সাহিত্য নয়নে আপনাকে স্বাগত
রবিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২১
সম্পাদকীয়
"শিশু" শব্দটির দ্বারা কি শুধু পুত্র সন্তানকে বোঝায় ? না, একদম না। শিশু শব্দটি দ্বারা যেমন শুধু পুত্রসন্তানকে বুঝায় না, ঠিক তেমনি শুধুমাত্র দরিদ্র অথবা অবস্থাসম্পন্ন পরিবারের সন্তানকেও বুঝায় না। শিশুদের নানান সমস্যার সমাধান এবং শিশু কল্যাণে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে উৎসাহিত করাই 'শিশু দিবস'-এর প্রধান উদ্দেশ্য। কিন্তু বাস্তবিক জীবনে অগণিত সমস্যায় জর্জরিত হতদরিদ্র পরিবারের সন্তানদের অথবা পথশিশুদের নিয়ে 'শিশু দিবস' উদযাপন করা ডুমুরের ফুলের মতো। প্রতিদিন অগণিত হতদরিদ্র পরিবারের প্রতিভা সম্পন্ন শিশুদের প্রতিভার অপমৃত্যু হচ্ছে বিভিন্ন কলকারখানায় অথবা কোনো বিপদের ঝুঁকি সম্পন্ন কাজে। কন্যা নামক ফুলের কুঁড়ি প্রস্ফুটিত হওয়ার আগেই হচ্ছে নির্মম হত্যা। আমরা যতই আধুনিকতার বড়াই করি না কেনো, এখনো কন্যা সন্তান ও পুত্র সন্তানের ভেদাভেদ করার মত নিছক মানসিকতা থেকে আমরা অনেকেই বেরিয়ে আসতে পারিনি। 'শিশু দিবস' তখনই সার্থক হবে, যেদিন পুত্রকন্যা ভেদাভেদ ভুলে সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের সমস্যা সমাধানে এবং কল্যাণে সমাজের সকল অংশের মানুষের শুভবুদ্ধি জাগ্রত হবে।
প্রিয় পাঠক, তিন মাস পর আবার ফিরে এলাম আপনাদের ভালোবাসার টানে। প্রকাশিত হলো সাহিত্য নয়নের "শিশু দিবস সংখ্যা ২" নামক ১৭তম সংখ্যা। সমাজের সকল শ্রেণীর শিশুদের কল্যাণ কামনা করে তাদের উদ্দেশ্যে এবারের সংখ্যাটি উৎসর্গ করা হল। এবারের এই বিশেষ সংখ্যাটি পুষ্ট হয়েছে যে সকল দীপ্তমান কবিদের লেখনীর স্পর্শে, আপনাদের সকলের প্রতি রইল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও অভিনন্দন। সুপ্রিয় পাঠক বন্ধুরা, অনেকক্ষণ ধরে বক্ বক্ করছি। আজ এটুকুই থাক। বাকি কথা হবে আগামী সংখ্যায়। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ-শুভেচ্ছা ও শ্রদ্ধাসহ----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
প্রাপ্তি
১৫ তম এবং ১৬ তম সংখ্যা প্রকাশের পর সম্মানিত পাঠক কর্তৃক কিছু প্রাপ্তি :-
ত্রিপুরা রাজ্যের ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ মহাশয় লিখেছেন------
"সাহিত্য নয়ন"-এর ষোলতম সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে। এতে আমরা গর্বিত। খুব ভালো লাগছে প্রচ্ছদ দেখে, সম্পাদকীয় লেখাটা শৈল্পিক দ্যোতনা লাভ করেছে। এজন্য সম্পাদককে ব্যক্তিগত ভাবে স্বাগত জানাই।
প্রতিটি লেখাই আমার হৃদয়কে নাড়া দিতে পেরেছে। সবাইকে ধন্যবাদ জানাই। যাদের ঐকান্তিক প্রয়াসেই সফলতা এসেছে, তাঁদের সবাইকে শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন করছি। আমি সাহিত্যপত্রটির অগ্রগমন কামনা করছি।
সশ্রদ্ধ অভিনন্দন সহ----
হেমন্ত দেবনাথ।
তারিখ :-01/08/2021.
পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান থেকে অমল কুমার মাজি মহাশয় লিখেছেন-------
আমার প্রিয় "সাহিত্য নয়ন পত্রিকার জুলাই 2021 সংখ্যা পেলাম।অজস্র ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা পত্রিকার কর্ণধার ভ্রাতৃপ্রতিম রাজেশ ভট্টাচার্যকে।তার নিরলস প্রচেষ্টার ফলেই এমন একটি সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ সম্পন্ন হয়ে চলেছে নিয়মিত।শুভেচ্ছা র'ইল সমস্ত কলাকুশলীদের।যাঁদের সুচিন্তিত লেখনীর আঁচড়ে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছে পত্রিকা।আমি কণামাত্র অংশগ্রহণ করতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। অনেক অনেক শুভকামনা।
ত্রিপুরার ধর্মনগর থেকে জয়ত্রী চক্রবর্তীর মহোদয়া লিখেছেন-----
বাহ্...সম্পাদক মহাশয়... খাসা হয়েছে সম্পাদকীয় খানা...বড় ভালো লাগলো ভাই...
বাংলাদেশ থেকে দিলারা বেগম লিখেছেন-------
সাহিত্য নয়ন সমাজের দর্পণ। সম্পাদক মহাশয়ের এই প্রচেষ্টা প্রশংসনীয়। সকল কবিদের প্রতি রইল শুভকামনা। সাহিত্য নয়ন এগিয়ে যাক।
ধর্মনগর থেকে হেমন্ত দেবনাথ মহোদয় লিখেছেন-------
" সাহিত্য নয়ন"-এর পঞ্চদশতম সংখ্যা ( বর্ষামঙ্গল বিষয়ক সংখ্যা--2) প্রকাশ করার জন্য সম্পাদকসহ সংস্থার সকলকে জানাই হার্দিক ভালোবাসা ও আন্তরিক অভিনন্দন। লেখাগুলো মনোমুগ্ধকর ও সুখপাঠ্য হয়েছে।
আমি জোর গলায় বলবো যে, পাশ্চাত্য অপসংস্কৃতির বেলাল্লাপনার বিরুদ্ধে ও ঐক্যস্থাপনের পক্ষে " সাহিত্য-নয়ন" আজকের দিনে সবচেয়ে বড়ো চ্যালেঞ্জ। সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশে ও মনকে পরিশীলিত করার ব্যাপারে লেখাগুলোর ভূমিকা অপরিসীম। আমি সাহিত্য পত্রিকাটির অগ্রগতি কামনা করি।
শুভকামনায়--
হেমন্ত দেবনাথ।
25/06/2021.
ধর্মনগর থেকে গৌরী দেবনাথ মহোদয়া লিখেছেন-----
সম্পাদককে ধন্যবাদ জনাই পত্রিকা প্রকাশের জন্য।প্রতিটি লেখা পড়ে মন ভরে গেল।
বাংলাদেশ থেকে বিমল বিশ্বাস মহোদয় লিখেছেন-----
আজকের সমাজে সাহিত্য নয়নের বড়ো প্রয়োজন। আমি সাহিত্য নয়নের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করছি।
অমল কুমার মাজি
সেই ছেলেটি
-------অমল কুমার মাজি
সবুজ-সবুজ একটি ছেলে
থাকত সে এক গাঁয়ে
হাঁটত খালি পায়ে।।
মেঠো হাওয়া সাঁঝ-সকালে
ক'রত আদর তাকে
পথের বাঁকে-বাঁকে।।
নদীর তীরে কাশের বনে
ঘুরত সে আনমনা
খুঁজত জীবন-কণা।।
তারায় ভরা রাতের আকাশ
বাসতো তাকে ভালো
মাখিয়ে মিঠে আলো।।
কখন যে সব হারিয়ে গেল
জীবন-পথের বাঁকে
কঠিন ঘুর্ণিপাকে।।
প্রেমের কাঙ্গাল সেই ছেলেটি
ভুলেছে সব সুর
গাঁ যে অনেক দূর।।
হেমন্ত দেবনাথ
দীপাবলী
-------- হেমন্ত দেবনাথ
কার্তিকের অমাবস্যায়--
দীপাবলী উৎসব।
প্রীতি-শ্রদ্ধা ও হর্ষে আপ্লুত সব।
মহামিলনের প্রেরণা দেয়।
ক্লেশ-যাতনা দূরে ভাসিয়ে নেয়।
উৎসব আনে "সংহতির বাণী।"
দূরে যায় সব আঁধার আর গ্লানি।
অসুররা সবে করিল চক্রান্ত --
স্বর্গরাজ্য করিবে আক্রান্ত।
দেবরোষে সৃষ্ট দেবী দুর্গতিনাশিনী।
তুমুল রণে স্বর্গরাজ্য ত্রাণিতে দেবী হলেন মহিষাসুরনাশীনি।
অসুররা পেল অপরিমিত সাজা--
দীপাবলী উৎসবে তাই তো শ্যামাপূজা।
ক্ষতিকর পোকারা সব মারা পড়ে ---
দীপাবলীর আলোকসজ্জায়।
কৃষক তখন পৃথিবীকে পায় নবসজ্জায়।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
মূলধন
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
শিশুরা- ই আসল,
ওরাই মূলধন
ওদের কে দাও
ভালো যোগান,
ওদের সাথে করলে কারচুপি
নিভে যাবে
আছে যত বাতি -কুপি।
ওদের পাশে থাকো
ছায়াসঙ্গী হয়ে
আকর্ষ দিয়ে উঠবে বেয়ে
উপরে অনেক উপরে।
ওরা তো শিশু!
ঘুরে ফিরে
দেখতে চায় অনেক কিছু।
ওদের মনে প্রশ্নের ডালি
দিও না ওদের বকা গালি
খোরাক যোগাও
দেখবে মূলধন হবে না খালি।
রচনাকাল:- ১১/১১/২০২১,বৃহস্পতিবার
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
অপ্রত্যাশিত
------ রাজেশ ভট্টাচার্য্য
অপরিচিত মুখগুলো আজ খুব পরিচিত।
প্রথম যোগে পরিচয় পাইনি যদিও।
সেদিন হয়েছিল আপন চিন্তার বহিঃপ্রকাশ।
উচ্চারিত হয়েছিল পঞ্চজন সম্মুখে---
কীর্তির্যস্য স জীবতি।
কীর্তি আজ পরিহাসের আঁতুড়ঘরে।
বঞ্চনা হয়েছে পরম সঙ্গী।
দাবী উঠেছিল তার প্রতিবাদে।
কিন্তু কেউ কথা রাখেনি।
নিজেও হয়তো আর রাখিনা।
শান্তশ্রী মজুমদার
আমার ভুবন
-------শান্তশ্রী মজুমদার
রাতের আঁধার কেটে
সূর্য জাগে রোজ ভোরে।
সোনালী আলো ছড়িয়ে
চরাচর চোখ খোলে।
পূর্ব গগন হেসে ওঠে
কমলা আবির গায়ে মেখে।
প্রতিটি ভোর স্বর্গ রচে
প্রজাপতি ফুলের মিলনে।
ফুল সুন্দর রূপ সৌরভে
শিশুরা শুধুই মাতৃক্রোড়ে।
শিশুর হাসিতে স্বর্গ নামে
চাঁদ রূপসী হয় কোজাগরী রাতে।
মিটিমিটি তারারা পথচলে ছায়াপথে
ক্ষুদ্র তবু দীপালোক ছড়ায় ভুবনে।
রচনাকাল :- 5/11/2021
নিরঞ্জন দাস
তোমাকে খুঁজি
-------নিরঞ্জন দাস
সভাপতি ভাষণ রাখলেন ।
হে কবি, তুমি জাগো ।
তুমি গন্তব্যে পৌঁছাও।
ফাগুনের মধুর সাহিত্য আলাপন।
দিগন্ত বিস্তৃত উদাসীনতা।
অব্যক্ত কবিতার খোঁজে।
সবুজ মাঠ পেরিয়ে।
মনের আকাশে খুঁজে পাই,
আশার সাগর দাঁড়ি।
মনে পড়ে সন্তোষ রায়, মন্টু দাস আর
আকাশ চাকমার অনবদ্য কবিতা পাঠ ।
সুস্থ সংস্কৃতির খুঁজে সাহিত্য আড্ডা ।
চল পানসি, চল পাগলি কবি ।
এবার গন্তব্য-----
মলিনা দেবনাথ
দহন
------মলিনা দেবনাথ
অন্তর কুরে কুরে খায় অমুঘ যন্ত্রনা।
অমৃতের সন্তানদের ভালোবাসা,
আজ ভয় জাগায়।
বিশ্বাসের ভিতরে ভিতরে জন্ম নেয় অবিশ্বাস।
হাসির অন্তরালে প্রবাহিত রক্তগঙ্গা।
প্রজন্মে প্রজন্মে বদলায় ভাঁওতাবাজির ইতিহাস।
পুরোনো রক্তের শিরা অভ্যাস বসত ভুল করে।
তরঙ্গাইত জল, সোনা গলা রদ্দুর,
ভুল পথ দেখায়।
মেল-বন্দনের ধরণ পাল্টে সাঁত পাক পরিণত লিভটুগেদারে,
আসল নকলের ভেদাভেদ ভেঙ্গে,
সোনা-মেকি সোনা একাকার
থেঁকে থেঁকে কথা কয় অপূর্ণ জীবন।
চোখে বাঁকা দৃষ্টি আড়াল করে
বাইরে বেরিয়ে আসে
মিষ্টি হাসির জোয়ার।
সুজন দেবনাথ
তুমি নবরূপে এসো
-------সুজন দেবনাথ
ওহে ঈশ্বর,
তুমি কি আজ চোখ বুজে আছো,
নাকি পাষাণ হয়ে গেছো?
হ্যাঁ জানি,তুমি এমনটাই করবে।
কারণ,সমাজের বুকে আজকের ভেদাভেদ টা
একদিন তুমিই তো সৃষ্টি করেছো।
যদি তা না হয় তবে কেন,
তুমি তোমার একই হাতের সৃষ্টিতে
এতো ভিন্নতা রাখলে?
কেন সৃষ্টি করলে ভালো-মন্দের?
দেব-দানব, সুর-অসুর তো--
তোমার হাতেই গড়া।
ওদের তুমি মানুষ না বানিয়ে
দস্যু বানালে বলেই তো--
আজ ওদের টানা-হ্যচরায় তুমি দিশেহারা।
তোমার সৃষ্টিই আজ তোমাকে
কটাক্ষ করা প্রশ্ন বাণে বিদ্ধ করে,
ভীষ্মের মতো শয্যাশায়ী করে রেখেছে!
আর চারিদিকে জ্বেলেছে প্রতিহিংসার আগুন।
যে আগুনে আজ তুমি দগ্ধা,
আর ধীরে ধীরে তুষের আগুনের মত
তোমার সৃষ্টি পুড়ে হচ্ছে ছাঁই।
বলো ঈশ্বর,
তুমি আর কতকাল চোখ বুজে থাকবে?
অন্যায়,অত্যাচার, আর পাপে
গোটা সৃষ্টি ধ্বংস হলে তবেই বুঝি চোখ খুলবে?
এইবার জাগো ঈশ্বর,
ধরনীর বুকে আবার শান্তি,সম্প্রীতি,
আর ঐক্য ফিরিয়ে আনতে
নবরূপে নেমে এসো তুমি,
তোমার সৃষ্টি রক্ষার্থে।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
বারণ
-------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
তুমি সৃষ্টি,প্রণয়ী,প্রলয়ংকরী
প্রকৃতি,শত রূপে মনমোহিনী।
সৃজনের ধারয়িতা,ধ্বংসের রুদ্রানী
তোমার গর্ভে জন্ম পুরুষ জাতি।
স্রষ্টার যাকিছু অর্ধে সমঅধিকার,
তবুও মুখবুঝে সও শত অনাচার।
পুরুষের অনুপ্রেরণা নারী,যোগায় শক্তি
অথচ মুখলুকিয়ে কাঁদে নারীই।
যুগে যুগে অতীত সাক্ষী,
সীতা,অহল্যা,মন্দোদরী,দ্রোপদী
সমাজ তোমাদেরই বানিয়েছিল দোষী
আজও একই পথের পথিক তুমি।
একবিংশ শতকের মুক্ত গগনে
দগ্ধিত নারীর কালো ধোঁয়া ভাসে
ভুবন কাঁপে সম্ভ্রম হীনতার আর্তনাদে
লাঞ্চনা বঞ্চনা অবিরত চলে।
দিনের নির্জনতায়,রাতের আঁধারে
একলা চলা আজও বারণ আছে।
অথচ জলে,স্থলে অন্তরীক্ষে
তোমার প্রদীপ্ততায় আলো জ্বলে।
সময়ের দাবীতে অধিকার আদায়ে
অবক্ষিত সমাজে মানবতা রক্ষিতে
হে নারী,উঠ তুমি জেগে
পুরুষ -নারীতে সমতা;জানাও সমাজেরে।
প্রিয়াঙ্কা নন্দী
তারার মেলা
------ প্রিয়াঙ্কা নন্দী
আঁধার রাতের কালো আকাশে
হাজার তারার মেলা ।
চমকে সেই তারারা মিলে
করছে কত খেলা।
আকাশ জুড়ে সকলে মিলে
রয়েছে কেমন করে।
দূর থেকে দেখে মনে হয়
হাজার টুকরো হীরে।
আমার মনের ইচ্ছা জাগে।
মেঘের ভেলায় ভেসে
কখনো যদি যেতে পারতাম
সেই তারার দেশে।
গঙ্গা সাহা
মা জানো
-------গঙ্গা সাহা
মা জানো! তোমার মেয়ে এখন ,
অনেক বড়ো হয়ে গেছে।
সব কাজ নিজে করতে শিখেছে।।
তোমার যে মেয়ে কখনও,
রান্না তো অনেক দূরের কথা,
নিজে কখনও ভাত নিয়ে খায়নি,
সেই মেয়ে এখন রান্না করতে শিখেছে।
যে মেয়ে রোজ খেতে যাওয়ার আগে,
বার বার কি রেঁধেছো জিজ্ঞেস করতো,
এটা খাবোনা সেটা খাবোনা জেদ করতো,
সে এখন এক সেদ্ধ দিয়ে খেতে শিখেছে।
মাঝে মাঝে তো আধ পোড়াও খেয়ে থাকে।
যে মেয়ে স্কুলে যাওয়ার আগে রোজ ,
দেরি হয়ে গেছে ভাত খবোনা বলে চেঁচাতো,
আর তুমি জোর করে মেখে খাইয়ে দিতে,
সে এখন রোজ সকালে ঘুম থেকে উঠে,
নিজে হাতে রান্না করে খেয়ে যেতে শিখেছে।
জানো এখন দেরি হলে না খেয়ে কলেজ যায়,
কারন এখনতো আর তুমি কাছে নেই,
যে তুমি জোর করে খাইয়ে দেবে।
তাই এখন না খেয়ে থাকতেও শিখেছে।
যে রোজ রাতে খাবোনা বলে ঘুমিয়ে পড়তো,
আর তুমি জোর করে তুলে খাইয়ে দিতে,
জানো সেই মেয়ে এখনও না খেয়ে ঘুমায়।
কিন্তু এখন আর কেউ তুলে খাওয়ায় না।
যে মেয়ে সব্জী কিভাবে কিনে সেটাই জানেনা,
যে কখনও মাছ মাংসের বাজারে যায়নি,
সেই মেয়ে এখন বাজার করতে শিখে গেছে।
জানো মা! তুমি যাকে অগোছালো বলতে,
সে এখন নিজের ঘর গোছাতে শিখেছে।
ঘর ঝাড় থেকে শুরু করে ঘর মোছা,
বাসন মাজা সব নিজের হাতে করে।
যে মেয়ে রোজ তুমি ধুয়ে দেবে বলে,
স্নানের ঘরে ভেজা জামা রেখে দিতো,
সে এখন নিজের জামা নিজে ধুতে শিখেছে।
যে মেয়ে আগে তোমার কানের কাছে,
সারাক্ষণ বকবক করে তোমায় বিরক্ত করতো,
সেই মেয়ে এখন সারাদিনে এক দুই বার,
তাও পাঁচ থেকে দশ মিনিট ফোনে কথা বলে।
যে রোজ স্কুল থেকে ফিরে তোমাকে খুঁজতো,
আর কোথাও না দেখলে চেঁচামেচি করতো,
সে এখনও কুড়ি ত্রিশ দিন পর পর বাড়ি ফিরে- তোমাকে দেখতে না পেলে চেঁচাতে থাকে।
যে মেয়ে তোমাকে ছাড়া রাতে ঘুমাতো না,
সেই মেয়ে এখন একা ঘুমোতে শিখে গেছে।
সত্যি তোমার মেয়ে অনেক বড় হয়ে গেছে মা!
কিন্তু জানি সারাজীবন আমি তোমার কাছে,
তোমার সেই আগের ছোট্ট মেয়েটাই থাকবো।
সুরমা আকতার
অতীত স্মৃতি
-------- সুরমা আকতার
স্মৃতির পাতাটা আজ,
একটু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
যেখানে মিলে হাসিরছলে,
ছেলে মানুষী ভাবনাটুকু।
স্মৃতির পাতা আজ,
একটু দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে।
ঐ মায়া মাখানো সোনালী দিনগুলো।
যেখানে হাসির ছলে রয়েছে ভুলকরা দিনগুলো।
মাঠের সেই লুকুচুরি খেলা,
আজ আর হয় না দৃশ্য।
আজ আর পাওয়া যায় না,
ঐ ছেলেবেলার বন্ধুর সঙ্গ।
ব্যস্ততায় বিভোর জীবন, আজ আর হয়না মিলন।
স্মৃতির পাতায় সবই আজ স্মৃতি,
ঐ দিনগুলো হারিয়ে গেছে ব্যস্ততার মাঝে।
যুগের পরিবর্তন এমন হচ্ছে,
অতীত স্মৃতি অতীতেই রয়ে যাচ্ছে।
পূজা নস্কর
ঘুমন্ত জ্ঞান
------পূজা নস্কর
মায়ের সেই দামাল ছেলেরা আজ তোমরা জেগে উঠো,
আর থেকোনা তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে।
তোমাদের যে খুব প্রয়োজন সমভূমি রক্ষার্থে ।
ওদের লালাহীত চোখ আমাদের একত্রে
মহাশক্তিকে দেখে যেন ভয় পিছু হটতে বাধ্য হয়।
শক্ত করো কলমাস্ত্র গড়ে তোল বন্দুকের ন্যায়,
কলমের প্রতিটি বর্ন হয়ে উঠুক গুলির সমান।
বর্ণের প্রতিটি গুলিতে ওদের শেষ হোক পশু সত্তা।
ওদের মাঝে বিবেক জাগ্রত হোক
হে ঈশ্বর ওদের আত্মাকে শুদ্ধিকরণ করো
চৈতন্য আনো মনে ।
অসহায় শিশুর কান্না আর ক্ষত নারীর আর্তনাদ
তোমার কানে পৌঁছাচ্ছে না ?
এখনো কি নির্বাক হয়ে চুপ করে থাকবে
তোমার অস্তিত্ব নিয়ে যে সবাই প্রশ্ন করবে ...!
দামাল ছেলেদের মনে শক্তির প্রেরণা দাও
হে ঈশ্বর কৃপা করো...।
বৃহস্পতিবার, ২৯ জুলাই, ২০২১
সম্পাদকীয়
সাগর তীরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলাম আমার প্রিয়জনদের। পাশে আছে আমাদের সজ্জিত তরীখানি। হঠাৎ হারিয়ে গেলাম অন্য এক জগতে। প্রিয়জনরা উপস্থিত হলেন সোনার ফসল নিয়ে। তাঁদেরকে আমন্ত্রণ জানিয়ে আমি নিজেই আজ অনুপস্থিত। ঋষি দুর্বাসা হলে হয়তো অভিশাপ বাণী বর্ষিত হতো আমার জীবনে। ছিন্নভিন্ন হয়ে যেত এই অগোছালো জীবন। কিন্তু ভালোবাসার শক্তি যে বড় ক্ষমতাশালী। ভালোবেসে ডাকলে না এসে কি থাকা যায়? সকলের ভালোবাসার টানে ফিরে এলাম মূল স্রোতে। সোনার ফসল সহ প্রিয়জনদের সাথী হয়ে ভাসিয়ে দিলাম আমাদের তরীখানি মহাসমুদ্রের দিকে।
প্রিয় পাঠক প্রকাশিত হল "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকার ১৬তম সংখ্যা। কবি লেখকদের লেখনীর খোঁচায় নির্মিত প্রতিটি ফসল হয়েছে পুষ্টি ও গুণে পরিপূর্ণ। চলুন আমরা সবাই মিলে ফসল গুলি থেকে রস আস্বাদন করি। আপনাদের মতামতের অপেক্ষায় রইলাম। আবারও দেখা হবে আগামী সংখ্যায়। সকলের সুস্থতা কামনা করছি।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছা সহ-----
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
অমল কুমার মাজি
কবিতার ভাঙো ঘুম
------অমল কুমার মাজি
মন ছাড়খার
কেঁপে ওঠে হাড়
কবিতার ভাঙো ঘুম।।
এ কালো আঁধার
ঘুচাও এবার
অমানিশা নিঃঝুম।।
কেন কাল গোনো
কান পেতে শোনো
কাঁদিছে সংস্কৃতি !!
অদ্ভুত হেন
মৌনতা কেন
চাওনা কি নিষ্কৃতি !!
শোনো ওহে কবি
বেচেছ কি সবই
কলম-কালি ও খাতা!!
আর কতকাল
তালে দেবে তাল
নত ক'রি উঁচু মাথা !!
হেমন্ত দেবনাথ
[মে (২০২১) মাসের সংখ্যার পর]
" সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"
-------- হেমন্ত দেবনাথ
আস্তিক দর্শন গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরার চেষ্টা করছি :-
প্রথম সাংখ্য দর্শন নিয়ে আলোচনা করছি। এই দর্শনের প্রবর্তক ছিলেন মহর্ষি কপিল। এটি দ্বৈতবাদী দর্শন। কারণ 'পুরুষ' (Purush) ও প্রকৃতি' (Prakriti) কে এ দর্শন স্বীকার করে। পুরুষ চৈতন্যস্বরূপ, প্রকৃতিক অবচেতন বা জড় স্বরূপ। পুরুষ অপরিবর্তনীয়, কিন্তু সব পরিবর্তনের স্বাক্ষী। পুরুষ ও প্রকৃতির সংযোগে সৃষ্টি সম্ভব। তাই সৃষ্টিকর্তারূপে ঈশ্বর অস্বীকৃত। সাংখ্য দর্শন প্রাচীনতম দর্শন। সাংখ্য দর্শন মতে ভগবান লাভের উপায় হল তিনি প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ।
মহর্ষি পতঞ্জলি যোগ দর্শন এর প্রবর্তক। এটি ঈশ্বরবাদী। ঈশ্বরের সাথে যোগ হওয়া - এটি সাধন শাস্ত্র। বিবেক জ্ঞান লাভ করতে পারলে সব দুঃখের নিবৃত্তি হয়। 'চিত্তবৃত্তি'- এটি মূল আলোচ্য বিষয়। যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি - এই আটটি হল যোগাভ্যাসের স্তর। প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ বা বিশ্বস্তব্যক্তির বক্তব্য - হল প্রমানণ বা জ্ঞান লাভের উপায়।
মহর্ষি গৌতম ন্যায় দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা। যথার্থ জ্ঞান লাভের পদ্ধতি নির্ণয় করাই -এ দর্শনের আলোচ্য বিষয়। এটি বস্তুবাদী আস্তিক দর্শন। প্রত্যক্ষ, অনুমান, উপমান ও শব্দ - এই চারটি প্রমানের সাহায্যে জগতের যাবতীয় তত্ত্বকে তাঁরা ব্যাখ্যা করেছেন ।
বৈশেষিক দর্শন ‘বিশেষ' নামক পদার্থকে এ দর্শনে মুখ্যত স্বীকৃতি দেবার জন্য এ দর্শনের নাম হয়েছে বৈশেষিক দর্শন। এ দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা মহর্ষি কণাদ। ন্যায় দর্শনের সব তত্ত্ব এখানে স্বীকৃত। বৈশেষিকগণ দ্রব্য, গুণ, কর্ম, সামান্য, সমবায় বিশেষ ও অভাব – এই সাতটি পদার্থের মাধ্যমে জগৎ ও জীবনের প্রকৃত সত্ত্বা ব্যাখ্যা করেছেন। বৈশেষিকরা পরমাণুতত্ত্বে বিশ্বাসী প্রত্যক্ষ ও অনুমান এ দু'টি প্রমাণকে তাঁরা স্বীকার করেছেন।
মীমাংসা দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা মহৰ্ষি জৈমিনি এরা ঈশ্বরবাদী নন। এঁরা বস্তুবাদী (Realist) ও বহুত্ববাদী (Pluralist)। তাঁদের মতে কর্ম অনুসারে জগৎ সৃষ্টি ও জীবের ফলভোগ হয়। তাঁরা বলেন, বেদ নির্দেশিত কর্মই হলো ধর্ম।
বেদের শেষ অংশই বেদান্ত। বেদান্ত দর্শনের ভিত্তি হল উপনিষদ। এ পর্যন্ত ১১২ খানা উপনিষদের নাম জানা গেছে। কয়েকটি প্রধান উপনিষদের নাম হল - “ঈশোপনিষদ”, “কেন”, "কঠ", "ঐতরেয়" প্রভৃতি। প্রধান আলোচ্য বিষয় - ব্রহ্ম ও ব্রহ্মের স্বরূপ। বেদাস্তের অপর নাম 'ব্রহ্মসূত্র'। ব্রহ্মসূত্রের উপর বিভিন্ন ভাষ্য রচনা করেন - শঙ্করাচার্য, রামানুজ, বল্লভ প্রমুখ। অদ্বৈতবেদান্তবাদীগণ জ্ঞানলাভের উপায় হিসেবে প্রত্যক্ষ, অনুমান, শব্দ, উপমান, অর্থাপত্তি ও অনুপলব্ধি এই ছয়টিকে স্বীকার করেছেন।
বিভিন্ন নাস্তিক দর্শন গুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয়ের অবতারণা করছি :-
ভারতের অতি প্রাচীন এক জড়বাদী নাস্তিক দর্শন হল চার্বাক দর্শন। ক্ষিতি (Earth), অপ্ (Water), তেজ (Light), মরুৎ (Air) এই চারটি জড় পদার্থের সমন্বয়ে জগৎ ও জগতের যাবতীয় বস্তু, এমনকি প্রাণ এবং মনও সৃষ্টি হয়েছে। আত্মা, ঈশ্বর, পরলোক, স্বর্গ, নরক, কর্মবাদ, জন্মান্তরবাদ- এ সব চার্বাক দর্শনে অস্বীকৃত। তাঁদের মতে- অর্থ (টাকা পয়সা) হল গৌণ পুরুষার্থ এবং ইন্দ্রিয় সুখ (কাম) হল মুখ্য পুরুষার্থ। "খাও-দাও-আনন্দ কর”- তাদের নৈতিক আদর্শ। মোক্ষ লাভ হাস্যাস্পদ ব্যাপার। প্রত্যক্ষই তাঁদের মতে জ্ঞানলাভের একমাত্র উৎস। চার্বাক নামে ঋষি মতান্তরে লোকপুত্র বৃহস্পতি - চার্বাক দর্শনের প্রবর্তক।
জৈন দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা হলেন তীর্থঙ্কর ঋষবদেব, এই দর্শন নীরিশ্বরবাদী, অবৈদিক, অতীন্দ্রিয়লোকের সত্ত্বায় বিশ্বাসী। তীর্থঙ্করগণকে মানেন ও শ্রদ্ধা করেন। নিজেদের আকরগ্রন্থের প্রাধান্য স্বীকার করেন। সম্যক দর্শন, সম্যক জ্ঞান, সম্যক চারিত্র - এর মাধ্যমে মোক্ষ লাভে বিশ্বাসী। অহিংসা, সত্য, অস্তেয়, ব্রহ্মচর্য্য, অপরিগ্রহ - এই পঞ্চ মহাব্রত পালন করেন তাঁরা। তাঁরা বলেন- প্রত্যক্ষ, অনুমান ও শব্দ (আপ্ত পুরুষের বাক্য) - তিনটিই যথার্থ জ্ঞানের উৎস।
বৌদ্ধ দর্শনের মহর্ষি গৌতমই প্রবর্তক। বৌদ্ধ দর্শনের মূল ভিত্তি বুদ্ধের বাণী। প্রধান আলোচ্য বিষয় - মানুষের জীবন। দুঃখ-কষ্টের হাত থেকে কীভাবে মানুষ পরিত্রাণ পাবে - এটাই বৌদ্ধ দর্শনের আলোচনা। বৌদ্ধমতে জগতের সবকিছুই অনিত্য – কোন কিছুই চিরন্তন বা চিরস্থায়ী নয়। চারটি আর্যসত্য, জগতের অনিত্যতা, শাশ্বত আত্মার অস্থায়ীত্ব ইত্যাদি বৌদ্ধ দর্শনের মূল কথা। জ্ঞান লাভের উপায় হল প্রত্যক্ষ ও অনুমান। বৌদ্ধ দর্শনের চারটি সম্প্রদায় রয়েছে সৌত্রাস্তিক (বাহ্যনুমেয়বাদী ও হীনযানবাদী), বৈভাষিক (বাহ্যপ্রত্যক্ষবাদী ও হীনযানবাদী), মাধ্যমিক বা শূন্যবাদ, (এরা মহাযানবাদী), যোগাচার বা বিজ্ঞানবাদী (এরাও মহাযানবাদী) হীনযানবাদীরা বস্তুবাদী এবং মহাযানবাদীরা হলেন ভাববাদী ।
আমরা ভারতীয় দর্শনের একটি বিশেষ মতবাদ জানতে গিয়ে অন্যান্য মতবাদ গুলোর সাথেও পরিচিত হই। প্রতিটি দর্শন নিজ মত প্রতিষ্ঠার আগে বিরোধীপক্ষের মতবাদটি ব্যাখ্যা করেছেন। একেই বলা হয় “পূর্বপক্ষ"। এরপর যুক্তির সাহায্যে পূর্বপক্ষকে সমালোচনা ও "খন্ডন" করা হয়েছে। একে বলা হয় "উত্তরপক্ষ" (সিদ্ধান্ত)। বেদ ও উপনিষদকে কেন্দ্র করেই ভারতীয় আস্তিক দর্শনের উদ্ভব ও বিকাশ হয়েছিল। বেদ ও উপনিষদের পরে ভারতে যে ছ'টি আস্তিক দর্শনের আবির্ভাব ঘটেছিল; তা হল – (i) সূত্র (ii) ভাষ্য এবং (iii) টীকা- এ তিনটি পর্যায়ে ক্রমবিকশিত হয়েছিল ।
ভারতীয় দর্শনে বড়ো বড়ো কঠিন বাক্যগুলোকে ছোটো ছোটো অৰ্থপূৰ্ণ বাক্যে প্রকাশ করাকে বলে সূত্র। সূত্র গ্রন্থই ষড়দর্শনের আদিগ্রন্থ। সাংখ্য দর্শনের আদি গ্রন্থ হল কপিলের সাংখ্যসূত্র, বৈশেষিক দর্শনের আদি গ্রন্থ হল কণাদের বৈশেষিক সূত্র। বেদান্ত দর্শনের মূল গ্রন্থ বাদ্রায়নের ব্রহ্মসূত্র ইত্যাদি। সূত্র গুলো এতো সংক্ষিপ্ত ছিল বলে অনেক ক্ষেত্রে প্রকৃত অর্থ বোঝা কঠিন হতো। এর ফলে রচিত হত ভাষ্যগ্রন্থ। যেমন – বৈশেষিক সূত্রের ভাষ্য রচনা করেন প্রশস্ত পাদ। যে সব ভাষ্যের ব্যাখ্যা অস্পষ্ট, সে ক্ষেত্রে ভাষ্যেরও ভাষ্য রচনা দরকার হল। তাই রচিত হল টীকা। যেমন ন্যায় দর্শনের প্রখ্যাত টীকাকার হলেন বাচস্পতি মিশ্র এবং তাঁর লেখা টীকা পুস্তকের নাম হল – “ন্যায়বার্তিক তাৎপর্য টীকা"। নাস্তিক দর্শন গুলোর কোনও সূত্র বা ভাষ্যগ্রন্থ নেই।
ভারতীয় দর্শন শুরুতে দুঃখবাদী বা নৈরাশ্যবাদী হলেও পরিণামে আশাবাদী। নিয়ম শৃঙ্খলায় বিশ্বাস, আধ্যাত্মিক অতৃপ্তি, ত্যাগ ও মোক্ষলাভের আদর্শ, ব্যবহারিক প্রয়োজনবোধ ইত্যাদি অপরিমিত ও অভূতপূর্ব বৈশিষ্ট্যে ভারতীয় দর্শন সমুজ্জ্বল। “সকল জীবকে সমান চোখে দেখা", "মানুষের প্রতি আমাদের কর্তব্য যেমন আছে, তেমনি মানুষেরও কর্তব্য হল আমাদের অধিকারকে অক্ষুন্ন রাখা"- এরকম উচ্চতর সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সামাজিক নীতিশিক্ষাও দেয় ভারতীয় দর্শন। ভারতীয় আস্তিক কিংবা নাস্তিক যে-কোন দর্শনই হোক না কেন, সেগুলো মোটেই বিচার-বিযুক্ত নয়। সেগুলোতে রয়েছে চর্চা ও চর্যার সমন্বয়, রয়েছে জীবনবোধের স্পর্শ। হৃদসম্পদে সমৃদ্ধ দর্শন গুলোতে রয়েছে আশাবাদের প্রাণস্পন্দনতা।
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
বরষা
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
দাওয়ায় আছি বসি
দেখি তব শ্যামলী হাসি।
হে বরষা!
আরো চাই শ্যামলিমা
গগনে নাহি দেখি
মেঘের কালিমা।
কৃষক চাহিয়া তবে পানে
আকুল গলায় বলে,
আয় বরষা!
আয় নেমে।
মাঠ হইবে শস্য - শ্যামলা
তোর পরশে ;
মোদের শ্রম আর ঘামে।
আকুলতায় সাড়া দিয়ে
বরষা নামিল শেষে ধীর লয়ে
চাষি ভাই চালালো কোদাল,
চালালো লাঙ্গল,
উপ্ত বীজে সাজিলো
চারা তলা,
পাহাড়- টিলায় হইলো জঙ্গল।হে ধরিত্রী!
আষাঢ়ের প্রথমে তুমি ছিলে চাতকিনী ;
বারিধারা পান করি
আজিকে তুমি শস্য প্রসবিনী!
হে বরষা!
তুমি আসিও যথাকালে
থাকিও মোদের সাথে
সময়ের তালে তালে।
শ্রাবণের ধারা শেষে
ভ্রমিও ভিন্ন দেশে
ফিরিয়া আসিও পুনরায়
গ্রীষ্মের দহন শেষে।
রচনাকাল:- ৩০/৬/২০২১ ইং বুধবার
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
তোমায় প্রয়োজন
-------- রাজেশ ভট্টাচার্য্য
প্রিয় স্বামীজি,
আজ তোমায় বড্ড প্রয়োজন।
তুমি বলেছিলে----
"তোমার রক্ত, তোমার ভাই"।
আজও তোমার বাণী দিয়ে
সজ্জিত হয় দেওয়াল কিংবা মঞ্চ।
তোমাকে নিয়ে খই ফুটে,
ছোট-বড়ো মঞ্চে, জনসম্মুখে।
কিন্তু কালো আর আলো হয় না,
তোমার লেখনীর হাজারো প্রদীপে।
এইতো সেদিনের কথা---
রাতের অন্ধকারে যে ভবঘুরে
ঢুকেছিল ডাস্টবিনের বুকে
দু'মুঠো খাবারের আশায়।
হে সন্ন্যাসী, তোমার ভাষায়
সেও তো তোমার রক্ত, তোমার ভাই।
পেটের তাগিদে তোমার দরজায়,
হাত পেতে ছিল যে অসহায়,
খালি হাতে ফিরিয়ে দিলে তাকে
তিরস্কার আর ভর্ৎসনায়।
সেও তো তোমার রক্ত, তোমার ভাই।
হে মহামানব, তুমি জাগ্রত হও,
এই অমানবিক সংসারে
আজ তোমায় বড্ড প্রয়োজন।
রচনাকাল :- ২৪/০৬/২০২১ ইং
শান্তশ্রী মজুমদার
জল ও জীবন
------শান্তশ্রী মজুমদার
আমি জল বলি তাকে
তুমি বলো জীবন
কখনো সে মেঘ হয়ে ঝরে
কখনো ঝর্ণার মতো।
কখনো আঁকাবাঁকা নদী হয়ে বয়ে চলে কতো নামে।
মনু, দেও লঙ্গাই গোমতী
কখনো ঢেউ এর তালে তালে
আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগর থেকে আরবসাগরের কুলে।
জল, কখনো থাকে কুয়োতে
কখনো দীঘি,হ্রদ, বিলে।
যখন দুই পাহাড়ের মাঝে
টলটল করে শান্ত নীল আকাশতলে,
তখন আমি ডাকি তারে ঝিল বলে।
আমি তো প্রথমেই বলেছি
তুমি ডাকো তারে জীবন বলে।
জীবন চলছে নানা রূপে
শৈশব, কৈশোর প্রৌঢ়,বার্ধক্য।
জলের মতোই তার বিচিত্র চলা।
জল আর জীবন
বহমানতার একটাই সঙ্গীত
'আনন্দ '
অনন্তের সাথে মিলনের
মেঘের সাথে পুর্নমিলনের উৎসব।।
বোধিসত্ত্ব
নির্মাল্য আলোর বিকেল
------বোধিসত্ত্ব
শ্রীহরিৎ বিকেলের আকাশ জুড়ে লেগে থাকা নির্মাল্য আলো আমার 'আমি'-কে নির্মেদ পথিক করে তুলেছে।
এমন স্নেহের নিচে সহস্র জন্মের আপন ঘাসগুলো ছুঁয়ে হাঁটতে হাঁটতে পথিক কখন যে ঈশ্বর হয়ে যান নিজেই বোঝেন না।
পৃথিবীর সকল উদারতা গৌড়ীয় মেঘের কোলেপিঠে আশ্রয় নিয়ে কী সুমহান এক আশ্রম হয়ে গেছে!
পূর্ণানন্দ সন্ন্যাসী এসে যেন শুনিয়ে যাচ্ছেন ভাগবত আলোর রচনাবলী।
এই শিরোনামহীন পড়ন্ত বেলায় ভীষণভাবে ইচ্ছে করছে ---
তোমার বোঝা হালকা করে আমার কাঁধে রাখি
আমার সকল আলোর চলা নিজের পায়েই হাঁটি।
এমন আকাশ বোতাম খোলা পবিত্র জলঘর
এই ঠিকানায় বেঁচে থাকুক জীবন হাজার বছর।
সুজন দেবনাথ
কলুর বলদ
------সুজন দেবনাথ
পুঁজিপতিরা লুঠছে সমাজ
আর সমাজ পতিরা দেখছে।
অসহায় জাতি কুল হারিয়ে
নিয়ত পথেঘাটে শুধু মরছে।।
সবার আছে হারাবার ভয়
তাইতো রয়েছে সবে নিরব।
যাঁতাকলে কেহ খাচ্ছে পেষাই
তবুও হচ্ছে না ভয়ে সরব।।
পৃথিবী ভরেছে স্বার্থলোভে
দৃশ্য যত স্বার্থ বাদীর দল।
ক্ষমতা ফলিয়ে দরিদ্র ঘরে
শাসিত করছে যত দুর্বল।।
অসহায় জাতিও কলুর বলদ
নিয়ত খেটে মরছে দিবানিশি।
পাওয়াটা তাদের হোক না শুন্য
তবুও চায় একটু মুখের হাসি।।
বর্ণা দাস
মেয়ে
------বর্ণা দাস
শুনো মেয়ে তোমার বড্ড বার ,
কথায় কথায় বুলি উড়াও ,
বিদ্যেধরী হবার ?
বাইরে যাওয়া বারন জেনো ,
চারদেওয়ালে আটকে থেকো ,
এতো পড়াশুনার কী দরকার ?
দেখে কষ্ট হয় ভীষণ রকম ,
শিখল বাঁধা পায়ের জখম ,
সে মেয়ে এটাই কী তার অপরাধ ?
আওয়াজ উঠবে এবার সদলবলে ,
ছিন্ন করে পায়ের শিখল ,
পূরণ করবে মনের সাধ ।
আর চলবে নাকো দাবিয়ে রাখা ,
এবার বিদ্রোহেতে হবে দেখা ,
হুঙ্কারেতে আগুন পড়বে ঝরে ।
দেখবে সবাই নয়ন ভরে ,
ঘরের মেয়ে ফিরছে ঘরে ,
যুদ্ধক্ষেত্র জয় করে ।
সে নয় ছন্নছাড়া ,
পাল্টে দিয়ে চিন্তাধারা ,
চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল আবার ।
এই মেয়ে তোর বড্ড বার ,
এবারও কী বলবে আর ?
পুণ্ডরীকাক্ষ হাজরা (মুখোপাধ্যায়)
প্যারাডক্স
------পুণ্ডরীকাক্ষ হাজরা (মুখোপাধ্যায়)
যতোটা বিদীর্ণ ‘কর্ণ’ ততোটাই অভিমন্যু-জায়া :
এই কি কাব্যের নীতি, প্যারাডক্স, মায়া ?
কাব্যেও যদি হয় অন্যায় বোধি হয় জয়টা প্রধান–
তৈমুর হিটলার তবে সপ্তরথী মতো হবে কাব্যের প্রাণ?
হিরোশিমা নাগাসাকি লেলিহান সেও এক অভিমন্যু বধ :
জয়-রুট ওই কূট হার্মাদ দুর্নীতি কই আজ রদ ?
যুগ-বধূ কাঁদে কতো হাত পাতো মর্মাহত অভিমন্যু বধূ -
অবিরাম অশ্রু নাও ঝরে লাভা তপ্ত বিষ-মধু ।
কাজী নিনারা বেগম
বোবা আকাশ
------কাজী নিনারা বেগম
অবুঝ পৃথিবীতে বোবা আকাশে,,
এক অচিনপুড়ের অচিনপাখি অন্তিম যন্ত্রনায়।।
একতারার সুতোয় দিয়ে বেঁধে আছে জীবন।।
সশস্ত্র কাহিনীর অদৃশ্য স্মৃতি রোমন্থন ঠাই দিলাম!
সেই অবূঝ হৃদয়াশে,,
সহসা মূছেগেছে লাবণ্য আর অস্থিরতা মনের সিড়িতে।।
বেচেঁ থাকার নিরন্তর অভ্যাসের অভ্যস্ত ,,
হৃদয় দেয়ালে মনে রাখিও! মুক্ত আকাশে মেঘের খেলায়।।
সুপর্না কর
চন্দ্রমা
------- সুপর্না কর
অপরূপ রূপের অধিকারী চন্দ্রমা তুমি,
তোমার ঐ রূপের ছটায় মোহিত হলাম আমি।
তোমার আলোতেই যে পূর্ণিমা রাত পূর্ণতা পায় ।
তোমার রূপ দেখে প্রকৃতিও যেন বাংলার গান গায়।।
তোমার স্নিগ্ধ আলোতে যেমন কেটে যায় রাতের অন্ধকার।
তেমনি তোমার জ্যোৎস্নায় কেটে যাক সবার মনের অহংকার।।
যতই বলুক না কেন সবাই চাঁদেরও কলঙ্ক আছে।
বেলাশেষে সেই নতমস্তক হতে হবে তোমার ঐ রূপের কাছে।।
প্রসেনজীৎ সাহা
বর্ষা
------প্রসেনজীৎ সাহা
নব নব মেঘে আজ গুরু গুরু ডাক।
প্রকৃতি দেবী ধারণ করিলো নতুন সাজ।।
নব অঙ্কুরে আজ প্রাণ সঞ্চার করিলো বৃষ্টির কণা।
এ বৃষ্টি কি দেবী শতাক্ষীর অশ্রুকণা।।
বৃষ্টির ফলে পূর্ণ হলো কৃষকের শস্যভূমি।
এ যে আশীর্বাদ স্বয়ং মাতা শাকম্ভরী।।
বৃষ্টির দেবতা নাকি দেব পুরন্দর।
গ্রামে গ্রামে হয় নাকি তারই পূজন।।
তবুও ফসলের দেবী শাকম্ভরী।
যার সর্বাঙ্গে ভরে থাকে ফল-মূল, শাক-সব্জি।।
আষাঢ়ের বৃষ্টি ধারায় নদ-নদী হলো পরিপূরণ।
আজ ধরিত্রীর বুক ফাটা তৃষ্ণা নিবারণ।।
বৃষ্টি ধারায় আটদিক হলো জলে পূর্ণ।
শ্রাবণে দিন-রাত হলো একত্র।।
বর্ষা যে প্রকৃতির প্রাণের দেবী।
তাইতো বর্ষার আগমনে নাচে মত্ত ময়ূরী।।
প্লাবন সরকার
পুরুষ
------প্লাবন সরকার
পুরুষ এমনই যার হাতে আয়ের চাবি,
কর্মঠ হাত ক্লান্ত শরীর তবু মেটায় দাবী।
কর্ম শেষে ফেরেন ঘন গভীর রাতে,
সদা সংসারী মন বাজারের থলি হাতে।
পুরুষ এমনই ভালো থাকার করে অভিনয়,
শরীরে নানা রোগ,ক্লান্ত ধীর দেয় না সংশয়।
পাছে চিন্তায় পড়ে স্ত্রী সন্তান পরিবার,
একা হাতে সদা ব্যস্ত টানতে সংসার।
পুরুষ এমনই এক বস্ত্রে কাটে ঈদ পূজা,
হোক বহু পুরোনো ছেঁড়া ধুলোমাখা সোজা।
পুরুষ এমনই হাতে যার সমগ্র সংসারের সুখ,
কোনো কষ্টে সদরে কাঁদে না সে লুকায় ব্যথা দুখ।
মঙ্গলবার, ২২ জুন, ২০২১
সম্পাদকীয়
প্রিয় পাঠক, আবারো হাজির হলাম আপনাদের ভালোবাসার টানে। দাবদাহ গ্রীষ্মে খরতপ্ত রোদে প্রচন্ড দহন দাহনে যখন মানুষ কামনা করে শান্ত নীড়ের স্নিগ্ধতা, তখনই ধরণীর বুকে আনন্দ-ধারার মতো নেমে আসে মেঘমন্দুরা বর্ষা। বর্ষার আগমন আসলে বৃষ্টির মঙ্গলধ্বনি। বর্ষাকাল মানে ঝুমুর ঝুমুর বৃষ্টি। সবুজে সবুজে আর নীলিমায় নীল আমাদের দেশের প্রকৃতি গেয়ে উঠেছে বর্ষামঙ্গল। বর্ষার আগমনে সহসাই মন নেচে ওঠে ময়ূরের মতো করে। প্রিয়জনের সান্নিধ্য পাওয়ার আশায় ব্যাকুল হয়ে ওঠা মন কিছুতেই ঘরে বসে থাকতে চায় না। নিজের অজান্তেই কেউ গেয়ে উঠে মেঘলা দিনের গান------"এই মেঘলা দিনে একলা ঘরে থাকেনা তো মন, কাছে যাবো কবে পাবো ওগো তোমার নিমন্ত্রণ।" তাইতো বর্ষাকে আমরা এতটা ভালবাসি। বর্ষা জীবনের স্বপ্ন দেখায়, বর্ষার ছোঁয়ায় গ্রাম বাংলা হয়ে ওঠে রূপসী। আমাদের দেশের বৈষ্ণব কবি থেকে শুরু করে আধুনিক কবি-লেখক সকলের মনকে প্রভাবিত করেছে সুন্দরী বর্ষারানী। কবি ও লেখকদের ভাবনায় বিভিন্ন রূপে ফুটে উঠেছে বর্ষার ছবি। বর্ষার মঙ্গলময়ী রূপের কথা স্মরণ করে, বিশেষ কিছু করার ইচ্ছা থেকে ২০২০ সালের জুন মাসে প্রকাশিত হয়েছিলো সাহিত্য নয়নের " বর্ষামঙ্গল উৎসব" নামক তৃতীয় সংখ্যা। দেখতে দেখতে আবারো বছর ঘুরে বর্ষার মঙ্গলধ্বনি বাজিয়ে হাজির হলো এই উৎসবের মাস। গত বছরের উৎসবের সংখ্যাটির সাথে সেতুবন্ধন করতে প্রকাশিত হল সাহিত্য নয়নের "বর্ষামঙ্গল উৎসব সংখ্যা ২" নামক পঞ্চদশতম সংখ্যা। আমাদের সম্মানিত কবি-লেখকদের লেখনীর ছোঁয়ায় এবং কবি ও প্রচ্ছদশিল্পী কবিতা সরকারের অংকিত প্রচ্ছদে সংখ্যাটি পেয়েছে পূর্ণতা। স্মৃতিচারণ অনেক হলো, এবার চলুন বর্ষার মঙ্গলধ্বনির তালে তালে আমরা সবাই মিলে চোখ মেলি নয়নের পাতায়।
ধন্যবাদ ও শুভেচ্ছাসহ------
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পলি
------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
পলি পাড়ে শুয়ে থেকে
ভাবে নতুন কিছু করার।
বানের জলে থৈথৈ ছিলো
বর্ষার নদীর পাড়,
কতকিছু গেছে শেষ হয়ে
থাকেনি পলি ছাড়া কিছু আর।
এখন সেই পলি ডাকছে
হাতছানি দিয়ে
এসো এসো
মামা- চাচা আছো যত
আমাকে কাজে লাগিয়ে
ফসল তোলো ইচ্ছে মতো।
আমি খোয়াই, মুহুরি,জুরি
থেকে শুরু করে রয়েছি গঙ্গা, যমুনা ,গোদাবরী।
আমি কালো কিংবা ধলো
যাই হই না কেনো
আমি তো কৃষক তারিণী । নদী মা!
আমায় বহে এনে রেখে যায়
চড়ায়, চড়ায়
আমার বুকে শিশু চারা ঘুরে ফিরে বেড়ায়।
শিশু চারা দিনে দিনে বাড়ে,
আমি থাকি যে কোনো নদী পাড়ে।
রচনা কাল:-০৮/৬/২০২১,
মঙ্গলবার।
হেমন্ত দেবনাথ
বর্ষা
------হেমন্ত দেবনাথ
বর্ষায় মেঘমেদুর বিষণ্ণ দিনগুলো,
মুছে দেয় গ্লানি আর পথ-প্রান্তের ধুলো।
চঞ্চলা বর্ষা-বালিকা খেলে পূর্বাকাশে
মেঘের এলো কেশ ছড়িয়ে দেয় প্রতি নিঃশ্বাসে।
হৃদয়-মন হয় যে ব্যাকুল
অজানা রিরহ-বেদনায়--
ঘনবৃষ্টির রিম ঝিম বেজে
উঠে 'সবুজের' অঙ্গুলি হেলনায়।
ঝড়ের রাতে প্রেয়সীর অভিসার
মনের গহনে জাগে বার বার।
বরষা-কল্যাণী তুমি! তব পরশে ফসল ফলে,আবেগ ঝরে।
বনবীথি পায় প্রাণ তব বরে।
কলুষিত মন করো বিমল--
বিশ্বজগৎ ধুয়ে-মুছে করো তুমি অমল।
অমল কুমার মাজি
আসতে চাই
------অমল কুমার মাজি
কোনো একদিন নতুন সকালে
মাস্ক ছুঁড়ে ফেলে হাসতে চাই
আলো-ঝলমল সোনা-রোদ মেখে
খুশীর জোয়ারে ভাসতে চাই
আগের মত মুখোমুখি বসে
তোমাকেই ভালবাসতে চাই
সেদিনের মত ছুটির বিকেলে
তোমাদের বাড়ি আসতে চাই।।
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
আজও স্মৃতির বীণা বাজে
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
ঠিক যেন প্রাণের টানে
প্রাণের পথে বেরিয়ে পড়া
সপ্তম আষাঢ়ের প্রভাতপথে।
সাথে দুই বোন আর
প্রাণের ছোঁয়া পাওয়ার আশা।
কবিগুরুর ঝিক্ ঝিক্ শব্দে,
বোলপুরের সাথে প্রথম যোগ।
টোটো হয়েছে আজ ক্লান্ত
যেন ভার বইতে অক্ষম।
বাতাসে শুধু বাড়ছে ঘনত্ব
রবি-শান্তির তৃপ্ত গন্ধ।
সুয্যি মামা স্বাগত জানালেন
তার উজ্জ্বল তপ্ত আলিঙ্গনে।
শ্যামলী-উদীচী-পুনশ্চ বেয়ে
দু'চোখ মেললাম উত্তরায়ণের অন্তঃপুরে।
সোনার ফসল দু'চোখে ভরে
ফিরে এলাম প্রকৃতির কোলে।
পৃথিবীমাতা কালো চুল ছেড়ে
জানান দিলেন মুচকি হেসে
বর্ষারাণীর আগমন বার্তা।
গাছের পাতার ফাঁক দিয়ে
নেমে আসা টিপ্ টিপ্ ধারা
আজ অপরূপ সাজে সজ্জিত।
স্মৃতিপূর্ণ সোনারতরী নিয়ে
ফিরে আসা আমার মাঝে
আজও স্মৃতির বীণা বাজে।
রচনাকাল:- ১২/০৬/২০২১ ইং শনিবার
সনৎ কুমার কুন্ডু
শ্রাবণের কালোমেঘ
------সনৎ কুমার কুন্ডু
পুষ্ট দেহের পরিপক্ক আগুনে
ঝলসে গেল সারাটা মন
দিগন্ত থেকে ভেসে আসা গাংচিল
চোখেমুখে অশ্রু অসাধারণ ক্লান্তির ছাপ ।
বিদগ্ধ চেতনাগুলো
এতদিন বাসন্তী রং মেখেছিল
দীপ্ত আলোর সোহারায় উন্মাচিত হলো
তার অবগুন্ঠিত অবয়ব ।
বেরিয়ে আসা লুকায়িত রহস্যবৃত আগুন
নির্বাপিত হয়না,
শ্রাবন্তী বাসরে রিমঝিম শব্দ ও
অবিশ্রান্ত জেগে থাকা জোনাকীর আলোয়
পুষ্ট দেহের রংটা
সারাক্ষণ হৃদয়ে আলোড়িত হচ্ছে,
আমার নয়ন জুড়ে শুধু শ্রাবণের উদ্ভ্রান্ত মেঘ
বোধহয় আজ নির্বাপিত করবে মনের আগুন ।
রামপ্রসাদ কুন্ডু
বাদলের পরী
------রামপ্রসাদ কুন্ডু
আষাঢ়-শ্রাবণের হাতে রেখে হাত
বর্ষার প্লাবনে পথঘাট হয় চিৎপাত,
বাদলের ধারা ঝরে ঝরঝর এই বর্ষায়
কৃষক ফলায় ফসল বর্ষার আশায়।
এ যে সেই আষাঢ়ে বর্ষা আঁখিতে অশ্রুধারা
শ্রাবনে উত্তাল নদী জলোচ্ছ্বাসে বুকে বুকে ভরা,
যেদিকে তাকাই শুধু কালো মেঘে ঢাকা
কবির কবিতায় যেন তাতে অনেক স্বপ্ন আঁকা ।
বর্ষায় থৈথৈ নদী-বিল-খাল
খাবার জোগাড়ে গরিব যেন হয়ে যায় বেসামাল,
কালি-মাখা মেঘে যেন আঁধার ঘনিয়ে আসে
রোদ-বৃষ্টির মিলনে প্রকৃতি মিটমিটিয়ে হাসে ।
''বাদলের পরী'' যেন এই দুমাস আষাঢ় শ্রাবণে
দিনে রাতে মন ভরে যায় কদম ফুলের ঘ্রানে,
প্রকৃতির নিয়মে থাকবো তোমারি অপেক্ষায়
উদাস মনে চেয়ে রব দিগন্তের ঐ সীমানায় ।
মিঠু মল্লিক বৈদ্য
পথশিশু
------মিঠু মল্লিক বৈদ্য
হে পথশিশু তুমি লুকিয়ে কোথায়?
তাকিয়ে দেখো নগ্ন রাজার উদ্দামতা,
প্রজারা সব বিকিয়েছে বুদ্ধি বিবেক
নগ্নতা দেখেও হাততালিতে জয়জয়কার।
শত অবিবেকের মাঝে আছ শুধু তুমি
সবুজ মনে অবুঝের স্বচ্ছতা নিয়ে।
সহস্র ভিড়ে নির্ভীক চিত্তে বলে যাও
রাজার লজ্জা ঢাকার কথা।
বর্ণা দাস
"জোর যার মুলুক তার"
-----বর্ণা দাস
পথের ধারে ক্ষুধার টানে ,
মরছে যারা রোজ।
বাঁচার লড়াই কঠিন ভীষণ,
ওদের কেউ রাখেনা খোঁজ।
স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত সবাই ,
কে রাখে কার খোঁজ ?
এই শহরে মানুষ আছে ,
শুধু মনুষ্যত্ব নিখোঁজ।
চাষার ঘরে ভাত নেই ,
শ্রমিকরা দিনরাত খেটে চলে।
পথ শিশুটা পথের ধারে,
কেঁদে ভাসায় চোখের জলে।
গুনে ধরা সমাজের চারপাশ,
নামডাকওয়ালা শিক্ষিতদের বাস।
হিংসার আগুনে দেশ পুড়ে ছাই,
পথে ঘাটে মাঠে কত জ্যান্ত লাস।
মিথ্যার কবলে সত্য নাজেহাল,
ছিনিয়ে নেওয়া হয় বাঁচার অধিকার।
মুখ ফুটে কিছু বলা বারণ,
এখানে জোর যার মুলুক তার।
আইনের চোখ সত্যি বাঁধা,
প্রতিবাদীরা শব্দ হারা ।
অন্যায়ের বিরুদ্ধে আওয়াজ উঠলে,
ভেঙে গুড়িয়ে দেওয়া হয় শিরদাঁড়া।
দেবাঞ্জনা সেন
ইচ্ছে শক্তি
-----দেবাঞ্জনা সেন
একদিন হারিয়ে যাব অন্যকোন দেশে
নীল আকাশ, সবুজ ঘাস
লালচে সূর্যের আলো,যেথায় গিয়ে মেশে
ফড়িং ও পাখি হয়ে আকাশে উড়ি
মনেহয় যেন নিজে একটি উন্মুক্ত ঘুড়ি।
ইচ্ছেগুলো জাগিয়ে রেখে, চলব সেই
ইচ্ছের হাতেই হাত রেখে
শুনেছি ,জীবনে নাকি
অসাধ্য বলে কিছুই নেই
তাই ভাবি, পথ চলে এবার
তাহলে দেখিয়ে দিই
অনেক তো হলো ঘরের কোনে থাকা
মেয়ে সেজে নিজেকে গুটিয়ে রাখা
এবার তো নিজেকে স্বাধীন করি
অনন্য করে নিজেকে তোলে ধরি
কথায় আছে, "আমরা নারী, আমরা সব পারি"
ভবছি এবার এই কথা শক্তির হাতটি ধরি।
কাজী নিনারা বেগম
যন্ত্র মানব
----- কাজী নিনারা বেগম
শুন্য হৃদয়ে সুপ্ত বীনা বেজে উঠলো নিগুঢ় নিশ্বাসে,
বীনা তারগুলোকে যেন নতুন স্পন্দন গতি বৃদ্ধি পেয়েছে।।
জানিনা আজ মনটা বড়ই উচাটন,
কেন এক অসিম প্রশ্ন ?
গভীর রাত অজস্র তারা মিট মিট করে জ্বলছে।।
চাদেঁর আলোয় আলোকিত,
পৃথিবীতে প্রায় সব মানুষ মুভি অথবা ফেইসবুকে ছোট স্ক্রিনে নিমগ্ন।।
কর্ম ক্লান্ত জীবনের চাপ!
ভোরে বাস আরোহণ জীবন যেনো ঘড়ির কাটার মতো একটি পড় একটি দিন চলে যাচ্ছে।।
বাসে আরোহণ করতে আমি যেন হচকিত!
গালে টোলপড়া মায়াবী এক ছিমছাম তরুণী যাত্রী দের ধাক্কায় এপাশে অপাশে যাচ্ছে,
আমি যেনো এক অনাবিল রোমান্সে মেতে উঠেছিলম।।
শিউরে উঠেছিল শরীরের অঙ্গ!
পাশে বসার অধিক আগ্রহ এই বঙ্গ ললনার ,
ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন থ্যাংকস!
আমার ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে অগ্রসর আমি গন্তব্যে যাওয়ার,
গাড়ি থামল মনের গহিন অন্তরালের এক ভালো বাসার পসরা।।
আমি এক হৃদহীন এক যন্ত্র মানব,
হৃদয়ে স্পন্দন মানে যানি না।।
সুপর্না কর
হতাম যদি
-------সুপর্না কর
হতাম যদি পাখি,
উড়ে যেতাম ঐ নীল আকাশে।
স্বাধীনভাবে ঘুরে বেড়াতাম
প্রকৃতির ঐ কোমল বাতাসে।।
কোকিলের ন্যায় মধুর সুরে
গেয়ে যেতাম প্রকৃতির গান।
সেই গানের ছন্দে মৃদু আনন্দে
তৃপ্তি হতো সকলের প্রাণ।।
হতাম যদি স্নিগ্ধ নদী
বয়ে যেতাম তরঙ্গের ন্যায়।
হিমালয়ের শুভ্রতায় মিলিত হতে,
করতাম না যে সময় ব্যয়।।
মানুষ হয়ে জন্ম নিয়ে,
সত্যি যেন ক্লান্ত আজ।
মনুষ্যত্বের বিষাক্ত মায়াজালে
কলুষিত আজ গোটা সমাজ।।
তাপস দও
মুখোশের আড়ালে
------তাপস দও
খরস্রোতা নদী প্রবাহ বয়ে চলে এঁকে বেঁকে,
আপন গতিতে মিশে যায় সমুদ্রের বুকে।
বয়ে চলে কত নুঁড়ি কাঁকড়
কত শেকল ছেঁড়া জীবন।
হিসাব কেউ রাখে?
খোঁজ নিয়ে দেখো ....
অভিনয়ে নয় কত শত শৈবাল আঁকড়ে ধরে বেঁচে থাকে।
পৃথিবীতে চলছে সভ্যতার এক নির্লজ্জ অভিনয়,
মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে রাখার বৃথা চেষ্টা।
হারানো যৌবন ধরে রাখার এক মরিয়া প্রয়াস,
অহংকারের মোড়কে সাজিয়ে করেছো আড়াল।
জীমূতের সূর্য কিরণ রুদ্ধ করার ব্যার্থ প্রয়াস
আর থাকবে কত দিন.......
আত্মগ্লানির যন্ত্রনা নিয়ে,
এখন অন্য মুখোশের আদলে।
অভিজিৎ দাস
ঝরা পাতা
------অভিজিৎ দাস
আমি নির্জনে পথ চলি মেঠোপথে
দু-পাশে ছোট-বড়ো গাছ যত।
আমাকে দেখে,একা সেই পথে
পাখিদের ঝাক, কলরব করে কত!
আমি সহসা দাঁড়িয়ে দেখি
গাছেরা নিশ্চুপ,একটিও নড়েনা পাতা।
তারাও বুঝি, কাঁদে নিরবধি
গোপনে লুকিয়ে রেখেছে, দুঃখ কথা!
অতীতের কত, স্মৃতি রীতিমতো
ভেসে উঠে মননে সতত।
কত সুখ, হায়! স্মৃতি হয়ে যায়
ঠিক ঝরা পাতাদের মতো।
কত দুঃখ গত,স্মৃতি বিজরিত,
ঝরা পাতা সম কাঁদে মর্মর।
কত রূপকথা হল কবিতা,
যারা আপন তারা আজ পর।
টিটু বনিক
চোখ ভালোবাসার প্রথম স্তর
-------টিটু বনিক
তোমার চোখের মাঝে এক মায়া আছে,
যা দিয়ে একটা সূর্যকেও গ্রাস করা যায়,
যা দিয়ে অনায়াসে বশীভূত করা যায় ,
তুমি কী জানো ? এই চোখে প্রশান্তি আছে,
যা দেখলে হৃদয়ের উন্মাদ ঢেউও শান্ত হয়,
নদীর চলা বন্ধ করে দেয় আর চেয়ে থাকে,
ভুলে যায় মোহনার আসক্ত শুধু তুমি।
যা দেখলে পথিকও হারিয়ে ফেলে ঠিকানা,
ভুলে যায় জীবন কি মৃত্যু কি।
ভুলে যায় অতীত কি ভবিষ্যৎ কি।
ভুলে যায় দুঃখ কি সুখ কি।
থাকেনা কোনো বাস্তবতার সচেতনা,
যেন সবকিছু মায়া আর মায়া,
চোখ হেন এক বৃহৎ স্বস্তির ছায়া।
পূজা মজুমদার
নিদারুণ প্রেম
-----পূজা মজুমদার
কি নিদারুণ সত্যি! আমি তোমায় ভালোবেসে ছিলেম...
দিন মাস ঘন্টার হিসেব না রেখে!
কি নিদারুণ সত্যি -
কতো সহস্রবার তুমি খুন হয়েছো
আমার চোখ-ঠোট-নাকে - চিবুকে!
কি নিদারুণ সত্যি -
আমরা কখনো বদ্ধ হইনে জীবনে
কতো রোগ-শোক-তাপ
তবুও বড় সাধ স্বেচ্ছা মরণে!
সত্যি যে বড় নিদারুণ -
হাজার রাত অথবা সহস্রদিন
শেষে কালান্তরে যাত্রা!
এক নশ্বর শরীর ছেড়ে অশরীরী জগতে-
চিনি কি তোমায়?
চেনো কি আমায়??
আত্মা কি কাঁপে বাতাসে?
এ কি নিদারুণ সত্যি,
আমি জন্মান্তরবাদ ভুলেছি ভালোবেসে।।
শিবাশীষ মিত্র
অলৌকিক ভালোবাসা
------শিবাশীষ মিত্র
দুই মেরুতে দুটি মন এক অলৌকিক কর্ষণ।
দুই গোলার্ধে একই ঋতু শ্রাবন ধারার বর্ষন ।।
দুটি মনে জোয়ার শুধু ভাটার নেইকো স্হান ।
পূর্ণিমা হওক অমাবস্যা জোয়ারে ভাসে প্রান ।।
গ্রহণ?সেতো ভুলেই গেছি দু'হৃদয়ে সদালোক।
ভালোবাসায় মন গহীনে আঁকি নতুন ভূলোক।।
এক অলৌকিক ভালোবাসা ধরা ছোঁয়ার আড়ে।
স্বপ্নের সোনা রূপার কাঠি প্রান শিয়রে নাড়ে।।
বুকের বাঁদিক হয়না শুন্য সদাই ভরা প্রেমে।
সুখে দুঃখে রাখি বেঁধে মনিকোঠায় টেনে।।
আঁধার যখন আসে তেড়ে কালবৈশাখী রাতে,
মনপ্রদীপটা আগলে রাখি দোহে চারি হাতে।।
দুরত্বটা মন এককে হয়নি নাপা আদৌ।
সুখে দুঃখে একই আছি শ্রাবন কিংবা ভাদৌ।।
দুটি খাঁচা এক আত্মা এক সমুদ্র প্রেম।
মনকাঁচেতে বাঁধানো তবু অটুট এই ফ্রেম।।
দিলারা বেগম
জলের বসন্ত
-----দিলারা বেগম
হাজার বছর ধরে নির্ঘুম রাতের আঁধারে
ফালি চাঁদ জেগে উঠে সঁপে দেয় অন্ধকারে,
জল বসন্ত চলে যায় নদীও মরে যায়
কত দুঃখ রয়ে যায় ভাঙ্গা নদীর বুকে
নিজেকে মানিয়ে নেয় নদী নিজের বিরুদ্ধে।
শব্দহীন পাহাড় দাঁড়িয়ে থাকে অশ্রুসিক্ত নয়নে
সর্বস্ব হারায় নদী কিসের বিহনে?
দ্বিচারিণী নাম তার স্বভাবজাত দোষে
সভ্যতা মানেনা সে নব্যতার খোঁজে।
অদৃষ্টের সীমানার থাকেনা নির্দিষ্ট সীমারেখা
পাহাড় ভুলে যায় তার বিশালত্বের কথা,
ডেকে বলে ঝর্ণাকে বাঁচাও নদীকে
প্রকৃতি একে অন্যের জন্যই বেঁচে থাকে।
নদী যখন মরে যায় ঝর্ণার অবহেলায়
পাহাড় ফেলে দীর্ঘশ্বাস অজানা আশঙ্কায়,
ঝর্ণা জল ঢালে নদীর তপ্ত বুকে
নদী মিটিমিটি চোখ মেলে আনন্দে হেসেখেলে,
ক'জনায় পারে হাসিমুখে শত্রুকে বাঁচাতে?
প্রকৃতির ধর্ম দেখে নষ্ট চেতনারা জেগে উঠে
সর্ব সুখ বুঝি নিজেকে সপে দেওয়ার মাঝে,
বিবেক শিক্ষা নেয় মহানুভব প্রকৃতির কাছে।
মনচলি চক্রবর্তী
অট্টালিকায় নেই প্রাণ
------মনচলি চক্রবর্তী
অট্টালিকার সৌন্দর্যের মাঝে
ছোট্ট নদী
নদীতে শুধুই পাথর আর
নুড়ি
রয়েছে সেজেগুজে
ছোট্ট ছোট্ট ঘর
আছে ঘরে কৃত্রিম
জলসাগর
কোন ঘরে সবুজ পাহাড়,গাছ,
আর মনুষ্য সৃষ্ট ঘাস
ঘরের মাঝের ছোট্ট কাচের পুকুরে
লাল নীল হলুদ মাছেরা খেলা করে
কৃত্রিম আলোকে জ্বলে উঠে
বাতি রাশি রাশি
নেই ঘরে চাঁদের
উজ্জ্বল হাসি
রাতে ঘরে নেমে আসে
গভীর আঁধার
অট্টালিকার সুসজ্জিত ঘরে
থেকেও নেই প্রকৃত আলোর ঝার
মনুষ্য জীবন অট্টালিকায়
হাঁপিয়ে উঠে, চায় ত্রাণ
পায়না সাজানো জীবনের মাঝে ওরা
সবুজ প্রকৃতি আর প্রাণ।
ভবানী বিশ্বাস
প্রকৃতি মা আমার
------ভবানী বিশ্বাস।
মাগো,, দীর্ঘদিন হলো তোমার সাথে
দেখা হয় না সেরকমভাবে।
আজ প্রকৃতি মেঘমেদুর বর্ষায় সমাদৃত।
চারিদিকে মিষ্টি পাখির কূজন, সবুজের সমারোহ, তুমি নবসাজে সেজেছো।
তবুও দেখছি মনটা তোমার ভারাক্রান্ত গো..
হবে নাই বা কেন!
কত না অত্যাচার করেছি তোমার উপর,
কলুষিত করেছি তোমায়।
আগুন জ্বালিয়েছি তোমার ফুসফুসে,
রক্তাক্ত করেছি তোমার হৃদয়।
তাই বুঝি এতো রাগ আমাদের উপর,
রুদ্রানী রুপ করলে তুমি ধারন!
মাগো,, এবারের মতো ক্ষমা করে দাও।
কথা দিচ্ছি, তোমার জন্য সময় বের করবো।
শুনেছি,, মা মমতাময়ী!
একটিবার সুযোগ দাও তোমার অবাধ্য সন্তানদের।
শুধু একটিবার....
নাফিসা খান
সুর
------নাফিসা খান
পলাশের ওপারে দাঁড়িয়ে ভিজছে আমার বৃষ্টি
তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে,
আবির তরঙ্গ বাঁধ ভেঙ্গেছে,মনের গায়ে মন লেগেছে,
ভিজছে আকাশ,ভিজছে নদী, ভিজছে স্রোত ,
ভিজছে আমার নোঙর খানি কৌমুদী বাহারে....
দু,চোখের নক্ষত্রে বেঁধেছে কুঠি গানের খেয়ালে,
তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে,
আমি বৃষ্টিভেজা সকালখানি রেখেছি তোমার গানের ওপারে...
ভিজছে সকাল,ভিজছে বৃষ্টি,ভিজছে রাগ
ভিজছে নদীর অঙ্গখানি মেহুল বনের আঁচর বেয়ে..
আমার একতারা আজ মোহেরতালে ,সুরের মালায়
সুর গেঁথেছে,
গাইছে আমার ভুবনখানি তোমার ভূয়ের সংসর্গে
ভিজছে সুর,ভিজছে গান,ভিজছে মন,ভিজছে আমার বৈশাখী তোমার সুরের সাথে সুর মিলিয়ে.....
রূপন মজুমদার
শূন্য
-----রূপন মজুমদার
উনুনে জ্বলছে জীবনের খতিয়ান
শতাব্দীর সুখ দুঃখরা ফুটছে,
ভাতের হাঁড়িতে।।
অধিজাতিক নিশানা ধরে
ধোঁয়ার মিছিল এগিয়ে যায়।
মানুষের মতো।
কফিনে পেরেক মারা শবদেহ কাঁধে
অন্তহীন শূন্যে।।
রাজীব বসাক
এসো নবীন
------রাজীব বসাক
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
দল বেঁধে আজ ছুটে আয়,
পাহাড় সমান বাঁধাগুলি,
নবীন তেজে গুড়িয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা ,
দলে দলে ছুটে আয় ,
মানবতার হিংসাগুলি,
চোখের চাওয়ায় ভুলিয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
প্রাণখুলে আজ ছুটে আয়,
জাতির শত্রু সন্ত্রাস আক্রমণ,
পায়ের তলায় পিষিয়ে দে ।।
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা,
পায়ে পায়ে তাল মিলিয়ে ছুটে আয়,
দেশের ভার কাঁধে তুলে ,
ভবিষ্যতের খুলরে দ্বার ।।
মাথা কভু করিসনে নত ,
আসুক ফিরে ঝড় তুফান যত ,
নবীন আলোয় ঝলসিয়ে ক্ষত ,
বিজয় রথের গড়বি নতুন পথ ,
আয়রে নবীন আয়রে কাঁচা ,
দল বেঁধে আজ ছুটে আয় ।।
সেখ মনিরুদ্দিন
বৃষ্টি এলো
-----সেখ মনিরুদ্দিন
আকাশ কাঁদিয়ে বৃষ্টি এলে
জানিনা তোমার ফন্দি,
ভিজিয়ে আমায় হলে যে তুমি
চোখ ক্যামেরায় বন্দি।
মন খারাপের ক্যানভাসে বুঝি
মেলেছো তোমার সীমানা,
ঝর ঝর করে মনেতে ঝরিয়ে
খুঁজছো নিজের ঠিকানা।
তোমার ছোঁয়ায় গাছেরা পেলো
সবুজ সতেজ জীবন,
নদীর জলে এনে দিলে ঢেউ
দুকূল ভরে প্লাবন।
বাতাস হয়েছে পাগল পারা
মাটি পেয়েছে প্রাণ,
সোঁদা গন্ধে মাতাল করে
অদ্ভুত এক ঘ্রাণ।
পৃথিবী বাঁচার রসদ পেয়েছে
কেবল তোমার জন্য,
তোমার তুমিতে অপরূপ হয়ে
করলে সবকে ধন্য।
সায়ন পাল
একলা চলো
-----সায়ন পাল
গিয়েছিলাম তোমার বাড়ি পূর্ণ হৃদয়
মন যেন চড়ুই পাখি চির সুখময়।
গিয়ে দেখি দ্বারে তালা, প্রবেশ আমি করতে নারি
ধোঁয়ায় করে চক্ষু জ্বালা এই যেন পরিত্যক্ত বাড়ি।
গিয়েছিলাম পুকুরঘাটে যেথায় করে স্নান শিশুরা,
মাছরাঙ্গা মাছ ধরল, বোয়াল কই এ পুকুর ভরা।
বেলা হল শেষ ছেলে সব ঘরে ফিরলো,
মাছরাঙ্গা উড়ে গেল, বোয়াল কই ও ডুব মারলো।
গিয়েছিলাম পুজো প্রাঙ্গণে ঢাকের তালে নাচে মন,
হই হই আর পুজোর গন্ধ আলোড়িত পূজা প্রাঙ্গন।
গিয়ে দেখলাম হঠাৎ বৃষ্টি, তুফান যেন নামিল,
পুজো হল সাঙ্গ, স্বার্থে মানুষ সব ঘরে ফিরলো।
গিয়েছিলাম মহা অরণ্যে, যেথায় কোকিল ডাকে,
কুহু কুহু কলরবে অরণ্য ভরে থাকে।
গিয়ে দেখি নীরবতা নাইগো কুহু ডাক,
ক্লান্ত হল কোকিল পাখি, প্রচন্ড অবাক!!
ফিরে আসলাম মোর কুটির ঘরে, ডাকি মা মাগো
কুটীরের ধারে ছোট্ট তালা, প্রাণে তো আর সয়না গো।
এমনই এক অট্টহাসিতে আকাশ ভেঙ্গে পড়লো
বলছে এইতো জীবন, কেহ না করলে তুমি একলা করো গমন।।
গোপাল বনিক
পরিচয়
-----গোপাল বনিক
সবাই যখন প্রশংসায় পঞ্চমুখ,
আমি দেখি তোমার চোখে মৃত্যুমাখা শোক।
কত লোকে কত ভাবে দেয় পরিচয়,
বিপন্ন বিব্রত মুখে তোমার শুধু অশ্রুধারা বয়।
কত আশায় বুক বেঁধে হলে আনমনা,
ঘাত -প্রতিঘাতে সবই যে আজ বিষাদ বেদনা।
তবুও যদি খুঁজি জীবন-তরুর কিশলয়,
সেইদিন যেন পাই হে তোমার সত্য পরিচয়।।
ইএইচপি রূপক পোদ্দার
ভাবনা
------ইএইচপি রূপক পোদ্দার
বন্ধু তুমি
ছেড়ে গেছো বলে আজ
আমার ছন্দ হারালো জীবন।
এই কতটা ক্ষন,
না পেয়ে তোমায় আজ
ছন্ন ছাড়া ছিলো এ'মন।।
দেবী ছাড়া আমার এই
মোর দেবালয়
শূণ্য ক্ষুন্ন পরে রয়।
দেবীর আসনে আর
রবে না তুমি যদি
ভাবতেই মনের মাঝে কেমন যেন ভয় হয়।।
কলি গুলি কি আর
ফুল হবেনা, ফুঁটে
যদি না লাগে তব পূজায়।
বন্ধু তুমি
নিত্য সেবায় থেকো,
পূর্নতা পাবে মোর দেবালয়।।
তৃপ্ত পরাণ
নব সাঁঝে মোর
উৎসব রসে ভরপুর তব মোর মন।
পুস্প ঝরা আজ
শীতল সন্ধ্যায়
উচ্ছ্বাস আনলো তব আগমন।।
পাখী জোড়া বয়
মিলনের গান গেয়ে
ফিরেছে যে যার ঘরে।
চাঁপার মালা
পরাবো তোমায়
উদ্দেলিত পরান,বন্ধু ওরে।।
শুভ্র মেঘের
নিঠুর বেলায়
এ'মন খুঁজেছে তোমায় বহু গুনচে প্রহর।
প্রসাদ সম মোর
এলে বন্ধু তুমি আজ
দখিন হাওয়ায় পূন্য হলো আজ এ'শহর।।
পবিন্দ্র দেবনাথ
চলার পথে , চেয়েছিলাম হতে , সকলের কাছে ভালো ।
দুষ্ট লোকের চক্রান্তে আজ হতাশ হতে হলো।।
একশোতে নিরানব্বই যদি আমায় ভালোবাসে ।
একশোতে এক তো বন্ধু , মরবে যে ঈর্ষাতে ।।
সকলের ভালোবাসায় বন্ধু , হতে চাই যে বড়ো ।
পিছন দিকে টেনে ধরলেও আটকাতে পারবে ? বলো--
হাজারো হাজারো মানুষের হৃদয়ে যদি নিতে পারি ঠাঁই।
দুষ্ট লোকের ষড়যন্ত্রে আমার কী আর হবে ভাই।।
উপকৃত শত জনে বেইমান দুয়েক জন ।
ভুল বুঝে তাদেরও তো করেছিলাম প্রিয়জন।।
অতি প্রিয়জনেই বন্ধু করে সর্বনাশ।
দুঃখ- ক্লেশ তবু না করি, না করি অভিলাষ।।
পরম কল্যাণময়ের কাছে করি গো প্রার্থনা।
কুমতিকে মতি দাও , করো প্রভু মার্জনা।।
রবিবার, ৩০ মে, ২০২১
সম্পাদকীয়
আজ তবে সম্পাদকই দায়ী থাক। "সাহিত্য নয়ন"- এর চতুর্দশতম সংখ্যাটি প্রকাশে এতো দেরী হওয়ার কথা তো ছিলনা। বাগিচায় ঠিক সময় মতোই ফুল ফুটে ছিল। দেবতারাও ছিলেন পূজার পুষ্প গ্রহণে প্রস্তুত। তবে কেনো পূজায় এতো বিলম্ব ? এতো অন্ধকারে কেমন করে পূজার উপকরণ সাজাই বলো? তাই অনিচ্ছাকৃত এই বিলম্বের দায় মাথায় তোলে নিলাম। হয়তো একদিন সত্যিকারের ভোর হবে। থাকবেনা কোনো আঁধার। সুস্থ প্রভাতের আলো ছড়িয়ে পড়বে দিকে দিকে। মুক্তভাবে মুক্ত বাতাস থেকে নিতে পারবো ভয়মুক্ত শ্বাস। যদিও আজ সময়টা বড়ো কঠিন। কিন্তু আশায় বাঁচে চাষা। তাইতো সুস্থ ভোরের আশায় আগামীর দিকে চেয়ে আছি।
প্রিয় পাঠক, অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আপনাদের ভালোবাসার টানে আবারো হাজির হলাম "সাহিত্য নয়ন" সাহিত্য পত্রিকা চতুর্দশতম সংখ্যাটি নিয়ে। জীবন যুদ্ধে ক্লান্ত হয়ে যখন বদ্ধ খাঁচায় নিভৃতে বসে থাকি, তখনই আপনাদের ভালোবাসার আঘাতে বার বার জেগে উঠি। কবি কিশোর কুমার ভট্টাচার্যের ভালোবাসার কয়েকটি পংক্তি দায়বদ্ধতা আরোও বাড়িয়ে দিল। উনি লিখেছেন ------
সময়ে অসময়ে লভিবে যন্ত্রণা
বিরক্ত হইলেও সহিতে হইবে
তবেই তো "তুমি ওগো কর্ণধার!"
আনন্দ মাখা মনখানা বসুধার।
তুমি হে রাজার রাজা!
হে রাজেশ!
অসিখানা হাতছাড়া আজ
মসি খানা সাজিয়েছ সুন্দরে বীণাপানির কৃপায়।
শাসন - শোষণ ভুলিয়া
লভিয়াছো সেবা ব্রত
এই কাজে তো যন্ত্রণার কাঁটা
বিঁধিবে অনবরত।
এবারের সংখ্যায় কবিতা - প্রবন্ধের পাশাপাশি শিশুশিল্পীদের উৎসাহ বৃদ্ধির কামনায় প্রকাশিত হয়েছে তুলির সৃষ্টিকেও। শিল্পীর তুলির আঁচড়ও কথা বলতে জানে। করতে পারে ভাব বিনিময়। অনেকক্ষণ ধরেই বক্ বক্ করে যাচ্ছি, আগামী সংখ্যায় না হয় বাকিটা পূর্ণ করে নেব। চলুন সবাই মিলে একটু দেখে নেই নয়নের পাতায় কি কি অপেক্ষা করে আছে। আপনাদের সার্বিক মতামতের অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ ও শ্রদ্ধা সহ------
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
সম্পাদক, সাহিত্য নয়ন
অমল কুমার মাজি
ঝড়
------অমল কুমার মাজি
ভিতরের পৃথিবীতে আচমকা ঝড় ওঠে
মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যায়
শরীরের ধমনীতে তপ্ত রক্ত ছোটে
বিবেকের দংশন যাতনা বাড়ায় !
বাতাসে দু'হাত ছুঁড়ে মিছিল এগিয়ে চলে
নিষ্ফল চিৎকারে হায়!
উপোসী স্নাতক শুধু দুপুর গড়িয়ে গেলে
এক খিলি পান কিনে মুখটা রাঙায় !!
কতশত দ্রৌপদী প্রতিদিন প্রতি পলে
হ'য়ে যায় সংবাদ -শিরোনাম
সাজানো মঞ্চে তবু ভাষণের কারসাজি
"থোড়-বড়ি- খাড়া" আর "খাড়া-বড়ি-থোড়" অবিরাম!!
হাইজ্যাক হ'য়ে যায় বিশ্বকবির গান
নেই কপিরাইটের বন্ধন
লুটেরার উল্লাস ছাপিয়ে শ্রবণে আসে
মাতৃভূমির চাপা ক্রন্দন !!
কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
অমর ঊনিশ
-------কিশোর কুমার ভট্টাচার্য
হায়রে ঊনিশ! মননে
স্মরণে অস্তিত্বশীল।
তোমার স্মৃতি রোমন্থনে
ছুটেছে চিন্তা প্রগতিশীল।
এপার - ওপার মিলেমিশে একাকার
মাঝখানে সেতু ভাষা
মানতে পারেনি রাজাকার।
হে উনিশ তুমি আছো স্মৃতিতে
শিলচর রেলস্টেশনে,
আছো ইতিহাসের পাতায়
শহীদের সম্মানে।
হেমন্ত দেবনাথ
"সত্যের পথে ভারতীয় দর্শনের অগ্রগতি"
-------হেমন্ত দেবনাথ
(এপ্রিল মাসের সংখ্যার পর)
কিন্তু বেদ বাহ্য দর্শন বেদবিরোধী দর্শন নয়। এদের উৎস হল---" আগম"- অর্থাৎ বেদবাহ্য দর্শন গুলোর উৎস বেদ নয়, এগুলো বিরোধীও নয়। বেদ বাহ্য দর্শন গুলো হচ্ছে শাক্ত দর্শন, বৈষ্ণব দর্শন ও শৈব দর্শন। শাক্তদের মূল ভিত্তি হলো শাক্তাগম, বৈষ্ণব দর্শনের মূল উৎস হল বৈষ্ণবাগম এবং শৈব দর্শনের মূল উৎস হল শৈবাগম।
আস্তিক দর্শন গুলোর উৎস হলো বেদ। বেদ কথার অর্থ হল "জ্ঞান"। বেদ চার প্রকারের--- ঋগ্বেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ ও অথর্ববেদ। প্রাচীনতম বেদ হলো ঋগ্বেদ। প্রতিটি বেদের চারটি অংশ রয়েছে -- সংহিতা (মন্ত্র), ব্রাহ্মণ, আরণ্যক, ও উপনিষদ। দেবদেবীর উদ্দেশ্যে রচিত স্তোত্র বা মন্ত্র হলো সংহিতা, বৈদিক যজ্ঞের নিয়মাবলী আছে ব্রাহ্মণ অংশে। বাণপ্রস্থের সময়ে অরণ্যে জীবনযাপনের নিয়মাবলী নিয়ে লেখা হয়েছে আরণ্যক, জীবন ও জগৎ সম্বন্ধে নানা জিজ্ঞাসা বিষয়ক উচ্চতর দার্শনিক চিন্তার প্রতিফলন ঘটেছে উপনিষদে।
সংহিতা ও ব্রাহ্মণকে বলা হয় কর্মকাণ্ড। উপাসনাকান্ড বলা হয় আরণ্যককে। উপনিষদকে বলা হয় জ্ঞানকাণ্ড। "যাগযজ্ঞ অনুষ্ঠান নিষ্প্রয়োজন" -- এ কথা ব্যক্ত হয়েছে শতপথ ও তৈত্তিরীয় ব্রাহ্মণে। উপনিষদ হল জ্ঞানকান্ডের চরম পরিণতি। বেদের অন্তর্ভুক্ত নয় বেদাঙ্গগুলো । বেদের অর্থ ও অর্থ বোধের প্রয়োজনে সৃষ্টি হয়েছিল বেদাঙ্গ। বেদাঙ্গ হল ছয়টি-- শিক্ষা, কল্প, নিরুক্ত, ছন্দ, জ্যোতিষ ও ব্যাকরণ। মীমাংসা ও বেদান্ত সরাসরি বেদ নির্ভর। সাংখ্য, যোগ, ন্যায় ও বৈশেষিক দর্শন বেদের প্রামাণ্য স্বীকার করে নিলেও স্বাধীন যুক্তি তর্কের মাধ্যমে নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেছে। কাজেই এগুলো পরোক্ষভাবে বেদ নির্ভর। বেদান্ত দর্শন ক্ষুরধার যুক্তিতর্কের মাধ্যমে এদের জ্ঞানের দিকটি অর্থাৎ ব্রহ্মের স্বরূপ, জীবাত্মা ও পরমাত্মার সম্পর্ক ইত্যাদি দার্শনিক তত্ত্বগুলোর আলোচনা করেছে। মীমাংসা-দর্শন বেদের যাগ-যজ্ঞ ও ক্রিয়া অনুষ্ঠানের যৌক্তিকতা তুলে ধরেছে। এই দুই দর্শনের পার্থক্য তুলে ধরার জন্য মীমাংসাকে পূর্ব মীমাংসা বা কর্ম মীমাংসা এবং বেদান্তকে উত্তর মীমাংসা বলা হয়েছে।
বেদ স্বতন্ত্র ও বেদবিরোধী দর্শনগুলোর উৎস হল-- কোনোও শ্রদ্ধেয় মনীষী বা সত্যদ্রষ্টা ব্যক্তির মত। যেমন- ঋষভদেবকে জৈন দর্শনের আদি প্রচারক তীর্থঙ্কর বলা হয়, গৌতম বুদ্ধকে বৌদ্ধ ধর্মের এবং চার্বাক ঋষি অথবা বৃহস্পতি ঋষিকে চার্বাক দর্শনের প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়।
(ধারাবাহিক চলবে)
রাজেশ ভট্টাচার্য্য
দ্ব্যর্থক ভালোবাসা
------রাজেশ ভট্টাচার্য্য
ভালোবাসি,
আমি তোমাকে খুব ভালোবাসি।
মানবিকতায় ভালোবাসি।
মনুষ্যত্ববোধে ভালোবাসি।
হ্যাঁ, তুমিও আমাকে ভালোবাসো জানি।
আমার না বলা কথা তুমি বুঝে নিতে পারো।
করতে পারো তার চুলচেরা বিশ্লেষণ।
লাগাতে পারো ভালোবাসার বিজ্ঞাপন।
তাতে না হয় ভেঙ্গেই যাক আমার দর্পণ।
তাতে তোমার কি?
তোমার জয় জয় করবে পুরো সমাজ।
আর তুমি হয়ে উঠবে শ্রেষ্ঠ প্রেমিকা।
তবুও না হয় তোমাকে ভালোবাসলাম!
মনুষ্যত্ববোধের ভালোবাসা।
জয়ন্ত দেবনাথ
কবিতাকে চাই
-----জয়ন্ত দেবনাথ
সে তো আমায় ছেড়ে গেছে কোথায় তারে পাবো!
ঠিকানাটা দেবে আমায়? আনতে তারে যাবো।
সে ছিল যে আমার মনে পদ্ম পাতার জল,
হৃদয় সরোবরে ঢেউয়ে করত টলমল।
হৃদয় হল শুষ্ক মরু দুঃখের তাপে দহে,
পদ্ম পাতার শিশির সে যে কি করে সে সহে!
কবিতা সে দিল ফাঁকি মনের দুয়ার খুলে,
বহু দূরে গেছে চলে আমায় গেছে ভুলে!
কোথায় তারে পাব আমি? তোমার তাকে চাই!
নিঃরস গদ্যের হৃদয় আকাশ কাব্যের মেঘ নাই।
বর্ণা দাস
সুখপাখি
------বর্ণা দাস
সন্ধ্যা নামে রোজ
পাখিরা ফিরে আসে
শয় শয় ঘরে ।
পথের পানে চেয়ে
দুয়ারে আমি থাকি বসে
কে যেন আসবে ফিরে ।
নদীর ঘাঁটে নৌকো লাগে
যাত্রী ওঠে যাত্রী নামে
কত মানুষের আনাগোনা।
হাট বসে বেচা-কেনা হয় বটে
চওড়া দামের হিসেব কষে
যায় নাকো তাকে কেনা ।
নিত্য যাকে খুঁজে চলি
সে এক সুখ পাখি
কোথায় পাবে তার দেখা ।
অযথা তাকে হাতড়ে বেড়াই
বৃথা ছুটি দিগ্বিদিক শূন্য হয়ে
সেই তো রোজনামচা আঁধার ঘনিয়ে ঘরে ফিরি একা ।
খুঁজলে তাকে পাবে কোথায়
যায় কী ওমনে ধরা
সে আছে এক রূপসাগরে ।
জাগো এবার তন্দ্রা হতে
নয়ন মেলে চেয়ে দেখ
আড়ালে সে আছে মনের ঘরে ।