বনের আঁচর বেয়ে..
আমার একতারা আজ মোহেরতালে ,সুরের মালায়
সুর গেঁথেছে,
গাইছে আমার ভুবনখানি তোমার ভূয়ের সংসর্গে
ভিজছে সুর,ভিজছে গান,ভিজছে মন,ভিজছে আমার বৈশাখী তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে.....
রূপন মজুমদার
শূন্য
-----রূপন মজুমদার
উনুনে জ্বলছে জীবনের খতিয়ান
শতাব্দীর সুখ দুঃখরা ফুটছে,
ভাতের হাঁড়িতে।।
অধিজাতিক নিশানা ধরে
ধোঁয়ার মিছিল এগিয়ে যায়।
মানুষের মতো।
কফিনে পেরেক মারা শবদেহ কাঁধে
অন্তহীন শূন্যে।।
রাজীব বসাক
এসো নবীন
------রাজীব বসাক
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
দল বেঁধে আজ ছুটে আয়,
পাহাড় সমান বাঁধাগুলি,
নবীন তেজে গুড়িয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা ,
দলে দলে ছুটে আয় ,
মানবতার হিংসাগুলি,
চোখের চাওয়ায় ভুলিয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
প্রাণখুলে আজ ছুটে আয়,
জাতির শত্রু সন্ত্রাস আক্রমণ,
পায়ের তলায় পিষিয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে ছুটে আয়,
দেশের ভার কাঁধে তুলে ,
ভবিষ্যতের খুলরে দ্বার ।।
মাথা কভু করিসনে নত ,
আসুক ফিরে ঝড় তুফান যত ,
নবীন আলোয় ঝলসিয়ে ক্ষত ,
বিজয় রথের গড়বি নতুন পথ ,
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা ,
দল বেঁধে আজ ছুটে আয় ।।
সেখ মনিরুদ্দিন
বৃষ্টি এলো
-----সেখ মনিরুদ্দিন
আকাশ কাঁদিয়ে বৃষ্টি এলে
জানিনা তোমার ফন্দি,
ভিজিয়ে আমায় হলে যে তুমি
চোখ ক্যামেরায় বন্দি।
মন খারাপের ক্যানভাসে বুঝি
মেলেছো তোমার সীমানা,
ঝর ঝর করে মনেতে ঝরিয়ে
খুঁজছো নিজের ঠিকানা।
তোমার ছোঁয়ায় গাছেরা পেলো
সবুজ সতেজ জীবন,
নদীর জলে এনে দিলে ঢেউ
দুকূল ভরে প্লাবন।
বাতাস হয়েছে পাগল পারা
মাটি পেয়েছে প্রাণ,
সোঁদা গন্ধে মাতাল করে
অদ্ভুত এক ঘ্রাণ।
পৃথিবী বাঁচার রসদ পেয়েছে
কেবল তোমার জন্য,
তোমার তুমিতে অপরূপ হয়ে
করলে সবকে ধন্য।
সায়ন পাল
একলা চলো
-----সায়ন পাল
গিয়েছিলাম তোমার বাড়ি পূর্ণ হৃদয়
মন যেন চড়ুই পাখি চির সুখময়।
গিয়ে দেখি দ্বারে তালা, প্রবেশ আমি করতে নারি
ধোঁয়ায় করে চক্ষু জ্বালা এই যেন পরিত্যক্ত বাড়ি।
গিয়েছিলাম পুকুরঘাটে যেথায় করে স্নান শিশুরা,
মাছরাঙ্গা মাছ ধরল, বোয়াল কই এ পুকুর ভরা।
বেলা হল শেষ ছেলে সব ঘরে ফিরলো,
মাছরাঙ্গা উড়ে গেল, বোয়াল কই ও ডুব মারলো।
গিয়েছিলাম পুজো প্রাঙ্গণে ঢাকের তালে নাচে মন,
হই হই আর পুজোর গন্ধ আলোড়িত পূজা প্রাঙ্গন।
গিয়ে দেখলাম হঠাৎ বৃষ্টি, তুফান যেন নামিল,
পুজো হল সাঙ্গ, স্বার্থে মানুষ সব ঘরে ফিরলো।
গিয়েছিলাম মহা অরণ্যে, যেথায় কোকিল ডাকে,
কুহু কুহু কলরবে অরণ্য ভরে থাকে।
গিয়ে দেখি নীরবতা নাইগো কুহু ডাক,
ক্লান্ত হল কোকিল পাখি, প্রচন্ড অবাক!!
ফিরে আসলাম মোর কুটির ঘরে, ডাকি মা মাগো
কুটীরের ধারে ছোট্ট তালা, প্রাণে তো আর সয়না গো।
এমনই এক অট্টহাসিতে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো
বলছে এইতো জীবন, কেহ না করলে তুমি একলা করো গমন।।
গোপাল বনিক
পরিচয়
-----গোপাল বনিক
সবাই যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ,
আমি দেখি তোমার চোখে মৃত্যুমাখা শোক।
কত লোকে কত ভাবে দেয় পরিচয়,
বিপন্ন বিব্রত মুখে তোমার শুধু অশ্রুধারা বয়।
কত আশায় বুক বেঁধে হলে আনমনা,
ঘাত -প্রতিঘাতে সবই যে আজ বিষাদ বেদনা।
তবুও যদি খুঁজি জীবন-তরুর কিশলয়,
সেইদিন যেন পাই হে তোমার সত্য পরিচয়।।
ইএইচপি রূপক পোদ্দার
ভাবনা
------ইএইচপি রূপক পোদ্দার
বন্ধু তুমি
ছেড়ে গেছো বলে আজ
আমার ছন্দ হারালো জীবন।
এই কতটা ক্ষন,
না পেয়ে তোমায় আজ
ছন্ন ছাড়া ছিলো এ'মন।।
দেবী ছাড়া আমার এই
মোর দেবালয়
শূণ্য ক্ষুন্ন পরে রয়।
দেবীর আসনে আর
রবে না তুমি যদি
ভাবতেই মনের মাঝে কেমন যেন ভয় হয়।।
কলি গুলি কি আর
ফুল হবেনা, ফুঁটে
যদি না লাগে তব পূজায়।
বন্ধু তুমি
নিত্য সেবায় থেকো,
পূর্নতা পাবে মোর দেবালয়।।
তৃপ্ত পরাণ
নব সাঁঝে মোর
উৎসব রসে ভরপুর তব মোর মন।
পুস্প ঝরা আজ
শীতল সন্ধ্যায়
উচ্ছ্বাস আনলো তব আগমন।।
পাখী জোড়া বয়
মিলনের গান গেয়ে
ফিরেছে যে যার ঘরে।
চাঁপার মালা
পরাবো তোমায়
উদ্দেলিত পরান,বন্ধু ওরে।।
শুভ্র মেঘের
নিঠুর বেলায়
এ'মন খুঁজেছে তোমায় বহু গুনচে প্রহর।
প্রসাদ সম মোর
এলে বন্ধু তুমি আজ
দখিন হাওয়ায় পূন্য হলো আজ এ'শহর।।
পবিন্দ্র দেবনাথ
চলার পথে , চেয়েছিলাম হতে , সকলের কাছে ভালো ।
দুষ্ট লোকের চক্রান্তে আজ হতাশ হতে হলো।।
একশোতে নিরানব্বই যদি আমায় ভালোবাসে ।
একশোতে এক তো বন্ধু , মরবে যে ঈর্ষাতে ।।
সকলের ভালোবাসায় বন্ধু , হতে চাই যে বড়ো ।
পিছন দিকে টেনে ধরলেও আটকাতে পারবে ? বলো--
হাজারো হাজারো মানুষের হৃদয়ে যদি নিতে পারি ঠাঁই।
দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্রে আমার কী আর হবে ভাই।।
উপকৃত শত জনে বেইমান দুয়েক জন ।
ভুল বুঝে তাদেরও তো করেছিলাম প্রিয়জন।।
অতি প্রিয়জনেই বন্ধু করে সর্বনাশ।
দুঃখ- ক্লেশ তবু না করি, না করি অভিলাষ।।
পরম কল্যাণময়ের কাছে করি গো প্রার্থনা।
কুমতিকে মতি দাও , করো প্রভু মার্জনা।।