সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত

"সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকায় আপনাকে স্বাগত। ( প্রকাশকের লিখিত অনুমতি ছাড়া এই পত্রিকার কোন অংশ কেউ প্রকাশ করলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে)

সোমবার, ২৮ আগস্ট, ২০২৩

মলাট


 

সম্পাদকীয়

          ৯৪৭ সালের ১৫ই আগস্ট রত্নগর্ভা ভারত-জননীর বীরসন্তানদের আত্ম বলিদানের ফলে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছিলাম এক স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে। অত্যাচারী ব্রিটিশের রক্তচক্ষুকে পরাভূত করে আমরা পেয়েছিলাম মুক্ত জীবনের উচ্ছ্বাস। আগস্ট মাস হল স্বাধীনতার মাস, আগস্ট মাস হল ত্যাগের মাস, আগস্ট মানেইতো বিজয়ের মাস, আবার আগস্ট মাস মানেই মহামিলনের মাস। তাই  আগস্ট মাস প্রতিটি ভারতবাসীর মনকে বারবার উদ্বেলিত করে তুলে। 

          তবে আজ অনেকেরই মনে এক লজ্জিত জিজ্ঞাসা ---- "প্রত্যেক ভারতবাসী কি পেয়েছেন সত্যিকারের স্বাধীনতা? এই স্বাধীনতা কি দিবালোকে বিবস্ত্র করার স্বাধীনতা?" স্বাধীন ভারতের অঙ্গরাজ্য মণিপুরের নির্মম ও জঘন্যতম ঘটনা প্রায় সকলেই অবগত। সে দিক থেকে বিচার করলে প্রকৃত স্বাধীনতা প্রশ্নচিহ্নের মুখে, হয়তো দাঁড়িয়ে আছে কাঠগড়ায়। 

        তারপরেও আগস্ট মাস আমাদের প্রাণের মাস।  আগস্ট মাস আমাদের মনে করিয়ে দেয়, ভারতের মুক্তিপথের সে সকল অগ্রদূতদের কথা, যাঁরা বহু রক্তের বিনিময়ে রক্তপিপাসু ইংরেজদের হাত থেকে ছিনিয়ে এনে আমাদের উপহার দিয়েছিলেন আমাদের কাঙ্খিত স্বাধীনতা।  উনাদের উদ্দেশ্যে নতশিরে সম্মান জানাতে প্রকাশিত হলো "সাহিত্য নয়ন"- এর "মুক্তকণ্ঠ" নামক এবারের সংখ্যা। গল্পকার শান্তনু মজুমদার মহাশয়ের অক্লান্ত পরিশ্রম এবং  কবি-লেখকদের লেখনী স্পর্শে পূর্ণতা পেল এই সংখ্যাটি। সর্বোপরি  সহৃদয় পাঠকদের অকৃত্রিম ভালোবাসা আমাদের চলার পথের পাথেয়।  তাই সকলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি। আপনাদের  মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। 



ধন্যবাদ ও অভিনন্দন সহ---

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

জ্যোতির্ময় রায়

 বন্ধুবৎসল

         ------জ্যোতির্ময় রায়


মৃত্যু আমাকে চিনেছে ভালোই

নিত্য রেখেছে নজরে । 

ঠিক সময়েই টেনে নেবে বুকে

থামবে না আপত্তি ওজরে ।। 

জন্ম থেকেই চিহ্নিত আমি

চিনে সে আমার ঠিকানা । 

কখন আসবে কাছেতে আমার

আছে তো তাহার জানা ।। 

আমিই চিনি না মৃত্যুটা কী

কী তার অবয়ব । 

শুধু দেখেছি কবর কিংবা 

চিতায় শায়িত শব ।। 

এটুকু ধরেছি জন্মমৃত্যু

পাশাপাশি পথ চলে । 

সঠিক সময়ে জীবন ছাড়ায়ে

মৃত্যুতে পড়ে ঢলে ।। 

জন্ম-মৃত্যু যুগলেই চলে

একক নয় তো কেউ  । 

জন্মের পরেই মৃত্যুঠিকানায়

আছড়ে পড়ে সে ঢেউ  ।। 

জন্মটা আমার সফেদ কাগজে

আগুন ফাগুনে যাওয়া

মৃত্যুটা আমার বন্ধু বৎসল

বৃহত্তমকে পাওয়া  ।।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য

 নীলের পরশ

        ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য 


ঐতো সেদিন নীলশাড়ি 

করে পরিধান,

বলেছিলে, চলো,চলো

যাবে কোন্ স্থান? 

আমি তো ভাবতেও পারিনি 

তুমি যে হঠাৎ করে 

পড়বে এসে আমার কাছে

দাঁড়িয়ে ফটো উঠবে 

আমার পাশে। 

নিজের দিকে দেখি চেয়ে  

কোন্ কাকতালীয় ঘটনায় 

আমার অঙ্গাবরণ নীল বর্ণের, 

তোমার শ্বেতাঙ্গে নীল 

আমার দৃষ্টিকে করলো 

দূর আকাশে স্থির। 

সকাল থেকেই সূর্যের মেজাজ

বড়োই দাপটি,

নীল আঁচলে দিলে ঢেকে আমার মাথাটি।

পেট্রোল পাম্পের সামনে 

রাস্তার মোড়ে 

আধপড়া কড়ই গাছের 

ছায়া ছিলো 

অপেক্ষায় বোধহয় 

কবে জানি হবে

নীল আর নীলার উদয়।

ছায়ায় দাঁড়াতেই 

কোথা থেকে এলো চলে একখানি ছোটখাটো যান

মন খানি গেলো উড়ে 

নারকেল কুঞ্জে,

চায় দেখতে 

ডম্বুরের মাঝখান।

নীল ডম্বুরের দোলা নীচে

উপরে নীলাকাশ 

সাদা মেঘের বিছানা 

মন উদাসী কেনো জানি না।

কী যে হলো জানিনে

আজো ভুলতে পারি নে

চারদিকে দেখি নীলের ছোঁয়া।




 রচনাকাল :- ৩০/৭/২০২৩, রবিবার।

অমল কুমার মাজি

 নেই-নেই-নেই

       -----অমল কুমার মাজি


পকেটে পয়সা নেই

বুকে ভালোবাসা নেই

ঠাম্মা দাদুরা নেই

আদর সোহাগ নেই

কপালে লটারি নেই

স্কুলে শিক্ষক নেই

এই আছি বেশ !!


নেতার সততা নেই

পাশ ফেল কিছু নেই

চাকরি-বাকরি নেই

চোরের অভাব নেই

মিথ্যার শেষ নেই

কোথাও শান্তি নেই

কি আজব দেশ !!


মন্ত্রীর দোষ নেই

ভাষণের শেষ নেই

মানুষের দাম নেই

ব্যবসায় লাভ নেই

শিল্পের আশা নেই

সঙ্গীতে সুর নেই

সব কিছু শেষ?


এর পরও কথা আছে

এখনও মানুষ আছে

এক বুক আশা আছে 

রাত শেষে ভোর আছে

অকুলেরও কূল আছে

শুনি সন্দেশ !!

রমেন্দ্র নাথ

 প্রেরণা

          ------রমেন্দ্র নাথ


তোমারি অনুপ্রেরণায়

এগিয়ে চলছি–

হয়তো তোমার মত 

সফলতার শিকড়ে 

যেতে পারবো না,

হয়তো বা 

তোমার অসীমতার সীমানা  পারবো না ছুঁতে,

যতটুকুই উৎসাহে 

এগিয়ে চলেছি

এটা আমার কাছে 

বিরাট প্রাপ্তি।

একটু একটু করে 

এগোতে যাক না কেটে 

শত -সহস্র বছর 

তবু আমি তো 

হবো না বুড়ো,

থাকবো 

তোমারই মতো কিশোর। 

পর্বতারোহী হয়ে

গুটি গুটি পায়ে 

যাব এগিয়ে। 

হয়তো বা 

নদী-ঝর্ণার মতো

দ্রুতগামী হবে না

আমার গতিবেগ, 

তবুও সৃষ্টিকর্মে

স্রষ্টার সবুজ সতেজ প্রেরণা, 

এটাই আমার কাছে 

বড় পাওনা।

হয়তো বা 

হতাশার তাপে

শুকিয়ে যাওয়া 

ভাবনাগুলি

ভাবনা হয়েই থেকেছিল!

যদিও কিছুটা 

সিক্ত হয়ে

ডানা মেলেছে , 

প্রেরণার আর্দ্রতায়,

এটাই বা কম কিসে?



রচনাকাল:-  20-07-2023

চিরশ্রী দেবনাথ

 নিঃশর্ত

         -----চিরশ্রী দেবনাথ



তুমি যাকে ভালবাসলে


আর তাকে দিতে চাইলে তোমার    ' না পাওয়া '


অবাক হয়ে দেখলে তার কাছে আছে শুধু    'হাহাকার '


বাধ্য হয়ে তুমিও কুড়িয়ে নিলে সেই  ' হাহাকার '


তারপর খাদের পাশে দাঁড়িয়ে দুজনে


কি ভয় ! কি ভয় ! 


যদি ফিরে আসে আরো বিকট শূন্যতা, 


ভীতু পাখির মতো নামানো চোখ শুধু বলে যাচ্ছে , "নিঃশর্ত, নিঃশর্ত "!

ভবানী বিশ্বাস

 স্মরণ

       -----ভবানী বিশ্বাস


রাখলে সবকিছুই থেকে যায়–


পূর্বপুরুষদের নাম করে

পিন্ড দিই– 

কৃষ্ণের নাম করে

নিজেকে রাধা সাজাই–

যেমন জলশুদ্ধির মন্ত্রচ্চারণে 

সাতটি নদীকে স্মরণ করি–


রাখলে স্মৃতিও কৃতজ্ঞ হয়–

মধুমিতা ভট্টাচার্য

 দেখেছি সূর্যোদয়

             ----- মধুমিতা ভট্টাচার্য


ভেবেছিলে ভেঙ্গেচুরে শেষ করে দেবে

 দিতে পারো নি,

মৃত্যু এসে ফিরে গেছে কয়েকবার,

গ্ৰিলের ফাঁক দিয়ে দেখেছি তোমার উঠোন থেকে

সূর্য নেমে গেছে,

 সারারাত জেগেছি….

 দেখেছি সূর্যোদয়।

শুধু….

ভেজা গামোছা থেকে জল টপ টপ করে পড়ছিল 

 চোখের কোণ ঘেঁসে।



রচনা কাল :- ১২/০৮/২৩

শান্তশ্রী মজুমদার

 স্মরণীয়া

  -----শান্তশ্রী মজুমদার, কৈলাসহর (শিক্ষিকা রামকৃষ্ণ মহাবিদ্যালয়) 


পুণ্যসলিলা মা গঙ্গার পবিত্র  জলধারা 

বয়ে চলেছে  হিমালয় থেকে বঙ্গভূমে।

বহু মুনি ঋষির তপোভূমি শান্ত সমাহিত ঋষিকেশ


প্রভাতে সূর্য রশ্মির প্রথম আলো থমকে গেলো

পুণ্যভূমি র গঙ্গার তীরে।

পঁচাত্তর  বছরের  এক অগ্নিকন্যার মৃতদেহকে 

পরম স্নেহে অবগাহন করাচ্ছে মুক্তিদায়িনী  মা গঙ্গা।


গঙ্গার পাড়ে  কৌতুহলী জনতার কোলাহল 

পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ চারধার। 


কে এই নারী মৃতদেহ?কি তার পরিচয়?

হঠাৎ  অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো মৃতদেহটি।

কন্ঠে তার ভয়ংকর  বিদ্রুপ!


আমি কে?এই নারী মৃতদেহ কার?


শোনরে,বিস্মৃত জাতি ----


আমি বীণা দাস, আমি অগ্নিকন্যা, আমি সশস্ত্র, অহিংস আন্দোলনের নীর্ভিক সৈনিক।

আমি বীণা দাস,আমিই  সেই বিপ্লবী-আমার 

পিতা, বেনী মাধব দাস,মাতা সরলা দাস।


আমার পিতা ছিলেন  নেতাজী সুভাষ চন্দ্রের শিক্ষক

আমি একুশ বছর বয়সী তাজা তরুণী 

আমি যুগান্তর দলের সদস্যা

আমিই কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তনে 

পিস্তলের গুলি চালিয়েছিলাম, ব্রিটিশ  গভর্নর স্ট্যানলি জ্যাকসনকে।

তাই তো আমাকে নয়টি বছর কাটাতে হোল কালাপানির দীপান্তরে।


দেশ স্বাধীন হলো, আমি হলাম পশ্চিম বঙ্গের বিধানসভার সদস্য।


কিন্তু দেশ সেবার মন্ত্রে দীক্ষিত আমার মনন,চিন্তন

আবারো কাঁধে তুলে নিলাম নারী  শিক্ষার ভার।


হে আত্ম বিস্মৃত দেশবাসী, তোমরা আমায় মনে রাখোনি।

আজ যে বৃদ্ধার লাশ দেখছো কৌতুহল ভরে 

যে লাশ অবজ্ঞায় অবহেলায় পড়ে আছে গঙ্গা মায়ের কোলে। 

সে আর কেউ না, সে হোল অগ্নি কন্যা, নেতাজীর শিষ্যা 

বীণা দাস। 

কোন বেওয়ারিশ লাশ নয়!

অমলেন্দু চৌধুরী

 আমার মৃত্যু 

      ----অমলেন্দু চৌধুরী 


যখন আমি ভূমিষ্ট হলাম সদ্য প্রভাতে, 

এই সবুজ ঘরের আতুর ঘরে, 

আনন্দে মুখরিত আমার আগমনের পর, 

উলোধ্বনি, শঙ্খ বেজেছিল, 

মায়ের কোলে আমি এক নব রাজপুত্তুর, 

তখন সবাই হেসেছিল, 

কিন্তু আমি কেঁদেছিলাম। 

দিনে দিনে এসব রব, 

শৈশব কৈশোর যৌবনের পর সায়ন, 

আর আর সৃষ্টি মুখর আর 

এই তো আমার আনন্দ নিকেতন! 

তবে, দিন শেষে বিকেলে,

একদিন সবাই চলে গেলো, 

সবাই ভুলে গেলো, 

আমারও কিছুকিছু অগোছাল, 

আর রয়ে গেল যতো সব আয়োজন; 

কিন্তু, আমার প্রতীক্ষায় বসে আছে আমার প্রিয়জন, 

এই সত্য এই সত্য, 

আমার অন্তিম মুহূর্তে আমার বন্ধুবর, 

আমার যতো সাধ হলো শেষ, 

তার যে নেই কোন অবসাদ, 

যেতে হবে যেতে হবে, 

সে শুধু আমার প্রতীক্ষায়, 

আমার বন্ধু আমার মৃত্যু।

অর্চিতা ভট্টাচার্য

 আধুনিকতা

             -----অর্চিতা ভট্টাচার্য 

   

 এযাবৎ ,ভাতের ফ্যানে সুখ

উথলাতে দেখেছি বহুবার!

মা নিজের সমস্ত ক্লান্তি

দুহাত দিয়ে ঝেড়ে ফেলে

দুমুঠো ভাত হাতে নিতেই মুখে হাসি....


আমি মায়ের মুখের হাসিকে

ডাস্টার দিয়ে মুছে

কংক্রিট ও বালিতে সুখ খুঁজে 

নিয়ে আধুনিক হয়ে উঠি।

কণিকা দাস

 অর্ঘ্য 

      -----কণিকা দাস


যতবার এই পথ ধরে এগিয়ে চলি

যতবার ধসের পাশে এসে দাঁড়াই

ততবার আমার মনে জাগো তুমি নব নব রূপে।

বুকের ভেতর লাবডুব শব্দটা

তোমাকে আরো আপন করে নেওয়ার,

আরও ভালোবাসার আকুতি জানায়।

ঐ যে সাদা মেঘ ছুঁয়েছে তোমার কপোল

ঐ যে তিরতির ঝরে পড়ছে অভিমানী অশ্রু...

সেখানে ধ্যানে কাটাতে চাই কিছুটা সময়।

বিধ্বস্ত জীবনের হাহাকার পৌঁছে না কোন

সুখী মানুষের অন্তরমহলে।

ওরা তোমায় নিয়ে কাব্য করে, গান বাঁধে 

ওরা শুনতে পায়না তোমার দগ্ধ বুকের হাহাকার।

তোমার মাঝে দেখতে পাই 

আমার যন্ত্রণাঘন হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি 

তাই বারবার ছুটে আসি তোমার স্নেহছায়ায়

বারবার তোমার ছোঁয়ায় নবজন্ম লাভ করি।

কুমকুম দে

 মেঘবৃষ্টির গল্প

         -----কুমকুম দে 


কান্নাগুলো ভীষণরকম দামি,

কান্না গুলো শুধুই একা আমার,

নাগাল পাওয়ার সময় গেছে চুরি,

মন পড়ার ইচ্ছে নেইকো তোমার।


আমি এখন বৃষ্টি বৃষ্টি নদী,

সময় হলে জল ছুঁয়ে দাও যদি,

দেখবে শুধুই ধু ধু মরুর বালি,

মুহূর্তরা খরা দেবে খালি।


ক্যাকটাস আর খেজুর কাঁটার বন,

দূর প্রবাসে ছুটন্ত এক মন,

পাহাড় ডিঙিয়ে ঝড় যদি এক আসে,

মেঘ বৃষ্টি এক হয়ে তবে মেশে।

সম্রাট শীল

 চাবুকের মতো চাপরায়

                  ------সম্রাট শীল


আমার বসে থাকায়

বাবার চোখে হতাশার

চিহ্ন ভেসে উঠতে দেখি।


একবুক মেঘ

গর্জন করে উঠে

ভয়ে আতকে উঠি,

যেন বজ্রের আঘাত

সারা শরীরে চাবুকের

মতো চাপরায়!

সংহিতা চৌধুরী

 আমি সেই মেয়েটা

               ----সংহিতা চৌধুরী


কপটতা মাকরসার রাজ্য দখলে সাম্রাজ্যের অধিকারী হয়

বাস্তবতা বাড়ি বদলে দ্বীপের এক কোনা বেছে নেয়, 


সম্পর্করা এক সুতোয় যন্ত্রনায় কাতর, ছিঁড়তে চায় অসামাজিক সম্পর্ক। 


পাঁকে পরে নদী ঘোলাটে হয়

অবশেষে যাত্রা শুরু এক নতুন নিয়মে। 


অভিমান, অভিযোগ দরজায় দাঁড়িয়ে, ওরা কিছু বলতে চায়। 

শকুনির সবকিছুই ব্যর্থ হয়


একদিন ধরা পড়ে, সব নষ্ট রাস্তায় চেপে যায়, 

ঘোড়ার চামড়া পিতল বর্ণের রূপ নেয়। 


আর কেউ নেই! 

বোকা, অপদস্থ আমি সেই মেয়েটা।

রূপালী দেবনাথ

 সত্ত্বা

      ----রূপালী দেবনাথ


লুকিয়ে জানার ইচ্ছায়

আয়নায় পড়েছি ধরা,

প্রতিনিয়ত ঢিল ছুঁড়েছো 

ফের, ভাঙা কাঁচে মুখ খুঁজেছি।

অনুভূতিদের বিষ খাইয়েছি,

মৃত্যু বার্তা -

আমকে যেন না পাও

হয়তো অতৃপ্ততায় মানুষ সুন্দর।

রাজকুমার ধর

 কবিতা 

    ---- রাজকুমার ধর 


কবিতা আমার সাথেই

তবু খুঁজে বেড়াই তাকে

সে আমাকে ডাকে

আমিও তাকে ডাকি

তার অনুভূতি জাগায় শিহরণ 

হৃদয়ের টানে 

তার হাত ধরে চলে যাই 

দূর থেকে দূরান্তে-

মহাসাগর থেকে মহাশূন্যে 

সাক্ষী কত যে চেনা-অচেনা দৃশ্য 

কত অণু-পরমাণু !

সুবল চক্রবর্তী

 অ আ ক খ

      -----সুবল চক্রবর্তী

      

না, ভয় নেই

এভাবে ইংরেজির তোড়ে 

ভাসিয়ে নিতে দেবো না

তোমাদের ।

শিশুর রাত ভেজা আদরের 

কাঁথার মতো তুলে রাখবো 

কাগজে কালো কালো অক্ষর।


যদিও এলোমেলো হাওয়া -

শুধু আমি নই, শত শত কবি

ঈশ্বরের খাজানা অ থেকে চন্দ্রবিন্দু

পৌঁছে দেবো প্রজন্মে

দুধদাঁত ওঠা সুবোধের কাছে।

উপমা বেগম

 খুব করে চাই

        -----উপমা বেগম


খুব করে চাই

কেউ একজন থাকুক,

হাসিতে বা কান্নায় মিশে

ভিড়ে বা জীবনের একাকিত্বে।

যাকে সবকিছু বলা যায়

হঠাৎ করে দূরে ঠেলা যায় ,আবার

কোন কারন ছাড়াই বুকে জড়িয়ে নেওয়া যায়।

খুব করে চাই

কেউ একজন থাকুক,

যাকে ভালোবাসা যায় কিংবা ঘৃণা ,

যাকে নিয়ে ঘর কুনো হওয়া যায়

অথবা হারিয়ে যাওয়া যায় দূর দূরান্তে-------

থাকবে না চিনা কেউ

শুধু থাকবে একজোড়া হাত খুব বিশ্বস্তের।

খুব করে চাই 

কেউ একজন থাকুক

যাকে কারণে-অকারণে জ্বালানো যায়,

যাকে মনে করে কেঁদে বুক ভাসানো যায়,

হঠাৎ সামনে আসলে হেসে বলা যায় ভালোবাসি।

যাকে নিয়ে একসাথে বৃদ্ধ হওয়া যায় মৃত্যু কামনায় 

অথবা চাই অমরত্ব। 

সত্যি খুব করে চাই কিন্তু কোথায় পাই।

শান্তনু মজুমদার

 কুয়াশা   

                                        ----শান্তনু মজুমদার, ত্রিপুরা


       জ থেকে প্রায় ২০ বছর আগের এক শীতের ঘন কুয়াশা মাখা সকাল। জানুয়ারির ১ তারিখ। কলেজের থার্ড ইয়ারের গৌরবের পলিটিক্যাল সায়েন্স স্যারের বাড়িতে ক্লাস শুরু হয় সাতটা থেকে। কিন্তু গৌরব ঠিক সাড়ে ছয়টায় সাইকেল নিয়ে স্যারের বাড়ির রাস্তায় দাঁড়িয়ে। হাতে লাল খামে লাল টুকটুকে গোলাপ ফুলের নকশা করা লাল গ্রিটিংস কার্ড।

      গৌরব, পলাশ, রাজা, সুমিতা, মুন্নি, স্বপ্না, অপরাজিতা, জয় সব্বাই একসাথে ক্লাস নাইন থেকে একসাথে স্যারের বাড়ি পড়ছে। মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক পাশ করে এবার কলেজ লাস্ট ইয়ার। দীর্ঘ সাত বৎসর একসাথে। ঝগড়া, মান অভিমান, আবার মিল লেগেই থাকে। প্রচন্ড ভালো বন্ধুত্ব তাদের। কিন্তু এই সাত বৎসরের মধ্যে মুন্নির সাথে গৌরবের এক দিনও সামান্য কথা কাটাকাটিও হয় নি। গৌরব বরাবরই সেই প্রথম দিন থেকে মুন্নিকে ভালোবেসে ফেলেছিল। আর মুন্নিও তাকে বেশ অন্য চোখেই দেখত। এটা সবাই বেশ বুঝতে পারতো।

     এই শীতেও গৌরব ঘামছে। একই ব্যাপার শুধু ঘুরে ফিরে তার মাথায় আসছে। তাদেরই সহপাঠী অঞ্জনের বোনের বিয়ে ছিল গত মাসে। তাদের সবারই নিমন্ত্রণ ছিল। অঞ্জন ওরা বেশ বড়োলোক। কলেজে একজন স্যারের একটি বাজাজ স্কুটার ছাড়া যেখানে আর সবাইর শুধু সাইকেল, সেখানে অঞ্জন হিরো বাইক নিয়ে ঘুরে বেড়ায়। তার বোনের বিয়ের অনুষ্ঠানেও ছিল বেশ জাঁকজমক। সেখানে সেদিন শাড়ী পরা মুন্নিকে দেখতে দুর্দান্ত লাগছিল গৌরবের। আর কেন যে কি হয়েছিল মুন্নিও সেদিন বিয়েবাড়ি থেকে বেরোনো অব্ধি গৌরবের সঙ্গ ছারে নি। সেদিনই গৌরব বুঝে গিয়েছিল যে মুন্নিও তাকে সমানতালে ভালোবাসে। পরের দিন অপরাজিতা আর স্বপ্নার কাছেও জেনেছে যে মুন্নি নিজে বলেছে, সে গৌরবকে পছন্দ করে। সেই শাড়ী পরা মুন্নির ছবিই বার বার গৌরবের চোখে আজ ভেসে উঠছে। সে যে আজ লাল গোলাপ সজ্জিত নিউ ইয়ার গ্রিটিংস দিয়ে তার ভালোবাসার কথা ফিল্মি কায়দায় মাটিতে হাটু গেড়ে মুন্নিকে জানাবে। ঠিক যেমন ছোট গাড়ির পেছনে স্টিকার লাগানো থাকে সেইভাবে।

     সাতটা বাজতে আর কিচ্ছুক্ষন বাকি। শীতের সকাল তাই সবাই একটু দেরি করেই আসে। কিন্ত মুন্নি তো ল্যান্ড লাইনে রাতেই জানিয়েছিল যে সে আজ তাড়াতাড়ি আসবে। তাহলে দেরি করছে কেন।

     একটা মোটরসাইকেলের আওয়াজ শোনা গেলো। ঘন কুয়াশা ভেদ করে একটা হেডলাইট সামনে আসছে। অঞ্জনের বাইকের পেছন থেকে শাড়ী পরা জিন্সের জেকেট গায়ে জড়ানো মুন্নি নামলো হাসি হাসি মুখ নিয়ে। বাড়িয়ে দিল গৌরবের দিকে নিউ ইয়ার ফ্রেন্ডশিপ গ্রিটিংস। যাতে লেখা, টু ডিয়ার ফ্রেন্ড গৌরব, উইথ লাভ ফ্রম অঞ্জন এন্ড মুন্নি। 

     এক ঝটকায় যেন গৌরবের সব দুশ্চিন্তা, মুখের ঘাম, হঠাৎ মন খারাপের অনুভূতি সব চলে গেলো। যেন নিজেকে প্রচন্ড হালকা, দুশ্চিন্তা মুক্ত লাগছে। ভগবান কে ধন্যবাদ জানিয়ে মুহূর্তের মধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করেই সোজাসুজি একদম লো কলেজ। এবার জীবন গড়ার পথে মন দিতে হবে। লাভ ইস নট লাইফ, ইটস আ পার্ট অফ 

লাইফ। কুয়াশা কেটে রোদের আলো পড়ছে গৌরবের চোখে মুখে।

হেমন্ত দেবনাথ

       বেড়িয়ে পড়লাম সবুজের নেশায়

                                                                                    ------ হেমন্ত দেবনাথ


জুন ২০২৩ ইং সংখ্যা প্রকাশের পর......... 


            মায়াপুরে অবস্থানকালীন আমরা 14/04/2023 ইং সনে আমি, আমার সহধর্মিণী, কন্যা ও ছোড়দা শুধুমাত্র এই চারজন নবদ্বীপের “বলদেব জীঙ্গ”-র আশ্রমে চলে এসেছিলাম লঞ্চের মাধ্যমে। এখানে আমাদের গুরুগৃহ থেকে প্রসাদ গ্রহণ করে চৈতন্য মহাপ্রভুর নিজের বাড়ি বা জন্মস্থান, 60 উচ্চতাবিশিষ্ট চৈতন্য মহাপ্রভুর মূর্তি, বিখ্যাত বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দির পরিদর্শন করলাম। ঐ বিষ্ণুপ্রিয়া মন্দিরে মহাপ্রভুর পাদুকা সংরক্ষিত আছে, যে পাদুকা জোড়া আজীবন বিষ্ণুপ্রিয়া কর্তৃক অর্চিত হয়েছে। শাক্ত, শৈব ও বৈষ্ণব সংস্কৃতির ঐকান্তিক সমন্বয়ে নবদ্বীপ ঐতিহাসিক স্থানে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃত ও ন্যায় চর্চার উপযুক্ত স্থান হিসেবে একদিন নবদ্বীপ শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রাণকেন্দ্র ছিল। নবদ্বীপ বাংলার সেন রাজাদের শাসনকালে (সম্ভবত 1159-1206 সালে) বাংলার সেন রাজাদের রাজধানী ছিল। উল্লেখ্য, 2019 সালে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে নবদ্বীপকে "Heritage Town" বলে ঘোষিত হয়েছে। যাক, নবদ্বীপ পরিক্রমা শেষে আমরা পুনরায় মায়াপুরে ফিরে এসেছিলাম ।

        পরিশেষে গত 16/04/2023 ইং তারিখে মায়াপুর থেকে রাধাগোবিন্দকে প্রণাম জানিয়ে 1 ঘন্টা 20 মিনিটে "INTERLITY Exp" ট্রেনের জার্নি করে আমরা কোলকাতার হাওড়া স্টেশনে আসি ও অদূরবর্তী দক্ষিণেশ্বরে পৌঁছে যাই। মন্দির প্যালেস গেষ্ট হাউসে” রুম ভাড়া করে থাকলাম দক্ষিণেশ্বরে । এখানে আমরা 17/04/2023 ইং এবং 18/04/2023 ইং ঐ দুইদিন অবস্থান করেছিলাম ।

        উল্লেখ্য, 17/04/2023 ইং তারিখে সকালে আমরা মেট্রো ট্রেন সহযোগে চলে গিয়েছিলাম দক্ষিণ 24- পরগণা জেলার অন্তর্গত আলিপুর বুটানিক্যাল ও জুওলজিক্যাল পার্কে । 1876 সালের 1 লা জানুয়ারি ব্রিটিশ প্রিন্স অব্ ওয়েলস 7ম এডওয়ার্ড প্রায় 45 একর এলাকা আয়তনবিশিষ্ট আলিপুর চিড়িয়াখানা উদ্বোধন করেছিলেন । প্রথমেই চিড়িয়াখানার মূল প্রবেশদ্বারে ঢুকে একটি রেস্টুরেন্ট থেকে কিছু জলযোগ সেরে নিয়ে আমরা পরিক্রমা শুরু করে দিলাম । এখানে আমরা প্রত্যক্ষ করেছিলাম শিম্পানি, সিংহ, বাঘ, হরিণ, হাতি, জেব্রা, বানর প্রভৃতি । নানা প্রজাতির পাখিও দেখেছিলাম, যেমন- কালিডা পাখি, Red Data List অনুসারে এরা “Least Concern" পৰ্য্যায়ভুক্ত, “Painted Stork” পাখি । এগুলো ভারত, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাংলাদেশে পাওয়া যায়। এমু পাখি, গ্রেট গ্রীণ ম্যাকাও পাখি (এগুলো Critically Endangered পর্য্যায়ভুক্ত)।

      স্পন-বিল বা খুন্তে বক (Plantalea Leu Coradia), Rosy Pelicam, যা পাঞ্জাব, আসাম ও দক্ষিণ ভারতে পাওয়া যায়। আর আছে সাদা কাস্তে বক বা White Ibis [Threskiornis Aelhiopica] এগুলো নেপাল, বাংলাদেশ, মায়ানমার ও পাকিস্তানে পাওয়া যায়। আর আছে Sulpher Crested Cockatoo বা কাকাতুয়া গ্যালেরিটা - এগুলো নিউ গিনি, অস্ট্রেলিয়ায় পাওয়া যায় ।

         পরের দিন 17/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে এসেছিলাম কোলকাতার হাওড়া জেলার হুগলী নদী (এখানকার গঙ্গা নদী)-র পশ্চিম পাড়ে অবস্থিত স্বামী বিবেকানন্দ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত রামকৃষ্ণ আন্দোলনের মূল কেন্দ্রবিন্দু ও পীঠস্থান সেই বিখ্যাত বেলুড় মঠ। সাংস্কৃতিক সমন্বয়বাদের একটি অনুপম নিদর্শন । শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণের পবিত্র অস্থি কাঁধে করে এনে স্বামী বিবেকানন্দ এই মন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন বলে কথিত হয় । উল্লেখ্য, 1938 সালের 10ই জানুয়ারী মন্দিরের উদ্বোধন হয় । প্রায় 40 একর জমির উপর অবস্থিত বিভিন্ন কক্ষের মধ্যে আছে :- মন্দিরের ভেতরে বেদীর উপর অধিষ্ঠিত শ্রীরামকৃষ্ণের শ্বেতমর্মর মূর্তিটি, বিশাল উপসনাকক্ষ, শ্ৰীমা সারদাদেবীর মন্দির, স্বামী ব্রক্ষ্মানন্দ মন্দির, গ্রন্থাগার, আম্রকানন, পুষ্পোদ্যান ইত্যাদি । গঙ্গার ফুরফুরে বাতাস মন্দিরের গা ঘেঁষে যায়, এতে মন এক অনাস্বাদিত অনুভূতি লাভ করে । ভ্রমণ শেষে আমরা আবার হোটেলে ফিরে এলাম ।

       পরের দিন অর্থাৎ 18/04/2023 ইং তারিখে আমরা চলে গেলাম, শ্রী শ্রী রামকৃষ্ণ স্মৃতি বিজড়িত ও রাণী রাসমণি কর্তৃক নির্মিত কামারহাটি বিধানসভাভুক্ত উত্তর 24 পরগণা জেলাস্থিত দক্ষিণেশ্বরের সেই ভারত খ্যাত ভবতারিণী মন্দির পরিদর্শনে । দক্ষিণেশ্বরের ঐ মন্দিরটি গঙ্গা নদীর (এখানে হুগলি নামে খ্যাত) পূর্ব পাড়ে অবস্থিত । উল্লেখ্য, ব্রিটিশ শাসনকালে 1847 সালে মন্দিরের কাজ শুরু হলেও 1855 সালে মন্দিরের কাজ শেষ হয়েছিল । আমরা লঞ্চে করে সেখানে উপস্থিত হলাম । প্রতিদিন সকাল 6 টা থেকে দুপুর 12 টা এবং বিকেল 3 টা থেকে রাত 9 টা পর্যন্ত মন্দির দর্শনার্থীদের জন্যে খোলা থাকে । সকাল ৪ টায় আমরা সেখানে চলে গিয়েছিলাম । তারপর টিকিট কেটে, মোবাইল ও জুতো বাইরে নির্দিষ্ট সংরক্ষণ-কক্ষে জমা রেখে ফুল-বেলপাতা হাতে নিয়ে মূল মন্দিরে প্রবেশ করে, পুজো দিই । এখানে রয়েছে 12 টি শিব মন্দির, 1 টি রাধাগোবিন্দ মন্দির এবং 1 টি মূল কালি মন্দির । শ্রীরামকৃষ্ণ দেব ব্যবহৃত কিছু স্মৃতিচিহ্ন একটি কক্ষে সংরক্ষিত আছে । পবিত্রধাম বিচার করে অনেকেই দক্ষিণেশ্বরকে “বারাণসীর যমজ শহর” বলে অভিহিত করেছেন ।



ক্রমশ চলবে........ 


সুব্রত রায়

 এক্সপেরিমেন্ট

                                    -----সুব্রত রায়

         খারাপ খবর দ্রুত ছড়ায়। ব্যতিক্রম ঘটলো না এবারও। দলে দলে লোক এসে জড়ো হলো অহর্নিশবাবুর উঠোনে । উঠোন আসলে একটা সেকেলে শব্দ। কথাটার সঙ্গে ব্যক্তি মালিকানার ভাবনা জড়িত। ফ্ল্যাটবাড়ির উঠোন সার্বজনীন। অহর্নিশবাবু এখন এখানেই শায়িত। পুরপরিষদে খবর গেছে, জবাব ভাল আসেনি। শব-গাড়ি পাওয়া যায়নি। ব্যর্থতার এই খবর জনতা লুফে নিলেন। অহর্নিশবাবু সেই আলোচনার তলায় চাপা পড়ে গেল।

       বাঁশ ,দড়ি, চাটাই, কলসী জোগাড় করতে দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়ে গেল। উৎসবের আবহে অহর্নিশবাবু পড়ে রইলেন একপাশে।

        বহন করছে চারজন। এর মধ্যে মাত্র একজন অহর্নিশবাবুর আওলাদ। বাকিদের পেছনে অলরেডি খরচা হয়ে গেছে একরাউণ্ড। যেতে যেতে পাড়ার কাজের মাসি থেকে রাজনীতি ছুঁয়ে মহাকাশ বিজ্ঞান ,সব আলোচনাই শুনতে হল অহর্নিশবাবুকে। সব মিলিয়ে প্রায় পঞ্চাশজন হবে। কথার বৈচিত্রে আবারও একবার হারিয়ে গেলেন অহর্নিশবাবু।

      উনুনে চাপিয়ে সটকে পড়লেন প্রায় সকলে। অফিস, চেম্বার, স্কুল,কলেজ, দেরী হয়ে যাচ্ছে যে। এখন মাত্র দুজন পেইড ডোম ,আর কেউ কোথাও নেই। ওরা এইমাত্র আড়ালে চলে গেছে। উদ্দেশ্য একটু ঢুকুঢুকু। এই সুবর্ণ সুযোগ।দ্রুত উনুন থেকে নেমে চোঁ-চা দৌড় লাগালেনঅহর্নিশ বাবু । পুরপরিষদকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছিলেন মনে মনে ।

রবিবার, ১১ জুন, ২০২৩

মলাট


 

সম্পাদকীয়

       জুনের প্রথম দিবসে ভারতবর্ষে সাধারণত বর্ষার আগমন ঘটে। কিন্তু এবছর বর্ষারানীর আবির্ভাবে অনেক বিলম্ব। বন কেটে নগরায়ন আর যন্ত্রসভ্যতার বিষবাষ্পে আজকের বর্ষা অনেক কিছুই হারিয়েছে। পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জীব হয়েও এর জন্য কি আমরা দায়ী নই? এখনো সময় আছে সচেতন হওয়ার। 

     দাবদাহ গ্রীষ্মে খরতপ্ত রোদে প্রচন্ড দহন দাহনে যখন মানুষ কামনা করে শান্ত নীড়ের স্নিগ্ধতা, তখনই ধরণীর বুকে আনন্দ-ধারার মতো নেমে আসে মেঘমন্দুরা বর্ষা। বর্ষার আগমন আসলে বৃষ্টির মঙ্গলধ্বনি। বর্ষাকাল মানে ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টি। সবুজে সবুজে আর নীলিমায় নীল আমাদের দেশের প্রকৃতি গেয়ে উঠেছে বর্ষামঙ্গল। বর্ষার আগমনে সহসাই মন নেচে ওঠে ময়ূরের মতো করে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠা মন কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে চায় না। নিজের অজান্তেই কেউ গেয়ে উঠে মেঘলা দিনের গান------"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন, কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ। বর্ষা জীবনের স্বপ্ন দেখায়। বর্ষার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা হয়ে ওঠে রূপসী। আমাদের দেশের বৈষ্ণব কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবি-লেখক সকলের মনকে প্রভাবিত করেছে সুন্দরী বর্ষারানী। কবি ও লেখকদের ভাবনায় বিভিন্ন রূপে ফুটে উঠেছে বর্ষার ছবি। আর তাই বর্ষার মঙ্গলময়ী রূপের কথা স্মরণ করে, বিশেষ কিছু করার ইচ্ছা থেকে প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের " বর্ষামঙ্গল উৎসব সংখ্যা ৩"। আমাদের সম্মানিত কবি-লেখকদের লেখনীর ছোঁয়ায় এবং কবি ও প্রচ্ছদশিল্পী কবিতা সরকারের অংকিত প্রচ্ছদে সংখ্যাটি পেয়েছে পূর্ণতা। আজ তবে এটুকুই থাক, বাকি কথা হবে পরে। 


                                                                                                                                                           শুভেচ্ছা, ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধাসহ--------         

  রাজেশ ভট্টাচার্য্য

  সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

অমল কুমার মাজি


 এবার এসো নামি

       -----অমল কুমার মাজি


ক্ষুব্ধ তপন মগ্ন আপন তেজে

রুদ্রবীণায় দীপক ঝঙ্কারিছে

ক্রন্দনরোল উঠিল বিশ্বে বেজে

ভুবন বক্ষে বিষাদ সঞ্চারিছে।



দগ্ধ বৃক্ষ,প্রাণহীন জলাশয়

তপ্ত জৈষ্ঠ্য,করুণ কঠিন ক্ষণ

দীর্ঘ দিবসে কি যেন কিসের ভয় 

কে যেন ক'রেছে ধ্বংসের মহাপণ।



হে আষাঢ় এসো শান্তির বারিধারে

মেঘমল্লারে হোক নব অভিষেক 

ডাকিছে ধরণী তোমারেই বারে বারে।

প্রাণে প্রাণে করো আনন্দ উদ্রেক। 



রমঝম তব বাজিয়ে নূপূর ধ্বনি 

শান্তির বারি বরিষ ধরণী মাঝে

এসো সুন্দর শ্যামল নয়নমনি

সাজাও পৃথিবী নব পল্লব সাজে।।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


 বাদল- ধরা


         -----কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


জানিনে ঠিক 

কোন সময় থেকে 

আছি বসে

তোমার পথ চেয়ে। 

এটা কী 

ঊষা না গোধূলি ছিলো 

তা-ও আজ আর 

পড়ছে না মনে।

কবে যে তুমি 

আমার সর্বাঙ্গে 

দিয়েছিলে শীতল চুম্বন 

আজ আর পারছি না 

মনে করতে। 

তোমার তো তা-তে 

কী আসে যায়? 

আমার উচাটন  

তোমার মনে আনন্দ জাগায়!

গ্রীষ্মের দহন জ্বালা 

শরীরে ফোঁটায় হূল।

বিষফোঁড়া, ঘামাচি,

চুলকানির বাড়ন্তে বাঁধে গন্ডগোল।  

আমার বুকের উপর 

নিজেকে যখন দাও 

উজার করে , 

ময়ূর নাচে রং বেরং এ-র পেখম ধরে। 

তৃষ্ণা মেটায়

তৃষিত চাতক চাতকী,

শীর্ণকায়া নদীও 

হয় রূপবতী  

যৌবনা,গর্ভবতী।

আমি ধরা! 

আমার দেহ- মনের দহন 

তোমার আগমনে হবে দমন। 

তুমি এসো, এসো আমার ই 'পরে। 

হে বাদল! 

আমি তোমারই কল্পনা, 

এসো, এসো 

দু' জনে মিলে আঁকি 

প্রেমেরই আলপনা। 


 

রচনাকাল:- ০৩/৬/২০২৩, শনিবার।

মধুমিতা ভট্টাচার্য


 পুনর্জন্ম হোক

    

      ---- মধুমিতা ভট্টাচার্য


গাছ,মাটি আর জলের বন্দনা করি,

ঘুমের মন্ত্র উচচারণে নেমে আসুক 

পুনর্জন্ম।

আমাকে পাতার দেশে নিয়ে

চলো…

বাতাস আমার অসুখ শুষে নিক,


আমি মাটির কাছে আনত হবো,

পাতার শরীরে এঁকে দেবো

চুম্বন।

   বীজ আহরণ করবো,

মন্ত্রপূত সূর্যকণা পুঁতে দেবো মৃত্তিকার

গর্ভাশয়ে।

জ্যোতির্ময় রায়


 স্পর্শের ক্যানভাসে


                ------জ্যোতির্ময় রায়


ফাগুনপাখির আমেজ নিয়ে বসন্ত আসে ফি-বছর

ফোটে ফুল 

স্তরে স্তরে জমে থাকা ধুলোর পর্দা ছিঁড়ে পথগাছে

আসে মুকুল। 

বসে যাওয়া স্বরে রব আসে শিল্পীপাখির

কুহুতানে শিস  

বসন্তঢাকির

অভ্যস্ত ছবিতে জীবনবসন্তে যৌবনই আগুন 

জ্বলে ফাগুন। 


এ যে সায়াহ্ন 

মাটির পিদিমশিখায় তৃপ্ত

ফি-বছর পলাশ-শিমূলরঙে 

আকাশ দীপ্ত


এবেলা মনরাঙায় ফেলে আসা পট

পাকাচুলে জীবন ছটফট

আছি স্পর্শের ক্যানভাসে

বসন্তবাতাসে।

বিধান চন্দ্র দে


 অবিন্যস্ত রাত

       ----- বিধান চন্দ্র দে


আজ নিদ্রাহীন রাত, 

সতর্ক প্রহরী সদা জাগ্ৰত ৷ 

অনন্ত স্বপ্নেরা উকিঝুকি দেয় 

নিরন্ন হাঁড়িতে। সাজানো কথার 

বর্ম খুলে ফেলেছে অক্ষর__

গণতন্ত্র মানে,মানুষের জন্যে 

মানুষের দ্বারা, মানুষের শাসন।


সবই আজ ছড়ানো অক্ষর। 

অবিন্যস্ত রাত,আলুলায়িত 

প্রহরীরা হেঁটে যাচ্ছে পথে 

আর লিখে রাখতে চেয়েছে 

কয়েকটি যৎসামান্য কবিতা ।

চিরশ্রী দেবনাথ


 কৈলাসহর আমার বাবার বাড়ি


                      -----চিরশ্রী দেবনাথ



কৈলাসহর আমার বাবার বাড়ি

আমি চলে আসার পর কৈলাসহরে প্রতিদিন আত্মহত্যা হয়

এসব আত্মহত্যার জন্য দমকল ছুটে আসে না

দেহ গুলোর পোস্টমর্টেম হয় না

আসলে তাদের দেহই ছিল না

ছায়া আর রোদ দিয়ে তৈরি ছেলেমানুষ শরীর

সংখ্যায় অনেক তারা, 

আমার পঁচিশ বছরের '  আনন্দদুঃখআকাশপ্রবণতা '

যেগুলো এখনো প্রত্যেকদিন আলাদা আলাদা করে মরে যায়

আমি টের পাই, খুব বুঝতে পারি হাওয়ার দিক পরিবর্তনে

দুহাত বাড়িয়ে এই চির অশরীরীদের মুঠোতে বন্দী করে, নোনা জল ঢালি

কৃত্তিকা ভট্টাচার্য

                       তুলির আঁচড়ে
 

জয়ন্ত দেবনাথ


 আমার নবার্ক

           ------জয়ন্ত দেবনাথ


কবিতাকে পাই না খুঁজে

তুমি তাকে চাও। 

ছন্দ ছাড়া লেখা-কথা, কাব্যের স্বাদ পাও। 

ছন্দ যদি বা হল, নেই কোন অর্থ, 

তবু হ'তে হবে কবি, নেই কোন শর্ত। 

ভস্মেতে ঘি ঢেলে ছাঁইতে রত্ন খোঁজ! 

যার নেই কোন বোধ, তাকেও 'বিজ্ঞ'বোঝ! 

যে ফুলে সুবাস নেই পাঁপড়ির রঙ দেখ, 

যার কোন জ্ঞান নেই, তার থেকেও কিছু শেখ! 

যে কথা হল গাঁথা নেই রস-অর্থ । 

এখানেই সার্থকতা এ আমার 'নবার্ক'।

অনুশ্রী গোস্বামী


 অনন্ত তৃষ্ণা


       -----অনুশ্রী গোস্বামী



অনন্ত সময়ের অনন্ত তৃষ্ণা

 জ্বলন্ত প্রদীপ আধারের নিশানা

তোমার শহরের খবর রাতের প্রহরী জানে

আমাকে খোঁজার আর নেই কোন মানে।

অমলেন্দু চৌধুরী


 হে বন্ধু 


      -----অমলেন্দু চৌধুরী


 হে মানব, 

উঠো জাগো করো নাকো ভয়, 

তোমা ধনে তুমি ধনী, 

করো দারিদ্রতা জয়। 

জাগো জাগো, বিকশিত হও 

এই জ্ঞানের পাড়ে, 

যতো খেদ অভাব, বিসর্জন করো 

অজ্ঞানের সরোবরে। 

বৃথা ভয়, সকল হবে ক্ষয় যতো 

যতো বলুক লোকে, 

নিন্দুকের পাল্লা ভারী, 

বলে বলুক লোকে নিন্দুকে। 

ঈর্ষা কিছু আসে আসুক, 

করো না তুমি ভয়, 

কর্তব্যের পথে চলো,


হবে হবে জয় নিশ্চয়। 

দেহ আছে মৃত্যু আছে, 

আছে জগত খেলা, 

জাদুকর জাদু করে করে, 

এ ভূবন মেলা।


নদী হয়ে মিলে যাও, 

যাও তোমার মন্থন সাগরে, 

তুমিই অশান্ত তুমিই প্রশান্ত, 

নীলাচল লীলা করে। 

ত্যাগ দাও সেবা দাও, 

হও হও তুমি নিৰ্ভীক,

তুমিই এ সকল সকল, 

জগত তোমাতে শিক্ষা নিক।

নিরঞ্জন দাস


 বৃষ্টি কাব্য


     ----নিরঞ্জন দাস


চলন্ত ট্রেনের কামড়ায় পাহাড় দর্শন। 

নীচে রূপালী নদী। 

আকাশে মেঘের হাতছানি, 

বৃষ্টি হয়ে ঝরবে সহসা। 

তপ্ত হৃদয়ে কিছুটা স্বস্তি। 

এসো বৃষ্টি অঝোর ধারায়। 

বৃষ্টিস্নাত করো মন। 

মনে পড়ে পরিযায়ী হৃদয়ে, 

ভালবাসার বাইশে জুন।

কবিতা সরকার


 বৈতরনী

                 -----কবিতা সরকার


বইছে জীবন ভিন্ন খাতে

অচেনা কোন ভৈরবীতে। 

দিচ্ছে পাড়ি শূন্য হাতে 

না জানি কোন গন্তব্যতে। 

চলছে প্রয়াস গড়ার সাথে 

আপন হাতে জগন্নাথে, 

মেলে না হিসেব সাঁঝবেলাতে

বিজ্ঞ ছাড়া সেই হাতে।

মনের মাঝে স্বপ্নগুলো 

ভাঙছে যখন জলের স্রোতে, 

জানি সে আবার ফিরবে ঘরে

গহন পাথরে ধাক্কা খেয়ে।

রাজেশ ভট্টাচার্য্য


 শ্রীর আতঙ্ক


          ------রাজেশ ভট্টাচার্য্য


স্টেশনে হঠাৎ দেখা। 

সমান্তরাল পাতা ইস্পাত চকচক রেলের উপর

চলন্ত কামরায় আছি 

শ্রীময়ীর সাথে। 


জানতাম না সুন্দরী এখন মায়ের ভাষাতেই 

স্নাতকোত্তর হচ্ছে। 

কথায় কথায় জীবনানন্দের রূপসী বাংলার 

বর্ষাকে সুন্দরী বলায় তার অভিমানী জিজ্ঞাসা : 

বাস্তবিকই কি বর্ষা সুন্দরী?


অস্বীকারের উচ্চারণ ফুটলো না আমার। 

চমকে বিদ্যুৎ চোখ বুঝতেই

নিষিদ্ধ অন্ধকারে চলে রাত্রি যাপন, 

আতঙ্কিত শ্রী। 

বর্ষার আরো এক রূপ

আমার পাশাপাশি আসনে । 


শ্রী রূপের আরেক অবগাহন ।





রচনাকাল:- ২৯/০৫/২০২৩ ইং সোমবার

শান্তনু মজুমদার


 দেজা ভ্যু


             --------শান্তনু মজুমদার


      শ্বেতা প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে গাড়িতে গিয়ে উঠে বসলো।

অনিরুদ্ধ কিছুক্ষন বাইরে ইতস্তত হাঁটাহাঁটি করে গাড়িতে এসে বসলো। আসলে সিগারেট খাবার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু সাহস করে নি আর।


 শ্বেতা - আর কোনোদিন শাড়ি কেনার সময় তোমাকে অন্তত সাথে আনবো না অনি। এক ঘণ্টা দোকানে থেকেও তোমার জন্যে আজ আমার কাপড় কেনা হল না।

অনি - তুমি ভুল বলছ। এর আগে কি আমরা কখনো এক সাথে কাপড় কেনাকাটা করি নি ? আজ তোমার দোকান সিলেক্সান ভুল ছিল। আর শাড়ি যাই দেখছিলে, সব ডিজাইন অলরেডি তোমার আছে। আমি বলছি, তুমি বাড়ি গিয়ে মিলিয়ে নিও।


অনিরুদ্ধর গাড়ী চালাতে চালাতে কথা বলার ফাঁকে বার বার মনে হচ্ছিল যে এই একই বিষয় নিয়ে গাড়িতে বসেই শ্বেতার সাথে এর আগেও কোন এক দিন তার ঝগড়া হয়েছিল।


আজ পুরো শহর এক ভিন্ন অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়ে রইল। লোকাল থানার অন্য পুলিশ কর্মীদের মধ্যেও ক্ষোভ দেখা গেল। শহরের নিউজ চ্যানেল গুলোর আজকের ব্রেকিং নিউজ এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মা।

বিকেল পাঁচটায় পুলিশ কমিশনারের রুমে অনিরুদ্ধকে হাজির হতে হল সাস্পেন্শনের ভয় মাথায় নিয়ে।


কমিশনার - ঠিক কি হয়েছিল আমাকে একটু খুলে বলো তো। তোমাকে সাসপেন্ড করা ছাড়া আর তো কোন রাস্তা দেখতে পাচ্ছি না মিডিয়াকে শান্ত করার জন্যে। উপর মহল থেকেও চাপ আসছে আমার উপর।

অনিরুদ্ধ - স্যার আমার ভুল হলে অবশ্যই আমাকে শাস্তি দিন। কিন্তু সাংবাদিক আমার পূর্ব পরিচিত। তাকে আগে আমি অন্য কোন অপরাধে গ্রেপ্তার করেছি। তাই আজ ওই মন্ত্রীর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তাকে সন্দেহজনক অপরাধী হিসেবে এরেষ্ট করি। তর্ক করছিল, তাই গায়ে হাত তুলি।

কমিশনার - কোথায় সেই সাংবাদিকের নামে তো কোথাও কোন পুলিশ রেকর্ড নেই। আর সে মাত্র এক মাস হয়েছে পশ্চিম বঙ্গ থেকে ত্রিপুরায় এসেছে সাংবাদিকতা করতে।

অনিরুদ্ধ - সেটাই স্যার আমি ভাবছি। আমি নিজেই কেলকুলেশন মেলাতে পারছি না। বোধহয় আমার কোথাও কোন ভুল হয়েছে।

কমিশনার - দেখো অনিরুদ্ধ, তুমি আমার ছেলের বয়সি। তোমার আগের ট্র্যাক রেকর্ড ভালো। খুব সামনেই তোমার প্রমোশন। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে তোমার কিছুদিনের রেস্ট প্রয়োজন। তুমি আজই এক মাসের ছুটির দরখাস্ত দাও। সাংবাদিক হেনস্থার ব্যাপারটা আমি সব সামলে নেবো।

অনিরুদ্ধ - ধন্যবাদ স্যার।


মিডিয়া যেমন কাউকে লোকের কাছে মহান হিসেবে তুলে ধরতে পারে, ঠিক তেমনি যে কোন কাউকে সমাজের কাছে নামিয়ে দিতেও দু-দিন সময় লাগে না। অনিরুদ্ধর ঘনিষ্টজনরাই যেন তার থেকে অনেক দূরে চলে গেছে। তবে এই খারাপ সময়ে শ্বেতা নিজের অনির হাত ধরে আছে, তা যতই সাংসারিক খুঁটিনাটি ঝগড়া থাকুক।

শ্বেতা অনেকদিন ধরেই তার প্রাণপ্রিয় মানুষটির কিছু ব্যাপার লক্ষ করছে আর আজ অনিকে একটু আদর যত্ন করে বুঝিয়ে বলায় অনিও সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে যেতে রাজি হয়। নিজেদের গাড়ী করেই রয়ানা হয়।


পুলিশ কোয়ার্টার থেকে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত যাবার রাস্তায় ইকো পার্ক আর স্টেডিয়ামের মাঝের রাস্তাটা বেশ নীরব আর ফাঁকা থাকে দুপুরের দিকে। সেই জায়গাটায় গাড়ী আসতেই সামনের চাকা বিকট শব্দে ফেটে যায়। কিন্তু অনি গাড়িতে স্টেপনি থাকা সত্ত্বেও গাড়ী থেকে নামে না বেশ কয়েক মিনিট গড়িয়ে গেলেও। শ্বেতা বিরক্ত হয়ে গাড়ী থেকে নামতে চায়। কিন্তু অনি নিষেধ করে। ঠিক সেই মুহূর্তেই বিকট শব্দে গাড়িতে একটা গুলি এসে লাগে। অনিরুদ্ধ শ্বেতাকে নিয়ে সিটের নিচে ঝুঁকে পরে। ঠিক পর মুহূর্তেই আরো কয়েকটা গুলি এসে লাগে। অনি শ্বেতাকে থানায় ফোন করতে নির্দেশ দেয়। ছুটিতে থাকায় নিজের সার্ভিস রিভলভার সাথে না থাকলেও নিজের ব্যক্তিগত পিস্তল সাথেই ছিল। তা দিয়েই সে অনুমান করে দুটো গুলি ছুরে। অন্তত সে যে সসস্ত্র অবস্থায় আছে এবং লড়াইটা এত সোঝা নয় সেটা জানান দিতে এবং তাতে কাজও হয়। ইতস্তত আরো কয়েকটা গুলি গাড়িতে এসে লাগলেও গাড়ির সামনে কেউ আসে নি। ঠিক দশ মিনিটের মাথায় লোকেল থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পরে। গাড়ির আশপাশে প্রচুর বুট পিন পাওয়া যায়। অনিরুদ্ধ গাড়ী থেকে বেরোলে নির্ঘাত মৃত্য ছিল।




আর ডাক্তারের ওখানে যাওয়া হয় নি। বিভিন্ন খুফিয়া সোর্স কে কাজে লাগিয়ে রাতেই দুজন অপরাধীকে বন্দুক সহ পুলিশ গ্রেপ্তার করে, যারা অনেকদিন ধরেই এস.পি. অনিরুদ্ধ শর্মাকে প্রাণে মারার সুযোগে ছিল। পরের দিনের প্রভাতী পত্রিকায় সাহসী পুলিশ অফিসারের ছবি। মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত তার কুশল জানতে ফোন করেছেন।

আর দুদিনের মধ্যেই অনিরুদ্ধর ছুটি শেষ হচ্ছে। শ্বেতা অনিকে জিজ্ঞেস করেছিল গাড়ী থেকে সে নামে নি কেন। উত্তরে অনি শুধু বলেছিল, যে ঘটনা টা ঘটেছে সেই ঘটনার সাথে সে পূর্ব পরিচিত। শ্বেতা আর কিছু বলে নি অনিকে। আর দ্বিতীয় বার ডাক্তারের কাছে যেতেও জিধ করে নি। শুধু ঠাকুরকে প্রণাম জানিয়ে বলে, ঠাকুর তুমি যা কর ভালোর জন্যেই কর।

হেমন্ত দেবনাথ


 বেড়িয়ে পড়লাম সবুজের নেশায়


                               ------ হেমন্ত দেবনাথ


"বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে

বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে 

দেখিতে গিয়েছি পর্বতমালা- 

দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু। 

দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া ............


     সত্যিই তো, প্রকৃতির বহি:সৌন্দর্য সকলের দৃষ্টিতে পড়ে, কিন্তু তার অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারে ক'জন ? একমাত্র সুন্দরের পূজারীরাই এর অন্তঃস্বরূপ উপলব্ধি করতে পারেন । তার জন্যে হৃদয় লাগে, লাগে অনুভূতি । প্রাত্যহিক জীবনের একঘেয়েমিয়তা ও কর্মব্যস্ততা থেকে সাময়িক মুক্তি লাভের জন্যেই তো মানুষ সুযোগ পেলেই ছুটে চলে যেতে যায় প্রকৃতির বুকে, নীলাকাশের তলে। সবুজ বনানী, সমুদ্র, মন্দির, গাছগাছালির নয়নাভিরাম দৃশ্য দেখে সে লাভ করতে চায় মনের অনুপম প্রশান্তি। গত 12/04/2023 ইং তারিখ সকাল 9.35 মিনিট ভ্রমণের উদ্দেশ্যে আমরা তিনটি পরিবারের (আমি ও আমাদের পরিবার, ছোড়দা ও তাদের পরিবার, অনুজ-প্রতিম বাপ্পী ও তাদের পরিবার) ছোটো-বড়ো মোট 11 জন সদস্যবিশিষ্ট একটি “ভ্রমণ টীম" হিসেবে বেড়িয়ে পড়েছিলাম ।

       ধর্মনগর রেলওয়ে স্টেশন থেকে পশ্চিমবঙ্গের নবদ্বীপগামী ট্রেন AGTL KAA, SPL Sleeper এ করে আমরা আমাদের ব্যাগ, লাগিজ সবকিছু নিয়েই চেপে বসি। ট্রেন ছাড়লো সকাল 10.03 মিনিটে । দেখতে দেখতে অনেক জলাশয়, জনপদ, বৃক্ষরাজিসহ প্রায় 1340 কিমি পথ পেরিয়ে পরের দিন 13/04/2023 তারিখে বেলা 12.20 মিনিটে আমরা নবদ্বীপ রেলওয়ে স্টেশনে এসে পৌঁছলাম । ছোড়দা স্টেশনে নামতেই জলের বোতল, কিছু টিফিন, শশা, ডাবের জল ইত্যাদি ব্যবস্থাপনা করলেন। কিছুক্ষণ পর আমরা নবদ্বীপ গঙ্গা নদী (এখানকার হুগলী নদী)-র লঞ্চের ফেরী ঘাটে এসে লঞ্চের টিকেট কেটে আমরা সবাই লঞ্চে চড়ে বসলাম । আমাদের এবারকার যাত্রাস্থল হল নবদ্বীপের শ্রীধাম মায়াপুর ।

       মায়াপুরে পৌঁছে এখানকার “গীতা ভবন” নামক পান্থনিবাসে আমরা সবাই তিনটি রুম ভাড়া নিলাম । যথাসময়ে স্নানাদি সেরে দুপুরে “প্রসাদের কুপন কেটে আমরা "অন্নপ্রসাদ গ্রহণ করলাম। জার্নিতে শরীরের উপর অনেক দখল যাওয়াতে সবাই বিশ্রাম নিতে গেলাম । মায়াপুরে আমরা 13/04/2023 ইং থেকে 15/04/2023 ইং পর্যন্ত এই তিনদিন অবস্থান করেছিলাম ।

       মায়াপুর হল পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার কৃষ্ণনগর সদর মহকুমার অন্তর্গত নবদ্বীপ ব্লক এলাকার আওতাধীন একটি স্থান । আন্তর্জাতিক কৃষ্ণভাবনামৃত সংঘ (ISKCON) কর্তৃক পরিচালিত বিশ্বের সর্ববৃহৎ কৃষ্ণমন্দির । (উচ্চতা প্রায় 350 )। ISKCON-এর সদর দপ্তর হল এখানকার “চন্দ্রোদয় মন্দির”। মায়াপুরে আছে পুষ্পোদ্যান, সুরম্য পার্ক, ভজনালয়, প্রসাদ ভবন, শ্রীল প্রভুপাদের পুষ্পসমাধি মন্দির, গীতা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্রহ্মজিজ্ঞাসা কেন্দ্র, শাস্ত্রোধ্যাপনা কেন্দ্র, গোশালা, বৈদিক প্ল্যানেটোরিয়াম ইত্যাদি । এগুলোর প্রতিটিই দর্শনীয় স্থান । এখানে একটি নির্মীয়মাণ মন্দির আছে, মূল রাধা-গোবিন্দের মন্দির হিসেবেই এটি চিহ্নিত হবে । আগামী 2024 সালের ডিসেম্বর মাসে রাষ্ট্রীয় কোনো কর্তা-ব্যক্তি কর্তৃক মন্দিরটির দ্বারোদ্ঘাটন করা হবে বলেই শোনা গেছে।

      মায়াপুরে পদ্মভবন, ভষ্মীভবন, চৈতন্যভবন, অশ্বভবন, গদাভবন, গীতাভবন ইত্যাদি নানা নামের ভবন আছে । এদের কোনো কোনোটি পান্থনিবাস, আবার কোনোটি প্রসাদভবন । ব্রহ্মমূহুর্তে পঞ্চপ্রভু ও রাধাগোবিন্দ মন্দিরে কীর্তন হয়, প্রার্থনা হয়ে থাকে । আবার প্রতিদিন সন্ধ্যে বেলায় ঐ মন্দিরগুলোতে আরতি, কীর্তন ও প্রার্থনা করা হয় । এতে সবাই পবিত্র মনে যোগ দিতে পারেন। রাত 8 থেকে 8.30 মিনিট পর্যন্ত এবং রাত 8.30 মিনিট থেকে 9.30 মিনিট পর্যন্ত প্রসাদ বিতরণ করা হয় । মায়াপুরের পরিবেশ খুবই পরিচ্ছন্ন, মনোমুগ্ধকর ।


ক্রমশ চলবে....... 

শান্তশ্রী মজুমদার


গ্রীষ্মের মেঘ 

        

          ----শান্তশ্রী মজুমদার


       গ্রীষ্ম কে ভালোবাসে এমন লোক কি সত্যি কেউ আছে! আমি খোঁজ পাইনি তার। গা জ্বালা করা রোদ, অসহ্য গরম, তৃষ্ণার্থ গাছপালা,শুকনো মনু নদী -----আমার মনের নদীতেও বালির চর ফেলে দিয়েছে। 

       গ্রীষ্মের কোনো ভালো গুন আছে কি না তা নিয়ে আজ ভাবতে বসেছি। রসালো আম, মিষ্টি লিচু, আর পাকা কাঁঠাল ছাড়া গরম কালের কোনো অবদান আমি খুঁজে পাই নি। 


       অপেক্ষা শুধুই অপেক্ষা ---এতোটুকু বৃষ্টির! রিমঝিম সুরে ঝরে পড়ুক আমার গাছেদের শরীরে। সবুজ সবুজ পাতাগুলো সিক্ত হোক মেঘ গলা জলে। হিমেল মেঘকে স্পর্শ করেছিলাম হিমালয়ে। মেঘের সাথী হয়ে বহুবার উড়ে বেরিয়েছি নীল আকাশে। 


        মেঘের যে কতো রূপ! সাদা তুলোর মতো মেঘ, পাখির পালকের মতো মেঘ,মুক্তোর মতো মেঘ। সূর্য রশ্মির আলোয় কখনো মেঘ স্বর্ণালি, কখনো রক্তিম। 


      মেঘ গলে গলে যখন বৃষ্টি নেমে আসে আমার বাগানে তখন তাকে স্পর্শ করে আনন্দ নিলাম দেহে মনে। 

      বহু বহু দূর থেকে মেঘ এসেছে আজ আমার সাথে গল্প করতে। 


      বৈশাখের শুরু থেকেই আকাশ মেঘলা হয় রোদ লুকিয়ে পরে মেঘের আড়ালে। কিন্তু পরক্ষণেই গণগণে সূর্য মেঘ সরিয়ে হাজির হয় মাটির প্রাণ শুষে নিতে।


      আমাদের জনপদে প্রতিটি ঋতুই আসে তার নিজস্বতায়। বৈশাখ আর জৈষ্ঠ্যমাসে তীব্র দহন তো থাকবেই। 

     কাল বৈশাখীর রুদ্ররূপ, ঘন কালো জটাজাল উড়িয়ে উন্মত্ত নৃত্য শুরু হলে মনে পড়ে আমাদের রবীন্দ্রনাথকেই ----আনো আনো 

আনো তব প্রলয়েরও শাঁখ 

মায়ার কুঞ্ঝটিকা যাক্ দূরে। 


     মেঘ আর বৃষ্টিকে ছুলে মনে হয় মায়ের স্পর্শ। মা যেন অন্তরে ছড়িয়ে দিয়ে গেলো মমতার আলো।আমি মেয়ের মা, গাছেদের মা, পথে ঘুরে বেড়ানো গরুদের মা,বৃষ্টি ভেজা অনাথ বেড়াল ছানাদের মা, বারান্দার কোনে যে কুনো ব্যাঙটা থাকে তারও মা। অদ্ভুদ একটা মাতৃভাব মনকে স্বর্গীয় আনন্দে ভরিয়ে তোলে। 


       রিমঝিম বৃষ্টি পড়ুক সবুজ সবুজ পাতার গায়ে। হাওয়ার দোলায় ঝিরিঝিরি পাতাগুলোর সাথে আমিও গাই ---


যুঁথি বনে ঐ হাওয়া 

করে শুধু আসা যাওয়া 

হায় হায় রে, দিন যায় রে 

ঘরে হা হা করে গো মন।
 

সুব্রত রায়


 ভারসাম্য


     ----- সুব্রত রায়



        হরের ভেতর যেন এক টুকরো গ্রাম। গ্রামে নদী থাকে, শহরে নদী থাকতে পারে। যদি না থাকে তবে খাল নদীর অভাব পূরণ করতে চায়।

        শহর গ্রামের মতো ততটা উদার নয়। খালের ধারে ঘর বসানো অবৈধ। পুর পরিষদের লোকজন এসে ভেঙে দেয় বিনা নোটিশে। কোনো এক অজ্ঞাত কারণে একটা ঝুপড়ি টিকে গেছে। সবাই জানে এটা বেড়ালবুড়ির ঝুপড়ি। হ্যাঁ,বেড়াল ছাড়া বেড়ালবুড়ির কেউ নেই।

       শহরের যত নোংরা, বয়ে নিয়ে যায় খালের জল। একেবারে ধার ঘেঁষে কোনোরকম দাঁড়িয়ে আছে বুড়ির অস্থায়ী চালাঘর। হরেক রঙের পলিথিনের টুকরো চাল থেকে বেড়ার গায়ে ঝুলছে । সব মিলিয়ে ঝুপড়ির আকৃতি তাই অনির্দিষ্ট। 

         সকালে বেরিয়ে যায় বেড়ালবুড়ি । শহরের ঘরে ঘরে ভিক্ষে করে সারাদিন। না, একটু চাল ছাড়া আর কিছুই নেয় না সে। ঘরে ফেরার পথে বাজারটা ঘুরে আসে শেষদিকে। সেখান থেকে সংগ্রহ শুধু শুকনো মাছ ।দোকানিদের জানা আছে। ওরা বেড়ালবুড়ির জন্য ফেলে দেওয়ার মতো শুকনো মাছগুলো রেখে দেয়।

          সংখ্যাটা ঠিক কত, বুড়ি নিজেও বলতে পারবে না। রান্না করে খেতে দিলে মনেহয় বেড়ালের বুঝি মেলা বসেছে।

         এখন আসল কথাটা বলি ।অনেক আগেই ভিটেছাড়া করার কথা ছিল বেড়ালবুড়িকে ।একদিন কাউন্সিলর এসে দেখলেন, এ তো কোনো বাড়ি নয় বরং বেড়ালের অনাথ আশ্রম। বুড়ির সঙ্গে কথা হল। কাউন্সিলার বাবুর বিশাল চালের গুদাম। ইঁদুরের উৎপাতে তিনি ব্যতিব্যস্ত। সব শুনে দুটো শিকারি মেনি পাঠিয়ে দিল বেড়ালবুড়ি ।সেই থেকে বুড়ি ওখানেই আছে। কেউ কিছু বলে না আর।

শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

মলাট


 

সম্পাদকীয়

     কটি ভালো বই  সত্যিকারের ভালো বন্ধু। একটি ভালো বই একজন মূর্খ অন্ধকারাচ্ছন্ন বর্বরকেও একজন আদর্শ মানুষে রূপান্তরিত করতে পারে। আজকাল  লেখক -কবির সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকটাই বেড়েছে কিন্তু  পাঠকের সংখ্যা কমছে দিন দিন। বই মেলাতেও পাঠক এবং ক্রেতা আজ সংখ্যালঘু। ছবি তুলতে আর ঘুরতে যারা যান তারাই আজ সংখ্যাগরিষ্ঠ। 

নন্টে ফন্টে, চাঁদ মামা, ঠাকুমার ঝুলি, গোপাল ভাঁড় থেকে শুরু করে, শরৎচন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র জীবনানন্দ, রবীন্দ্রনাথ  আরো আরো বই যেন নেশার মতো টেনে নিয়ে যেত  আগেরকার দিনে।  আজ সবই স্মৃতি।

  এখন এটাই প্রশ্ন------ কেন এমন হল? কেন হারিয়ে যাচ্ছেন পাঠক?  বই পড়ার আগ্রহ প্রতিনিয়ত কমছে কেন?  

     এখনো সময় আছে; এর মূল কারণ খুঁজে বের করে বই এবং মানুষের  মধ্যে সুসম্পর্ক স্থাপনের মধ্য দিয়ে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের ঝুঁকি থেকে মুক্ত করার। এর জন্য প্রয়োজন সমাজের প্রত্যেক সচেতন মানুষের এগিয়ে আসা।

      প্রিয় পাঠক প্রতিটি  সংখ্যা প্রকাশের পর আপনাদের সার্বিক সহযোগিতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় আমরা অভিভূত। আর তাই হয়তো আপনাদের ভালোবাসার টানেই আবারো হাজির হতে পেরেছি অনেক আশা ও স্বপ্ন জড়িত "সাহিত্য নয়ন" - এর "নববর্ষ সংখ্যা ৩" নামক বিশেষ সংখ্যা নিয়ে। আপনাদের নিরন্তর সাহচর্যে সমৃদ্ধ "সাহিত্য নয়ন"-এর এই পথ মসৃণ ও সুগম হোক। শুভকামনা রইল নতুন বছরের শুভারম্ভে।


ধন্যবাদ শ্রদ্ধাসহ-----

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন

অমল কুমার মাজি


       শ্রীচরণেষু মা


                     -----অমল কুমার মাজি


দুষ্ট যখন দেশটাকে আজ

ক'রছে শ্মশান-ভূমি

দশ হাতে দশ অস্ত্র নিয়েও

চুপ কেন মা তুমি?


বল মাগো তুই নীরব কেন

নারীর লাঞ্ছনাতে

দানব গুলোর মুন্ড কেটে

ফেল না অস্ত্রাঘাতে।।


সকাল-সন্ধ্যে বারুদ-বোমার

গন্ধে বাতাস ভারী

সৃষ্টি কি আজ ধ্বংস হবে?

আভাস দেখি তারই।।


স্বাধীণ হ'য়েও নতুন ক'রে 

মানুষ পরাধীন 

বিদ্বজনের নেই প্রতিবাদ 

এমন অর্বাচীন।।


নেতার মুখে ফাঁকা বুলি

মিথ্যা প্রতিশ্রুতি 

সুযোগ নিতে মোসাহেবরা

ক'রছে স্তব ও স্তুতি।।


উত্তর থেকে দক্ষিণে আজ

 ব'ইছে রক্তধারা

নেই প্রতিকার,প্রতিটি দিন 

কাঁদছে স্বজন হারা।।


একটা মহিষাসুর মেরেই

কেন মা তুই চুপ

কৃপাণ হাতে ধর না মাগো

চামুন্ডারই রূপ।।


মহাকালের কোল ছেড়ে আয়

এবার মহাকালী

ভয়ঙ্করী রূপ দেখা তোর

আবার মুন্ডমালী।।


ছদ্মবেশী দানব গুলোয়

শেষ ক'রে দে আজ

শান্তি ফিরুক দেশের বুকে 

পালাক গুন্ডারাজ।।

কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


                  চক্রব্যূহ 


                       ------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য


কত প্রতিভা হয় শিকার অহরহ মিথ্যা  

বিচার বিবেচনার চাপে । 

অঙ্কুরেই ঘাস নাশের ঔষধ ছড়িয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হয় 

এখন আর ডাকবি কাকে? 

ভেবেছিলিস হবি  

বিটপ কিংবা মহীরুহ ;

অঙ্কুরেই তো দেখেছিস 

এতো সহজ নয় ভেদ করা 

প্রতিভা নাশের চক্রব্যূহ। 

প্রতিভার বীজে ঐ দিন

অনেকেই দেখেছিল ;---

ভালো,ভালো আরো ভালো 

বিশাল স্বপ্ন। 

কিন্তু মিথ্যা স্তাবকতার 

নিষ্ঠুর আঘাতে ---

বিশাল স্বপ্ন আজ চূর্ণ বিচূর্ণ 

ঘূর্ণির দুঃস্বপ্ন। 

তবুও ;

সূর্যের আলোর পরশ,

আগামী বর্ষার ছোঁয়ায় হয়তোবা 

আবারও হতে পারে

প্রতিভার অঙ্কুরোদ্গম ;-

এ স্বপ্ন নিয়েই চলছে 

আশার প্রদীপের জ্বলন।



 

১৬/০৩/২০২৩, বৃহস্পতিবার।

হেমন্ত দেবনাথ


        গোলাপ যায় মুছ্ড়ে


                               -----হেমন্ত দেবনাথ  


চরম আঁধারে আতরের গন্ধ যায় উবে। 

গভীর প্রণয়ের গোলাপ কখনও

                               যায় মুছড়ে - 

জীবনপথ-রেখাটি যায় দুমড়ে। 

ওদের জন্যে বুকে বড়ো বাজে। 

'নিরুপমারা' আজো আছে ।


লালসার ভাবনাই খালি-- 

প্রণয়ের গুড়ে বালি। 

অর্থলোভীদের লালসা যায় না 

পরিণয়ের মধুময় সম্পর্ক তো থাকে না। 

দর কষাকষি-----

'পাওনা' পেলে বেজায় খুশি । 


নইলে 'প্রণয়ের মানুষ'টা হয় খুনী

নিরুপমারা যতই হোক গুণী। 

পাওনা নেই নিরুপমাদের জীবন ভার যাবে-- 

প্রণয়-পক্ষের কুমন্ত্রণায় --

অপমানে-গঞ্জনায় আর--

মৃত্যু-লাঞ্ছনায়।

সুব্রত রায়


                                                                       সমীক্ষা


                                                                                 ---- সুব্রত রায়


    সেটা ছিল আরেক বসন্ত-বিকেল। এখানে ওখানে সবুজ রঙ করা কয়েকটা কাঠের বেঞ্চ। দশতলার উপর ষ্টিলের ফ্রেমে আটকানো 'মরমী হাউজিং কমপ্লেক্স' লেখাটা দিনের বেলা দেখা যায় না। তবে রাত হলে গ্লো সাইন জ্বলজ্বল করে বহুদূর থেকে। 

   চারপাশে সুউচ্চ সার দেওয়া অসংখ্য ফ্ল্যাট-বাড়ি। সব মিলিয়ে কত লোক থাকে অতনুবাবু জানেন না। কমপ্লেক্সের সামনের দিকে খোলা এই পার্কটা ভাল লেগেছিল সবচেয়ে বেশি। চাকরির শেষ বছর বুক করেছিলেন। কোয়ার্টার ছেড়ে সোজা মরমীতে।

  সময় ভালই কেটে যায় এখন। সবমিলিয়ে বুড়োদের সংখ্যাটা একেবারে কম নয়। গল্পগুজবে কী করে সন্ধ্যা নামে বুঝা যায় না। সূর্য ডুবতে না ডুবতে ফা ফা করে খুটির মাথায় জ্বলে উঠে সারি সারি সোডিয়াম ভ্যাপার ল্যাম্প। সন্ধ্যা আর রাতের মিশে যাওয়াটা আর দেখা হয় না। আকাশ তারাহীন, কেমন ঘোলাটে একটা আস্তরণ ঝুলে আছে মনে হয়।

   এসব আপাত অপ্রাপ্তিকে ভুলে যাওয়াই ভাল। নিজেদের অতীত  জীবনের হাজারো গল্পে নিজেকে  উজ্জীবিত করে রাখা বরং বুদ্ধিমানের কাজ। রক্তচাপ আর ব্লাড সুগারের রিপোর্ট পরীক্ষা করতে করতে ডাক্তাররা আজকাল নষ্টালজিক হতে বারণ করেন।

  এসব ভাবনার ফাঁকে কখন যে শ্রীমন্তবাবু এসে গেছেন, খেয়াল ছিল না।

 -আরে মেজর, অমন ঝিম মেরে আছেন কেন? আমি আসতে আসতে একটু হেঁটে নিলেই তো পারতেন। অতনুবাবু ইন্ডিয়ান আর্মিতে ছিলেন। শ্রীমন্তবাবু মজা না করে কোনো কথা বলেন না। প্রাক্তন  কলেজ শিক্ষক শ্রীমন্তবাবুকে এজন্যেই বড্ড ভাল লাগে।

-আর কত হাঁটবো বলুন? ফ্ল্যাট থেকে এখানে পৌঁছতে পাক্কা আধা ঘন্টা। এখন বসতেই ভাল লাগছে। বসুন এখানে। বলুন, আজকে যেন কী শুনাবেন বলেছিলেন।

-হ্যাঁ হ্যাঁ। টেনশন একদম করবেন না। এই ধরুন, একটা পান মুখে দিন। বলছি। বাংলার প্রফেসর শ্রীমন্তবাবু দারুণ গল্প বলতে পারেন। কল্পনা আর বাস্তবতার অদ্ভুত মিশেল তার বলায়। তবে শেষ দিকে একটা ভয়ংকর অনিশ্চয়তায় শেষ হয় সে গল্প। শ্রোতাকে প্রশ্নের মুখে ফেলে দিতে দারুণ আমুদ পান তিনি।

   নিজের মুখের গোটা খিলি গালে চালান করে দিয়ে গল্প শুরু করেন শ্রীমন্ত বাবু।

   তখন আমরা কলেজে পড়ি। বাংলা বিভাগের ছাত্র। যৌবনে কোন বাঙালি কবিতা না লিখে থাকে। ঠিক হ'ল কবিতা লিখতে হবে, তবে গতানুগতিক মোটেও না। প্রথমে ফিল্ড সার্ভে হবে। নানা পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর কবিতা লেখা হবে। সাক্ষাৎকারের অভিজ্ঞতা হবে কবিতার মূল বিষয়।

   তা, খাতা কলম নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম একদিন। গ্রাম থেকে আধা শহর, বাদ গেল না কিছুই। দেখলাম, কৃষক ধান কাটছে। তাকে বললাম, "কিছু বলুন, একটা কবিতা লিখতে চাই।"  সে কোনো উত্তরই দিল না। মুচকি হেসে ধান কাটতে লাগলো ঘ্যাজঘ্যাজ করে।

  এরপর একজন কর্মকার। একই অনুরোধ তার কাছেও করা হ'ল। "দাদা, একটু বলবেন, এ্যাই একটা কবিতা লিখবো আর 

কী।" তিনি জ্বলন্ত চুল্লী থকে ডগডগে লাল লোহার টুকরো বের করে এনে দুমদাম পেটাতে লাগলেন একমনে। উত্তর কিছুই পাওয়া গেল না। এরপর, রজক, ক্ষৌরকর্মি, মৃৎশিল্পী এদের কাছেও যাওয়া হল। ফলাফল এক, সবাই নিজের কাজে মহাব্যস্ত, উত্তর নেই।

    সে যা-ই হোক। কবিতা তো লিখতেই হবে। লেখাও হয়ে  গেল। শর্ত ছিল যাদের সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে কবিতা লেখা হবে, সেই কবিতা তাদেরকেই শোনাতে হবে। জানতে হবে তাদের প্রতিক্রিয়া। অনেক সাধ্যসাধনার পর অবশ্য আনা গিয়েছিল তাদের। ওঁদের বসানো হ'ল। চা মিষ্টিরও ব্যবস্থা ছিল। তা, গালে হাত দিয়ে মনযোগ সহ শুনলোও ওঁরা আমার লেখা কবিতা। 

   সবশেষে প্রতিক্রিয়ার পালা। -আচ্ছা বলুন তো, কবিতাটা শুনে কী বুঝলেন আপনারা? কিছুক্ষণ একদম চুপচাপ। আবারও অনুরোধ করা গেল। ওঁরা প্রথমে  পরস্পর এ ওর মুখের দিকে তাকায়, কিচ্ছু বলে না। অনেক পীড়াপীড়ির পর শেষমেশ, সেলুনের সেই লোকটা উঠে দাঁড়ালেন। - বাবু, একটা কথা, কবিতাটার গভ্ভে মস্ত বড় বড় সব কথা বলা হয়েছে, এ বিষয়ে আমরা একমত। তবে আমরা কেউ কিছুই বুঝিনি।

বিধানচন্দ্র দে


     জীবন সন্দর্ভে 


                   ----- বিধানচন্দ্র দে


জন্ম থেকে মৃত্যু অবধি 

ক্রমাগত সংঘর্ষ আর 

সমঝোতার উপাখ্যান----


জীবন মানে জিগিষা,

জীবন মানে জীবিকা 

জীবনের জন্যে জিঘাংসা 

জীবন থেকেই জিজ্ঞাসা ---


উৎস থেকে মোহনা, আর 

তট চর জলে ভেসে নদ নদী । 

এ আকাশ বাতাস মাটি 

স্পর্শ করে কিয়ৎকাল 

অবগাহনের নাম যদি হয় 

জীবন


তাহলে জন্ম জন্মান্তরের

জীবন জীবনের খেলা 

এক মস্ত প্রতারণা 

স্বপ্নীল ধোঁকা ।

মিতালি দে


  হায় হেন রণঝংকারে 


                      ------ মিতালি দে


সমুদ্র নীলের স্বপ্নীল জগতে

ছোপ ছোপ সবুজে

ধূসর কালো বাদামি ছোট বড় অজস্র পথ ধরে

আমজনতা ছুটে চলে 

শতাব্দীর পর শতাব্দী

শান্তির কোটর ছেড়ে অনির্দিষ্টের পথে

উদবাস্তু সময়ে আকুল অসহায়তায়, 

পেছনে হায়েনার দল

ভারি বুটের শব্দ

প্রবল গোলাবর্ষণে

হিংস্র উন্মত্ততায়

বাতাসে হিসহিস শব্দে

গ্রাম গঞ্জ শহর তুলোট কাগজে ।

যারা সাম্রাজ্য ধরে রাখে

যারা মুষ্টিমেয়

রূপার কাঠি বদলে

যারা সোনার কাঠি রাখে

যারা মানচিত্র পালটায় ইচ্ছে য মতো

ক'জনার খেয়াল খুশি

গনদেবতার ভাগ্য নিয়ন্তা,

তারা হারায় কালের অতলান্ত কালো গভীরে, 

আমজনতা ছুটতে থাকে

পদচিহ্ন আঁকে আগামীর পথে

নদী এসে মেশে যাটির সাথে

মাটি মিশে যায় মানুষের সাথে

মানুষ আকাশ একাকার হয়ে যায়।

ঈশিতা দেবনাথ

তুলির আঁচড়

 

চিরশ্রী দেবনাথ


             দাহ গান


                      -----চিরশ্রী দেবনাথ


হঠাৎ মনে হলো আমার কোনো

লেখাই আসল নয়, আগুন থেকে

জন্ম নিয়ে আসেনি সেই ঢেউ, 

জ্যোৎস্না থেকে চুরি করেছি আলো

জোনাকি থেকে গোপন আলোর

অভিসার, পল্লবিত গাছ থেকে

ছায়ার নরম কৃষ্ণ ইতিহাস

রৌদ্র দগ্ধ দুপুরের হলকা

মুখে মেখে যাকে চলে যেতে

দেখেছি অভিমানে, তার মুখ থেকে

কুড়িয়ে এনেছি দু একটি অঙ্গার

গরিব হয়েছি আজ, হৃদয়ে ধারণ

করেছি গৈরিক, নির্বাণের স্তুতি    

দীর্ঘ রাস্তা একা যাবো, স্বর্ণচোরা

ঘাসে ঢাকা, শস্যের খেতের পাশে, 

ঝড়ের আকাশের নিচে যেদিন মাটি 

গেয়ে উঠবে দাহ গান, বল্কল

খুলে দেখবো অস্তিত্ব বলতে ছিল

খানিকটা বর্ণমালা, শঙ্খমুখের পাতা।

ভবানী বিশ্বাস


                   অভ্যাস


                              ------ভবানী বিশ্বাস



আগে অমাবস্যা রাইতে পাহাড় থেইক্যা

নির্দ্বিধায় কেমন ঝর্ণা আনতাম, 

ডর কারে কয় চিনতাম না। 



মাটি কাইট্যা বানাইতাম পুকুর। 


সারাদিন পরিশ্রম করলেও

দিনশেষে কেমন নিশ্চিন্তে ঘুমাইয়া পড়তাম! 


প্রেশার স্যুগার বাড়লেও এত চিন্তা হইতো না। 


তুমি আইয়নের পর নিজের লেইগ্যা খুব চিন্তা হয়। 

মনটা কেবল কু-গায়, কু-কয়। 


ভাবি, এইভাবে যে 

আমি তোমার অভ্যাস হইয়া গেলাম

আমি চইলা গেলে তোমার কী হইব!

গৌরব নাথ


        শুধু আমাকেই শুনা যাচ্ছে


                                  ---- গৌরব নাথ


বাথরুমে গিয়ে পায়রা হয়ে বাকুম-বুকুম করি

কত কিনা বলি?

একটা শেষ হয় না আরেকটা কিছু বলে ফেলি

যেন কেউ মন দিয়ে আমাকে শুনছে

পৃথিবীর অন্য শব্দগুলো একান্তে মরে গেছে

শুধু আমাকেই শুনা যাচ্ছে

মধুমিতা ভট্টাচার্য


            প্রলাপ


                     ------মধুমিতা ভট্টাচার্য


মন পাগলের ধুম জ্বরে

নকসী কাঁথার তাপ জড়িয়ে 

বেহুশ বাউল প্রলাপ বকে

তিন প্রহরের তেপান্তরে,

চাতক তৃষ্ণা বুক ফাটিয়ে 

চৈত্র আকাশ ছেদ করে,

বাউল আকাশ বাউল বাতাস 

অকাল হেমন্তে ঝড় তোলে,

হাঘরে বাউল তবু

আষাঢ়ে সুখের সাধ করে,

মন পোড়া তাপ শরীরে

ভোর শিশিরের খোঁজ করে,

ধুম জ্বরেতে ঘুম ঘরেতে

গুম হয়ে যায় মনের বাউল,

বালিশ চাপা আকাশ মাপা

এক ফালি মেঘ

টুকরো হয়ে বরফ জমে

রোজ নিয়মের রোদ মাখে।

লোপা চক্রবর্তী


             সাধের খেলাঘর 


                             -----লোপা চক্রবর্তী


ব্যস্ত পৃথিবীতে মনের খোঁজ কেউ রাখে না,

দুঃখেরা আসে বিনা নিমন্ত্রনে।

স্বপ্নের অপমৃত্যু এখানে স্বাভাবিক ঘটনা,

তবুও মন আশায় দিন গোনে।

কল্পনার জগৎ সুন্দর হলেও,

দিন শেষে মেনে নিতে হয় বাস্তবতা।

অলস দুপুরে একটু হাসির খোঁজে,

কেউ কেউ বোনে অলীক রূপকথা।

এই পৃথিবীর সকলেই আত্মমগ্ন,

স্বার্থের খেলায় মাতে প্রিয়জন।

ততোদিনই দাম থাকে তোমার,

যতদিন তোমার প্রয়োজন।

তবুও আমরা সাধের খেলাঘর গড়ি,

খুঁজে ফিরি মন ভোলানো খেলনা।

দিনের শেষে ধরা পড়ে যায় জারিজুরি,

হাসি দিয়ে লোকানো গভীর কান্না।

রাজেশ ভট্টাচার্য্য

 


     স্বীকারোক্তি


               ----- রাজেশ ভট্টাচার্য্য


ময়নাতদন্ত হোক। 

সামনে আসুক কঙ্কাল যত

কবর দিয়েছিলে তুমি।

সরে যাক কালো মেঘের ছায়া। 

পরিষ্কার হোক এখনই.... 



আমার প্রথম মৃত্যুরহস্য।



স্বর্ণপদকের দাবি জানাবো। 

পরিয়ে দেবো তোমার গলায়।

 আমার দ্বিতীয়-তৃতীয় মরণ বার্তা... 

তোমার তুমিকে না চেনালে।




রচনাকাল:- ১৬/০৩/২০২৩ ইং