সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

অমলেন্দু চৌধুরী


 হে বন্ধু 


      -----অমলেন্দু চৌধুরী


 হে মানব, 

উঠো জাগো করো নাকো ভয়, 

তোমা ধনে তুমি ধনী, 

করো দারিদ্রতা জয়। 

জাগো জাগো, বিকশিত হও 

এই জ্ঞানের পাড়ে, 

যতো খেদ অভাব, বিসর্জন করো 

অজ্ঞানের সরোবরে। 

বৃথা ভয়, সকল হবে ক্ষয় যতো 

যতো বলুক লোকে, 

নিন্দুকের পাল্লা ভারী, 

বলে বলুক লোকে নিন্দুকে। 

ঈর্ষা কিছু আসে আসুক, 

করো না তুমি ভয়, 

কর্তব্যের পথে চলো,


হবে হবে জয় নিশ্চয়। 

দেহ আছে মৃত্যু আছে, 

আছে জগত খেলা, 

জাদুকর জাদু করে করে, 

এ ভূবন মেলা।


নদী হয়ে মিলে যাও, 

যাও তোমার মন্থন সাগরে, 

তুমিই অশান্ত তুমিই প্রশান্ত, 

নীলাচল লীলা করে। 

ত্যাগ দাও সেবা দাও, 

হও হও তুমি নিৰ্ভীক,

তুমিই এ সকল সকল, 

জগত তোমাতে শিক্ষা নিক।

নিরঞ্জন দাস


 বৃষ্টি কাব্য


     ----নিরঞ্জন দাস


চলন্ত ট্রেনের কামড়ায় পাহাড় দর্শন। 

নীচে রূপালী নদী। 

আকাশে মেঘের হাতছানি, 

বৃষ্টি হয়ে ঝরবে সহসা। 

তপ্ত হৃদয়ে কিছুটা স্বস্তি। 

এসো বৃষ্টি অঝোর ধারায়। 

বৃষ্টিস্নাত করো মন। 

মনে পড়ে পরিযায়ী হৃদয়ে, 

ভালবাসার বাইশে জুন।

কবিতা সরকার


 বৈতরনী

                 -----কবিতা সরকার


বইছে জীবন ভিন্ন খাতে

অচেনা কোন ভৈরবীতে। 

দিচ্ছে পাড়ি শূন্য হাতে 

না জানি কোন গন্তব্যতে। 

চলছে প্রয়াস গড়ার সাথে 

আপন হাতে জগন্নাথে, 

মেলে না হিসেব সাঁঝবেলাতে

বিজ্ঞ ছাড়া সেই হাতে।

মনের মাঝে স্বপ্নগুলো 

ভাঙছে যখন জলের স্রোতে, 

জানি সে আবার ফিরবে ঘরে

গহন পাথরে ধাক্কা খেয়ে।

রাজেশ ভট্টাচার্য্য


 শ্রীর আতঙ্ক


          ------রাজেশ ভট্টাচার্য্য


স্টেশনে হঠাৎ দেখা। 

সমান্তরাল পাতা ইস্পাত চকচক রেলের উপর

চলন্ত কামরায় আছি 

শ্রীময়ীর সাথে। 


জানতাম না সুন্দরী এখন মায়ের ভাষাতেই 

স্নাতকোত্তর হচ্ছে। 

কথায় কথায় জীবনানন্দের রূপসী বাংলার 

বর্ষাকে সুন্দরী বলায় তার অভিমানী জিজ্ঞাসা : 

বাস্তবিকই কি বর্ষা সুন্দরী?


অস্বীকারের উচ্চারণ ফুটলো না আমার। 

চমকে বিদ্যুৎ চোখ বুঝতেই

নিষিদ্ধ অন্ধকারে চলে রাত্রি যাপন, 

আতঙ্কিত শ্রী। 

বর্ষার আরো এক রূপ

আমার পাশাপাশি আসনে । 


শ্রী রূপের আরেক অবগাহন ।





রচনাকাল:- ২৯/০৫/২০২৩ ইং সোমবার

শান্তনু মজুমদার


 দেজা ভ্যু


             --------শান্তনু মজুমদার


      শ্বেতা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।

অনিরুদ্ধ কিছুক্ষন বাইরে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করে গাড়িতে এসে বসলো। আসলে সিগারেট খাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সাহস করে নি আর।


 শ্বেতা - আর কোনোদিন শাড়ি কেনার সময় তোমাকে অন্তত সাথে আনবো না অনি। এক ঘণ্টা দোকানে থেকেও তোমার জন্যে আজ আমার কাপড় কেনা হল না।

অনি - তুমি ভুল বলছ। এর আগে কি আমরা কখনো এক সাথে কাপড় কেনাকাটা করি নি ? আজ তোমার দোকান সিলেক্সান ভুল ছিল। আর শাড়ি যাই দেখছিলে, সব ডিজাইন অলরেডি তোমার আছে। আমি বলছি, তুমি বাড়ি গিয়ে মিলিয়ে নিও।


অনিরুদ্ধর গাড়ী চালাতে চালাতে কথা বলার ফাঁকে বার বার মনে হচ্ছিল যে এই একই বিষয় নিয়ে গাড়িতে বসেই শ্বেতার সাথে এর আগেও কোন এক দিন তার ঝগড়া হয়েছিল।


আজ পুরো শহর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে রইল। লোকাল থানার অন্য পুলিশ কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা গেল। শহরের নিউজ চ্যানেল গুলোর আজকের ব্রেকিং নিউজ এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মা।

বিকেল পাঁচটায় পুলিশ কমিশনারের রুমে অনিরুদ্ধকে হাজির হতে হল সাস্পেন্শনের ভয় মাথায় নিয়ে।


কমিশনার - ঠিক কি হয়েছিল আমাকে একটু খুলে বলো তো। তোমাকে সাসপেন্ড করা ছাড়া আর তো কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না মিডিয়াকে শান্ত করার জন্যে। উপর মহল থেকেও চাপ আসছে আমার উপর।

অনিরুদ্ধ - স্যার আমার ভুল হলে অবশ্যই আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু সাংবাদিক আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে আগে আমি অন্য কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করেছি। তাই আজ ওই মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে এরেষ্ট করি। তর্ক করছিল, তাই গায়ে হাত তুলি।

কমিশনার - কোথায় সেই সাংবাদিকের নামে তো কোথাও কোন পুলিশ রেকর্ড নেই। আর সে মাত্র এক মাস হয়েছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় এসেছে সাংবাদিকতা করতে।

অনিরুদ্ধ - সেটাই স্যার আমি ভাবছি। আমি নিজেই কেলকুলেশন মেলাতে পারছি না। বোধহয় আমার কোথাও কোন ভুল হয়েছে।

কমিশনার - দেখো অনিরুদ্ধ, তুমি আমার ছেলের বয়সি। তোমার আগের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। খুব সামনেই তোমার প্রমোশন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার কিছুদিনের রেস্ট প্রয়োজন। তুমি আজই এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দাও। সাংবাদিক হেনস্থার ব্যাপারটা আমি সব সামলে নেবো।

অনিরুদ্ধ - ধন্যবাদ স্যার।


মিডিয়া যেমন কাউকে লোকের কাছে মহান হিসেবে তুলে ধরতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন কাউকে সমাজের কাছে নামিয়ে দিতেও দু-দিন সময় লাগে না। অনিরুদ্ধর ঘনিষ্টজনরাই যেন তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে এই খারাপ সময়ে শ্বেতা নিজের অনির হাত ধরে আছে, তা যতই সাংসারিক খুঁটিনাটি ঝগড়া থাকুক।

শ্বেতা অনেকদিন ধরেই তার প্রাণপ্রিয় মানুষটির কিছু ব্যাপার লক্ষ করছে আর আজ অনিকে একটু আদর যত্ন করে বুঝিয়ে বলায় অনিও সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে রাজি হয়। নিজেদের গাড়ী করেই রয়ানা হয়।


পুলিশ কোয়ার্টার থেকে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত যাবার রাস্তায় ইকো পার্ক আর স্টেডিয়ামের মাঝের রাস্তাটা বেশ নীরব আর ফাঁকা থাকে দুপুরের দিকে। সেই জায়গাটায় গাড়ী আসতেই সামনের চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। কিন্তু অনি গাড়িতে স্টেপনি থাকা সত্ত্বেও গাড়ী থেকে নামে না বেশ কয়েক মিনিট গড়িয়ে গেলেও। শ্বেতা বিরক্ত হয়ে গাড়ী থেকে নামতে চায়। কিন্তু অনি নিষেধ করে। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দে গাড়িতে একটা গুলি এসে লাগে। অনিরুদ্ধ শ্বেতাকে নিয়ে সিটের নিচে ঝুঁকে পরে। ঠিক পর মুহূর্তেই আরো কয়েকটা গুলি এসে লাগে। অনি শ্বেতাকে থানায় ফোন করতে নির্দেশ দেয়। ছুটিতে থাকায় নিজের সার্ভিস রিভলভার সাথে না থাকলেও নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল সাথেই ছিল। তা দিয়েই সে অনুমান করে দুটো গুলি ছুরে। অন্তত সে যে সসস্ত্র অবস্থায় আছে এবং লড়াইটা এত সোঝা নয় সেটা জানান দিতে এবং তাতে কাজও হয়। ইতস্তত আরো কয়েকটা গুলি গাড়িতে এসে লাগলেও গাড়ির সামনে কেউ আসে নি। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় লোকেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরে। গাড়ির আশপাশে প্রচুর বুট পিন পাওয়া যায়। অনিরুদ্ধ গাড়ী থেকে বেরোলে নির্ঘাত মৃত্য ছিল।




আর ডাক্তারের ওখানে যাওয়া হয় নি। বিভিন্ন খুফিয়া সোর্স কে কাজে লাগিয়ে রাতেই দুজন অপরাধীকে বন্দুক সহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যারা অনেকদিন ধরেই এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মাকে প্রাণে মারার সুযোগে ছিল। পরের দিনের প্রভাতী পত্রিকায় সাহসী পুলিশ অফিসারের ছবি। মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত তার কুশল জানতে ফোন করেছেন।

আর দুদিনের মধ্যেই অনিরুদ্ধর ছুটি শেষ হচ্ছে। শ্বেতা অনিকে জিজ্ঞেস করেছিল গাড়ী থেকে সে নামে নি কেন। উত্তরে অনি শুধু বলেছিল, যে ঘটনা টা ঘটেছে সেই ঘটনার সাথে সে পূর্ব পরিচিত। শ্বেতা আর কিছু বলে নি অনিকে। আর দ্বিতীয় বার ডাক্তারের কাছে যেতেও জিধ করে নি। শুধু ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বলে, ঠাকুর তুমি যা কর ভালোর জন্যেই কর।

হেমন্ত দেবনাথ


 বেড়িয়ে পড়লাম সবুজের নেশায়


                               ------ হেমন্ত দেবনাথ


"বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে 

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা- 

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। 

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ............


     সত্যিই তো, প্রকৃতির বহি:সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টিতে পড়ে, কিন্তু তার অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে ক'জন ? একমাত্র সুন্দরের পূজারীরাই এর অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন । তার জন্যে হৃদয় লাগে, লাগে অনুভূতি । প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমিয়তা ও কর্মব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি লাভের জন্যেই তো মানুষ সুযোগ পেলেই ছুটে চলে যেতে যায় প্রকৃতির বুকে, নীলাকাশের তলে। সবুজ বনানী, সমুদ্র, মন্দির, গাছগাছালির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সে লাভ করতে চায় মনের অনুপম প্রশান্তি। গত 12/04/2023 ইং তারিখ সকাল 9.35 মিনিট ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি পরিবারের (আমি ও আমাদের পরিবার, ছোড়দা ও তাদের পরিবার, অনুজ-প্রতিম বাপ্পী ও তাদের পরিবার) ছোটো-বড়ো মোট 11 জন সদস্যবিশিষ্ট একটি “ভ্রমণ টীম" হিসেবে বেড়িয়ে পড়েছিলাম ।

       ধর্মনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপগামী ট্রেন AGTL KAA, SPL Sleeper এ করে আমরা আমাদের ব্যাগ, লাগিজ সবকিছু নিয়েই চেপে বসি। ট্রেন ছাড়লো সকাল 10.03 মিনিটে । দেখতে দেখতে অনেক জলাশয়, জনপদ, বৃক্ষরাজিসহ প্রায় 1340 কিমি পথ পেরিয়ে পরের দিন 13/04/2023 তারিখে বেলা 12.20 মিনিটে আমরা নবদ্বীপ রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছলাম । ছোড়দা স্টেশনে নামতেই জলের বোতল, কিছু টিফিন, শশা, ডাবের জল ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করলেন। কিছুক্ষণ পর আমরা নবদ্বীপ গঙ্গা নদী (এখানকার হুগলী নদী)-র লঞ্চের ফেরী ঘাটে এসে লঞ্চের টিকেট কেটে আমরা সবাই লঞ্চে চড়ে বসলাম । আমাদের এবারকার যাত্রাস্থল হল নবদ্বীপের শ্রীধাম মায়াপুর ।

       মায়াপুরে পৌঁছে এখানকার “গীতা ভবন” নামক পান্থনিবাসে আমরা সবাই তিনটি রুম ভাড়া নিলাম । যথাসময়ে স্নানাদি সেরে দুপুরে “প্রসাদের কুপন কেটে আমরা "অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করলাম। জার্নিতে শরীরের উপর অনেক দখল যাওয়াতে সবাই বিশ্রাম নিতে গেলাম । মায়াপুরে আমরা 13/04/2023 ইং থেকে 15/04/2023 ইং পর্যন্ত এই তিনদিন অবস্থান করেছিলাম ।

       মায়াপুর হল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার অন্তর্গত নবদ্বীপ ব্লক এলাকার আওতাধীন একটি স্থান । আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কৃষ্ণমন্দির । (উচ্চতা প্রায় 350 )। ISKCON-এর সদর দপ্তর হল এখানকার “চন্দ্রোদয় মন্দির”। মায়াপুরে আছে পুষ্পোদ্যান, সুরম্য পার্ক, ভজনালয়, প্রসাদ ভবন, শ্রীল প্রভুপাদের পুষ্পসমাধি মন্দির, গীতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্রহ্মজিজ্ঞাসা কেন্দ্র, শাস্ত্রোধ্যাপনা কেন্দ্র, গোশালা, বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই দর্শনীয় স্থান । এখানে একটি নির্মীয়মাণ মন্দির আছে, মূল রাধা-গোবিন্দের মন্দির হিসেবেই এটি চিহ্নিত হবে । আগামী 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তা-ব্যক্তি কর্তৃক মন্দিরটির দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে বলেই শোনা গেছে।

      মায়াপুরে পদ্মভবন, ভষ্মীভবন, চৈতন্যভবন, অশ্বভবন, গদাভবন, গীতাভবন ইত্যাদি নানা নামের ভবন আছে । এদের কোনো কোনোটি পান্থনিবাস, আবার কোনোটি প্রসাদভবন । ব্রহ্মমূহুর্তে পঞ্চপ্রভু ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরে কীর্তন হয়, প্রার্থনা হয়ে থাকে । আবার প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলায় ঐ মন্দিরগুলোতে আরতি, কীর্তন ও প্রার্থনা করা হয় । এতে সবাই পবিত্র মনে যোগ দিতে পারেন। রাত 8 থেকে 8.30 মিনিট পর্যন্ত এবং রাত 8.30 মিনিট থেকে 9.30 মিনিট পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণ করা হয় । মায়াপুরের পরিবেশ খুবই পরিচ্ছন্ন, মনোমুগ্ধকর ।


ক্রমশ চলবে....... 

শান্তশ্রী মজুমদার


গ্রীষ্মের মেঘ 

        

          ----শান্তশ্রী মজুমদার


       গ্রীষ্ম কে ভালোবাসে এমন লোক কি সত্যি কেউ আছে! আমি খোঁজ পাইনি তার। গা জ্বালা করা রোদ, অসহ্য গরম, তৃষ্ণার্থ গাছপালা,শুকনো মনু নদী -----আমার মনের নদীতেও বালির চর ফেলে দিয়েছে। 

       গ্রীষ্মের কোনো ভালো গুন আছে কি না তা নিয়ে আজ ভাবতে বসেছি। রসালো আম, মিষ্টি লিচু, আর পাকা কাঁঠাল ছাড়া গরম কালের কোনো অবদান আমি খুঁজে পাই নি। 


       অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা ---এতোটুকু বৃষ্টির! রিমঝিম সুরে ঝরে পড়ুক আমার গাছেদের শরীরে। সবুজ সবুজ পাতাগুলো সিক্ত হোক মেঘ গলা জলে। হিমেল মেঘকে স্পর্শ করেছিলাম হিমালয়ে। মেঘের সাথী হয়ে বহুবার উড়ে বেরিয়েছি নীল আকাশে। 


        মেঘের যে কতো রূপ! সাদা তুলোর মতো মেঘ, পাখির পালকের মতো মেঘ,মুক্তোর মতো মেঘ। সূর্য রশ্মির আলোয় কখনো মেঘ স্বর্ণালি, কখনো রক্তিম। 


      মেঘ গলে গলে যখন বৃষ্টি নেমে আসে আমার বাগানে তখন তাকে স্পর্শ করে আনন্দ নিলাম দেহে মনে। 

      বহু বহু দূর থেকে মেঘ এসেছে আজ আমার সাথে গল্প করতে। 


      বৈশাখের শুরু থেকেই আকাশ মেঘলা হয় রোদ লুকিয়ে পরে মেঘের আড়ালে। কিন্তু পরক্ষণেই গণগণে সূর্য মেঘ সরিয়ে হাজির হয় মাটির প্রাণ শুষে নিতে।


      আমাদের জনপদে প্রতিটি ঋতুই আসে তার নিজস্বতায়। বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্যমাসে তীব্র দহন তো থাকবেই। 

     কাল বৈশাখীর রুদ্ররূপ, ঘন কালো জটাজাল উড়িয়ে উন্মত্ত নৃত্য শুরু হলে মনে পড়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথকেই ----আনো আনো 

আনো তব প্রলয়েরও শাঁখ 

মায়ার কুঞ্ঝটিকা যাক্ দূরে। 


     মেঘ আর বৃষ্টিকে ছুলে মনে হয় মায়ের স্পর্শ। মা যেন অন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতার আলো।আমি মেয়ের মা, গাছেদের মা, পথে ঘুরে বেড়ানো গরুদের মা,বৃষ্টি ভেজা অনাথ বেড়াল ছানাদের মা, বারান্দার কোনে যে কুনো ব্যাঙটা থাকে তারও মা। অদ্ভুদ একটা মাতৃভাব মনকে স্বর্গীয় আনন্দে ভরিয়ে তোলে। 


       রিমঝিম বৃষ্টি পড়ুক সবুজ সবুজ পাতার গায়ে। হাওয়ার দোলায় ঝিরিঝিরি পাতাগুলোর সাথে আমিও গাই ---


যুঁথি বনে ঐ হাওয়া 

করে শুধু আসা যাওয়া 

হায় হায় রে, দিন যায় রে 

ঘরে হা হা করে গো মন।
 

সুব্রত রায়


 ভারসাম্য


     ----- সুব্রত রায়



        হরের ভেতর যেন এক টুকরো গ্রাম। গ্রামে নদী থাকে, শহরে নদী থাকতে পারে। যদি না থাকে তবে খাল নদীর অভাব পূরণ করতে চায়।

        শহর গ্রামের মতো ততটা উদার নয়। খালের ধারে ঘর বসানো অবৈধ। পুর পরিষদের লোকজন এসে ভেঙে দেয় বিনা নোটিশে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে একটা ঝুপড়ি টিকে গেছে। সবাই জানে এটা বেড়ালবুড়ির ঝুপড়ি। হ্যাঁ,বেড়াল ছাড়া বেড়ালবুড়ির কেউ নেই।

       শহরের যত নোংরা, বয়ে নিয়ে যায় খালের জল। একেবারে ধার ঘেঁষে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে বুড়ির অস্থায়ী চালাঘর। হরেক রঙের পলিথিনের টুকরো চাল থেকে বেড়ার গায়ে ঝুলছে । সব মিলিয়ে ঝুপড়ির আকৃতি তাই অনির্দিষ্ট। 

         সকালে বেরিয়ে যায় বেড়ালবুড়ি । শহরের ঘরে ঘরে ভিক্ষে করে সারাদিন। না, একটু চাল ছাড়া আর কিছুই নেয় না সে। ঘরে ফেরার পথে বাজারটা ঘুরে আসে শেষদিকে। সেখান থেকে সংগ্রহ শুধু শুকনো মাছ ।দোকানিদের জানা আছে। ওরা বেড়ালবুড়ির জন্য ফেলে দেওয়ার মতো শুকনো মাছগুলো রেখে দেয়।

          সংখ্যাটা ঠিক কত, বুড়ি নিজেও বলতে পারবে না। রান্না করে খেতে দিলে মনেহয় বেড়ালের বুঝি মেলা বসেছে।

         এখন আসল কথাটা বলি ।অনেক আগেই ভিটেছাড়া করার কথা ছিল বেড়ালবুড়িকে ।একদিন কাউন্সিলর এসে দেখলেন, এ তো কোনো বাড়ি নয় বরং বেড়ালের অনাথ আশ্রম। বুড়ির সঙ্গে কথা হল। কাউন্সিলার বাবুর বিশাল চালের গুদাম। ইঁদুরের উৎপাতে তিনি ব্যতিব্যস্ত। সব শুনে দুটো শিকারি মেনি পাঠিয়ে দিল বেড়ালবুড়ি ।সেই থেকে বুড়ি ওখানেই আছে। কেউ কিছু বলে না আর।

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

মলাট


 

সম্পাদকীয়

     কটি ভালো বই  সত্যিকারের ভালো বন্ধু। একটি ভালো বই একজন মূর্খ অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্বরকেও একজন আদর্শ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে। আজকাল  লেখক -কবির সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে কিন্তু  পাঠকের সংখ্যা কমছে দিন দিন। বই মেলাতেও পাঠক এবং ক্রেতা আজ সংখ্যালঘু। ছবি তুলতে আর ঘুরতে যারা যান তারাই আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ। 

নন্টে ফন্টে, চাঁদ মামা, ঠাকুমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড় থেকে শুরু করে, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ  আরো আরো বই যেন নেশার মতো টেনে নিয়ে যেত  আগেরকার দিনে।  আজ সবই স্মৃতি।

  এখন এটাই প্রশ্ন------ কেন এমন হল? কেন হারিয়ে যাচ্ছেন পাঠক?  বই পড়ার আগ্রহ প্রতিনিয়ত কমছে কেন?  

     এখনো সময় আছে; এর মূল কারণ খুঁজে বের করে বই এবং মানুষের  মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করার। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের প্রত্যেক সচেতন মানুষের এগিয়ে আসা।

      প্রিয় পাঠক প্রতিটি  সংখ্যা প্রকাশের পর আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা অভিভূত। আর তাই হয়তো আপনাদের ভালোবাসার টানেই আবারো হাজির হতে পেরেছি অনেক আশা ও স্বপ্ন জড়িত "সাহিত্য নয়ন" - এর "নববর্ষ সংখ্যা ৩" নামক বিশেষ সংখ্যা নিয়ে। আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সমৃদ্ধ "সাহিত্য নয়ন"-এর এই পথ মসৃণ ও সুগম হোক। শুভকামনা রইল নতুন বছরের শুভারম্ভে।


ধন্যবাদ শ্রদ্ধাসহ-----

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

অমল কুমার মাজি


       শ্রীচরণেষু মা


                     -----অমল কুমার মাজি


দুষ্ট যখন দেশটাকে আজ

ক'রছে শ্মশান-ভূমি

দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়েও

চুপ কেন মা তুমি?


বল মাগো তুই নীরব কেন

নারীর লাঞ্ছনাতে

দানব গুলোর মুন্ড কেটে

ফেল না অস্ত্রাঘাতে।।


সকাল-সন্ধ্যে বারুদ-বোমার

গন্ধে বাতাস ভারী

সৃষ্টি কি আজ ধ্বংস হবে?

আভাস দেখি তারই।।


স্বাধীণ হ'য়েও নতুন ক'রে 

মানুষ পরাধীন 

বিদ্বজনের নেই প্রতিবাদ 

এমন অর্বাচীন।।


নেতার মুখে ফাঁকা বুলি

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি 

সুযোগ নিতে মোসাহেবরা

ক'রছে স্তব ও স্তুতি।।


উত্তর থেকে দক্ষিণে আজ

 ব'ইছে রক্তধারা

নেই প্রতিকার,প্রতিটি দিন 

কাঁদছে স্বজন হারা।।


একটা মহিষাসুর মেরেই

কেন মা তুই চুপ

কৃপাণ হাতে ধর না মাগো

চামুন্ডারই রূপ।।


মহাকালের কোল ছেড়ে আয়

এবার মহাকালী

ভয়ঙ্করী রূপ দেখা তোর

আবার মুন্ডমালী।।


ছদ্মবেশী দানব গুলোয়

শেষ ক'রে দে আজ

শান্তি ফিরুক দেশের বুকে 

পালাক গুন্ডারাজ।।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


                  চক্রব্যূহ 


                       ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


কত প্রতিভা হয় শিকার অহরহ মিথ্যা  

বিচার বিবেচনার চাপে । 

অঙ্কুরেই ঘাস নাশের ঔষধ ছড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় 

এখন আর ডাকবি কাকে? 

ভেবেছিলিস হবি  

বিটপ কিংবা মহীরুহ ;

অঙ্কুরেই তো দেখেছিস 

এতো সহজ নয় ভেদ করা 

প্রতিভা নাশের চক্রব্যূহ। 

প্রতিভার বীজে ঐ দিন

অনেকেই দেখেছিল ;---

ভালো,ভালো আরো ভালো 

বিশাল স্বপ্ন। 

কিন্তু মিথ্যা স্তাবকতার 

নিষ্ঠুর আঘাতে ---

বিশাল স্বপ্ন আজ চূর্ণ বিচূর্ণ 

ঘূর্ণির দুঃস্বপ্ন। 

তবুও ;

সূর্যের আলোর পরশ,

আগামী বর্ষার ছোঁয়ায় হয়তোবা 

আবারও হতে পারে

প্রতিভার অঙ্কুরোদ্গম ;-

এ স্বপ্ন নিয়েই চলছে 

আশার প্রদীপের জ্বলন।



 

১৬/০৩/২০২৩, বৃহস্পতিবার।

হেমন্ত দেবনাথ


        গোলাপ যায় মুছ্ড়ে


                               -----হেমন্ত দেবনাথ  


চরম আঁধারে আতরের গন্ধ যায় উবে। 

গভীর প্রণয়ের গোলাপ কখনও

                               যায় মুছড়ে - 

জীবনপথ-রেখাটি যায় দুমড়ে। 

ওদের জন্যে বুকে বড়ো বাজে। 

'নিরুপমারা' আজো আছে ।


লালসার ভাবনাই খালি-- 

প্রণয়ের গুড়ে বালি। 

অর্থলোভীদের লালসা যায় না 

পরিণয়ের মধুময় সম্পর্ক তো থাকে না। 

দর কষাকষি-----

'পাওনা' পেলে বেজায় খুশি । 


নইলে 'প্রণয়ের মানুষ'টা হয় খুনী

নিরুপমারা যতই হোক গুণী। 

পাওনা নেই নিরুপমাদের জীবন ভার যাবে-- 

প্রণয়-পক্ষের কুমন্ত্রণায় --

অপমানে-গঞ্জনায় আর--

মৃত্যু-লাঞ্ছনায়।

সুব্রত রায়


                                                                       সমীক্ষা


                                                                                 ---- সুব্রত রায়


    সেটা ছিল আরেক বসন্ত-বিকেল। এখানে ওখানে সবুজ রঙ করা কয়েকটা কাঠের বেঞ্চ। দশতলার উপর ষ্টিলের ফ্রেমে আটকানো 'মরমী হাউজিং কমপ্লেক্স' লেখাটা দিনের বেলা দেখা যায় না। তবে রাত হলে গ্লো সাইন জ্বলজ্বল করে বহুদূর থেকে। 

   চারপাশে সুউচ্চ সার দেওয়া অসংখ্য ফ্ল্যাট-বাড়ি। সব মিলিয়ে কত লোক থাকে অতনুবাবু জানেন না। কমপ্লেক্সের সামনের দিকে খোলা এই পার্কটা ভাল লেগেছিল সবচেয়ে বেশি। চাকরির শেষ বছর বুক করেছিলেন। কোয়ার্টার ছেড়ে সোজা মরমীতে।

  সময় ভালই কেটে যায় এখন। সবমিলিয়ে বুড়োদের সংখ্যাটা একেবারে কম নয়। গল্পগুজবে কী করে সন্ধ্যা নামে বুঝা যায় না। সূর্য ডুবতে না ডুবতে ফা ফা করে খুটির মাথায় জ্বলে উঠে সারি সারি সোডিয়াম ভ্যাপার ল্যাম্প। সন্ধ্যা আর রাতের মিশে যাওয়াটা আর দেখা হয় না। আকাশ তারাহীন, কেমন ঘোলাটে একটা আস্তরণ ঝুলে আছে মনে হয়।

   এসব আপাত অপ্রাপ্তিকে ভুলে যাওয়াই ভাল। নিজেদের অতীত  জীবনের হাজারো গল্পে নিজেকে  উজ্জীবিত করে রাখা বরং বুদ্ধিমানের কাজ। রক্তচাপ আর ব্লাড সুগারের রিপোর্ট পরীক্ষা করতে করতে ডাক্তাররা আজকাল নষ্টালজিক হতে বারণ করেন।

  এসব ভাবনার ফাঁকে কখন যে শ্রীমন্তবাবু এসে গেছেন, খেয়াল ছিল না।

 -আরে মেজর, অমন ঝিম মেরে আছেন কেন? আমি আসতে আসতে একটু হেঁটে নিলেই তো পারতেন। অতনুবাবু ইন্ডিয়ান আর্মিতে ছিলেন। শ্রীমন্তবাবু মজা না করে কোনো কথা বলেন না। প্রাক্তন  কলেজ শিক্ষক শ্রীমন্তবাবুকে এজন্যেই বড্ড ভাল লাগে।

-আর কত হাঁটবো বলুন? ফ্ল্যাট থেকে এখানে পৌঁছতে পাক্কা আধা ঘন্টা। এখন বসতেই ভাল লাগছে। বসুন এখানে। বলুন, আজকে যেন কী শুনাবেন বলেছিলেন।

-হ্যাঁ হ্যাঁ। টেনশন একদম করবেন না। এই ধরুন, একটা পান মুখে দিন। বলছি। বাংলার প্রফেসর শ্রীমন্তবাবু দারুণ গল্প বলতে পারেন। কল্পনা আর বাস্তবতার অদ্ভুত মিশেল তার বলায়। তবে শেষ দিকে একটা ভয়ংকর অনিশ্চয়তায় শেষ হয় সে গল্প। শ্রোতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে দারুণ আমুদ পান তিনি।

   নিজের মুখের গোটা খিলি গালে চালান করে দিয়ে গল্প শুরু করেন শ্রীমন্ত বাবু।

   তখন আমরা কলেজে পড়ি। বাংলা বিভাগের ছাত্র। যৌবনে কোন বাঙালি কবিতা না লিখে থাকে। ঠিক হ'ল কবিতা লিখতে হবে, তবে গতানুগতিক মোটেও না। প্রথমে ফিল্ড সার্ভে হবে। নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর কবিতা লেখা হবে। সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা হবে কবিতার মূল বিষয়।

   তা, খাতা কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম একদিন। গ্রাম থেকে আধা শহর, বাদ গেল না কিছুই। দেখলাম, কৃষক ধান কাটছে। তাকে বললাম, "কিছু বলুন, একটা কবিতা লিখতে চাই।"  সে কোনো উত্তরই দিল না। মুচকি হেসে ধান কাটতে লাগলো ঘ্যাজঘ্যাজ করে।

  এরপর একজন কর্মকার। একই অনুরোধ তার কাছেও করা হ'ল। "দাদা, একটু বলবেন, এ্যাই একটা কবিতা লিখবো আর 

কী।" তিনি জ্বলন্ত চুল্লী থকে ডগডগে লাল লোহার টুকরো বের করে এনে দুমদাম পেটাতে লাগলেন একমনে। উত্তর কিছুই পাওয়া গেল না। এরপর, রজক, ক্ষৌরকর্মি, মৃৎশিল্পী এদের কাছেও যাওয়া হল। ফলাফল এক, সবাই নিজের কাজে মহাব্যস্ত, উত্তর নেই।

    সে যা-ই হোক। কবিতা তো লিখতেই হবে। লেখাও হয়ে  গেল। শর্ত ছিল যাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কবিতা লেখা হবে, সেই কবিতা তাদেরকেই শোনাতে হবে। জানতে হবে তাদের প্রতিক্রিয়া। অনেক সাধ্যসাধনার পর অবশ্য আনা গিয়েছিল তাদের। ওঁদের বসানো হ'ল। চা মিষ্টিরও ব্যবস্থা ছিল। তা, গালে হাত দিয়ে মনযোগ সহ শুনলোও ওঁরা আমার লেখা কবিতা। 

   সবশেষে প্রতিক্রিয়ার পালা। -আচ্ছা বলুন তো, কবিতাটা শুনে কী বুঝলেন আপনারা? কিছুক্ষণ একদম চুপচাপ। আবারও অনুরোধ করা গেল। ওঁরা প্রথমে  পরস্পর এ ওর মুখের দিকে তাকায়, কিচ্ছু বলে না। অনেক পীড়াপীড়ির পর শেষমেশ, সেলুনের সেই লোকটা উঠে দাঁড়ালেন। - বাবু, একটা কথা, কবিতাটার গভ্ভে মস্ত বড় বড় সব কথা বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা একমত। তবে আমরা কেউ কিছুই বুঝিনি।

বিধানচন্দ্র দে


     জীবন সন্দর্ভে 


                   ----- বিধানচন্দ্র দে


জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি 

ক্রমাগত সংঘর্ষ আর 

সমঝোতার উপাখ্যান----


জীবন মানে জিগিষা,

জীবন মানে জীবিকা 

জীবনের জন্যে জিঘাংসা 

জীবন থেকেই জিজ্ঞাসা ---


উৎস থেকে মোহনা, আর 

তট চর জলে ভেসে নদ নদী । 

এ আকাশ বাতাস মাটি 

স্পর্শ করে কিয়ৎকাল 

অবগাহনের নাম যদি হয় 

জীবন


তাহলে জন্ম জন্মান্তরের

জীবন জীবনের খেলা 

এক মস্ত প্রতারণা 

স্বপ্নীল ধোঁকা ।

মিতালি দে


  হায় হেন রণঝংকারে 


                      ------ মিতালি দে


সমুদ্র নীলের স্বপ্নীল জগতে

ছোপ ছোপ সবুজে

ধূসর কালো বাদামি ছোট বড় অজস্র পথ ধরে

আমজনতা ছুটে চলে 

শতাব্দীর পর শতাব্দী

শান্তির কোটর ছেড়ে অনির্দিষ্টের পথে

উদবাস্তু সময়ে আকুল অসহায়তায়, 

পেছনে হায়েনার দল

ভারি বুটের শব্দ

প্রবল গোলাবর্ষণে

হিংস্র উন্মত্ততায়

বাতাসে হিসহিস শব্দে

গ্রাম গঞ্জ শহর তুলোট কাগজে ।

যারা সাম্রাজ্য ধরে রাখে

যারা মুষ্টিমেয়

রূপার কাঠি বদলে

যারা সোনার কাঠি রাখে

যারা মানচিত্র পালটায় ইচ্ছে য মতো

ক'জনার খেয়াল খুশি

গনদেবতার ভাগ্য নিয়ন্তা,

তারা হারায় কালের অতলান্ত কালো গভীরে, 

আমজনতা ছুটতে থাকে

পদচিহ্ন আঁকে আগামীর পথে

নদী এসে মেশে যাটির সাথে

মাটি মিশে যায় মানুষের সাথে

মানুষ আকাশ একাকার হয়ে যায়।

ঈশিতা দেবনাথ

তুলির আঁচড়

 

চিরশ্রী দেবনাথ


             দাহ গান


                      -----চিরশ্রী দেবনাথ


হঠাৎ মনে হলো আমার কোনো

লেখাই আসল নয়, আগুন থেকে

জন্ম নিয়ে আসেনি সেই ঢেউ, 

জ্যোৎস্না থেকে চুরি করেছি আলো

জোনাকি থেকে গোপন আলোর

অভিসার, পল্লবিত গাছ থেকে

ছায়ার নরম কৃষ্ণ ইতিহাস

রৌদ্র দগ্ধ দুপুরের হলকা

মুখে মেখে যাকে চলে যেতে

দেখেছি অভিমানে, তার মুখ থেকে

কুড়িয়ে এনেছি দু একটি অঙ্গার

গরিব হয়েছি আজ, হৃদয়ে ধারণ

করেছি গৈরিক, নির্বাণের স্তুতি    

দীর্ঘ রাস্তা একা যাবো, স্বর্ণচোরা

ঘাসে ঢাকা, শস্যের খেতের পাশে, 

ঝড়ের আকাশের নিচে যেদিন মাটি 

গেয়ে উঠবে দাহ গান, বল্কল

খুলে দেখবো অস্তিত্ব বলতে ছিল

খানিকটা বর্ণমালা, শঙ্খমুখের পাতা।

ভবানী বিশ্বাস


                   অভ্যাস


                              ------ভবানী বিশ্বাস



আগে অমাবস্যা রাইতে পাহাড় থেইক্যা

নির্দ্বিধায় কেমন ঝর্ণা আনতাম, 

ডর কারে কয় চিনতাম না। 



মাটি কাইট্যা বানাইতাম পুকুর। 


সারাদিন পরিশ্রম করলেও

দিনশেষে কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাইয়া পড়তাম! 


প্রেশার স্যুগার বাড়লেও এত চিন্তা হইতো না। 


তুমি আইয়নের পর নিজের লেইগ্যা খুব চিন্তা হয়। 

মনটা কেবল কু-গায়, কু-কয়। 


ভাবি, এইভাবে যে 

আমি তোমার অভ্যাস হইয়া গেলাম

আমি চইলা গেলে তোমার কী হইব!

গৌরব নাথ


        শুধু আমাকেই শুনা যাচ্ছে


                                  ---- গৌরব নাথ


বাথরুমে গিয়ে পায়রা হয়ে বাকুম-বুকুম করি

কত কিনা বলি?

একটা শেষ হয় না আরেকটা কিছু বলে ফেলি

যেন কেউ মন দিয়ে আমাকে শুনছে

পৃথিবীর অন্য শব্দগুলো একান্তে মরে গেছে

শুধু আমাকেই শুনা যাচ্ছে

মধুমিতা ভট্টাচার্য


            প্রলাপ


                     ------মধুমিতা ভট্টাচার্য


মন পাগলের ধুম জ্বরে

নকসী কাঁথার তাপ জড়িয়ে 

বেহুশ বাউল প্রলাপ বকে

তিন প্রহরের তেপান্তরে,

চাতক তৃষ্ণা বুক ফাটিয়ে 

চৈত্র আকাশ ছেদ করে,

বাউল আকাশ বাউল বাতাস 

অকাল হেমন্তে ঝড় তোলে,

হাঘরে বাউল তবু

আষাঢ়ে সুখের সাধ করে,

মন পোড়া তাপ শরীরে

ভোর শিশিরের খোঁজ করে,

ধুম জ্বরেতে ঘুম ঘরেতে

গুম হয়ে যায় মনের বাউল,

বালিশ চাপা আকাশ মাপা

এক ফালি মেঘ

টুকরো হয়ে বরফ জমে

রোজ নিয়মের রোদ মাখে।

লোপা চক্রবর্তী


             সাধের খেলাঘর 


                             -----লোপা চক্রবর্তী


ব্যস্ত পৃথিবীতে মনের খোঁজ কেউ রাখে না,

দুঃখেরা আসে বিনা নিমন্ত্রনে।

স্বপ্নের অপমৃত্যু এখানে স্বাভাবিক ঘটনা,

তবুও মন আশায় দিন গোনে।

কল্পনার জগৎ সুন্দর হলেও,

দিন শেষে মেনে নিতে হয় বাস্তবতা।

অলস দুপুরে একটু হাসির খোঁজে,

কেউ কেউ বোনে অলীক রূপকথা।

এই পৃথিবীর সকলেই আত্মমগ্ন,

স্বার্থের খেলায় মাতে প্রিয়জন।

ততোদিনই দাম থাকে তোমার,

যতদিন তোমার প্রয়োজন।

তবুও আমরা সাধের খেলাঘর গড়ি,

খুঁজে ফিরি মন ভোলানো খেলনা।

দিনের শেষে ধরা পড়ে যায় জারিজুরি,

হাসি দিয়ে লোকানো গভীর কান্না।

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

 


     স্বীকারোক্তি


               ----- রাজেশ ভট্টাচার্য্য


ময়নাতদন্ত হোক। 

সামনে আসুক কঙ্কাল যত

কবর দিয়েছিলে তুমি।

সরে যাক কালো মেঘের ছায়া। 

পরিষ্কার হোক এখনই.... 



আমার প্রথম মৃত্যুরহস্য।



স্বর্ণপদকের দাবি জানাবো। 

পরিয়ে দেবো তোমার গলায়।

 আমার দ্বিতীয়-তৃতীয় মরণ বার্তা... 

তোমার তুমিকে না চেনালে।




রচনাকাল:- ১৬/০৩/২০২৩ ইং