সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
শুক্রবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২০
সম্পাদকীয়
হেমন্তর শীতের পর এবার শীতের শীতের পালা। পারদ নামতে শুরু করলো সর্বনিম্নের দিকে। কুয়াশার চাদরে ঢাকা দিগন্ত মিটিমিটিয়ে তাকাচ্ছে সূয্যি মামার দিকে। কনকনে এই শীতের প্রভাতে হারিয়ে যায় মন এক স্বপ্নের জগতে। যেখানে ছনের ছাউনি দেওয়া একচালা ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে চা পূর্ণ মাটির পেয়ালায় চুমু দেবো প্রিয়জনদের সাথে।
প্রিয় পাঠক, 'শিশু দিবস' সংখ্যার পর আবারো হাজির হলাম "সাহিত্য নয়ন"- এর নবম সংখ্যা নিয়ে আপনাদের ভালোবাসার টানে। কর্মব্যস্ততাই কর্ম পিপাসু মানুষের প্রথম প্রত্যাশা। কর্মব্যস্ততা মানবজীবনকে করে তুলে বৈচিত্র্যময় ও সুন্দর। আর এই ব্যস্ততায় সময়ের অভাবে বিলম্বিত হলো এবারের সংখ্যা প্রকাশে। এবারের সংখ্যায়ও কলমের কালি দিয়ে মিলন হলো এপার বাংলা ও ওপার বাংলার কবি-লেখকদের সাথে ত্রিপুরার কবি-লেখকদের। কবি-লেখকদের অসাধারণ সৃষ্টি সংখ্যাটিকে অনন্য মাত্রা দান করেছে। প্রচ্ছদ শিল্পী ভাস্কর মজুমদার একটি অসাধারণ প্রচ্ছদ এঁকে সংখ্যাটিকে পূর্ণতা দান করেছেন। সাহিত্যকর্মী, সাহিত্য ব্যক্তি, সাহিত্য প্রেমী এবং সর্বপরী পাঠকরা এর মুল্যায়ণ করবেন এবং অবশ্যই মন্তব্যের ঘরে মন্তব্য করে আমাদেরকে পথ প্রদর্শন করিয়ে দেবেন এই আশা রাখছি।
অনেক বকবক করলাম। আর বেশি কিছু বলছিনা। আগামী সংখ্যায় না বলা কথাগুলো বলে ধন্য হবো আপনাদের ভালোবাসায়।
ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধাসহ-----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
অমল কুমার মাজি
মা
------অমল কুমার মাজি
সৃষ্টির সুখ থাকে
প্রস্থিত প্রেমের গহীনে
বুকের গভীরে থাকে
পীযূষের ধারা।
কখনো দয়িতা রূপে
কখনো সে কন্যা
মেটে না মাতৃত্ব-সাধ
ভালবাসা ছাড়া !
নিরন্তর ফল্গুধারা
বালুকা-গভীরে
ব'হে চলে তবু তারে
দেখা নাহি যায়
পাষাণী অহল্যা-বক্ষে
গহন-নিবিড়ে
বাসব-কলঙ্ক শুধু
করে হায়-হায়!!
কবিতা সরকার
শুধুই দৃষ্টিকোণে
-------কবিতা সরকার
চারিদিকে বিজ্ঞাপন
খোয়া গেছে একজন,
সবখানে কোলাহল
খোঁজ করে দলবল।
না পাইয়া তারে বেঁহুশ বদনে,
কহে শুধু বারে বারে,
হায়রে মোর প্রানপ্রিয় সুখপাখী!
কোথায় হারালি তুই?
হতাশ নয়নে ভাবে একমনে
কিভাবে হারালো,
কোথায় কোন পথে?
সময়ের রীতে
বুঝিল সে বটে,
যাই না তো সুখ
কভু মাঠে ঘাটে।
ছিল আর আছে - চির অম্লানে
দৃষ্টিতে নয়.....
সে যে শুধুই দৃষ্টিকোণে।
হেমন্ত দেবনাথ
তিমির বিদারী
------হেমন্ত দেবনাথ
ছুটেছে বিশ্ব গতির নেশায়
রূপ-রূপান্তরের পথে---
নবছন্দে পথ-চলা তার
হবে না কভু স্থবির।
দিগন্তের-ই লাল সূর্য
করেছে প্রকাশ মহামানবের সৌর্য।
দিগন্তের হাওয়ার বেগে তিমিরের অপনোদন।
চিন্তনের বিশুদ্ধিতে চলার পথ
যেন আনন্দঘন।
দিনাঙ্কঃ-১০/১২/২০২০ ইং।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
শিল্পী
-----কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
ধন্য আমি --- ধন্য মোর জীবন
শিল্পী হবে মোর বন্ধু
ভেবেছি কী কখন!
শিল্পীর মন অনেক বড়ো
সৃষ্টিই তার লক্ষ্য ;
নেতির সাথে ঘোর বিরোধ
ইতির সাথে সখ্য।
নিত্য নতুন দিশা দেখায়
তাতে কাটে কতো পক্ষ
হাতে কলমে ভবিষ্যতকে
করে তোলে পরিপক্ব।
দিনাংকঃ-২৪-৫-২০২০
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
বেকারত্বের মর্মযন্ত্রণা
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
স্বপ্নের ডালি সাজিয়ে জন্মদাতা সেদিন-
পাঠিয়েছে শিক্ষাঙ্গনে ঘুচায়ে দারিদ্রতা
মুছায়ে অশ্রুধারা,তরুলতা হবে মহীরূহ,
এ দারুণ প্রত্যয়ে।
বাড়ন্ত স্বপ্ন,ভবিষ্যৎ এর হাঁক;
নিত্য চড়াই উৎরাই,জীবন আস্ফাট,
ফাইলবন্দী যোগ্যতার শংসাপত্র,
বেকার যুবকের খাতায় খচিত নাম।
ছুটি এদিক ওদিক, দিকভ্রষ্ট পথিক যেমন
জুতোর সুকতলা ক্ষয়ে অবিরাম পথচলি,
হয়তো জুটবে চাকুরী,ঘুচবে বেকারত্ব
পলিত কেশবতী জননী হাসবে জয়ের হাসি।
পড়ন্ত বেলার পথ বেয়ে ফিরে আসি আলয়ে,
নিরাশার বালুচরে স্বপ্নরা কাঁদে অঝোরে,
মাথাকুঁড়ে ফাইলবন্দী যোগ্যতা,
জন্মদের বিশ্বাস বেকারত্বের বেড়াজালে অস্ফুট।
নির্বিকার বুদ্ধিজীবী,শংসাপত্রের নীরব ক্রন্দন,
তবুও আধাঁরের শেষে আলোর হাতছানিতে
ভোরের পথে আবার যাত্রাশুরু,একদিন আসবে সময়
দূর ভবিষ্যতে হবে অপসারিত বেকারত্বের মর্মযন্ত্রণা।
পায়েল মজুমদার
লড়াই
-------পায়েল মজুমদার
জীবনের সে কি পরিহাস,
জন্মের পর থেকে শুরু---
লড়াই,লড়াই আর লড়াই।
মেয়ে হয়ে জন্মেছি বলে,
লড়াই করতে হয়েছে পরিবারের সাথে।
মেয়ে বলেই,লড়াই করেছি লেখাপড়া শিখার জন্য।
আমি লড়াই করেছি--
নিজের স্বাধীনতার জন্য,
মুক্তির জন্য,সমাজে বেঁচে থাকার।
আমি লড়াই করেছি,
মানবের সাথে মনুষ্যত্বের।
আমি লড়াই করেছি,
ভালবাসার সাথে অর্থের।
লড়াই করতে করতে ক্ষত-বিক্ষত আমি,
ডানা কাটা পাখির মতো ছটপট করছি আজ।
আমি আর পারছি না
ক্লান্তি আমায় ঘিরে নিয়েছে।
আজ অবসর নিতে চাই,
লড়াই এর ময়দান থেকে চিরতরে।
মধুমিতা ভট্টাচার্য
শেষ পাতার মতো
------মধুমিতা ভট্টাচার্য
মন খারাপী শব্দগুলো
একঝাঁকে উড়ে বসে জানালায়,
টুপ করে তা ধরতে গেলেই
হারায় হাঁকা ডাকায় ।
একটা ঘর, দুইটা ঘর
সব ঘরেতেই দিচ্ছে উঁকি
তারপরেতে জোনাক হয়ে
আঁধার পথে তার পাড়ি ।
ভাবনার আকাশ কুসুম
নীলদিঘির জলে শালুক হয়ে ফোটে,
বিকেল শেষের সন্ধ্যে পিওন
ডাকটি পাড়ে চাঁদের পাহাড় টপকে ।
জলপরীটির পায়ের ঘুঙুর
ঝিঙুর হয়ে মাঝরাতে ডেকে ওঠে ।
তার অনুরণিত ছন্দ রাগ
মনের তারে ঝঙ্কার তোলে ।
ছন্নছাড়া স্মৃতির ঘরে
অধিকার বোধের ঝড় ঝাপটা,
ভেতরে যতই টানাটানি
বাইরে বাঁধন জোড় দেওয়া ।
তবুও আশাটা 'শেষ পাতার 'মতো,
যতক্ষণ সবুজ
বেঁচে থাকাটাও ততক্ষণ ।
শুক্লা রানী দাস
রাধার অভিমান
------শুক্লা রানী দাস
বাশিঁ কেন বাজে না বৃন্দাবনে?
রাধা কেন যায় না ছুটে যমুনায়
বাঁশি তান তুলেনা কদমতলায়
রাধা কাঁদেনা ধোঁয়ার ছলনায়
শ্রীমতি তাকায় না মেঘ পানে
শ্রীকৃষ্ণের প্রতি তার অভিমান
কৃষ্ণ কতই সাধে রাধার মান
পরমাত্মায় মিলন হয় দুজনে
চিরসখা দুজন জনমে জনমে৷
লিটন শব্দকর
খেলাঘর-২
-----লিটন শব্দকর
কেমন অকারণ সবকিছু
হেসে খেলে মুক্তি
সূর্যেরই গ্রহণ পেরিয়ে যায় একবেলা শেষে,
জীবন তো ভালোরাখার অর্থ লিখে রাখে পরতে পরতে।
কবিতা জলছবি নয়,একটা আত্মীয় রামধনু
যেখানে বহুদিন যায়
-ঠিকানা নেই কোনো তুমি'র
ঠিকানা নেই কোনো আমি!
শুধু বৃষ্টির পর সুখি আকাশ সুখি বাতাসের মুখ,
শহরে কিছু নিশ্বাস ধরে রাখে নামধাম
বাকি হাঁটাপথই বেনামী।
অভিষিক্তা রায়
মান্যতা
------অভিষিক্তা রায়
বাক্যগুলো হিজিবিজি,কাটছে মনে দাগ-
শব্দেরা আজ হয়েছে বোবা,চাহনি নির্বাক;
শ্রোতারা যে ব্যস্ত ভীষন,যুক্তিতর্ক বোধে-
মন জানালায় খিল পরেছে,বিবেকের প্রতিরোধে;
কল্পনাতে গল্প বাঁচে,আগলে ধরে খাতা-
কলম খোঁজে কালির ছোঁয়া,পাতার স্পর্শে শূন্যতা;
ভাবনাগুলো কাব্যি করে,বেহিসেবি ধরন-
শিস ভাঙা ওই পেন্সিলে তাই স্তব্ধতার বিস্ফোরণ;
স্তব্ধতাতেই জীবন পাবে সন্ধি করার উপন্যাস-
ধ্বনি ছাড়াই জমুক তবে যোগ-বিয়োগের সহবাস।।
শ্যামল রায়
সূর্য হয়ে থেকো
------শ্যামল রায়
আমি তো বেশ আছি, ভালো আছি
অন্ধকার দেখে দেখে । তবুও
নদীর পাড় ভাঙ্গা শব্দ বন্ধ রেখে
উষ্ণতা খুঁজে নেবো
তুমি পাশে থেকো
সূর্য হয়ে থেকো।
এই পৃথিবীর সবকিছু সুন্দর
ভাবনাটার রকমভেদ হতে পারে
রং-তুলিতে নানান ছবি হতে পারে
তবুও আমরা চাইছি সুন্দরতা
বেঁচে থাকার জন্য স্বপ্নে মোড়া
সুন্দর একটা পৃথিবী---।
তাই কপূরের মত উবে যাওয়া
ভালোবাসা, গতিশীল চিন্তা, উন্নয়ন
চাইনা কখনো---
চিরস্থায়ী সবুজতা নিয়ে,
নীল আকাশ দেখবো
এ পৃথিবীর সব কিছুই সুন্দর
আমরা সকলেই পাশাপাশি থাকবো
ভালোবাসাবাসিতে---
তুমি সূর্য হয়ে থেকো খুব কাছাকাছিতে।
শুভময় রায়
সেদিনের ভয়ঙ্কর রাতে
--------শুভময় রায়
যেসময়ের গল্প বলছি তা আজ থেকে প্রায় কুড়ি বছর আগের। তখনও আমাদের বর্ধমান জেলার অনেক গ্রামে বিদ্যুৎ আসেনি। আমার মামার বাড়ি দামোদর নদের ধারে বেড়ুগ্রামেও তেমন আধুনিকতার ছোঁয়া আসেনি। তবে ছোটোবেলা থেকে মামারবাড়ি যাবার একটা অন্যতম আকর্ষণ ছিল মামাদাদু। সম্পর্কে উনি মায়ের মেজমামা, তাই আমার মামাদাদু। কোলকাতায় চাকরি করতেন, বিয়ে করেননি, তাই আমার মামারবাড়িতেই চলে আসতেন ছুটি পেলেই। পরে চাকরি ছেড়ে তো পাকাপাকি ভাবে বেড়ুগ্রামেই রয়ে গেলেন। সারাদিন মামাদের চাষের কাজের তদারকি করতেন। এই দাদুর ছিল অজস্র গল্পের সম্ভার। আমরা মামাতো, মাসতুতো ভাই-বোনেরা দাদুকে ঘিরে থাকতাম। একবার এমনই এক গল্পের আসরে আবদার করলাম,"দাদু, আজ একটা ভুতের গল্প শুনবো।"
দাদু বললো, "তোরা এখনকার ছেলে, ভুতে বিশ্বাস করিস?"
আমি বললাম, "খুব একটা করি না, কিন্তু ভয় একটা লাগে।"
দাদু বলল, "বেশ আজ তবে তোদের আমার নিজের অভিজ্ঞতার কথা বলব, যা আজও আমার কাছে যেমন ভয়ের, তেমনি বিস্ময়ের।"
দাদুর জবানিতেই গল্পে বলছি।
"তখন আমি অনেক দেরি করেই, প্রায় চার পাঁচ মাস অন্তর বেড়ুগ্রামে আসতাম। তখন বেড়ুগ্রাম ছিল রীতিমতো বন জঙ্গলে ঘেরা, দিনের বেলাতেও শেয়াল ডাকতো।রাতে অবস্থা আরও ভয়ঙ্কর, তার ওপর সাপখোপের ভয় তো ছিলই। সবচেয়ে বেশি অসুবিধা হতো বর্ষাকালে, খেয়া ঘাটে মাঝিদের পাওয়া যেত না সবসময়। এমনি এক বর্ষার সকালে চিঠি পেলাম, বড়দি মানে তোদের দিদুন ডেকে পাঠিয়েছেন পিসিমার শরীর অসুস্থ। পড়িমড়ি করে অফিসে ছুটি নিয়েই বেড়িয়ে পড়লাম। কিন্তু হাওড়া থেকে মেমারি আসতেই সন্ধ্যা হয়ে গেল। জামালপুরে এসে পৌঁছাবার আগেই ঝমঝম করে বৃষ্টি নামলো। আমি তো প্রমাদ গুনলাম।খেয়া ঘাটে কেউ নেই।বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বৃষ্টি পড়ছে, আমি একা। একটু ঘাবড়ে গেলাম। একটা গাছের নীচে দাঁড়ালাম। ভাবছি এখনও অনেকটা রাস্তা যেতে হবে,আর নৌকা না পেলে বাঁধের এর পাশ দিয়ে শ্মশানের ওপর দিয়ে যেতে হবে। এমনিতে আমি খুবই ডাকাবুকো, ভুত বা অশরীরী আত্মা এসবে ভয় খাই না। কিন্তু রাত বিরেতে একা যাওয়াটাও একটু বিপদের। যদিও সাথে কোনো দামি জিনিস নেই, ব্যাগে পিসিমার পছন্দের একটু সন্দেশ আর পকেটে আছে কিছু টাকা। সাতপাঁচ ভাবতে ভাবতে বৃষ্টিটা ছেড়ে এল,আমি তাকিয়ে দেখলাম আশেপাশে কেউ নেই।ব্যাগ থেকে টর্চটা বের করে বাঁধ বরাবর হাঁটতে লাগলাম। এমনিতে এই রাস্তা আমার তো চেনা, কিন্ত সেদিন যেন কেমন হঠাৎ করেই একটা গা ছমছমে ভাব লাগলো। একটা রাতচড়া পাখি ট্যাঁ ট্যাঁ করে দূরে ডেকে উঠলো। বোধহয় অমাবস্যা ছিল, আরও অন্ধকার চারিদিকে। আমি হনহন করে হাঁটছি। প্রায় মিনিট পনেরো হাঁটার পরে হঠাৎ দেখি আমার পাশেই একটা ছাগল 'ম্যা ম্যা' করে ডেকে উঠলো। আন্দাজে ভাবলাম রাত প্রায় ন'টা, এত রাতে নদীর ধারে ছাগল! নির্ঘাত চড়তে এসে বৃষ্টিতে আটকে পড়েছিল।আমি কিছু না বলে হাঁটতে গিয়ে হঠাৎ ভাবলাম, আচ্ছা নদীর বালিতে ছাগল চড়তে আসবে কেন? তারপর যেই তাকিয়েছি দেখি ছাগল উধাও! একটু থমকে গেলাম, কিন্তু সাহসটা হারালাম না। হাঁটতে লাগলাম বালির ওপর দিয়ে। কিন্তু এবার কিছুটা গিয়েই দেখি একটা সাদা গরু, মসমস করে ঘাস খাচ্ছে। এবারে সত্যিই ভয় পেয়ে গেলাম। বালিতে গরুর ঘাস খাবার তো কথা নয়। আমি কিন্তু থেমে পড়িনি, জানতাম অশরীরী আত্মাকে এগুতে দিলে চলবে না। হঠাৎ গরু চলে গেল, আর একটা সাদা কাপড় উড়তে উড়তে শ্মশানে গিয়ে পড়ল। মনে মনে খুব ভয় পেলেও টর্চটাকে শক্ত করে ধরে মনে মনে মা দুর্গাকে ডেকে এগুতে লাগলাম। জানি ভয় পেয়ে থেমে গেলেই আমার আর নিস্তার নেই। ভাবতে ভাবতে শ্মশানের কাছে আসতেই দেখি বামদিকে বিরাট এক শাল গাছ। এখানে তো শাল গাছ কোনোদিন থাকেনি! তার মানে আমায় সেই আত্মা এখনও পিছু ছাড়েনি।আমার এবার মনে সাহস হারাতে থাকলাম।পাগলের মতো দৌড়াতে লাগলাম, যে করেই হোক আমায় গ্রামে পৌঁছাতে হবে, না হলে আজ আমায় ছাড়বে না এরা।
গ্রামের মুখেতেই একটা আমগাছ ছিল। দৌড়াতে দৌড়াতে সেখানে আসতেই দেখি সাদা কাপড় পরা এক ছায়ামূর্তি আমগাছের ডালে বসে পা দোলাচ্ছে আর বলছে "সন্দেশ না দিয়ে কোথায় যাবি?"
আমার মনে পড়ল পিসিমার জন্য ব্যাগে সন্দেশ আছে।আমি ভয়ে কাঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। পায়ে আমার একটুও শক্তি নেই।আর সেই ছায়ামূর্তি বারবার বলেই চলেছে।
হঠাৎ দেখি মাঝের পাড়ার দীনুকাকা গান গাইতে গাইতে আসছেন ছিপ নিয়ে নদীর দিকে। দীনু কাকার মাছ ধরার নেশা খুব জানি। আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,"দীনু কাকা! আমায় বাঁচাও।"
দীনু কাকা 'কে' বলেই বললেন "অ সদানন্দ!তা এত রাতে তুমি!আসার কথা ছিল বুঝি!" তারপর দেখি সেই ছায়ামূর্তিকে দেখেই বললেন,"যাঃ!যত্তসব ঘাটের মড়া"।
বলতে বলতে ছায়ামূর্তিও অদৃশ্য হয়ে গেল।
আমি তো অবাক। আমায় কিছু বলতে না দিয়েই তিনি বললেন, "বুঝলে, রাত বিরেতে কত কি হয়!তা তুমি তো বাড়ি যাবে।চলো এগিয়ে দিয়ে আসি তেমাথা অবধি।"
রাস্তায় আসতে আসতে দীনুকাকা অনেক কিছুই বললেন। আমি বললাম,"কাকা, আজ আপনি না এলে বোধহয় মারাই যেতাম।!"
বলতে বলতে তে মাথার মোড়ে আসতেই বললেন, "যাও দিদির বাড়ি চলে যাও, আমি একটু নদীর দিকে যাব।"
দিদির বাড়িতে পৌঁছাতাই দিদি বললেন,"কিরে এত রাত হলো! আমরা ভাবলুম আসবি না আজ।"
আমি এক এক করে সব কথা বলতেই ওরা তো কেমন হয়ে গেল।বড়দির শাশুড়িমা একটু আগুন জ্বেলে বললেন তাপ নিতে আর একটা লোহা ছুঁতে। আমি বললাম,"কেনো?"
বড়দি বললেন, "কি দীনুকাকা বলছিস? দীনুকাকা আজই মারা গেছে সকালে, বিকালে সবাই তাকে নদীতে দাহ করে এল।"
আমি তো শুনে হতবম্ব! এতটা রাস্তা একজন অশরীরীর সাথে গল্প করতে করতে এলাম! আবার সে- ই আমায় বাঁচালো!"
এই বলে মামাদাদু থামলেন। আমরা ভাই বোনেরা চুপ করে শুনছিলাম। সত্যিই আমাদের গায়েও যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো দাদুর জীবনের এই ভয়ঙ্কর রাতের কথা শুনে।
জগন্নাথ বনিক
কলম হলো শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার
------জগন্নাথ বনিক
কলম যে আমার শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার
সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে লিখবো বারেবার ।
তাই তো আমার কলমটাকে বানিয়েছি
অন্যায়ের বিরুদ্ধে লেখার তলোয়ার ।।
জানি আমি পেরে উঠবো না
অপরাধীদের সাথে।
তাই তো আজ কাগজ আর কলম দিয়ে
লিখতে থাকি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ।।
সাহস করে কলম ধরে,
শপথ নিয়েছি আমি ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ভাষা গুলো
টুকরো টুকরো কাগজে লিখে রাখি আমি ।।
কলম দিয়ে লিখব যত
অপরাধীরা ভয়ে কাঁপছে তত ।
বন্ধুকের চেয়েও বেশী শক্তিশালী
কলম যে আমার হাতের শক্তি ।।
সমাজটা আজ অন্ধকারে
ভয়ে কাঁপছে চারিদিকে ।
সমাজের আলো ফেরাতে হলে
কলম যে থাকতে হবে সবার হাতে হাতে ।।
রাজীব পাল
পঙ্গুত্ব
------রাজীব পাল
ভারী শরীরকে হালকা করার পালকগুলি
আমার সঙ্গী হয়না,
আলগা করে ছাড়িয়ে নেয় নিজেদেরকে।
অভিব্যাক্তি অভিযোজনেও তাদের জড়াতে পারিনা
আজ তাই আমার আকাশে উড়বার সাধ্য নাই।
ফুলকা পাখনার চরপড়ালি, আমার সঙ্গী হয়না,
ছাড়িয়ে নেয় নিজেদেরকে এই দুর্বাসা থেকে।
অভিব্যাক্তি অভিযোজনেও তাদের জড়াতে পারিনা
আজ তাই আমার জলে ডুবে থাকার সাধ্য নাই।
আছে শুধু কলঙ্কিত ভারী হাত
তাই আকাশ আর পাতালের মাঝে ফেঁসে
আজ আমি পঙ্গু কুপোকাত।
পরদেশী ভালোবাসা কাজী নিনারা বেগম
পরদেশী ভালোবাসা
-------কাজী নিনারা বেগম
রাতের নির্জনে একাকী
নিঃস্ব হৃদয়,,
হাতরে এক অচেনা মানুষকে।।
গাঢ় অন্ধকার ভালোবাসায়,,
খুঁজে বেড়ায় এক অজানা অনুভবে।।
অনুভূতি তবে দিশেহারা হয়ে
মৃত্যুতে,,
নিঃশব্দে নীরবে ভালবাসায় আনমনা বাহানা রুদ্ধ দ্বারে।।
নামুক না হৃদয়ের রঙিন তুলিতে,,
অপেক্ষার ঘোলাটে আলো আঁধারে বেমানান আবেগের জমা ভিড়ে।।
উন্মুক্ত হোক বন্ধ কপাট,,
সিক্ত কাঠ গোলাপ ফুলের পাপড়ির ছোঁয়ায়।।
বেঁচে থাকে অফুরন্ত স্বপ্ন মনের গহীনে,,
তার মুখে অবিচ্ছিন্ন হাসি আছে।।
নীরবে নিভৃতে নির্জনে ,,
সে দৃঢ়তা গোপন করে যা প্রায় ভীতিজনক।।
জীবনে কিছু প্রশ্ন থাকে তার উত্তর নেই ,,
কিছূ ভুল থাকে তা শোধরানো যায় কি??
বেদনার বিষাদ কালো ছায়ায় বিদূর ক্লান্তি পথের তুমি ,,
বিমোচিত শ্রান্তি রথে মেটাবে বুকের প্রবল পিপাসা ।।
পলাশ পোড়েল
মাটির ফুলদানি
------পলাশ পোড়েল
হৃদয়ে ভালোবাসার মিনার গড়তে
খুঁজি আঁচল
পাবো জানি,
ঘাতকের অনুগত বুলেট আসে
ভেঙে দেয় সব মাটির ফুলদানি।
সময় নীরবতা নিয়ে হাঁটে সীমান্তে
বিশ্বাসের সেতুতে
স্বপ্ন ছুঁয়ে ছুঁয়ে,
প্রত্যাশার ঝড় তখন আসছে-
তৃপ্তির নিশ্বাস খেলে মাটির বুকে শুয়ে।
অনুপ কুমার রায়
কেউ আসে না
-------অনুপ কুমার রায়
মনে কথা মনেই রয়ে যায়,
ভাই, বোনের সঙ্গ যে না পায়।
সম্পর্কের আড্ডায় ছিলাম বহু,
সর্বনাশা শীতে, দেখা মিলে কভু।
ওরে আমার দুষ্টু গোপাল ,
সময় থাকতে ধররে হাল ।
কররে কিছু আগ বেলাতে,
নষ্ট করিসনা ছেলে খেলাতে।
আগের মত কেউ আসেনা,
জানার ছিল কেন আসেনা ?
রাগ, অনুরাগ বৃথাই করিস,
সম্পর্কের আড্ডায় দেখা করিস।
সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
চুপ চতুর্দশপদী
------সুদীপ কুমার চক্রবর্তী
চুপ থাকার থেকে সপাটে
না উচ্চারণই ভালো।
প্রতিধ্বনিতে মিলিয়ে যাক
আবছা সম্পর্কগুলো।
উপহাসের থেকে কটু ভাষ
অনেক স্বাস্থ্য সম্মত
বাঁকা হাসির তর্জমার
প্রত্যাঘাতও অসংযত।
বন্ধনের বন্ধ্যাত্ব অনেকটা
শুকনো ক্ষেতের মতো
চোখের জলে চাষ করলে
অনুশোচনায় ডেকো।
জীবন কি আর মুহূর্ততে থামিয়ে রাখা যায়!
বসন্তকে জানিয়ে রেখো শীতের অভিপ্রায়।
সুুজন দেবনাথ
বড্ড অসহায়
------সুুজন দেবনাথ
একমুঠো স্বপ্ন নিয়ে নেমেছি পথে,
বাস্তবতার ভিড়ে পূর্নতা পাওয়ার আশে।
মনে হয়,,
কুল হীন সমুদ্রের ঢেউয়ে ভেসেই চলেছি
একাকিত্ব আমি, কেউ নেই পাশে।
অসহায় অনুভব করেছি অনেক
কেটেছে জীবন একা।
চলতে পথে মিলেছে কত, ভেবেছি আপন
স্বপ্ন ভেঙে হৃদয়াতুর হলো।
আলো ভেবে আলেয়ার পিছে
ছুটেছি বহুকাল,
অবশেষে দেখি সব স্বার্থান্বেসির পাল!
নিস্বার্থে ভালোবেসেছি,
দিয়েছি মন উজার করে,
দু-হাত ভরে করেছি গ্রহণ সবাকার করুনা।
অবহেলায়, তাচ্ছিল্যতায়
একটা একটা করে কখন যে,
আমার মুঠোভরা স্বপ্নরা হারিয়ে গেলো
বাস্তবতার ভিড়ে বুঝতেই পারলাম না।
পিছন পানে তাকিয়ে সেই ভিড় থেকে
হাড়ানো স্বপ্ন কুড়িয়ে নেবার সাহস হয়নি,
মেটেনি সেই আশা দু-চোখে কুয়াশা,
আর স্বপ্ন নয় বাস্তব নিয়ে বাঁচা এবং
বাঁচানোর তাগিদেই চাই
এক নব উন্মুক্ত আলোকিত সূর্যোদয়।
জীবনের চরম শিখরে পৌঁছাবার বৃথা চেষ্টায়, শূন্যতার পথপ্রান্তে দাড়িয়ে আজও
বড্ড অসহায়।।....
সুস্মিতা মহাজন
তোমার হতে পারিনি
------সুস্মিতা মহাজন
তোমার ছলনার ছল বুঝতে পারি না বলে,
আমি অভিমান করে থাকি।
অতীব সুন্দরী নই বলে,
তোমার প্রেমিকা হয়ে প্রেমের স্পর্শ চাইনি।
আমি বিশাল আকাশ হতে পারিনি বলে,
তোমায় আশমানী রঙের তুলিতে রাঙাতে পারিনি।
আমি কোনো লেখিকা নই বলে,
তোমায় নিয়ে আজও কোনো কবিতা লিখতে পারিনি।
আমি উড়ন্ত পাখি নই বলে,
তোমায় নিয়ে ওই দূরে উড়ে যেতে পারিনি।
তোমার মনের মতো হতে পারিনি।
এলিনা সাহা
প্রেম নিবেদন
------এলিনা সাহা
অনেক লিখলাম প্রেম নিয়ে
এবার তোমাকে প্রেম নিবেদন করতে চাই
বাবা,,
আমি সেই বেয়াদব
অভদ্র মেয়ে যতই হইনা
কেন উপর থেকে ৷
তোমার কাছে আমি
সেই ছোট্ট মেয়েটাই রয়েছি
সেই ছোট্ট সোনাটা ৷
তুমি ছাড়া এক মুহূর্ত
আমার কাঁটবে না
সারা জীবন এই ভাবে আগলে রেখো ৷
তোমাকে হারাতে যে চাই না বাবা ৷
বাবা এই ভাবে তোমার
মুখ দেখে পেরোতে চাই
সব বাঁধা বিঘ্ন ৷
জীবনটা কত কঠিন সেটা
তোমায় দেখে বুঝি ৷
আবার ,তোমায় দেখে ঐ
আমার দুনিয়াটা সহজ হয়ে যায় ৷
কারন তুমি যে সাথে আছো সারাক্ষণ আমার ৷
আমার সব আয়ো তোমার হোক ৷
আমার মায়ের সিঁথির
সিঁদুর অক্ষয় হোক ৷
কিছু বড় করার সার্মথ্য
তো আমার হয়নি বাবা
ছোট্ট একটা গোলাপ দিয়ে
আজ না হয় তোমায়
প্রেম নিবেদন করলাম ৷
শনিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২০
সম্পাদকীয়
"শিশু" শব্দটির দ্বারা কি শুধু পুত্র সন্তানকে বোঝায় ? না, একদম না। শিশু শব্দটি দ্বারা যেমন শুধু পুত্রসন্তানকে বুঝায় না, ঠিক তেমনি শুধুমাত্র দরিদ্র অথবা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তানকেও বুঝায় না। শিশুদের নানান সমস্যার সমাধান এবং শিশু কল্যাণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উৎসাহিত করাই 'শিশু দিবস'-এর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে অগণিত সমস্যায় জর্জরিত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অথবা পথশিশুদের নিয়ে 'শিশু দিবস' উদযাপন করা ডুমুরের ফুলের মতো। প্রতিদিন অগণিত হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিভা সম্পন্ন শিশুদের প্রতিভার অপমৃত্যু হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানায় অথবা কোনো বিপদের ঝুঁকি সম্পন্ন কাজে। কন্যা নামক ফুলের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই হচ্ছে নির্মম হত্যা। আমরা যতই আধুনিকতার বড়াই করি না কেনো, এখনো কন্যা সন্তান ও পুত্র সন্তানের ভেদাভেদ করার মত নিছক মানসিকতা থেকে আমরা অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারিনি। 'শিশু দিবস' তখনই সার্থক হবে, যেদিন পুত্রকন্যা ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের সমস্যা সমাধানে এবং কল্যাণে সমাজের সকল অংশের মানুষের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে।
প্রিয় পাঠক, প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের "শিশু দিবস সংখ্যা" নামক অষ্টম সংখ্যা। সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের কল্যাণ কামনা করে তাদের উদ্দেশ্যে এবারের সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হল। এবারের এই বিশেষ সংখ্যাটি পুষ্ট হয়েছে যে সকল দীপ্তমান কবি-লেখকদের লেখনীর স্পর্শে সকলের প্রতি রইল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন। একটি অসামান্য প্রচ্ছদ অংকন করে সংখ্যাটির পূর্ণতা দান করেছেন প্রচ্ছদ শিল্পী মিঠন দেবনাথ মহোদয় এবং অকৃপণ সহযোগিতার জন্য মাননীয়া নিবেদিতা চক্রবর্তী মহোদয়ার প্রতিও রইল অকৃত্রিম কৃতজ্ঞতা। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, আবারো দেখা হবে আপনাদের ভালোবাসার টানে আগামী সংখ্যায়।
ধন্যবাদ-শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাসহ----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
হেমন্ত দেবনাথ
'লালিত ভীরু' শিশুরাই জেগে উঠবে 'আকাশের ডাকে'
------হেমন্ত দেবনাথ
শুভ্রপ্রাণ শিশুরাই আগামী প্রজন্মের স্বপ্ন ও সম্পদ। এরাই দেশের সুনাগরিক। অথচ পূর্ণবিকশিত হওয়ার আগেই পথ-প্রান্তরে অগণিত শিশু-পুষ্প অকালে ঝরে পড়ে। অতীতকালেও শিশুরা ঘরে-বাইরে সর্বত্র ছিল অনাদৃত। প্রচন্ড মারপিট ও শারীরিক ক্লেশই ছিল অতীতে শিশুদের শিক্ষা ব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। ক্ষুধা, দারিদ্র্য, ব্যাধি ছিল বেশিরভাগ শিশুদের নিত্য সাথী। এছাড়া কল-কারখানায়ও শিশুদের অমানবিক শ্রমদান করতে হতো অতীতেও।
ইউনেস্কোর মতে, চৌদ্দ বছর বয়সের নিচে ছেলে-মেয়েদের শিশু ও কিশোর বলে গণ্য করা হয়। এই অপরিণত বয়সের গরিব ছেলে-মেয়েরা জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ক্ষেতে-খামারে, ঘরের কাজে, দোকানে-রেস্টুরেন্টে, কলকারখানায়, কার্পেট বোনা, হীরে কাটা, চুড়ি তৈরি, তাঁত ও জরির কাজ, দেশলাই-বিড়ি-বাজি-কাগজ তৈরি, কয়লা খনিতে কাজ, ইট ভাটায় কাজ, গালা তৈরি, সাবান তৈরি, রাজমিস্ত্রীর জোগান দেওয়ার কাজ, কাজ ও কীটনাশক ঔষধ তৈরি, চা ও বাগিচার কাজ, অবস্থাপন্ন মালিকের বাড়িতে ঝি-চাকরের কাজ, রেলস্টেশনে মালপত্র বহন------- এরকম নানা পেশায় আমাদের দরিদ্র শিশুদের শ্রম দিয়ে পয়সা রোজগার করতে হয়। অথচ ভারতীয় সংবিধানের ২৪( চব্বিশ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, "১৪ বছরের নীচে কোনোও শিশুকে কোনোও কারখানা, খনি বা কোনোও বিপদজনক কাজে নিযুক্ত করা যাবে না।" ১৯৮৬ সালে শিশু শ্রমিক প্রতিরোধ সংক্রান্ত আইন রচিত হয়। আবার, ১৯৯৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর ভারতের শ্রম মন্ত্রক national authority of elimination of child labour সংস্থাটি গঠন করেন। তবুও শিশুশ্রম থেকে আমাদের শিশুকে পুরোপুরি মুক্ত করা যায়নি।
আজও শুধু ভারতেই নয়, সারা পৃথিবীতে শিশু শ্রমিক রয়েছে। এরা কলকারখানায় প্রতিদিন দশ/বারো ঘন্টা কাজ করতে গিয়ে শিশু শ্রমিকরা স্বাভাবিকভাবে রাসায়নিক পদার্থ ও দূষিত পরিবেশে সংস্পর্শে আসে। এর ফলে ফুসফুসের অসুখ, ক্যান্সার, ত্বকের রোগ, যক্ষা, কখনও বা অপুষ্টিজনিত রোগেও শিশুরা ভোগে।
শিশু শ্রমিকের কারণ হিসেবে যেসব বিষয়কে মোটামুটি ভাবে চিহ্নিত করা যায়, সেগুলো হচ্ছে---------
১) শিশুর পিতা- মাতার নিরক্ষরতা ও দরিদ্রতা। অর্থক্লীষ্টতার জন্যই তাঁরা তাঁদের শিশুকে বিদ্যালয়ের না পাঠিয়ে রোজগারের জন্য পাঠিয়ে দেন। ২) শিশুদের কম বেতনে সহজেই বেগার খাটানো যায়। ৩) শিশুরা বয়স্ক শ্রমিকদের মতো প্রতিবাদ করতে পারে না। ৪) ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুদের সহজে নিয়োগ করা যায়। ৫) কিছু কিছু নেশাগ্রস্ত পিতা-মাতার নেশা দ্রব্য কেনার জন্য যে অর্থ দরকার, তা মেটাতে শিশুকে কাজে পাঠিয়ে দেন।
শিশুদের উক্ত সমস্যার প্রতিবিধানের জন্য নানা উদ্যোগ জরুরী, যা নিম্নে উল্লেখিত হল :---
* ১) শিশু প্রতিভা অন্বেষণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, খেলাধুলা, ছবি আঁকা ও বক্তব্য প্রতিযোগিতা বর্ষব্যাপী অব্যাহত রাখতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে। এজন্য স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও ব্যক্তি বিশেষকেও বেশি করে ভূমিকা নিতে হবে।
* ২) সমাজের প্রতিটি কোণ থেকে দরিদ্র ও লাঞ্ছিত শিশুদের খুঁজে বের করে এনে তাদের ন্যূনতম চাহিদাগুলো পূরণ করতে হবে। দরিদ্র শিশুদের সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করতে হবে।
* ৩) নতুন আইন তৈরি করে সেই আইনের বাস্তব প্রয়োগের উদ্যোগ নিতে হবে।
* ৪) সরকারি উদ্যোগে পরিকল্পনা গ্রহণ, দারিদ্র্য বিমোচন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, এমনকি প্রয়োজনে জাতীয় বাজেটে শিশু কল্যাণের জন্য আরো বেশি অর্থ বরাদ্দ রাখা।
* ৫) সরকারি উদ্যোগে শিশুদের শিক্ষার অধিকারের প্রয়াস ঘটানো, "বিদ্যালয় ছুট" শিশুদের শিক্ষার অঙ্গনে নিয়ে আসতে হবে।
* ৬) শিশুশ্রমিকদের পূনর্বাসনের যথাযথ ব্যবস্থা করা এবং শিশুদের সুস্থ জীবনে প্রতিষ্ঠার কার্যকারী "অ্যাকশন প্ল্যান" গ্রহণ করতে হবে।
* ৭) সভা, আলোচনা চক্রের আয়োজন তৎসঙ্গে সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে।
অবশ্য, শিশু শোষণ সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের জন্য সহানুভূতি, সহমর্মিতা অবশ্যই প্রয়োজন। প্রয়োজন বিপুল পরিমাণ অর্থেরও। এব্যাপারে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রসঙ্ঘের শিশুদান তহবিল, আরো এগিয়ে এসেছে। দেশীয় পর্যায়ে সরকার অনুমোদিত অর্থ ও বেসরকারি সাহায্য এবং ব্যক্তিগত সাহায্য রয়েছে।
শিশুদের কল্যাণের প্রতি বিশ্বমানবতার প্রেরণা যোগাতে আন্তর্জাতিক স্তরে ও জাতীয় স্তরে উদ্যোগেরও শেষ ছিল না। ১৯৭৯ সাল থেকে প্রতিবছর ১ লা জুলাই তারিখটি সারা পৃথিবীতে "আন্তর্জাতিক শিশু দিবস" হিসাবে উদযাপিত হয়ে আসছে। ১৯৭৯ সালের ১ লা জানুয়ারি--এ দিনটিতে ভারতে" আন্তর্জাতিক শিশু বর্ষ" এরও শুভ সূচনা হয়েছিল। আজকের কোভিড-19 মহাসংকটের সময়েও সারাবিশ্বে স্লোগান হচ্ছে---- "যেকোনো সময় এর থেকে এই মুহূর্তে বেশি করে, শিশুদের শ্রম থেকে বাঁচান।" আজকের শিশু দিবসের শুভক্ষণে এ বিষয়টাও আমাদের মাথায় রাখতে হবে।
১৪ ই নভেম্বর আমাদের ভারতবর্ষে শিশু দিবস হিসেবে প্রতি বছরই উদযাপিত হয়। এর উদ্দেশ্য হল :- শিশুদের নানা সমস্যার প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও শিশুকল্যাণে সকলকে উৎসাহিত করা। আমাদের স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শিশুদের সাথে খুব বেশি মিশতেন। তিনি বলতেন, "শিশুরা বাগানে গোলাপের কুঁড়ির মতো, যা প্রস্ফুটিত হয়ে চারিদিকে সুগন্ধ বিতরণ করে।" তাদের সঠিক পরিচর্যা করা একান্ত জরুরী। শিশুদের কাছে তিনি "চাচা নেহেরু" নামেই পরিচিত ছিলেন। প্রতিবছর তাঁর জন্মদিন অগণিত শিশুদের নিয়ে উৎসবের মেজাজে পালন করেন। তিনি পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় বিনামূল্যে প্রাথমিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছিলেন। আমাদের শিশুদের অপুষ্টিজনিত রোগের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য তিনি বিদ্যালয় ছাত্র-ছাত্রীদের "মিড ডে মিল"-এর ব্যবস্থা করেছিলেন। পন্ডিত জওহরলাল নেহেরু শিশুদের অকৃত্রিমভাবে ভালোবাসতেন এবং তাঁর এই ভালোবাসার স্মৃতিকে স্মরণ করে রাখার উদ্দেশ্যে তাঁর জন্মদিনকে "শিশু দিবস" হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং পালন করা হয়।
শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে প্রতিবছর যে সাংস্কৃতিক কার্যক্রম, অঙ্কন প্রতিযোগিতা ও প্রদর্শনী হয়ে থাকে, তাতে সমাজের আভিজাত্য অবস্থাপন্ন পরিবারের শিশুরাই অংশগ্রহণ করে। কিন্তু ঐ যে খেটে-খাওয়া শ্রমিক শিশুরা রেস্টুরেন্টেই কাজ করছে, ভাঙ্গা টিন সংগ্রহ করতে ব্যস্ত। প্রকৃতপক্ষে ঐ দরিদ্র শিশুগুলোকে যতদিন পর্যন্ত আমরা শিশু দিবসের অনুষ্ঠানে শামিল করতে না পারবো, ততদিন পর্যন্ত আমাদের শিশু দিবসের অনুষ্ঠান সার্থক হবে না, পরিপূর্ণতা পাবে না। আমরাও সঠিক দিশাতে উপনীত হতে পারবো না। এ ব্যাপারে সমাজের বুদ্ধিজীবী শিক্ষিত মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে।
আজকের শিশুদের নানা সমস্যা, তাদের দারিদ্র্য, শ্রমিক হিসেবে বেগার খাটানো------ এসব থেকে মুক্তির বার্তা দিতে পারে "শিশু দিবস।" শিশু কল্যাণে মানুষকে ব্রতী করার লক্ষ্যেই এ দিবস উদযাপন।
আগামী দিনের শিশুকে সামগ্রিক সমস্যা মুক্ত রাখতে ও তাদের অগ্রগতির লক্ষ্যে রাষ্ট্রীয় ও বেসরকারি উদ্যোগ আমাদের অন্তরে আশার আলো জাগিয়ে তোলে। "এ বিশ্বকে এ-শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি" --- কবি সুকান্তের এ প্রত্যয় একদিন ফুলে-ফলে সৌরভিত হয়ে উঠবেই। কবি রবীন্দ্রনাথের শিশু তার মাকে নিয়ে মনের দুর্জয় শক্তি ও আনন্দ নিয়ে মুক্তমনে তেপান্তরের মাঠে আবারো পাড়ি দেবে।
কবিতা সরকার
তোমার লাগিয়া
-----কবিতা সরকার
হাটে জমাইতে পসার
সকলই ভুলিয়া
জাগিছে বিধাতা
তোমার লাগিয়া।
ঢুলু ঢুলু তব খোলো আঁখিদ্বয়,
ছাড়ো মলিনতা
জাগিছে বিধাতা
তোমার লাগিয়া।
অচেনা শহর পথ নাই চেনা,
যেতে হবে কোথা তাও নেই জানা
জাগিছে বিধাতা
তোমার লাগিয়া।
ভুলিয়াছ যারে সকল সৃজন - প্রলয়ে,
সহিয়া সকল উপেক্ষা
জাগিছে বিধাতা
তোমার লাগিয়া।
মুদিলে নয়ান নিভিলে আলো
রুধিলে দ্বার আঁধার কালো,
ভাবনা কি তোর আলোর শিখা
জাগিছে বিধাতা
তোমার লাগিয়া।
অমল কুমার মাজি
রূপান্তর
------অমল কুমার মাজি
আগেও ছিলাম এখনও আছি
আগামী দিনেও থাকবো
মহাবিশ্বের রহস্য মাঝে
ঘুমাবো আবার জাগবো।
অন্তরে বৃথা তোলপাড় ক'রি
শুরু ও শেষের দ্বন্দ্বে
ফিরে-ফিরে আসে দিন ও রাত্রি
মহাজাগতিক ছন্দে।
দূর্দমগতি মহাকাল চলে
অনন্ত গরিমায়
কোথায় যে আদি কোথায় অন্ত
বৃথা খুঁজে ফিরি হায়!!
প্রতি পলকেই বিস্মিত করে
গতিময় চরাচর
উপলব্ধির একতারে বাজে-"সকলই রূপান্তর!!"
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
চারাগাছ
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
অনাবাদী ঊষর ভূমি
দখলসহ নানা ধরনের কথা
অবশেষে ঘর্ম-অশ্রু ঝরিয়ে
রোপন করেছে চারাগাছে মনের কথা।
শ্রমের ফলে আশাবাদী
যতনে নাই ত্রুটি
আপন মনের পরিচর্যায়
চারাগুলো বেড়ে ওঠে গুটি গুটি।
গাছে গাছে মধুকরের আনাগুনা
বিহগ- বিহগীর আলাপন
ফুলে-ফলে সেজেগুজে
মানবশিশুকে করে আবাহন।
বৃক্ষপানে শিশুমন ছুটে চলে
কিছু পাবার আশে
মা - বাবার আদর-স্নেহ
চলেছে ওদের পাশে পাশে।
দিনাংকঃ-০৯ -১১-২০২০
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
ঋতু পাঁচালী
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
বারো মাসে ছয়টি ঋতু বসন্ত হবে তার শেষ
প্রথম হবে কোন্ ঋতু ভাই গ্রীষ্ম হলেই বেশ।
গ্রীষ্মের ছুটিতে আমি মামার বাড়ি যাবো,
আম-জাম-কাঁঠাল-লিচু মনের মত খাবো।
তারপর আসবে যখন বর্ষা ঋতু ঘুরে,
খাল-বিল-নদী-পুকুর কানায় কানায় ভরে।
বর্ষা ঋতু যাবে যখন সুখে-দুখে চলে,
আনন্দে মনটা ভরে উঠে শরৎ ঋতু এলে।
শিউলি ফুলের গন্ধে তখন দুর্গাপূজা চলে,
কালীপূজা এলেই বুঝি হেমন্তের দেখা মিলে।
হাঁড় কাঁপানো শীতে আমার ঘুমোতে ইচ্ছে করে,
বসন্তের চড়ক মেলায় আনন্দে মনটা ভরে।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
নিমন্ত্রণ
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
নবান্নের আমন্ত্রণে সবুজ টিয়ার ঝাঁক;
সায়াহ্নের কালে হরষিত চিত্তে
আপন আধারে প্রত্যাবর্তন,
অসীম তৃপ্ততায় এক আকাশ স্বপ্ন- সমাহারে।
শরৎ এর মোহনীয়তা
হৈমনের সোনালী দোলায়
নবান্নের আঘ্রাণে মুগ্ধ প্রকৃতি,
টিয়ার কলস্বনে নেচে উঠে ধরনী।
নবারুণের আলো বেয়ে ঐ পাড়ার
মুখুর্জ্যে বাড়িতে বইছে আনন্দবন্যা,
রকমারী ব্যঞ্জন,লুচি, পুড়ি, আলুরদম
আরো কত শত আয়োজন ;বংশধরের মুখে ভাতে।
ও পারার 'খুদে নয়ন' অপেক্ষায় পথ চেয়ে
আসবে নিমন্ত্রণ,মিটাবে ক্ষুধার জ্বালা,
হবে একবেলা শাখ ভাতের নিবৃত্তি,
উদরপুর্তিতে আসবে পরিপূর্তি।
নবান্নের ঘ্রাণে স্বপ্নবুনে দিবানিশি,
বয়ে গেছে দিন,ফুরিয়েছে বেলা,আসেনিতো কেউ,
নিমন্ত্রণ রইলো বাঁধা আজও জাতিভেদের পরম্পরায়।
স্বপ্নভঙ্গের করুণ রোদনে নয়নের সাথে সবুজ টিয়াও বুঝি কাঁদে!!
প্রিয়াঙ্কা নন্দী
হারানো সুর
------প্রিয়াঙ্কা নন্দী
তোমারে আমার মনে পড়ে
এক শারদ প্রভাতে
যেখানে ঘাসের উপর শিশির পড়ে
বায়ুতে সুবাস দোলাতে।
তোমারে আমার মনে পড়ে
এক নিঝুম রজনীতে
যেখানে সূর্য ঘুমিয়ে পড়ে
কিরণ ভরা পূর্ণিমাতে।
তোমারে আমার মনে পড়ে
প্রতিটি স্মরণীয় দিন গুলিতে
যেখানে লাল, নীল রশ্মি পরে
রচিত থাকে হৃদয়ের লিপিতে।
তোমারে আমার মনে পড়ে
লোমহর্ষক ঘটনাবলীতে
যেখানে থাকে অশ্রু, বেদনা নীড়ে
ঝরে পড়ে নীরবে-নিভৃতে।
তোমারে আমার মনে পড়ে
স্রোতে বয়ে চলা প্রতিটি মুহূর্তে
যেখানে থাকে দুঃখ, করুনার তরে
ব্যথাগুলো না পারে লুকাতে।
মধুমিতা ভট্টাচার্য
বিকেল
------মধুমিতা ভট্টাচার্য
একদিন ঠিক বিকেল বেলা হারিয়ে যাবো।
হলুদ দুপুর মাড়িয়ে, লালচে বিকেলে হারিয়ে যাবো।
শৈশবের সেই টিয়েপাখিটাকে খুঁজতে যাবো।
মেঘের ছাদ ফেটে বৃষ্টি এলে,
ভিজে বৃষ্টিতে, তার গল্প লিখবো।
হাতের মুঠোয় জোনাক ধরে খুঁজবো শৈশবের পথভোলা সেই জোনাক পোকা।
বন পলাশের তলায় বসে খুঁজবো, সারা সন্ধ্যে জুড়ে,
হারিয়ে যাওয়া ছোট্ট বেলা।
বিকেল শেষের দীর্ঘ ছায়ায়
ভিড় করেছে স্মৃতির মেলা,
লুকোচুরি, সোনারটুক্কি, কাবাডি আর বন্দিখেলা।
সেই বিকেলটা কোথায় গেলো , একলা একা
কেউ জানে না।
আজ বিকেল তুমি খুঁজে আনো, হারিয়ে যাওয়া মেয়েবেলা।
আমি যে সঙ্গী তোমার
ফিরবো না আর ঘরের টানে।
একলা খোঁজার উড়ান ভরবো , ও বিকেল তোমার সাথে।
পায়েল মজুমদার
যে ভাবে বুঝবো তোমায়
-----পায়েল মজুমদার
আমি শুধু বার বার তোমায় বলে যাবো,
ভালোবাসি--ভালোবাসি--ভালোবাসি।
তুমি নির্বাক হয়ে শুনবে,
নিস্তব্ধ অবাক করা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে,
আর মিটিমিটি হাসবে।
তোমার চাউনিতে আমি বুঝে নেবো,
তোমার মনে আমার গুরুত্ব কতটা।
তোমার হাসিতেই আমি খুঁজে নেবো,ভালোবাসার গভীরতা।
তোমার অবাক করা দৃষ্টিতে বুঝে নিতে চাই,
আমায় কতটা আগলে রাখতে চাও।
তোমার নিস্তব্ধতায় অনুভব করতে চাই,
তুমি আমায় কতটা ভালোবাসো।
লিটন শব্দকর
পারিজাত
------লিটন শব্দকর
সরল স্নিগ্ধ মায়াময়,সত্য ও সুন্দর,
অনাবিল হাসিমুখ আঁকা জীবন্ত ঈশ্বর।
ফুল ভালোবেসে ভালোবেসে সুর
প্রতিদিন শিখি শিশুর থেকে,
নতুন সূর্যই সভ্যতার রোজনামচায়
মধুগানের স্বরলিপি লিখে রাখে।
ডাঃ রথীন্দ্র কুমার নাগ
পাঁচ পূরণ
-----ডাঃ রথীন্দ্র কুমার নাগ
রন্ধনেতে মসলা সেরা,
হলদী , মরিচ আর জিড়া।
একেক মসলার একেক বাহার,
মসলা ছাড়া হয়না সুখাবার।
পাঁচক মশাইর যতই থাকুক গুণ,
রন্ধনেতে যদি না থাকে নুন।
সঠিক মাপের তেল নুন আর মসলা,
তবু বাকি থাকে সেরা মসলা।
আঙুলেতে যতই কর গনন,
যদি না থাকে পাঁচ পূরণ।
রান্নায় না হয় সুঘ্রাণ।।
পাঁচক মশাই না হয় ক্ষমতাবান।
মসলার মাঝে সবার রাজা,
রন্ধনেতে পাঁচ পূরণ সেরা।
মানুষের মাঝে ও আছে তেমন,
সকল রান্নায় পাঁচ পূরণ যেমন।
ওরা সকল ঘটে ঢালে জল ,
সঙ্গে চলে না না দল বল।
সকল দলের সাথে চলে,
পাঁচ পূরণ যেমন লাগে।
কলির জমানায় কতনা বাহানা
পাঁচ পূরণ এর মত কতনা ছলনা।
রাহুল নাগ
ছোট্ট বেলার খুকুমণি
------রাহুল নাগ
ছোট্ট বেলার খুকুমণি গিন্নী গিন্নী সাজে।
গামছাটাকে ওড়না করে মাথায় জড়িয়ে রাখে।।
এই পাড়ারই ছোট্ট ছেলে , খুকীর পাশে বর।
পুতুল নিয়ে খেলতে খেলতে সুখের করে ঘর।।
তাদের সুখে অবাক হয়ে বড়রা সব দেখে।
কেমন করে এতো সুখী সেই কথাটাই ভাবে।।
ছোট্ট বেলার খুকুমণি আজ নববধূ সাজে ।
লাল রঙের শাড়ি পড়ে শশুর বাড়ি যাবে।।
জগন্নাথ বনিক
শিশুর শপথ
------জগন্নাথ বনিক
আজকের শিশু হবে ,
আগামী দিনের কান্ডারী।
তাই তো আমরা শিশু কিশোরদের,
মানুষের মতো মানুষ হবার শপথ নিতে বলি।।
চৌদ্দ নভেম্বর আমাদের দেশে,
মহান একটি দিন ।
ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
পন্ডিত জওহরলাল নেহরুর শুভ জন্মদিন ।।
জানি আমরা শুভ জন্মদিনটি,
স্মরণ করে রাখবো ।।
তাই তো আমরা শিশু কিশোরদের,
নতুন নতুন শপথ নিতে বলবো ।।
তোমরা শিশু উজ্জ্বল তারা ,
এই দেশের সুখ শান্তি ।
তাই তো আজ শপথ নাও ,
দেশের বুকে আনবে না কোনো অশান্তি ।।
তোমরা শিশু,তোমরা কিশোর ,
তোমরা যে আজ স্বাধীন ।
সব দুঃখ কষ্ট ভুলে গিয়ে ,
আমাদের দেশটাকে ভালো রাখবে চিরদিন।।
মাম্পী সরকার
ব্যর্থতা
------মাম্পী সরকার
তোমার শহর রঙিন ভীষণ,
আমার শহর কালো।
তোমায় ভালোবাসতে গিয়ে
আমিই আগোছালো।।
সত্ত্বাটা আজ হারিয়ে গেছে
তোমার অন্তরালে।
গানগুলো সব বেমানান,
বিনা সুর-তালে।
সব রং বিলীন যে আজ,
বিবর্ণতায় সাজি।
নিজের মাঝে নিজেকে আজ
হন্যে হয়ে খুঁজি।
জীবন আমার পথ হারালো
স্বপ্ন হলো মিছে।
আলো ভেবে ছুটেছি কেবল
আলেয়ার পিছে।।
ভোলাও এবার অন্য পথিক...
ভ্রমের মরিচীকা।
তোমার আমার স্মৃতিগাছায়
টেনেছি যবনিকা।।
প্রানেশ পোদ্দার
ডিজিটাল
-------প্রানেশ পোদ্দার
ছুটল গাড়ি হাই স্পিডে
থামছে গাড়ি ব্রেক কষে
নামছে যাত্রী
মুচকি হেসে ।।
যায় যে জন নিজের কর্মে
অটুট বিশ্বাস নিজ ধর্মে
এমনি করে আসা যাওয়া
মাসের শেষে মাইনে পাওয়া ।।
সবাই এখন ব্যস্ত ভীষণ
ছেলে মেয়ের লেখাপড়া
আত্মীয় স্বজন ভুলে গিয়ে
মোবাইলেতে দায় সাড়া ।।
পিতা মাতার বৃদ্ধাশ্রম
এটা যেন পারফেক্ট
ডাকে না মা, বাবা
বলছে মম ড্যাড ।।
লাখো টাকার গহনা ছেড়ে
ইমিটেশনের যুগ
ডিজিটাল ইন্ডিয়াতে
এটাই যেন সুখ ।।
শাড়ি নয় জিন্স পেন্ট
ভীষণ কদর ফাস্ট ফুড
কী মজা কী মজা
ভেরি গুড,ভেরি গুড
শুভময় রায়
সমাধান সহজেই হয়ে যায়
--------শুভময় রায়
সাত বছরের ছোট্ট ছেলে বুকান। এমনিতেই পড়াশোনায় মনোযোগী, আর বাবা মার খুব বাধ্য ছেলে। তার সাথে স্কুলে যায়, খেলাধুলো করে, মা বাবা বুকানকে নিয়ে খুব খুশি। পাড়ার লোকেরাও বুকানকে ভালোবাসে, পছন্দ করে।
কিন্তু হঠাৎ করেই পরিবর্তন ঘটে যেদিন থেকে 'কুটি' এল বুকানদের বাড়িতে। বুকান মাঠে খেলতে গিয়েছিল, সন্ধ্যার দিকে বাড়ি ফেরার সময় রাস্তায় 'কুঁই কুঁই' শব্দ শুনে দেখে রাস্তার ধারে, খড়ের কুটির মধ্যে একটা ছোট্ট কুকুর ছানা। বুকান প্রথমে ওর মাকে খুঁজলো, কিন্তু আশেপাশে ছানাটার মাকে দেখতে পেল না। এদিকে সন্ধ্যে হয়ে আসছে ,মাও বকবে বাড়ি না ফিরলে, আবার ছানাটা কাঁদছে, সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বুকান ছানাটাকে হাতে করে তুলে নিল। মনে মনে ঠিক করল একে যখন খড়ের কুটির মধ্যে পাওয়া গেছে, তাই এর নাম দেব কুটি।
সেদিন থেকে কুটি রয়ে গেল বুকানদের বাড়িতে। বুকান তাকে নিজের হাতে খাওয়ায়, খেলে ওর সাথে। নিজের সাথে নিয়ে ঘুমায়।
বুকানের মা র কিন্তু কুকুরটাকে ভালো লাগে না। এর কারণ কিন্তু কুকুরটা নয়, বুকান। যখনই দেখ কুটি আসার পর থেকে বুকান শুধু তাকে নিয়েই আছে, আর সারাদিন খেলার জন্য বুকান এখন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছে, পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছে। মা অনেক বুঝিয়েছে তাকে, কিন্তু বুকান এর কোনো পরিবর্তন হয় না।
বুকানের মা কে প্রতিদিন অনেক ভোরে উঠতে হয়, সকালে বাড়ির অনেক কাজ করতে হয়। বুকানের বাবা সকালে অফিস যাবেন, তাঁর জলখাবার করে দিতে হয়। এর মাঝেও তিনি বুকানকে এসে উঠিয়ে দিয়ে যান, ভোরবেলায় ওঠার জন্য। বুকান ওঠে, কিন্তু মা চলে যেতেই আবার শুয়ে পড়ে। এদিকে কুটিও সারাদিন বুকানের মায়ের সাথে পায়ে পায়ে ঘুরে বেড়ায়, কাজে বাধার সৃষ্টি করে।বুকানের মা আরও রেগে যান।
একদিন বুকান স্কুল থেকে ফিরেই বুকান কে নিয়ে খেলতে যাবে, তার মা চিৎকার করে উঠল,
"বুকান, তুমি প্রতিদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠছো, সবসময় কুকুরটার সাথে খেলছো, আর তার জন্য পড়াশোনায় অমনোযোগী হয়ে পড়ছ। আজই তোমার স্কুলের এক স্যারের সাথে দেখা হল, উনি বললেন কত পরিবর্তন ঘটেছে তোমার পড়াশোনায়! আজকাল হোমটাস্কও ঠিকঠাক করছো না। সব এটা আসার পর থেকে!তার সাথে আমারও কাজে বাধা দেয়। না, ওই কুকুরটাকে আজই পাড়ার বাইরে ছাড়ার ব্যবস্থা করে আসছি।"
মায়ের বকুনি খেয়ে বুকানের কান্না পেয়ে যায়। চোখ ভর্তি জল নিয়ে বলে, "মা, আমি মন দিয়ে পড়ব গো, তাড়াতাড়ি উঠব গো!তুমি কুটি কে তাড়িয়ে দিও না..ওকে আমি খুব ভালোবাসি!প্লিজ মা!"
মা রেগেই বলেন,"না না, তোমায় অনেক বুঝিয়েছি, তুমি কিন্তু শোনোইনি। তুমি যদি আমার কথা না শোনো, আমি শুনব কেন? তোমার কুটি আর এই বাড়িতে থাকবে না।"
বুকান মনের কষ্ট নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। কুটিও কেমন যেন চুপচাপ হয়ে গেছে, শুধু বুকানের গা ঘেঁষে দাঁড়ায়, লেজ নাড়তে থাকে বারবার।যেন বলতে চায় মনিবকে আমি তোমার সাথে আছি।
সে রাতে বুকান মনের কষ্টে কিছু না খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। কুটিও ঘরের এক কোণে ঘুমিয়ে পড়ে।
পরদিন ভোরবেলায় উঠে রোজকার মতো বুকানের মা ঘরের কাজ সেরে বুকান কে ওঠাতে গিয়ে অবাক!দেখেন বুকান উঠে পড়তে বসে গেছে।
বুকান বলে, "মা, জানো আজ ভোর হওয়ার সাথে একটা বড়ো ব্যাপার ঘটে গেছে! আজ ভোর হওয়ার সাথে সাথে কুটি দাঁত দিয়ে আমার চাদর বারবার খুলে দিতে থাকে যতক্ষণ না আমি ঘুম থেকে উঠি। তারপর বারবার আমার বিছানা আর পড়ার টেবিলের দিকে ছোটাছুটি করতে থাকে, আমি পড়তে বসলে তবে শান্ত হয়!
মা, কুটিই এবার আমায় ঘুম থেকে তুলে দেবে। মা এবার তুমি আর কুটিকে তাড়িয়ে দেবে না তো?"
বুকানের মা খুশি হন, বলেন "ঠিক আছে তুমি যদি ঠিক ঠিক সময়ে ওঠো, পড়তে বসো তাহলে কুটিও থাকবে আমাদের বাড়িতে।"
কুটি সব বোঝে, মনিবের কাছে এসে একবার লেজটা নেড়ে দেয়, যেন বলে, দেখো কত সহজে জটিল সমস্যার সমাধান করে দিলাম।
এলিনা সাহা
আমার মা
-------এলিনা সাহা
জন্মিলে মৃত্যু হবে
এ নহে নতুন কথা
ফিরে পাবো জানি
পাই যে মনে ব্যাখ্যা ৷
আমার মা মৃত্যু শয্যায়
আজ কী বা কাল
ছেড়ে চলে যাবে বহু দূর
আমার হতে চিরকাল ৷
খুকু বলে ডাকা বুঝি
শুনব না কো আর
বলবে না আয় খুকু
তোকে দেখি একটি বার ৷
চোখ ফেটে আসে জল
পাশে বসে শয্যায়
বুক ফেটে যায় শুধু বোবা কান্নায় ৷
কী করে বুঝাই বল
মন আর বাঁধা মানে না
সান্তনা দিয়ে বলে
খুকু কিছু ভাবিস না তুই ৷
ঐ আকাশে ছোট তারা হয়ে
আছি সারাক্ষণ তোর সাথে
যখন আমায় পরবে মনে
তোর মুখে মা বলে একটি ডাকে
আসব নেমে তোর কাছে ৷
পুনম মজুমদার
ওরা বাড়ছে
-----পুনম মজুমদার
লতার মতো ওরা রোজ বাড়ে
পৃথিবীর বাগিচা জুড়ে
রঙে-রসে রূপের ডালি সাজাবে বলে।
মোদের অজান্তে ওরা নীতি নির্ধারে
ক্ষুদ্র হাত-পা আর বোধশক্তি নিয়ে।
প্রতি সেকেন্ড চেয়ে থাকে
নীরব উৎসুক চোখে।
অনুকরণ-অনুসরণের শিকড় দুটি
ক্রমশ বিস্তারে গুটি গুটি।
মায়ালোকের অন্ধকার খনি ভেদে
ওরা জেগে ওঠে মানবতার গানে।
সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২০
সম্পাদকীয়
একটা কথা তো বলতে ভুলেই গেছি; এই সংখ্যা সাহিত্য নয়নের সপ্তম তম সংখ্যা। কবি ও লেখকদের লেখনীর স্পর্শে এবং প্রচ্ছদ শিল্পী কবিতা সরকারের অঙ্কিত যথার্থ প্রচ্ছদে শারদ সংখ্যা হিসেবে এই সংখ্যার আত্মপ্রকাশ। সকলে ভালো থাকবেন, সুস্থ থাকবেন। সকলের প্রতি রইল স্থানভেদে শুভ বিজয়ার প্রীতি, শুভেচ্ছা, স্নেহাশীষ, শ্রদ্ধা ও অকৃত্রিম প্রণাম।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সহ--
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
কবিতা সরকার
একটা জীবন
----কবিতা সরকার
বেশি তো নয় একটা জীবন
মন্দ কিনবা ভালো,
পূর্ণ হাটে রইলো কি না
কি বা এসে গেলো।
তবু যদি আছো তুমি
জীবন নদীর তটে,
বলুক লোকে ফেলনা তো নয়
ধন্যি মানুষ বটে।
থাকোই যদি দুঃখ পাথারে
সকল কিছু ভুলে,
ডুব দাও আজ ভব সাগরে
দুগ্গা দুগ্গা বলে।
জীবন শুরু যেমন করে
অরুণ রাঙা আলোক প্রাতে,
আলতো টোকায় পড়বে খসে
জীর্ণ শরীর বয়স দোষে।
যাচ্ছে সময় শুধুই মিছে
হানছে কুড়াল জীবন গাছে,
অস্ত্র নয় সময় রূপে
নিচ্ছে কেড়ে নিশির ডাকে।
হারিয়ো না নিজেকে তাই
জীবন পথের বাঁকে,
স্বপ্নগুলো সত্যি করে
বাঁচো সবার মাঝে।
হেমন্ত দেবনাথ
এসো মা দুর্গা
-----হেমন্ত দেবনাথ
রৌদ্র বরণ মোহন সুন্দর শরতের অনুপম।
হৃদয়-মাধুর্যে ভরপুর দুর্গাকে স্বাগতম্।
তুমি ঐশ্বর্যময়ী---
তুমি মহিষাসুরবিনাশিনী।
চারিদিকে যারা মানবতার চরম দুশ্মন---
তুমি কি মাতঃ
জানিয়াছো তাদের ধরন?
তাহলে তুমি কেন হতে পারোনি মানবাসুরমর্দিনী?
তুমি তো শুধু রয়ে গেলে মহিষাসুরমর্দিনী।
আরো ভয়ঙ্কর মাতঃ
কোভিডের আক্রমণ, ভীত মোরা শঙ্কাতুর-মন।
প্রাণ যাবে তব সন্তানের যখন-তখন।
তাহলে তুমি কেন হতে পারোনি কোভিড-19 মর্দিনী?
তুমি শুধু রয়ে গেলে আজো মহিষাসুরমর্দিনী।
আর থেকো না মাগো মৃন্ময়ীরূপী।
এসো দুর্গা, এসো দুর্গতিনাশিনী
শোষণ, নির্যাতন আর কোভিডের আক্রমণকে দেব নির্বাসন।
নবভাবনায়, নবরূপে তোমার ঘটে যদি আগমন।
সংহতি, মানবতা আর মিলনের সুরে সেদিন
হব উচ্ছ্বসিত----
আনন্দঘন তব আলোকে
সেদিন মানবকুল হবে উদ্ভাসিত।
অমল কুমার মাজি
সুখী
-----অমল কুমার মাজি
প্রতিমার চোখে শ্রাবণের ধারা
বানভাসি সারা দেশ জুড়ে
সর্বস্বান্ত শারদ-সকালে
ভৈরবী বাজে বে-সুরে!
তোমার আলোর বেণু বাজে তবু
ওদের ভুবন মাতলো কই
চালাঘর সাথে সবই গেছে ভেসে
ভিটে টুকু জলে থই থই
আদরের ধন বায়না ধ'রেছে
নতুন পোষাকে সাজবে সে
মা হবে রাণী,সে রাজকুমারী
বাবাকে সাজাবে রাজবেশে!
বিষাদে ব্যথায় ব্যর্থ জননী
দু'চোখে কান্না দোলে
কত কিছু ব'লে বোঝাতে যে চায়
অবুঝ শিশু না ভোলে
বেজে ওঠে ঢাক,আরতি ঘন্টা
ঘুমিয়ে প'ড়েছে খুকি
ক্ষণিকের তরে স্বান্তনা তবু
মাতা যে নিমেষ-সুখী !!
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
কুহেলিকা
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
জ্ঞানের ভান্ডার --লুক্কায়িত
কৌতূহল সদা জাগ্রত,
জটিল তত্ত্ব --তথ্যের বিপাক
সাধনায় দুর্গমতার পাক।
গুপ্তধন!--সে যে ছড়ানো সর্বত্র;
সামনে থেকেও পাই না খুঁজে --
সে যে কী!
জীবনটা হয়ে পড়ে ব্যর্থ।
গুপ্তধন হাতে পেতে কতো দিবানিশি
জলে-জঙ্গলে,পাহাড়ে-রত্নাকরে
বেড়াই ঘুরে,
গুপ্তধন!সামনে ছুটে--
তারে ধরতে দৌড়াই পেছনে পেছনে।
দৌড়াতে দৌড়াতে ক্লান্ত পথিক
দেখি সবই -মরীচীকা।
তরুতলে বিরামকালে ভাবি
কামনা,লালসা--সবই কুহেলিকা।
রচনাকাল:- ১০-০৪-২০২০ ইং শুক্রবার
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
দীনের হরি
---- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
'খ'-এর পানে চেয়ে আছি একা।
নভতে পাইনা কেনো তোমার দেখা?
লোকে বলে তুমি আছো আকাশেতে।
তাইতো আমি তোমায় খুঁজি গগনেতে।
কোনো এক নিশিতে চেয়ে আছি অন্তরীক্ষে,
দেখলাম শুধু আসমানের তারা।
জিজ্ঞাসিলাম আমি শূন্যের তারারে--
পাইনা কেনো দেখতে অম্বরে হরিরে?
মিটমিটিয়ে বলল নীলিমার সকল তারা--
দীন-দরিদ্রের মাঝেই দ্যুলোকের হরি ধরা।
বর্ণা দাস
মায়ের আগমনী
-----বর্ণা দাস
মায়ের আগমনী হোক যেন সন্তানদের রক্ষাকবচ রূপে ,
যত দুঃখ কষ্ট গ্লানি আছে তা সব দিলাম তোমায় সপে।
ছিল সাহস যত সঞ্চয় ধীরে ধীরে হল ক্ষয় ,
কেটে যাক এবার ধরার প্রাণে জমানো সব ভয়।
থেমে যাক মৃত্যুমিছিল কেটে যাক মহামারী ,
গাঁথা হবে নতুন ছন্দে জীবন তুমি দিলে পাড়ি।
ফুটুক হাসি ওই সরল প্রাণে ,
যে পথশিশুটা চেয়ে থাকে তোমার পানে।
পথের ধারে ক্ষুধার টানে যারা রোজ হাত পাতায় ,
দিনের শেষে ওরা যেন পেটপুরে দু'মুঠো খেতে পায়।
মাগো দু'হাত ভরে ভরসা দিয়ো শক্তি দিয়ো মনে সবার ,
দুঃখীর ঘরে সুখের কড়া নড়ে উঠুক বারবার।
স্বপ্ন যাদের অপূর্ণ ছিল তারা মধ্যবিত্ত বলে ,
গল্প ওদের নতুন লেখা হোক সাফল্যের দেওয়ালে।
ক্লান্ত শহর সেরে উঠুক কাটিয়ে জড়া ব্যাধির রেশ ,
মাগো তোমার আগমনীতে হোক এই মহামারীর শেষ।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
অকাল বোধন
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
"ওঁ ঐং রাবনস্য বধার্থায় রামস্যানুগ্রহায়চ
অকালে ব্রহ্মনা বোধো দেব্যস্তয়ি কৃতঃপুরা।"
দিকে দিকে বিপন্নতা, কাতরকন্ঠে আর্তনাদ
ক্রুরতার বক্রহাস্য, তবুও বাঁচার সংগ্রাম।
অহমের এাস,দগ্ধ সকল জ্ঞানের পরিভাষ,
স্বীয় আচার ভুলে রাজন করেছিল সেদিন জানকী হরণ।
চৈত্রের তিথি; দেবীর বোধন ছিলো বিধি,
সময়ের সংকুলান,অধর্মের পরাজয়ে
শরৎ সময়ে অকাল বোধনে
হয়েছিল নিয়োজিত স্রষ্টা স্বয়ং।
শিউলীর শুভ্রমাখা সৌরভ,কাশের দোলন
রৌদ্র ছায়ার চমত্কারী খেলায় সাদা মেঘের নলিনী,
দেবীর কৈলাশ ছেড়ে পিত্রালয়ে সমাগম
মনসুখে হারিয়ে যাওয়া মাটির ঘ্রানে।
অধর্মের অভিভবে অকালপক্ক বোধনের কল্পারম্ভ,
পরিতুষ্ট দেবী; নাশিতেপাপ দিলেন প্রতিশ্রুতি।
আজও ঋতুচক্রের বর্নিল দোলায় শরৎ সমাগত,
কাশের খেলা, নভোমাঝে জলমুকের স্পষ্ট আমোদ।
অথচ অনাচার,অধর্মে মলিন মহী,
দিকে দিকে চরম দুঃসময়, অবক্ষয় মানবতার।
নিদারুন অসময়ে মানুষ করছে রুদ্রানীর বোধন,
কইছে জোড়হাতে "হও জাগ্রত; ভৈরবী তুমি,
অবক্ষয়, কল্মষ যত তোমার কটাক্ষে হোক দমন।"
শুক্লা রানী দাস
আগমনী
-----শুক্লা রানী দাস
আগমনীর আগমনে,মাগো
শরৎ এলো,কাশের গুচ্ছ লয়ে
শিউলি ফুলের মিষ্টি সুবাসে
বাতাস উঠল ভরে।
মেঘ মুক্ত আকাশ এলো
সাদা ভেলায় চড়ে।
তুমি আমার প্রানের উমা
মনের সহচরী
তোমাকে সাদরে বরন করি।
তোমার আগমনে ধরাতল
হোক বিপদ মুক্ত।
তুমি প্রগাঢ়,অসীম অনন্ত।
তুমি মুক্তি ও শক্তি
তুমি শান্তির প্রতিরূপ
তুমি মমতার জীবন্ত স্বরুপ।
পায়েল মজুমদার
এসো মা দুর্গা
------পায়েল মজুমদার
অপেক্ষায় ছিলাম এক বছর ধরে,
তুমি মা কবে আবার আসবে ফিরে।
যখন হিমের পরশ লাগল গায়ে,
বুঝেছি আসছে শরৎ নেচে-গেয়ে।
সকালের ঘাসে শিশিরে ভেজা,
আকাশে সাদা মেঘের ভেলায় ভাসা।
বুঝেছি এবার সময় হল মায়ের আসার।
নাচে গানে মাতবে সবার মন আবার।
কিন্তু যে মা আগের মতো নেইকো কিছু,
সকলের মনের আনন্দ যে আজ নিভু নিভু ।
সকল মানুষ ভাসছে কেমন মৃত্যুর ভেলায়,
মশাল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মৃত্যুর দরজায়।
জানি মাগো তুমি দয়াময়ী,
তোমার দয়ার দানে রক্ষা কর এই মানব জাতি।
সুখের ভেলায় নিয়ে আসো জীবনদানের ঔষধী।
সবার মনের দুঃখ কর দূর,
সকলে হয়ে উঠুক আনন্দে ভরপুর।।
দেবোপম সেন
কংক্রিটের শহর
------দেবোপম সেন
আকাশটা ইস্পাত ঢাকা,
এদিক ওদিক অজস্র মুখোশ,চোখ গুলি ফ্যাকাশে,
দূরবীনের ডাকনাম দূরত্বে মিশে গেছে,চুপ থাকো জানোয়ার,,
এই কালো ঘরে চিৎকার করো,শুধু কৃত্রিম রং এর হাহাকার।।
রেখা গুলি রোজ সুখের খোঁজে শোক খোঁজে রেখে দেয়।
রাত পোহালেই অন্ধকার,আমার হাত ধরে বিদায় নেয়,
এই বুঝি আমার শেষ দিন,রেখে গেছি প্রান্ত শেষ প্রান্তে,
এই বুঝি কিছু ভেঙে গেছে,আমার গল্পের খুব অজান্তে।।
শ্যামল রায়
শুধুই প্রত্যাশা নিয়ে
-----শ্যামল রায়
বুক ভরা আশা নিয়ে
স্বপ্নের ফসল যখন খুঁজি
আধার এসে জড়ো হয় চারদিক।
তবুও স্বপ্নরা জেগে উঠে বলে
জল কাদা একাকার হলেও
সলতে দাও
বুকের উষ্ণ উত্তাপে
জ্বলে উঠুক আলো।
আলোয় ভরা পাখির ডানা
উড়িয়ে দেবো
মুছে যাবে ঘন কালো অন্ধকার
নতুন রঙে নতুন শব্দে
শাড়ির নকশায় দেখতে পাবো
শুধুই তোমাকে, শুধুই তোমাকে আর একটা
আর একটা সকাল বেলা।
গোপাল বনিক
সাম্যবাদী
------গোপাল বনিক
প্রতিদিন কতো ফুল ঝরে পড়ে,
আমরা শুনতে পাই তাদের আর্তনাদ।
আমি কি তোমার হাতের পুতুল?
তোমার ইচ্ছা অনিচ্ছার ক্রীতদাস!
গৃহবধূর তকমা দিয়ে আটকে রাখো ঘরে,
মনে হয় যেন গৃহপালিত-
পায়ে পায়ে বেঁধে দাও বিধিনিষেধের গন্ডী,
অথছ ভুলে যাও আমারও প্রাণ আছে প্রেম আছে।
আমরা সেই পায়ে লাগানো বেরী গুলি খুলে দিতে চাই।
শোনো নারী, বজ্রাঙ্গনা তুমি,
তোমার ভালেই শোভিত সৃষ্টির শ্রেষ্ট উপহার,
তুমিই তো জন্ম দাও পৃথিবীর শ্রেষ্ট সম্পদ।
এখন তোমার হাতে তুলে নাও শানিত কৃপাণ।
শ্মশান ভস্ম গায়ে মেখে গর্জে উঠো,
তোমার রক্ত চক্ষুর ঝলসানিতে এফোঁড় ওফোঁড় হউক-
শত্রুর কুৎসিত কদাকার মুখচ্ছবি।
তারপর আলোর পতাকা উর্দ্ধে তুলে ঘোষণা করো সাম্যবাদ।।
সুকমল গুপ্ত
তুমি আসবে বলে
------সুকমল গুপ্ত
শরতের স্নিগ্ধ সকালখানি,
তোমার পায়ে নূপুর , হাতে ফুলসাজি
কোমল দূর্বা মারিয়ে চলা,
স্নিগ্ধ আলোয় চিকচিক করা শিশির বিন্দু
ঝিলমিল করছে কচি পাতার সুচাগ্র ভাগে,
শুধু তুমি আসবে বলেই,
তুমি আসবে বলেই,, শিউলি ফোঁটা,
কাশবনে দোলে উঠে ঘন কাশফুল
সাদা মেঘ ভেসে বেড়ায়,
অনন্ত নীল আকাশে,
শুধু তুমি আসবে বলেই,
তুমি আসবে বলেই জানি,
প্রাণের স্পন্দন যেন নির্জীবেও ঘটে,
শান্ত স্নিগ্ধ , সজীবতার নির্যাস
চারিদিক মুখরিত হয়, শিউলি সুবাসে
শুধু তুমি আসবে বলে,
আমি আজো খুঁজে পাই সেই
পূজো পূজো গন্ধ,
এক মূহুর্তেই হারিয়ে যাই ছেলেবেলায়
খুঁজে নিই অতৃপ্ত আত্মার রসদ
অতীতের স্মৃতিপটে,
শুধু তুমি আসবে বলে,
শুধু তুমি আসবে বলেই,,
রোজ অপেক্ষার প্রহর গোনা,
থমকে যাওয়া সময়টাকে,একটু গতি দেওয়া
আনন্দ আর সৌহার্দ্যের মিশ্রনে,
শুধু তুমি আসবে বলে,
শুধু তুমি আসবে বলে,
পাড়ার মন্ডপে আগমনীর সুর
বেজে উঠে শুভ্র শঙ্খ ধ্বনি,
ভেসে আসে দূর থেকে
"শিশিরে শিশিরে শারদ আকাশে ,
ভোরের আগমনী"
ভরে উঠে মন সবার
হয়ে আনন্দে একাকার,
দুখ যত বিলীন হয়, মুখে ফুটে হাসি
শুধু তুমি আসবে বলেই,
শুধু তুমি আসবে বলেই
পসরা সাজায় দোকানি
ভরসা তুমি , হতভাগ্য দের
হয়তো বা পারবে খেতে মুঠো দু-খানি।
তুমি আসবে বলেই,
আজো পথ চেয়ে থাকা,
ফিরে আসে শরৎ বারংবার,
তোমার স্পর্শে খুঁজে পাই জীবন,
তাই শুধু চাই ,আসো বারবার
জীবনে সবার।
লিটন শব্দকর
অভিমানী শৈশব
------লিটন শব্দকর
মনু নদী হাতছানি দিয়ে ডেকে বলে
ফিরে আয় শৈশবে;
এখনো অনেক খেলা বাকি পড়ে আছে,
মাঝখানে এক চিরন্তনী বেড়া
অভিমান ধুয়ে যায় খোয়াই জলের কাছে।
প্রাক শরতের কাঁকড়ি নদী
চিঠি ফুরোনো কাশের দোলা
দেখা না হওয়ার প্রজাপতিলিখন
বারোয়ারি গোধুলিতলা।
নয়ন রায়
লাল ধর্ম
-------নয়ন রায়
বারুদ মেশানো বায়ু
ধর্ম মেশানো খাবার,
দুই মিলে রাজ গোটা পৃথিবী___
মানুষ কে কার ?
হিংসার হজম বাড়ছে প্রতিরোজ
কমছে ভালোবাসা,
মিষ্টি কথায় চিঁড়ে ভিজেনা__
রক্ত চাই তাজা।
ভোরের কূজনে পাখি ডাকে না
আর্তনাদে ভরা!
রাম-রহিমের যুদ্ধ চলছে__
গোটা বিশ্বজোড়া।
কার কথা আর কেই'বা ভাবে,
নোটের গন্ধ সবার নাকে।
ধর্ম আজ বাজার-হাটে__
করছে ব্যবসা।
লাখের পিছনে লাখি হাটে,
টাকায় কার নজর ?
পথের পারে ভিখারির স্তূপ,
ওরা সব অধর্মের কবর।
ধর্ম বলে যা'ছিল বিক্রি সব
কিনছে ধনী জনে;
রাম-রহিমের গোষ্ঠীরা সব___
আজ তাদেরি ঘর কোণে।
গরীবের আওয়াজ শোনে না তাঁরা
টাকার ক্রীতদাস,
ইট-পাথরের মোটা প্রাচীরে____
বন্দি বারো মাস।
রাজেশ পাল
আমার দূর্গা
------রাজেশ পাল
আমার দূর্গা বিদ্যা রূপে বুদ্ধি
আমার দূর্গা স্ত্রী রূপে লক্ষ্মী,
আমার দূর্গা শক্তি রূপে শিবানী,
আমার দূর্গা মাতৃ রূপে জননী।
আমার দূর্গা স্কুলে যায়
আমার দূর্গা কলেজ পড়ায়,
আমার দূর্গা স্বপ্ন বুনতে জানে
আমার দূর্গা স্বপ্ন পূরণ করতে জানে।
আমার দূর্গা শিক্ষিত
আমার দূর্গা সমাজে প্রতিষ্ঠিত,
আমার দূর্গা প্রান বাচাঁতে জানে
অন্যের জন্য নিজের জীবন দিতে জানে।
আমার দূর্গা সংসার চালাতে জানে
বট বৃক্ষ ন্যায় সবাইকে আগলে রাখতে জানে,
নিজে দুঃখে থেকেও অপরকে খুশি রাখতে জানে
আমার দূর্গা ত্যাগ করতে জানে।
আমার দূর্গা অস্ত্র হাতে নিতে জানে
আমার দূর্গা স্বর্গ এবং মর্ত্যকে রক্ষা করতে জানে,
আমার দূর্গা তেজী , আমার দূর্গা জেদি
আমার দূর্গা সমাজে পরিবর্তন আনতে জানে,
সে পাপ এবং পাপির নাশ করতে জানে।
আমার দূর্গা প্রতিবাদ করতে জানে
অন্যায়ের বিরুদ্ধে সে আওয়াজ তুলতে জানে।
আমার দূর্গা অত্যাচারের বিরুদ্ধে খড়গ হাতে নিতে জানে,
সে নিজের সম্মান বাচাঁতে জানে,
আমার দূর্গা কলম ধরতে জানে
সে অবহেলিতদের পাশে দাঁড়াতে জানে।
আমার দূর্গা শাস্ত্র পড়তে জানে
কুসংস্কারের বিরুদ্ধে কথা বলতে জানে,
আমার দূর্গা নয় অবলা
আমার দূর্গা অভয়া
আমার দূর্গা নিজের শর্তে বাচঁতে জানে
আমার দূর্গা নিজের শর্তে বাচঁতে জানে।।
গোপাল দে
এসো ত্রিনয়নী
-----গোপাল দে
বছর ঘুরে আসছে আবার
মোদের শারদীয়া।
কি ধন দিয়ে করবো বরণ
ভাবলে কাঁপে হিয়া।।
ফাঁকা মোদের লক্ষীভাঁড় আজ
বন্ধ উপার্জন।
করোনা নামক মহামারী
খেলো জমানো ধন।।
এবার একটু কষ্ট করো
ঘরে নেই কিছু।
জানিনা কবে করোনা ব্যাধি
ছাড়বে মোদের পিছু।।
মহিষাসুর বধ করে যাও
প্রতি বছর বছর।
ধ্বংস করো করোনাসুর
গুনছি মোরা প্রহর।।
আসার সময় ত্রিনয়নী
খাবার কিছু এনো।
গরীব সন্তান অভুক্ত আজ
ভালো নেই জেনো।।
আসছে বছর ধুমধাম করে
করবো আবাহন।
একটা বছর কষ্ট করো
এই নিবেদন।।
চারদিকেতেই করোনা ত্রাস
ঘরে বাইরে খরা।
ত্রিনয়নের আগমনে
ধন্য হোক এই ধরা।।
শ্রীমান দাস
ফাইলবন্দী
------শ্রীমান দাস
প্রশংসায় আজ আর ভরেনা মন
উদ্যম ফেরেনা পুষ্পস্তবকে ,
সুদের টাকা মুকুব হয়না
ফাইলবন্দী শংসাপত্র দেখালে।
কিংবা , ধৌতজলেও হয়না উদরপূরণ,
ভাতের থালায় যেতেই হয় কলমধরা হাত ।
বাঁচতে হলে দু’মুঠো খেতে চাই ।
কাঁধে চাপে খাওয়ানোর দায়
চেপে ধরে আবদার , বায়না কত কি !
কলমধারী হাতে তখন কোদালের একনায়কতন্ত্র ।
শংসাপত্র তখন শুধুই ফাইলবন্দী নিস্ফলা কাগজ ।
কোদাল চালানো ফোসকা পড়া হাতে
কলম ধরা বড়োই যন্ত্রনার ।
গলার উত্তরীয় হয় ফাঁসির উপাদান । ।
নীলাব্জা রায়
এই সময়
------নীলাব্জা রায়
পোয়াল পোড়ায় চাষী ভাই
সাথে পুড়ি মুই
বাতাস ভর্তি কালো নেশা
আকাশ ছুঁই ছুঁই।
মাংস ছেঁড়া লোলুপ গ্রাসে
অকাল বোধন, কাল নাচে
মহাপ্রলয় আসবে চুপে
হুঁশ ফিরল কই?
সুজন দেবনাথ
শরৎ
-----সুজন দেবনাথ
শরৎ মানে মেঘ রোদ্দুর
লুকোচুরির খেলা,
শরৎ মানে উঠুন জুড়ে
শিউলি ফুলের মেলা।
শরৎ মানে শিশির ধোঁয়া
কাশের বনে দোল,
শরৎ মানে ঢাকে কাঠি
আগমনীর বোল।
শরৎ মানে নতুন জামা
আনন্দ উৎসব,
শরৎ মানে হইচই আর
খুশির কলরব।
শরৎ মানে ভোরে উঠে
ফুল কুরনোর খেলা,
শরৎ মানে সারাটা দিন
জমজমাটি মেলা।
শরৎ মানে চারি দিকটা
সাজো সাজো রব,
শরৎ মানে দোকানী দের
পশরা সাজানো পরব।
শরৎ মানে মন্ডপেতে
ঠাকুর দেখার পালা,
শরৎ মানে প্রতিযোগীর
দারুণ দারুণ খেলা।
শরৎ মানে পূজোর আড্ডায়
মেতে উঠে মন,
শরৎ মানে খাওয়া দাওয়া
দিব্যি কাটছে ক্ষন।
শরৎ মানে বিজয়াতে
সিঁদুর মাখামাখি,
শরৎ মানেই মায়ের ভাসান
সবার বিসাদের মুখ দেখি।
কোথায় গেল সেই শরৎ
আজ কেমন যেন দিন,
সাদা কালো লাগছে শরৎ
লাগছে না আর রঙিন।
নেই যেন সেই কোলাহল
আর পূজো পূজো রব,
চারিদিকটা স্তব্ধ যেন
লাগছে আজ নীরব।
কোথা হতে করোনা নামে
রাক্ষসী এক এল,
হঠাৎ যেন সব আনন্দ
মাটি করে দিল।
মা-গো
প্রতিবার তো অশুর বিনাশ
করেছ ধরায় এসে,
এইবার তুমি এসো মাগো
করোনা বিনাশে।
জা- গো- ও- ও, তুমি জা- আ- আ- আ গো।
মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০
সম্পাদকীয়
প্রিয় পাঠক, আজ মনটা বড্ড ভারাক্রান্ত। কখনো প্রিয় জনের অকাল চিরনিদ্রায় শায়িত হওয়া কখনো বা প্রিয়জনের প্রিয়জনকে হারানোর আঘাত সইতে সইতে আজ বড্ড ক্লান্ত। সম্পাদকীয় লিখতে বসেছি দু-দুবার, কিন্তু লেখনী কথা বলতে চাইছে না। হঠাৎ চোখে পড়ল প্রিয় কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্যের বার্তা -------- "মেঘহীন শারদ আকাশের পূর্ব দিগন্তে বিকেলের পড়ন্ত বেলায় রামধনু দর্শন সত্যি অভাবনীয়। প্রকৃতির লীলাভূমিতে এখনো মেঘবালিকারা ছুটছে তাই তো তাদেরকে সাত রং-এ সাজাতে প্রয়াস ব্যর্থ হবে না"। মনে পড়ল প্রিয় কবি অমল কুমার মাজির কিছু কথা--------"আমার প্রাণের সাহিত্য নয়ন, আমার ভালোবাসার সাহিত্য নয়ন"। চোখে পড়ল রামধনু সংখ্যার পূর্ণতা লাভের পক্ষে যথার্থ কবি ও প্রচ্ছদ শিল্পী কবিতা সরকারের অংকিত প্রচ্ছদ খানি। চোখের সামনে ভেসে উঠলো সাহিত্য নয়নকে সাজাতে সম্মানিত কবি-লেখকদের রঙিন সৃষ্টি। তাতেই শক্তির যোগান পেল ক্লান্ত মন। সকলের সার্বিক সহযোগিতা এবং উষ্ণ অভ্যর্থনায় অভিভূত হয়ে আপনাদের ভালোবাসার টানে অনেক আশা এবং স্বপ্ন জড়িত আরও একটি নতুন সংখ্যা নিয়ে হাজির হলাম। সাহিত্য-সমুদ্রে যাত্রাপথে ষড়ঋতুর তিনটি ঋতুকে স্পর্শ করে এবারে প্রকাশিত হলো "সাহিত্য নয়ন"-এর "রামধনু" নামক ষষ্ঠতম সংখ্যা। সূর্যের রশ্মি থেকে রামধনুর সাতটি রং আমাদের পরিবেশ ও মনকে প্রভাবিত করে। সূর্যের আলোয় মিশে থাকা সমস্ত রঙে নানা গাছ-পালা, জীবসকল বেঁচে থাকে এবং সকল রঙের সমন্বয় মানুষকে সুস্থ, সবল, যশস্বী ও গৌরবান্বিত করে। এই সাত রঙের আলোকে আমাদের বাসগ্রহ থেকে কালো যবনিকা হোক ছিন্ন। চলুন আমরা সকলে মিলে তরী ভাসাই সাহিত্যের মহাসমুদ্রে। বাকি কথা হবে আগামী সুস্থ প্রভাতে।
ধন্যবাদ, শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধা সহ-------
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন